এখানে আকাশে সাতটি তারা কবিতার প্রশ্ন উত্তর শেয়ার করা হলো। / নবম শ্রেণী বাংলা আকাশে সাতটি তারা জীবনানন্দ দাশ WBBSE
আকাশে সাতটি তারা কবিতার MCQ প্রশ্ন উত্তর
১. ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতাটির রচয়িতা —
উত্তর: জীবনানন্দ দাশ
২. ‘আকাশে সাতটি তারা’ যে-কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত —
উত্তর: রূপসী বাংলা
৩. ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় পঙ্ক্তিসংখ্যা —
উত্তর: ১৪
৪. আকাশে তারা উঠেছে —
উত্তর: ৭টি
৫. কবি বসে আছেন —
উত্তর: ঘাসে
৬. ‘কামরাঙা’ হল —
উত্তর: এক ধরনের ফল
৭. ‘কামরাঙা-লাল মেঘ’ কিসের মতো —
উত্তর: মৃত মনিয়ার মতো
৮. কামরাঙা-লাল মেঘ ডুবে গেছে —
উত্তর: গঙ্গাসাগরে
৯. ‘ঢেউয়ে ডুবে গেছে’ —
উত্তর: গঙ্গাসাগরের
১০. আকাশে সাতটি তারা যখন ফুটে উঠেছে তখন মেঘের রং ছিল —
উত্তর: কামরাঙার মতো লাল
১১. গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ে ডুবে গেছে —
উত্তর: মেঘ
১২. ‘আসিয়াছে শান্ত অনুগত বাংলার সন্ধ্যা’ —
উত্তর: নীল
১৩. কবির মতে, নীল সন্ধ্যা হল —
উত্তর: শান্ত অনুগত
১৪. সন্ধ্যাকে তুলনা করা হয়েছে —
উত্তর: কেশবতী কন্যার সঙ্গে
১৫. লেখক মনে করেছেন, কেশবতী কন্যা এসেছে —
উত্তর: আকাশে
১৬. কবির কল্পনায় কেশবতী কন্যা হচ্ছে —
উত্তর: বাংলার নীল সন্ধ্যা
১৭. ‘আমার চোখের ‘পরে আমার মুখের ‘পরে চুল তার ভাসে’ — এখানে “আমার” বলতে বোঝানো হয়েছে —
উত্তর: কবিতার কথকের
১৮. ‘চুল তার ভাসে’ — কোথায় চুল ভাসে —
উত্তর: কবির চোখ, মুখের ওপর
১৯. ‘চুল তার ভাসে’ — কার চুল —
উত্তর: কেশবতী কন্যার
আকাশে সাতটি তারা কবিতার MCQ প্রশ্ন উত্তর
২০. ‘পৃথিবীর কোনো পথ এ কন্যারে দেখে নি কো’ — শূন্যস্থান পূরণ —
উত্তর: কন্যারে
২১. ‘এ কন্যারে দেখে নি কো’ — দেখে নি —
উত্তর: পৃথিবীর কোনো পথ
২২. ‘পৃথিবীর কোনো পথ এ কন্যারে দেখে নি কো’ — এই পঙ্ক্তিতে ভাবনা —
উত্তর: সন্ধ্যা সমাগমে অন্ধকারের এই সৌন্দর্যকে কেউ দেখেনি
২৩. ‘অজস্র চুলের চুমা’ — কবি বোঝাতে চেয়েছেন —
উত্তর: সন্ধ্যার অন্ধকার
২৪. ‘হিজলে কাঁঠালে জামে অবিরত ঝরে’ —
উত্তর: চুলের চুমা
২৫. রূপসীর চুলের বিন্যাসে ঝরে পড়ছে —
উত্তর: স্নিগ্ধ গন্ধ
২৬. ‘জানি নাই এত স্নিগ্ধ গন্ধ ঝরে রূপসীর চুলের বিন্যাসে’ — রূপসী বলতে বোঝানো হয়েছে —
উত্তর: বাংলার নীল সন্ধ্যা
