পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা রচনা // ক্লাস 5, 6, 7, 8, 9, মাধ্যমিক ছাত্রছাত্রীদের জন্য

এখানে পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা সম্পর্কে রচনা লিখে দেওয়া হয়েছে। রচনাটি ১০০, ২৫০, ৪০০, ৫০০ শব্দের। Class 5, Class 6, Class 7, Class 8, Class 9, মাধ্যমিক সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা রচনা: ১

ভূমিকা:

একটি দেশের একটি জাতির মেরুদণ্ড হল ছাত্রসমাজ। তারা দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। মহাবিশ্বে মাটি, জল, বাতাস, অরণ্য, পর্বত ইত্যাদি পার্থিব উপাদানগুলি নিয়ে আমাদের পরিবেশ গঠিত। মানুষ গড়ে তুলেছে তার নতুন সভ্যতা, নিজের পরিবেশ। মানুষ যবে থেকে পরিবেশের দাস না হয়ে প্রভু হয়ে বসেছে, তখন থেকে পরিবেশের অঙ্গে শুরু হয়েছে দূষণজনিত পচনক্রিয়া।

দৈনন্দিন জীবনে দূষণের প্রভাব:

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আশপাশের পরিমন্ডলের দূষণক্লিষ্ট রূপটি উপেক্ষা করার মতো নয়। শহুরে পরিবেশে বাড়ির পাশের নর্দমা, আবর্জনার স্তূপ শুধু দুর্গন্ধই ছড়ায় না; তা মশা, মাছিবাহিত নানা রোগের উৎসও বটে। এ ছাড়া আছে যানবাহনের আওয়াজ, কলকারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া-যা এক কথায় প্রাণঘাতী। গ্রামে পানীয় জল প্রায়ই আর্সেনিকযুক্ত। পুকুর-ডোবা মশামাছির রাজ্য, যেখানে-সেখানে মল-মূত্রের ছড়াছড়ি। বৃষ্টির জলে তা মিশে পুকুরের জল হয় অব্যবহার্য।

পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রসমাজের ভূমিকা:

শহরে ও গ্রামেগঞ্জে পারিপার্শ্বিক পরিবেশের উন্নয়নে ছাত্রসমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতেই পারে। শহরে ও গ্রামে সর্বত্রই শিক্ষার্থীরা আছে। তা ছাড়া স্কুলপর্যায় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পরিবেশ শিক্ষা এখন পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা পরিবেশ শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে নানা ধরনের ফিল্ডওয়ার্ক ও সমীক্ষার কাজও করছে। ফলে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ সম্পর্কে শিক্ষা ও সচেতনতার আলোকে তারা আমজনতাকে সচেতন করবে এটাই কাঙ্ক্ষিত। তাদের লব্ধ শিক্ষা হবে বাস্তবায়িত। প্রথমেই তারা পরিবেশ দূষিত হওয়ার কারণগুলি সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করিয়ে তাদের বাড়ির ভিতরে ও চারপাশে গাছ লাগাবে। প্রতিবেশীদের ‘গাছ লাগান, প্রাণ বাঁচান’ বলে উৎসাহিত করবে।

হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ইত্যাদির নিকটবর্তী অঞ্চলে জোরে মাইক বাজালে, শব্দবাজি পোড়ালে বা গাড়ির হর্ন বাজালে প্রতিকারের জন্য থানায় খবর দেবে। শহরাঞ্চলে আবর্জনা পরিষ্কার, জলনিকাশি ব্যবস্থা পরিদর্শন, পথের পাশে নর্দমায় মশামাছি ধ্বংস করা, খোলা হাইড্রেন বন্ধ করা ইত্যাদি অভিযানে ছাত্ররা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে। গ্রামাঞ্চলেও পরিবেশকে সুস্থ রাখার কাজে ছাত্ররা অশিক্ষিত মানুষদের শিক্ষিত ও সচেতন করে তোলার জন্য সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে। পুকুর-ডোবা পরিষ্কার করা, পথঘাট আবর্জনামুক্ত করা, যত্রতত্র মল-মূত্র ত্যাগ না করা-এসব বিষয়ে মানুষকে বুঝিয়ে সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারে।

