আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু প্রবন্ধ রচনা ।। একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি বিজ্ঞানী

এখানে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু সম্পর্কে ১২০ টি, ৩০০ টি ও ৪০০ টি শব্দের মধ্যে প্রবন্ধ রচনা লিখে দেওয়া হলো।

আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু প্রবন্ধ রচনা: ১২০ টি শব্দের মধ্যে

জগদীশচন্দ্র বসু ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ৩০ নভেম্বর বর্তমান বাংলাদেশের ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ভগবান চন্দ্র বসু ও মা বামাসুন্দরী দেবী। তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি এস সি ডিগ্রী লাভ করেন। দেশে ফিরে তিনি কলেজে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন।
ক্ষুদ্র বেতার তরঙ্গ নিয়ে কাজ করে তিনি সাফল্য লাভ করেন। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার দ্বারা জগদীশচন্দ্র প্রকাশ করেন যে গাছের প্রাণ আছে, তারাও উদ্দীপনায় সাড়া দেয়। বিজ্ঞান ক্ষেত্রে অবদানের জন্য জগদীশচন্দ্র বসু ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে নাইটহুড উপাধি লাভ করেন।
তিনি ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে রয়াল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন। বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য তিনি বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। তার লেখা অব্যক্ত গ্রন্থটি বাংলা সাহিত্যের সম্পদ। তিনি ভারতকে বিজ্ঞান জগতে মর্যাদার আসন দান করেন। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে এই মহান বিজ্ঞানীর জীবনবাসন হয়।

আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু প্রবন্ধ রচনা: ৪০০ টি শব্দের মধ্যে
ভূমিকা:

“বিজ্ঞানলক্ষ্মীর প্রিয় পশ্চিম মন্দিরে
দূর সিন্ধুতীরে
হে বন্ধু গিয়েছ তুমি; জয়মাল্যখানি
সেথা হতে আনি
দীনহীনা জননীর লজ্জানত শিরে
পরায়েছ ধীরে।”

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কথাগুলি যে বাঙালি বিজ্ঞানীর উদ্দেশ্যে রচিত, তিনি শুধু বাঙালি হিসেবে নন, চিরকালের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্যতম হিসেবেও পরিচিত। তিনি জগদীশচন্দ্র বসু।

জন্ম ও শিক্ষা:

১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশের ময়মনসিংহে এই বাঙালি বিজ্ঞানী জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ভগবান চন্দ্র বসু এবং মাতার নাম বামাসুন্দরী দেবী। ফরিদপুরে জগদীশচন্দ্রের বাল্য শিক্ষার সূচনা হয়। ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে তিনি সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে বিএ পাস করেন এবং ওই বছরেই ইংল্যান্ড যাত্রা করেন। তিনি কেমব্রিজ থেকে বিজ্ঞানে অনার্স সহ বিএ এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি পাস করেন। ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিএসসি উপাধি লাভ করেন।

অধ্যাপনা ও বসু বিজ্ঞান মন্দিরের প্রতিষ্ঠা:

১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি এমেরিটাস অধ্যাপক রূপে অবসর গ্রহণ করেন। অধ্যাপনা থেকে অবসর গ্রহণের পরে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বসু বিজ্ঞান মন্দির।

গবেষণা ও আবিষ্কার:

জগদীশচন্দ্র বসুর বৈজ্ঞানিক গবেষণাগুলিকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা যেতে পারে।

প্রথম পর্যায়: অতি ক্ষুদ্র বৈদ্যুতিক তরঙ্গের মধ্যেও যে দৃশ্য আলোকের সকল ধর্ম বর্তমান তা নিজের উদ্ভাবিত যন্ত্রের সাহায্যে প্রমাণ করেন। এই পর্যায়ে তিনি বিনা তারে বার্তা প্রেরণের পদ্ধতি আবিষ্কার করেন।

দ্বিতীয় পর্যায়: তার এই পর্যায়ের গবেষণার অন্যতম বিষয় ছিল জৈব ও অজৈব পদার্থের উত্তেজনার ফলে সাড়ার সমতা। তিনি প্রথম মানুষের স্মৃতিশক্তির অজৈব মডেল বা যান্ত্রিক নমুনা তৈরি করেন। এই আবিষ্কার পরবর্তীকালের রেডার, ইলেকট্রনিক হিসাব যন্ত্র প্রভৃতি আবিষ্কারের পথ প্রশস্ত করে দিয়েছে।