২৭. ‘স্নিগ্ধ গন্ধ ঝরে’ —
উত্তর: রূপসীর চুল থেকে
২৮. ‘হিজলে কাঁঠালে জামে ঝরে অবিরত’ — অর্থ —
উত্তর: অজস্র চুলের চুমা
২৯. ‘জানি নাই এত স্নিগ্ধ ঝরে’ — শূন্যস্থান পূরণ —
উত্তর: গন্ধ
৩০. পৃথিবীর কোনো পথে যার ঘ্রাণের কথা বলা হয়েছে —
উত্তর: নরম ধানের গন্ধ, কলমির ঘ্রাণ
৩১. ‘নরম ধানের গন্ধ-কলমীর ঘ্রাণ’ — কবি যেখানে পেয়েছেন —
উত্তর: পৃথিবীর কোনো পথে
৩২. কবিতায় কবি কীসের মৃদু ঘ্রাণের কথা বলেছেন —
উত্তর: চাঁদা-সরপুঁটিদের
৩৩. ‘হাঁসের পালক, শর,’ — শূন্যস্থান পূরণ —
উত্তর: দলা মুথাঘাস
৩৪. সরপুঁটি ছাড়া কবি যে মাছের গন্ধ পেয়েছেন —
উত্তর: চাঁদা
৩৫. ‘কিশোরীর চালধোয়া ভিজে হাত’-এর অনুভূতি কবির কাছে তুলনীয়—
উত্তর: শীতের সঙ্গে
৩৬. কিশোরের পায়ে ছিল—
উত্তর: মুথাঘাস
৩৭. ‘কিশোরের পায়ে-দলা মুথাঘাস’ কথাটিতে যে-ভাবনাটি প্রকাশ পেয়েছে, তা হল—
উত্তর: বেদনা ও বিষাদ
৩৮. ‘বটের ফলের ব্যথিত গন্ধের ক্লান্ত নীরবতা’ পঙ্ক্তিটিতে প্রকাশিত ভাবনাটি হল—
উত্তর: মৃত্যু বা ঝরে যাওয়ার অনিবার্যতাজনিত বেদনা ও ক্লান্তি
৩৯. এই কবিতায় বট ফলের রংগুলি হল—
উত্তর: লাল লাল
৪০. ‘ব্যথিত গন্ধের ক্লান্ত নীরবতা’ — ব্যথিত গন্ধ আছে—
উত্তর: কিশোরের পায়ে-দলা মুথাঘাসে আর বটের লাল ফলে
৪১. ‘ক্লান্ত নীরবতা’ প্রকাশ পেয়েছে—
উত্তর: লাল লাল বট ফলের ব্যথিত গন্ধে
৪২. কবিতায় নীরবতা ছিল—
উত্তর: ক্লান্ত
৪৩. ‘আমি পাই টের’ — কবি এখানে টের পান—
উত্তর: বাংলার প্রাণ
৪৪. ‘আমি পাই টের’ — কবি কখন টের পান—
উত্তর: আকাশে সাতটি তারা যখন ফুটে ওঠে
৪৫. ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতাটি ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থের কত সংখ্যক কবিতা—
উত্তর: ৬ নং
৪৬. ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতাটি একটি—
উত্তর: সনেট
আকাশে সাতটি তারা কবিতার অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
১. ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতাটির মূল সুর কী বলে তোমার মনে হয়?
উত্তর: কবিতায় সন্ধ্যার আঁধারে বঙ্গপ্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্যের বিষাদ তুলে ধরা হয়েছে।
২. কবি আকাশে সাতটি তারার উল্লেখ করেছেন কেন?
উত্তর: কবি সন্ধ্যার পূর্ণ রূপ ফুটিয়ে তুলতে সাতটি তারার উল্লেখ করেছেন।
৩. কাকে মৃত মনিয়ার মতো মনে হয়েছে?