উপসংহার:

যুগে যুগে ছাত্ররাই সমাজ গঠন ও পরিবেশ রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেছে। দেশের এই তরুণ প্রাণশক্তি যদি সবদিক থেকে শক্তিশালী ও আত্মনির্ভরশীল হয়, তবে দেশ উন্নতি চরম শিখরে উঠতে পারে।

পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা রচনা: ২

ভূমিকা:

উদ্ভিদ ও জীবজগৎ-সহ যে প্রাকৃতিক ঘেরের মধ্যে আমরা বাস করি, তা-ই হল পরিবেশ। প্রাকৃতিক নিয়মে এই পরিবেশের মধ্যে যুগ যুগ ধরে ভারসাম্য রক্ষিত হয়ে আসছে বলে জীবকুল আজও পৃথিবীতে সুস্থ- স্বাভাবিকভাবে বসবাস করতে পারছে। আমাদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্যরক্ষার একটি অনিবার্য সম্পর্ক রয়েছে।

আধুনিক যন্ত্রসভ্যতা ও পরিবেশের ভারসাম্য:

আধুনিক যন্ত্রসভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্যে সংকটের সূচনা ঘটেছে। জীবনযাপনের সুখস্বাচ্ছন্দ্যের জন্য আমরা হাতের কাছে পেয়েছি অজস্র উপকরণ, গড়ে উঠেছে বড়ো বড়ো কলকারখানা। দ্রুতগামী যানবাহন থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক কম্পিউটার-সবই আজ আমাদের হাতে। মানুষ জেনেছে পারমাণবিক মহাশক্তির রহস্য। কিন্তু এসবের জন্য আমরা অবহেলা করেছি পরিবেশকে। যত বেশি আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতিতে উল্লসিত হয়েছি তার থেকে অনেক কম মনোযোগ দিয়েছি পরিবেশের ভারসাম্যের দিকে।

ভারসাম্যের সংকট:

বাতাসে, জলে, মাটিতে দেখা দিয়েছে মারাত্মক দূষণ। অজস্র যানবাহন আর কলকারখানা থেকে প্রতি মুহূর্তে বের হচ্ছে বিষাক্ত ধোঁয়া। বনজঙ্গল কেটে নগরায়ণ করতে গিয়ে এবং শিল্পের প্রসার ঘটাতে গিয়ে কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাইঅক্সাইড ও সালফার ডাইঅক্সাইডের মতো বিষাক্ত গ্যাসে ভরে গেছে বাতাস। রাসায়নিক সার, কীটনাশক ওষুধ এবং কলকারখানা থেকে যে বর্জ্য পদার্থ বের হচ্ছে, তা থেকে দূষিত হচ্ছে নদী, সমুদ্র ও ভূগর্ভের জল; দূষিত হচ্ছে মাটি। শব্দদানবতো আজকের যুগের একটি বড়ো সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। যানবাহনের শব্দ, বাজি ও মাইকের আওয়াজে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। পরিবেশের এই ভারসাম্যহীনতায় একদিকে যেমন দেখা দিচ্ছে অতিবৃষ্টি অনাবৃষ্টি, অন্যদিকে নানা অসুখবিসুখ।

ভারসাম্যরক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা:

পরিবেশকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশের ভারসাম্যরক্ষায় বৃক্ষরোপণ ও বনসংরক্ষণ খুবই জরুরি। ছাত্রছাত্রীরা পরিকল্পিতভাবে রাস্তার ধারে, বিদ্যালয়ে কিংবা পোড়ো জমিতে বৃক্ষ রোপণ করতে পারে। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য কিংবা জল ও বাতাসকে যথাসম্ভব বিশুদ্ধ রাখার জন্য তারা সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তোলার দায়িত্ব গ্রহণ করবে। এর জন্য তারা আলোচনা সভা, পথ-নাটিকা প্রভৃতির আয়োজন করতে পারে উপসংহার: সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য একটা সুস্থ পরিবেশ খুবই প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের একটি গুরুদায়িত্ব রয়েছে। তারা বয়সে তরুণ, তাদের দেহে-মনে আছে অদম্য প্রাণশক্তি। যারা আজকের ছাত্রছাত্রী, ভবিষ্যতে তারাই হবে দেশের দায়িত্বশীল নাগরিক। সুতরাং এখন থেকে তারা যদি সচেতন হয় ও সক্রিয় ভূমিকা নেয় তাহলে পরিবেশকে রক্ষা করা অসম্ভব হবে না।

আরও দেখো: একটি খাঁচায় বন্দী পাখির আত্মকথা রচনা

পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা রচনা: ৩

ভূমিকা:

আমরা যেখানে বাস করি, তার পারিপার্শ্বিক পরিমণ্ডলকেই বলা হয় ‘পরিবেশ’। গাছ যেমন সজল মাটি, অবাধ আলো এবং উৎকৃষ্ট সার পেলে সতেজভাবে বেড়ে ওঠে, আমাদের বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠাটাও যেন ঠিক অনুরূপ। আমাদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য চাই উৎকৃষ্ট পরিবেশ।

পরিবেশদূষণ কেন হয়?

আমাদের বেঁচে থাকার জন্য সুস্থ পরিবেশের বড়ো অভাব। বেশিরভাগ সময়েই দেখা যায়, আমাদের ঘরের পাশেই নালানর্দমা। তার নিকাশিব্যবস্থাও ঠিক নেই। ফলে, জল জমে এবং এই জমে-থাকা জলে মশা, রোগসৃষ্টিকারী কীটপতঙ্গ আশ্রয় নেয়। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, কলেরা প্রভৃতি নানান রোগের সৃষ্টি হয় এই পরিবেশে। কেবল জল জমা নয়, ছাইপাঁশ, মাছের আঁশ, পচা খাবার, কাঁঠালের ভুতি, শালপাতা, খাবারের প্যাকেট ইত্যাদি জমিয়ে ঘরের পাশে তৈরি করি আবর্জনার পাহাড়। এই আবর্জনা ভীষণ অস্বাস্থ্যকর। এরা হল নানান রোগের উৎস।

সুস্থ পরিবেশের উপাদান আলো ও বাতাস:

বিশেষভাবে সূর্যের আলো এবং বাতাসের ওপর পরিবেশের ভালোমন্দ নির্ভর করে। সূর্যের আলোর অভাবে বাসগৃহগুলি অনেক সময় ভিজে ও স্যাঁতসেঁতে হয়ে থাকে। চারদিকের নোংরা আবহ পরিবেশকে করে তোলে অস্বাস্থ্যকর। এই ধরনের পরিবেশে যারা বাস করে, তারা সারাবছর ধরে নানা অসুখে ভোগে। এই প্রেক্ষিতে বলা যায়, পরিবেশ উন্নয়নে আলো ও বাতাস খুবই জরুরি।

ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা:

সুস্থ পরিবেশের জন্য চাই নাগরিক-সচেতনতা। নাগরিকরা যদি নিজেরা নিজেদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হন, তা হলে তাঁরা পরিবেশকেও পরিচ্ছন্ন রাখার প্রতি সচেষ্ট হবেন। এ ব্যাপারে অবশ্য সরকার, পুরসভা, পঞ্চায়েত এবং স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগ ও পরিকল্পনা থাকা দরকার। তবে এ ব্যাপারে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্রদের জীবনটাই তো সুন্দর, পবিত্র, নির্মল। তারা নিয়মিতভাবে স্কুলের পরিবেশ সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন রাখায় কার্যকারী ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে। তাই সামাজিক পরিবেশ রক্ষার্থেও তাদের এগিয়ে আসতে হবে। তারা যেমন হাতেকলমে পরিচ্ছন্নতার কাজ করবে, তেমনি নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য তাদের সামনে নিজেরা কাজ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে, আলাপ-আলোচনা করবে, পদযাত্রা করে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করবে। ছাত্ররা প্রথমে তাদের গৃহ-পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর করবে। তারপর তারা প্রতিবেশীদের পরিবেশকে সুন্দর করার চেষ্টা করবে। এইভাবে তারা বৃহত্তর সমাজে নিজেদের আদর্শের কথা ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হবে। ফলে সমাজের সবচেয়ে সচেতন অংশ যে ছাত্রসমাজ, তাদের আচার-আচরণ দেখে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হবে এবং পরিবেশ সুন্দর হয়ে উঠবে।