তৃতীয় পর্যায়: এই পর্যায়ে জগদীশচন্দ্র উদ্ভিদের ওপর প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উত্তেজনার ফলাফল সম্বন্ধে গবেষণা করেন। উদ্ভিদের জল শোষণ বা সালোকসংশ্লেষ সম্পর্কেও তার গবেষণা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তিনি গবেষণার প্রয়োজনে ক্রেসকোগ্রাফ, স্ফিগমোগ্রাফ, পোটোমিটার প্রভৃতি যন্ত্র আবিষ্কার করেন।

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সঙ্গে যোগাযোগ:

আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী। সেই সঙ্গে তিনি ছিলেন একজন সাহিত্য রসিক। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সঙ্গে তার নিবিড় যোগ ছিল। রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন “বিজ্ঞান ও রস সাহিত্যের প্রকোষ্ঠ সংস্কৃতির ভিন্ন ভিন্ন মহলে, কিন্তু তাদের মধ্যে যাওয়া আসার দেনা পাওনার পথ আছে। জগদীশ ছিলেন সেই পথের পথিক।”
জগদীশচন্দ্র বিজ্ঞানের বিষয়কে যেভাবে সহজ বাংলায় লিখেছিলেন তাতে বোঝা যায় তার মধ্যে একটি সাহিত্যিক সত্তাও ছিল। তার ‘অব্যক্ত’ নামে গ্রন্থটি তার সাহিত্যিক সত্তার পরিচয় বহন করে।

উপসংহার:

জগদীশ চন্দ্র তার কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ দেশে-বিদেশে প্রচুর সম্মান লাভ করেছেন। তবে দেশবাসীর পক্ষ থেকে পাওয়া আন্তরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসাই তার জীবনের সেরা স্বীকৃতি। তিনি বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী হয়েও মর্মে মর্মে ছিলেন একজন খাঁটি বাঙালি। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ নভেম্বর এই বিজ্ঞান সাধকের জীবনাবসান হয়।

আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু প্রবন্ধ রচনা: ৩০০ টি শব্দের মধ্যে
ভূমিকা:

যে সমস্ত বৈজ্ঞানিক ভারতবর্ষকে জগত সভ্যতায় শ্রেষ্ঠ আসন এনেদিয়েছেন, যাদের গৌরবোজ্জ্বল কৃত্তিতে আজও আমরা গর্বিত বোধ করি তাদেরই একজন হলেন বাঙালি বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশচন্দ্র বোস। জগদীশচন্দ্রের স্পর্শে বাঙালির বৈজ্ঞানিক মনন পেয়েছিল এক সার্বিক স্বীকৃতি।

জন্ম ও শিক্ষা:

জগদীশচন্দ্র বসুর জন্ম ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে ৩০ নভেম্বর। জন্মস্থান ময়মনসিংহ হলেও, তার বাড়ি আদি বাড়ি ঢাকা জেলার রাঢ়িখাল গ্রাম। পিতার নাম ভগবানচন্দ্র বসু, একজন ডেপুটি কালেক্টর।

ফরিদপুর শহরে ঈশান বিদ্যালয় প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করে তিনি কলকাতায় এসে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হন। এখান থেকেই তিনি ১৮৮০ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে।

এরপর তিনি কেমব্রিজ থেকে বিএ এবং লন্ডন থেকে বিএস সি পাস করেন। এরপর দেশে ফিরে প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন।

কিন্তু কর্মরত অবস্থায় তিনি তিন বছর কোন বেতন গ্রহণ করেননি। ভারতীয় এবং শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে বেতন ; কাঠামোগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে এই ছিল তার আশ্চর্য প্রতিবাদ।

আবিষ্কার:

জগদীশচন্দ্র বসুর সমগ্র গবেষণা ধারাকে তিনটি পর্যায়ে বিন্যস্ত করা যায়। প্রথম- বিদ্যুৎ, দ্বিতীয়- চুম্বক তরঙ্গ, তৃতীয়- উদ্ভিদ ও প্রাণীর পেশির মধ্যে তুলনামূলক শারীর বিদ্যা বিষয়ক গবেষণা।