উত্তর: কামরাঙা-লাল মেঘকে মৃত মনিয়ার মতো মনে হয়েছে।
৪. আকাশে সাতটি তারা ওঠার সময় কবি কোথায় বসে ছিলেন?
উত্তর: কবি ঘাসের ওপর বসে ছিলেন।
৫. গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ে কে ডুবে গেছে?
উত্তর: কামরাঙা-লাল মেঘ গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ে ডুবে গেছে।
৬. কবি বাংলার সন্ধ্যাকে ‘নীল’ বলে মনে করেছেন কেন?
উত্তর: সন্ধ্যার অস্পষ্টতাকে মায়াবী সৌন্দর্যের রূপ দিতে সচেতনভাবে ‘নীল’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
৭. বাংলার সন্ধ্যাকে কবি ‘শান্ত অনুগত’ বলেছেন কেন?
উত্তর: নিঃশব্দে সন্ধ্যা নেমে আসার কারণে কবি তাকে ‘শান্ত অনুগত’ বলেছেন।
৮. ‘কেশবতী কন্যা’ বলতে কবি কাকে বুঝিয়েছেন?
উত্তর: কবি বাংলার নীল সন্ধ্যাকে ‘কেশবতী কন্যা’ বলেছেন।
৯. বাংলার নিসর্গ প্রকৃতির বুকে নেমে আসা সন্ধ্যাকে কবি কীসের সঙ্গে তুলনা করেছেন?
উত্তর: কবি সন্ধ্যাকে ‘কেশবতী কন্যা’র সঙ্গে তুলনা করেছেন।
১০. কবির চোখ-মুখের ওপরে কার চুল ভাসে?
উত্তর: কেশবতী কন্যার চুলের মতো নীল সন্ধ্যার লাবণ্যময় আঁধার ভাসে।
১১. ‘পৃথিবীর কোনো পথ এ কন্যারে দেখে নি কো’ বলার কারণ কী?
উত্তর: বাংলার অতুলনীয় সন্ধ্যার সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে কবি তাকে কেশবতী কন্যার রূপ দিয়েছেন।
১২. ‘এ কন্যাকে দেখে নি কো’ এখানে কার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: কবি জীবনানন্দ দাশ সান্ধ্য নীলিমায় আচ্ছন্ন বঙ্গপ্রকৃতির কথা বলেছেন।
১৩. পৃথিবীর কোনো পথে কী নেই বলে কবি অনুমান করেছেন?
উত্তর: পৃথিবীর কোনো পথে রূপসী সন্ধ্যার স্নিগ্ধ ও মধুর গন্ধ নেই বলে অনুমান করেছেন।
১৪. ‘হিজলে কাঁঠালে জামে ঝরে অবিরত’– কী ঝরে পড়ে?
উত্তর: সান্ধ্য অন্ধকারের গভীর আন্তরিক স্পর্শ, অর্থাৎ অজস্র চুলের চুমা ঝরে পড়ে।
১৫. ‘এত স্নিগ্ধ গন্ধ ঝরে’– স্নিগ্ধ গন্ধ কোথায় ঝরে পড়ে?
উত্তর: বঙ্গপ্রকৃতির নৈসর্গিক আবহে রূপসীর চুলের বিন্যাসে স্নিগ্ধ গন্ধ ঝরে পড়ে।
১৬. ‘কলমী’ কী?
উত্তর: নদীমাতৃক বাংলার পুকুর বা জলজ জায়গায় জন্মানো এক ধরনের শাক।
১৭. ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় কবি গ্রামবাংলার কোন্ কোন্ গন্ধের কথা বলেছেন?
উত্তর: নরম ধান, কলমির গন্ধ এবং পুকুরের জলে চাঁদা-সরপুঁটিদের ঘ্রাণের কথা বলেছেন।
১৮. কবিতায় কোন্ কোন্ মাছের প্রসঙ্গ এসেছে?