উপসংহার:

পল্লির নিকাশিব্যবস্থা এবং বাসগৃহের পাশে পরিচ্ছন্নতা রক্ষার্থে আবাসিকদের সচেতন করার দায়িত্বও নিতে পারে ছাত্রছাত্রীরা। প্রয়োজনে দলবেঁধে সাফাইয়ের কাজেও নেমে পড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারে। তারা জনসাধারণকে দেখাতে পারে, বাড়ির আবর্জনা কোথায় ফেলতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে আবাসিকদের সচেতন করতে ছাত্রছাত্রীরাই পারে।

পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা রচনা: ৪

“এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার ”

সুকান্ত ভট্টাচার্য

ভূমিকা :

উদ্ভিদ ও জীবজগৎ-সহ যে প্রাকৃতিক ঘেরের মধ্যে আমরা বাস করি, তাই হল পরিবেশ। প্রাকৃতিক নিয়মে এই পরিবেশের মধ্যে যুগ যুগ ধরে ভারসাম্য রক্ষিত হয়ে আসছে বলে জীবকুল আজও পৃথিবীতে সুখ-স্বাভাবিকভাবে বসবাস করতে পারছে। আমাদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার সাথে পরিবেশের ভারসাম্যরক্ষার একটি অনিবার্য সম্পর্ক রয়েছে।

যান্ত্রিক সভ্যতা ও পরিবেশের ভারসাম্য:

আধুনিক যুগের যন্ত্রসভ্যতা প্রসারের কারনে পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে। বৃক্ষ ছেদন, নগরায়ন, কলকারখানা নির্মান, পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার প্রভূতির ফলে পরিবেশ নানাভাবে দূষিত হচ্ছে। তবুও আমরা বিজ্ঞান প্রযুক্তি নিয়ে মেতে রয়েছি। উপযুক্ত মনোযোগ দিতে পারিনি পরিবেশ ভারসাম্যের দিকে।

ভারসাম্যের সংকটকালীন অবস্থা:

বর্তমানে বায়ু, জল, মাটি ভীষনভাবে দূষিত হচ্ছে। কল- কারখানার বিষাক্ত ধোয়া বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইড, কার্বন – মনোক্সাইডের, পরিবেশের বিষাক্ত গ্যাসের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলছে। কৃষিক্ষেত্রে বিষাক্ত সারের ব্যবহার, কল- কারখানার বর্জ্য পদার্থ দ্বারা জল দূষিত হচ্ছে। যানবাহনের শব্দ, বাজির শব্দ, শব্দ দূষনের মাত্রাকে তরান্বিত করছে। যার ফলে খরা, বন্যা বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হচ্ছে।

ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা:

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য ছাত্রছাত্রীদের অপরিসীম ভূমিকা রয়েছে। যথা –

(১) নিজের এলাকার আবর্জনা যাতে জমতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখা। আবর্জনা জমা হলেও তবে তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফাঁকা স্থানে পুড়িয়ে ফেলা।

(২) জল দূষণরোধ করতে নিজের এলাকায় ব্যবহৃত জলাশয়ে গবাদিপশুর স্নান ও পুকুর পাড়ে প্রাতঃকৃত্য বন্ধ করা।

(৩) রাস্তার ধারে বিদ্যালয় কিংবা পড়ে থাকা জমিতে বৃক্ষ- রোপন কর্মসূচী নেওয়া ও বন সংরক্ষন করা।