প্রাথমিকভাবে জগদীশচন্দ্র বসুই বিনা তারে বার্তা প্রেরণের উপায় আবিষ্কার করে। তিনি একমাইল দূরত্বে বেতার বার্তা পাঠানোর পরীক্ষা নিরীক্ষায় সফল হয়েছিলেন।

কিন্তু ইতালির বিজ্ঞানী মাকারী বেতার যন্ত্রের আবিষ্কারক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। কারণ জগদীশচন্দ্র ইউরোপে গিয়ে নিজের আবিষ্কার সর্বসমক্ষে দেখানোর আগেই মার্কনি দু মাইল দূরে বিনা তারে সংবাদ পাঠানোর উপায় উদ্ভাবন করেন।

তিনি ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে ৩০ নভেম্বর বসু বিজ্ঞান মন্দির আবিষ্কার করেন। এই বসু বিজ্ঞান মন্দির বিজ্ঞান সাধনা ও বিজ্ঞান চর্চার মহা তীর্থভূমি।

সাহিত্য প্রীতি:

বিজ্ঞান গবেষণার সাথে জগদীশচন্দ্র বসু সাহিত্য সৃষ্টিতেও অসামান্য কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন।
রবীন্দ্রনাথ ও জগদীশচন্দ্রের পারস্পরিক চিঠিগুলি বিজ্ঞান সাধক ও সাহিত্য সাধকের নিবিড় বন্ধুত্বের সম্পর্ক যেমন প্রকাশ, তেমনি জগদীশচন্দ্রের সাহিত্য প্রীতির দিকটিও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
অব্যক্ত গ্রন্থে সাহিত্য স্রষ্টা জগদীশ চন্দ্রের লেখক মনের পরিচয় মেলে। তার লেখা ভ্রমণ কাহিনীগুলিতে অন্য এক জগদীশ চন্দ্রের পরিচয় পাঠকের সামনে এসে উপস্থিত হয়।

উপসহার:

বর্তমানে বাংলা ভাষায় যে উন্নততর জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার প্রবণতা দেখা দিয়েছে, আচার্য জগদীশচন্দ্রের বিজ্ঞান গবেষণার মধ্যেই তার প্রকৃত সূত্রপাত ঘটেছিল।
তিনি এক অব্যক্ত জগতের প্রাণের বাণী সমগ্র পৃথিবীর সামনে উন্মোচন করে দিয়েছেন।

—————–০——————

আরও দেখুন: পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা ১৫০, ২৫০, ৩৫০ শব্দের মধ্যে

ক্যাটাগরি: সমস্ত রচনা তালিকা

জগদীশ চন্দ্র বসু সম্পর্কে কয়েকটি প্রশ্ন উত্তর
১. কে কবে বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন?

উত্তর: আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের ৩০ নভেম্বর বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।

২. জগদীশচন্দ্র বসু বিখ্যাত কেন?

উত্তর: জগদীশচন্দ্র বসু একজন বিজ্ঞানী হিসেবে বিখ্যাত। তিনি প্রথম প্রমাণ করেন উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে।

৩. জগদীশচন্দ্র বসু কোন বিষয়ের অধ্যাপক ছিলেন?

উত্তর: জগদীশচন্দ্র বসু পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন।

৪. জগদীশচন্দ্র বসু কোন কলেজে অধ্যাপনা করতেন?

জগদীশচন্দ্র বসু কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনা করতেন।

৫. জগদীশচন্দ্র বসু কত সালে জন্মগ্রহণ করেন?

উত্তর: জগদীশচন্দ্র বসু ১৮৫৮ সালের ৩০ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন।

৬. জগদীশচন্দ্র বসু রচিত গ্রন্থের নাম কী?

উত্তর: জগদীশচন্দ্র বসু রচিত গ্রন্থের নাম অব্যক্ত ।

৭. জগদীশচন্দ্র বসুর মায়ের নাম কি?

উত্তর: জগদীশচন্দ্র বসুর মায়ের নাম বামাসুন্দরী দেবী।

Leave a Comment

CLOSE

You cannot copy content of this page