উত্তর: চাঁদা ও সরপুঁটি মাছের প্রসঙ্গ এসেছে।
১৯. ‘শীত হাতখান’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: যত্ন, মমতা ও বিষণ্ণতার মতো ভাব ফুটিয়েছেন।
আকাশে সাতটি তারা কবিতার অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
২০. ‘কিশোরের পায়ে-দলা মুথাঘাস’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: কিশোরের পায়ের আঘাতে মুথাঘাসের দলিত, অবিন্যস্ত ছবি ফুটিয়েছে।
২১. বট ফলের গন্ধ কেন ব্যথিত?
উত্তর: পেকে মাটিতে পড়ে বট ফল ঝরে যাওয়ার বেদনাজনিত আভাস গন্ধকে ব্যথিত করেছে।
২২. ‘এরই মাঝে বাংলার প্রাণ’ কোথায় কবি খুঁজে পেয়েছেন?
উত্তর: নরম ধান, কলমি, হাঁসের পালক, পুকুরের জল, কিশোরীর চালধোয়া ভিজে হাত, পায়ে-দলা মুথাঘাস ও বট ফলের ক্লান্ত নীরবতায়।
২৩. ‘আমি পাই টের’– কী টের পান কবি?
উত্তর: আকাশে সাতটি তারা ফুটে ওঠার সময় বঙ্গপ্রকৃতির প্রাণময় উপস্থিতি টের পান।
২৪. ‘আকাশে সাতটি তারা’ ফুটে ওঠার পর কবি কী অনুভব করেন?
উত্তর: বাংলার প্রাণের টের পান বা উপস্থিতি অনুভব করেন।
২৫. ‘আকাশে সাতটি তারা’ কী ধরনের কবিতা?
উত্তর: সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতা।
২৬. কবি মেঘকে কীসের সঙ্গে তুলনা করেছেন?
উত্তর: কামরাঙা-লাল মেঘকে মৃত মনিয়া পাখির সঙ্গে তুলনা করেছেন।
২৭. সন্ধ্যার আকাশে কে এসেছে বলে মনে হয়?
উত্তর: এক কেশবর্তী কন্যা এসেছে বলে মনে করেন।
২৮. কেশবতী কন্যার অজস্র চুল কাকে চুম্বন করে?
উত্তর: হিজল, কাঁঠাল ও জামকে অবিরত চুম্বন করে।
২৯. কিশোরীর চালধোয়া হাত কেমন ছিল?
উত্তর: চালধোয়া হাত ভিজে ও শীতার্ত ছিল।
আকাশে সাতটি তারা কবিতার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
১. কেশবতী কন্যা যেন এসেছে আকাশে; কাকে ‘কেশবতী কন্যা’ বলা হয়েছে? তার সম্পর্কে এমন উক্তির কারণ কী?
উত্তর: প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি কবি জীবনানন্দ দাশের ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে বাংলার ‘নীল সন্ধ্যাকে’ কবি ‘কেশবতী কন্যা’ বলেছেন।
কেশবতী কন্যার সমগ্র মুখমণ্ডল, এমনকি শরীরও ঢেকে যায় নিবিড় কালোচুলে, যা কন্যাকে করে তোলে সৌন্দর্যশালী। কল্পরাজ্যে বিচরণ এমন উত্তির কারণ করছে কবিচেতনা; সন্ধ্যার আকাশে নেমে আসা মায়াবী নীল আভায় আপ্লুত হয়েছেন কবি। সন্ধ্যার আঁধার কবির কল্পচোখে কেশবতী কন্যার ঘন কালো চুল। ঘনচুলের মতোই নিবিড়তা পেয়েছে সন্ধ্যার রূপ। তাই কবি প্রশ্নে উদ্ধৃত কথাটি বলেছেন।
২. ‘আমি এই ঘাসে বসে থাকি,’ – ‘আমি’ কে? তিনি কেন ঘাসে বসে থাকেন?