(৪) বে-আইনিভাবে গাছ কাটা বন্ধ করা।

(৫) ইলেকট্রিক হর্ন বাজানো বন্ধ করা।

সচেতনতার প্রসার ঘটানো:

বেতার, দূরদর্শন, চলচ্চিত্রের সাহায্য নিয়ে জল, বাতাস বিশুদ্ধ রাখার জন্য মানুষকে সচেতন করা সম্ভব। এছাড়া ছাত্রছাত্রীরা স্থানীয় এলাকায় পরিবেশ ভারসাম্যতা নিয়ে সভা ও পথ নাটিকার আয়োজন করতে পারে।

উপসংহার:

জীবনে সুস্থভাবে বাঁচার জন্য প্রয়োজন বিশুদ্ধ পরিবেশ। আজকের ছাত্রসমাজ ভবিষ্যতের সচেতন দ্বায়িত্বশীল নাগরিক। সে কারণে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তাদের সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। তাই ছাত্র সমাজ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হবে –

“অন্ন চাই, প্রান চাই, আলো চাই, চাই মুক্ত বায়ু
চাই বল, চাই স্বাস্থ্য, আনন্দ উজ্জ্বল পরমায়ু।”

আরও দেখো: পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা

পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা রচনা: ৫

ভূমিকা:

“তোমাদের পথ যদিও কুয়াশাময়, উদ্দাম জয়যাত্রার পথে জেনো ও কিছুই নয়।”

সুকান্ত ভট্টাচার্য

মানুষের চরিত্র গঠনে আর তার ব্যক্তিত্বের বিকাশে পরিবেশের বিরাট প্রভাব থাকে। এক কথায় পরিবেশই তার জীবনের নিয়ন্ত্রণ শক্তি। আজকের ছাত্র সমাজ প্রাণশক্তিতে ভরপুর।

পরিবেশ কাকে বলে:

Environ কথাটির অর্থ হল- ঘিরে থাকা। তাই পরিবেশ কথার সাধারণ অর্থ হলো- যা পরিবেষ্টন করে থাকে।

শিক্ষা বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গিতে, পরিবেশ হল ব্যক্তির চারপাশে অবস্থিত সেই সকল উপাদান, ঘটনা, প্রতিষ্ঠান, মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণীর সমাবেশ যা কোনো না কোনোভাবে ব্যক্তিকে উদ্দীপ্ত ও প্রভাবিত করে এবং যার দ্বারা তার ব্যক্তিসত্তার বিকাশ নির্ধারিত হয়।

এই পরিবেশ দুই প্রকার –
(১) একটি প্রাকৃতিক পরিবেশ
(২) অপরটি সামাজিক পরিবেশ।

প্রাকৃতিক পরিবেশ ও ছাত্রসমাজ:

প্রকৃতি আপন নিয়মে পৃথিবীতে প্রতিটি জীবনের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য যে উপাদানগুলি তৈরি করেছে সেই সমস্ত উপাদান গুলোকে নিয়েই প্রাকৃতিক পরিবেশ হয়েছে। আবহাওয়া, জলবায়ু, প্রাকৃতিক সম্পদ, প্রাকৃতিক পরিবেশের আওতায় আসে।

সামাজিক পরিবেশ ও ছাত্রসমাজ:

পরিবারের সকল সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, শিক্ষক-শিক্ষিকা, প্রতিবেশী, নিয়ম কানুন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি নিয়েই সামাজিক পরিবেশ গঠিত।

ছাত্রসমাজ নিয়মিত স্কুল-কলেজের পরিবেশ সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

পরিবেশ দূষণ:

পরিবেশ দূষিত হচ্ছে বলেই পরিবেশ সুরক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশের প্রধান উপাদান হলো- জল, আলো ও বায়ু বা বাতাস। এই তিনটি উপাদানই আজ দূষিত হয়ে পড়ছে।