উত্তর: আলোচ্য অংশটি জীবনানন্দ দাশের ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতার অংশ। এখানে ‘আমি’ হলেন স্বয়ং কবি।
বাংলার বুকে যখন সন্ধ্যা নামে, তার প্রাক্কালে অস্তগামী সূর্যের রক্তিম আভায় দিগন্ত রাঙা হয়ে ওঠে। তারপরেই নেমে আসে নীল সন্ধ্যা, যে সন্ধ্যায় আচ্ছন্ন হয় হিজল, কাঁঠাল, জামসহ ঘাসে বসার কারণ বাংলার সমগ্র নদী-মাঠ-ঘাট। কবির চোখে সেই শান্ত-অনুগত সন্ধ্যায় ভেসে ওঠে কলমি, চাঁদা, সরপুঁটি ইত্যাদি বাংলার আপন সত্তা। কবির কল্পমানসে নীল সন্ধ্যা যেন কেশবতী কন্যা। বাংলার সন্ধ্যার এই সৌন্দর্য অনুভব করার জন্যই কবি ঘাসে বসে থাকেন।
৩. ‘পৃথিবীর কোনো পথ এ কন্যারে দেখে নি কো’ — কবি কোন্ প্রসঙ্গে কেন উক্তিটি করেছেন?
অথবা, ‘পৃথিবীর কোনো পথ এ কন্যারে দেখে নি কো’ — কবির বক্তব্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: কবি জীবনানন্দ দাশ তাঁর ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় বঙ্গদেশের সান্ধ্য সৌন্দর্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্নোক্ত উক্তি করেছেন।
বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে কবি বিমুগ্ধ। সন্ধ্যার রঙিন আভা, কোমল নিস্তব্ধতা এবং গ্রামবাংলার নিজস্ব সৌন্দর্য তাঁর মনে এক কেশবতী কন্যার রূপ তুলে ধরে। এই অনন্য সন্ধ্যা বাংলার প্রকৃতি ছাড়া আর কোথাও দেখা যায় না— এমনটাই কবির বিশ্বাস। তাই তিনি বলেন, “পৃথিবীর কোনো পথ এ কন্যারে দেখে নি কো।” এখানে ‘কন্যা’ বলতে বোঝানো হয়েছে বাংলার রূপসী সন্ধ্যাকে। এই বক্তব্যের মাধ্যমে কবি তাঁর স্বদেশপ্রেম ও প্রকৃতিনিষ্ঠ অনুভূতিকে তুলে ধরেছেন।
৪. ‘লাল লাল বটের ফলের / ব্যথিত গন্ধের ক্লান্ত নীরবতা’ — ‘লাল’ শব্দের দ্বৈত প্রয়োগের কারণ লেখো এবং উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য বোঝাও।
উত্তর: ‘লাল’ শব্দের দ্বৈত প্রয়োগের মাধ্যমে কবি বটফলের পাকার মাত্রা ও তার বিপুল উপস্থিতিকে আরও জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন। এটি বাংলার প্রকৃতিতে পাকা ফলের পরিপক্বতা ও গভীরতাকে নির্দেশ করে।
উদ্ধৃতাংশে কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলার সান্ধ্য প্রকৃতির বিষণ্ণতা ও নিঃসঙ্গতা তুলে ধরেছেন। পাকা বট ফল ঝরে পড়ার মধ্যে যে নিঃশব্দ ব্যথা ও ক্লান্তি রয়েছে, তা যেন দিনের শেষ প্রহরের প্রকৃতির ক্লান্ত চেতনার প্রতীক। ‘ব্যথিত গন্ধের ক্লান্ত নীরবতা’ বলতে তিনি সেই বিষাদময় সন্ধ্যাবেলার নিঃশব্দ সৌন্দর্য ও প্রকৃতির অন্তর্নিহিত বেদনার কথা প্রকাশ করেছেন। এখানেই ফুটে ওঠে কবির গভীর প্রকৃতিবোধ ও কাব্যিক সংবেদনশীলতা।
আকাশে সাতটি তারা কবিতার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
৫. ‘অজস্র চুলের চুমা হিজলে কাঁঠালে জামে ঝরে অবিরত’ — প্রসঙ্গসহ উক্তিটির তাৎপর্য আলোচনা করো।
উত্তর: আলোচ্য অংশটি কবি জীবনানন্দ দাশের ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। গ্রামবাংলার সান্ধ্য প্রকৃতির স্নিগ্ধ সৌন্দর্য প্রসঙ্গে কবি উক্তিটি করেছেন।
কবি কল্পনামনে এক কেশবতী কন্যার অবয়বে বাংলার সন্ধ্যাকে কল্পনা করেছেন। তার অজস্র চুল বাংলার আকাশে ভেসে বেড়ায় এবং হিজল, কাঁঠাল, জামগাছের মাথায় পড়ে যেন সোহাগের চুম্বন এঁকে দেয়। কবির চোখে এই নীল সন্ধ্যা বাংলার প্রকৃতিকে আদর করে, তার উপর নেমে আসে এক কোমল ক্লান্তির ছায়া। এটি সন্ধ্যার স্নিগ্ধতা, কোমলতা ও মাতৃত্বগুণকে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম করে তোলে। চরণটি বাংলার প্রকৃতিকে চুম্বনের মাধ্যমে গভীর ভালোবাসায় আলোকিত করে তোলে।
৬. ‘এরই মাঝে বাংলার প্রাণ’ — কবি কোথায় বাংলার প্রাণকে অনুভব করেন?
অথবা, কবি কোথায় কোথায় বাংলার প্রাণ লুকিয়ে আছে বলে মনে করেন?
উত্তর: কবি জীবনানন্দ দাশ ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় বাংলার প্রকৃতির সন্ধ্যাবেলার রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শের মধ্যে বাংলার প্রাণকে অনুভব করেছেন।
অস্তগামী সূর্যের রক্তিম আভা, মেঘের কামরাঙা লাল রঙ, নীল নরম সন্ধ্যার শান্ত আবেশ— সব কিছুতেই কবি খুঁজে পান বাংলার প্রাণের স্পন্দন। তিনি বাংলার মাঠে-পথে, শস্যের ঘ্রাণে, হাঁসের পালকে, পুকুরের জলে, শশুপাতায়, চাঁদা-সরপুঁটির গন্ধে, কিশোরের পায়ে-দলা মুথাঘাসে এবং পাকা বটফলের ব্যথিত ক্লান্ত নীরবতায় বাংলার জীবন্ত অস্তিত্ব উপলব্ধি করেন।
এইসব ক্ষুদ্র অথচ প্রাণস্পর্শী উপাদানের মধ্যেই বাংলার প্রকৃতি তার রূপ, রস ও সৌন্দর্য ছড়িয়ে দিয়েছে— আর সেখানেই কবি অনুভব করেন ‘বাংলার প্রাণ’। তাই তিনি বলেছেন, “এরই মাঝে বাংলার প্রাণ।”
৭. “গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ে ডুবে গেছে”— কী ডুবে গেছে? তার পরিচয় দাও।
উত্তর: জীবনানন্দ দাশের ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় ‘মেঘ’ ডুবে গেছে গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ে।
কবি এখানে যে মেঘের কথা বলেছেন, তা হল “কামরাঙা-লাল মেঘ”— যার রং পাকা কামরাঙা ফলের মতো গাঢ় লাল। এই মেঘকে তিনি তুলনা করেছেন “মৃত মনিয়া”-র সঙ্গে। মনিয়া পাখির যেমন প্রাণচঞ্চলতা মৃত্যুতে থেমে যায়, তেমনি এই রক্তিম মেঘও অস্তরাগের আবেশে নিস্তব্ধ হয়ে গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ে ডুবে যায়। মেঘটির মধ্যে রয়েছে সন্ধ্যার বিষণ্ণতা, ক্লান্তি ও গাম্ভীর্য। এটি যেন বাংলার আকাশের এক নিস্পন্দ, বিষাদময় চিত্র।