বিভিন্ন কলকারখানার নোংরা জল ও কেমিক্যাল পদার্থ প্লাস্টিক এই সমস্ত নদী-নালা পুকুরে জলাশয়ে পড়ে জলে খারাপ ব্যাকটেরিয়া জন্ম দিচ্ছে, যা পরিবেশের থাকা গাছপালা মানুষ ও ইত্যাদির জন্য প্রাণঘাতক।

আবার বাস, গাড়ি, বিভিন্ন জ্বালানির ব্যবহারে যে কার্বন-ডাই অক্সাইড তৈরি হচ্ছে তার জন্য আমাদের পৃথিবীপৃষ্ঠে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি এসে পড়ছে। যা পরিবেশে উপস্থিত প্রত্যেক বস্তু জীব প্রভৃতির জন্য ক্ষতিকারক।

এই অতিবেগুনি রশ্মি ফলে মানুষের চামড়ার ক্যান্সার বেশি পরিমাণে হচ্ছে বা বাড়ছে। কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ার জন্য আজ আমাদের বায়ু দূষিত হয়ে পড়ছে। একটু একটু করে আমাদের পরিবেশকে শেষ করে ফেলছে।

বায়ু দূষিত হওয়ার ফলে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে মানুষের মধ্যে। ধুলোবালির জন্য ফুসফুস জনিত রোগ হচ্ছে।

পরিবেশ রক্ষার্থে ছাত্র সমাজের করণীয়:

ছাত্র সমাজ হাতে কলমে যেমন পরিচ্ছন্নতার কাজ করবে তেমনি সশরীরে পরিবেশ সুরক্ষায় কাজ করে জন মানবের মধ্যে সচেতনতার সৃষ্টি করবে। বিজ্ঞাপন, সভা, আলোচনার মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায় মানুষজনদের জাগরিত করতে হবে।

ছাত্র সমাজকে আগে নিজেদের বাড়ির পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর করতে হবে। তারপর প্রতিবেশীদের মধ্যে পরিবেশ সুরক্ষার গুরুত্ব বুঝিয়ে সচেতন করতে হবে। এভাবে সমাজের পরিবেশ সুরক্ষার আদর্শের কথা ছড়িয়ে দিতে হবে।

পল্লীর নিকাশী ব্যবস্থা করতে হবে। বাড়ি ঘরের আশেপাশে নোংরা জমতে দেওয়া যাবে না। নর্দমা পরিষ্কার রাখতে হবে।

আবর্জনা ফেলার জন্য পরিবেশের উপযোগী ব্যবস্থা করতে হবে, ছাত্রসমাজকে ছোট বড় দল গঠন করে পরিবেশ সুরক্ষায় চারদিকে ছড়িয়ে দিতে হবে।

ছাত্র ছাত্রীদের পাশাপাশি মানুষজনদের এগিয়ে আসতে হবে পরিবেশ রক্ষার কাজে। যাতে করে আমরা উপহার দিতে পারি তার ব্যবস্থায় তৎপর হতে হবে।

উপসংহার:

পরিবেশ যদি দূষিত হয়ে পড়ে তবে জীবদের স্বাভাবিক কাজ গুলো বন্ধ হয়ে যাবে এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে পড়বে। এই পরিবেশ দূষণ বর্তমান ভবিষ্যৎ দুই প্রজন্মেরই ক্ষতিসাধন করবে।

তাই ছাত্র সমাজকে উৎসাহমূলক কাজকর্ম দ্বারা পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে, যাতে সকলেই তাদের সাথে মিলিত ভাবে কাজ করে। বেশ কিছু ভালো ভালো পদক্ষেপ নিয়েছে পরিবেশ রক্ষার জন্য। পরিবেশ সুরক্ষায় এই ধরনের আরো ভালো ভালো পদক্ষেপের প্রয়োজন। পরিবেশ সুরক্ষার কাজে ছাত্রসমাজ বেশ দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা নিচ্ছে।

আরও দেখো: বিশ্ব উষ্ণায়ন রচনা

Leave a Comment

CLOSE

You cannot copy content of this page