আকাশে সাতটি তারা কবিতার বড়ো প্রশ্ন উত্তর
১ ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় কবি বাংলার সন্ধ্যার যে চিত্র এঁকেছেন তা উল্লেখ করো।
উত্তর: চিত্ররূপময় কবিতার স্রষ্টা জীবনানন্দ দাশ তাঁর ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় বাংলার সন্ধ্যাকে এক অপূর্ব, লাবণ্যময় রূপে উপস্থাপন করেছেন। কবির চোখে সন্ধ্যা হয়ে উঠেছে এক কেশবতী রূপসী কন্যা, যার চুল ছুঁয়ে যায় কবির চোখ-মুখ, ছড়িয়ে দেয় এক অন্তরঙ্গ আবেগ।
অস্তগামী সূর্যের রক্তিম আভায় রাঙা মেঘ পশ্চিম আকাশকে রাঙিয়ে গঙ্গাসাগরের বুকে ডুব দেয়। তার পরেই ধীরে ধীরে প্রকৃতির বুকে নামে শান্ত-অনুগত নীল সন্ধ্যা। সেই সন্ধ্যা যেন কেশবতী কন্যা, যার চুল হিজল, কাঁঠাল, জামের শাখা-পাতায় ছড়িয়ে দেয় স্নেহভরা চুম্বন।
এই সন্ধ্যায় কবি অনুভব করেন বাংলার প্রাণস্পর্শ – নরম ধান, কলমি গাছ, হাঁসের পালক, শর, পুকুরের জল এবং চাঁদা-সরপুঁটির মৃদু ঘ্রাণ। কিশোরীর চালধোয়া ভেজা হাতের শীতলতায় তিনি খুঁজে পান মায়া-মমতার ছোঁয়া। প্রকৃতির মধ্যেই অনুভব করেন কিশোরের পায়ে-দলা মুথাঘাস এবং নীরবে ঝরে পড়া পাকা বটফলে এক নির্মল ব্যথার অনুভব।
এভাবেই কবি এক অনাড়ম্বর অথচ চিরায়ত বাংলার সান্ধ্য-প্রকৃতিকে চিত্ররূপে তুলে ধরেছেন, যেখানে প্রকৃতি ও মানবীয় আবেগ একাকার হয়ে গিয়েছে। ‘আকাশে সাতটি তারা’ শুধুই প্রকৃতিচিত্র নয়, এটি এক মানবিক অভিজ্ঞতা ও সৌন্দর্যচেতনারও গভীর প্রকাশ।
২. ‘পৃথিবীর কোনো পথ এ কন্যারে দেখে নি কো’— ‘এ কন্যা’ কাকে বলা হয়েছে? কন্যার সৌন্দর্যের পরিচয় দাও।
উত্তর: আলোচ্য পঙ্ক্তিটি জীবনানন্দ দাশের ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতা থেকে নেওয়া। এখানে ‘এ কন্যা’ বলতে কবি বোঝাতে চেয়েছেন বঙ্গপ্রকৃতিতে নেমে আসা শান্ত, কোমল ও কেশবতী রূপসী সন্ধ্যার কথা। কবির চোখে এই সন্ধ্যা এক অনন্যা রমণীরূপে ধরা দিয়েছে, যাকে পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায় না।
এই কেশবতী কন্যার সৌন্দর্য চিরায়ত, স্নিগ্ধ এবং মোহময়। সন্ধ্যার রূপ ও সৌরভ কবির মনে প্রেম-আবেশ জাগায়। কবির মতে, এই কন্যার চুল যেন কৃষ্ণরঙা মেঘের মতো, যা ছুঁয়ে যায় কবির চোখ-মুখ। সেই চুল ঝরে পড়ে কাঁঠাল, হিজল ও জামের পাতায় পাতায় স্নেহচুম্বন হয়ে। বাংলার প্রকৃতির গন্ধ, রং ও মায়ায় ভরা এই সন্ধ্যাকে কবি এক রূপসী কন্যারূপে অনুভব করেছেন।
তিনি বলেছেন—
“জানি নাই এত স্নিগ্ধ ঝরে রূপসীর চুলের বিন্যাসে”,
যা বাংলার সান্ধ্য প্রকৃতির অপরূপ রূপ ও মাধুর্যকে প্রকাশ করে।
৩. ‘কামরাঙা-লাল মেঘ যেন মৃত মনিয়ার মতো’
প্রসঙ্গসহ মেঘকে কবি মৃত মনিয়ার মতো বলেছেন কেন?
উত্তর: জীবনানন্দ দাশের ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় কবি অস্তগামী সূর্যের আলোয় রাঙা আকাশে ভেসে থাকা মেঘের রঙ ও অবস্থান বর্ণনা করতে গিয়ে উপর্যুক্ত উক্তিটি বলেছেন।
অস্তরাগে রাঙা আকাশে ছড়িয়ে থাকা কামরাঙা-লাল রঙের মেঘ কবির মনে করিয়ে দেয় একটি মৃত মনিয়া পাখির চিত্র। জীবনের শেষপ্রহরে ছটফট করতে করতে মনিয়া যেমন নিস্তব্ধ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে, তেমনি ওই রক্তিম মেঘরাশি ধীরে ধীরে ডুবে যায় গঙ্গাসাগরের বুকে। এ যেন জীবনের ক্ষণস্থায়িত্ব ও মৃত্যুর অনিবার্যতাকে প্রতীকীভাবে প্রকাশ করে। মেঘের সেই সাময়িক রূপসৌন্দর্য যেমন বিলীন হয়ে যায় সন্ধ্যার আঁধারে, তেমনি জীবনের মোহময় রঙও মিলিয়ে যায় মৃত্যুর নিস্তব্ধতায়। তাই কবি এই দৃশ্যকে ‘মৃত মনিয়ার মতো’ বলে তুলনা করেছেন।
৪. আকাশে সাতটি তারা’ কবিতার প্রথম স্তবক তথা অষ্টকে গ্রামবাংলার সন্ধ্যার যে-ছবি ফুটে উঠেছে, তা কবিতা অবলম্বনে লেখো।
উত্তর: জীবনানন্দ দাশের ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতার অষ্টকে গ্রামবাংলার এক মোহময় সন্ধ্যার চিত্র ফুটে উঠেছে। অস্তরাগে আকাশ রাঙিয়ে ওঠে, মেঘ হয়ে যায় “কামরাঙা-লাল মেঘ যেন মৃত মনিয়ার মতো।” এই লালচে মেঘগুলো গঙ্গাসাগরের বুকে ডুবে যায়, ঠিক যেন কোনো পাখির নিথর দেহ জলে হারিয়ে যাচ্ছে।
তারপর ধীরে ধীরে নেমে আসে সন্ধ্যা, মাটির কাছাকাছি হয় তার নীল আবরণ। কবি সন্ধ্যাকে কল্পনা করেন এক রূপসী কেশবতী কন্যারূপে—যার “অজস্র চুলের চুমা হিজলে কাঁঠালে জামে ঝরে অবিরত।” এই সন্ধ্যার চুলের মতো আঁধারে ঝরে পড়ে এক স্নিগ্ধ সৌরভ, যা কবিকে বিমুগ্ধ করে তোলে। এরপর আকাশে একে একে জ্বলে ওঠে সাতটি তারা। এইভাবে কবি বাংলার সান্ধ্যপ্রকৃতিকে রূপ, গন্ধ ও কল্পনায় এক অনুপম রূপমালায় বেঁধেছেন।
আরও দেখো: আবহমান কবিতার প্রশ্ন উত্তর