এখানে অদ্ভুত আতিথেয়তা গল্পের প্রশ্ন উত্তর শেয়ার করা হলো। অষ্টম শ্রেণী বাংলা / অদ্ভুত আতিথেয়তা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
অষ্টম শ্রেণী
বিষয়: বাংলা
অদ্ভুত আতিথেয়তা গল্পের হাতে কলমে প্রশ্ন উত্তর
উৎস: ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘আখ্যানমঞ্জুরী’ গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
১.১ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কোন কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন?
উত্তর: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন।
১.২ তাঁর রচিত দুটি গ্রন্থের নাম লেখাে।
উত্তর: তাঁর রচিত দুটি গ্রন্থ হল—“শকুন্তলা ও ‘বেতাল পঞ্চবিংশতি’।
২. নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর দাও :
২.১ অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে কোন্ কোন সেনাপতির প্রসঙ্গ রয়েছে ?
উত্তর: ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে আরবসেনাপতি ও মুরসেনাপতির প্রসঙ্গ রয়েছে।
২.২ ‘তিনি, এক আরবসেনাপতির পটমণ্ডপদ্বারে উপস্থিত হইয়া, আশ্রয় প্রার্থনা করিলেন।উদ্ধৃতাংশে তিনি বলতে কার কথা বােঝানাে হয়েছে ?
উত্তর: উদ্ধৃতাংশে তিনি বলতে মুরসেনাপতির কথা বােঝানাে হয়েছে।
২.৩ উভয় সেনাপতির কথােপকথন হইতে লাগিল।—উভয় সেনাপতি’ বলতে এখানে কাদের কথা বলা হয়েছে ?
উত্তর: ‘উভয় সেনাপতি’ বলতে এখানে মুরসেনাপতি ও আরবসেনাপতির কথা বলা হয়েছে।
২.৪ তাহা হইলে আমাদের উভয়ের প্রাণরক্ষার সম্ভাবনা।—প্রাণরক্ষার কোন উপায় বা এক্ষেত্রে বলেছেন?
উত্তর: প্রাণরক্ষার উপায় হিসেবে আরবসেনাপতি জানান, মুরসেনাপতি দ্রুতবেগে তার আয়ত্তের বাইরে যেতে পারলেই তাদের উভয়ের প্রাণরক্ষা সম্ভব। |
২.৫ ‘আপনি সত্বর প্রস্থান করুন। – বক্তা কেন উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে ‘সত্বর প্রস্থান করার নির্দেশ দিলেন ?
উত্তর: বক্তা আরব সেনাপতি জেনেছিলেন যে উদ্দিষ্ট ব্যক্তিই (মুর সেনাপতি) তাঁর পরমশত্রু, সূর্যোদয়ের পরেই তিনি উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে আঘাত করতে সচেষ্ট হবেন। তাই সূর্যোদয়ের পূর্বেই বক্তা উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে সত্বর সেই স্থান থেকে প্রস্থান করার নির্দেশ দিয়েছেন।
৩. নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর লেখাে :
৩.১ “তাঁহার দিভ্রম জন্মিয়াছিল।”—এখানে কার কথাবলা হয়েছে ? দিকভ্রম হওয়ার পরিণতি কী হল ?
উত্তর: এখানে ‘তাহার’ বলতে মুর সেনাপতির কথা বলা হয়েছে।
দিভ্রম হওয়ার ফলে মুর সেনাপতি নিজের সেনাশিবিরে না। পৌঁছে ভুল করে বিপক্ষীয় সেনাশিবিরের সামনে গিয়ে উপস্থিত হন এবং আরব সেনাপতির আনুকুল্যে আরব সেনাশিবিরে আশ্রয়র লাভ করেছিলেন।
৩.২ ‘আতিথেয়তা বিষয়ে পৃথিবীতে কোনও জাতিই আরবদিগের তুল্য নহে। এই বক্তব্যের সমর্থন গল্পে কীভাবে খুঁজে পেলে?
উত্তর: পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত “অদ্ভুত আতিথেয়তা” গল্পে আরব জাতির অতুলনীয় আতিথেয়তার পরিচয় পাওয়া যায়। এক মুর সেনাপতি পথ হারিয়ে ক্লান্ত ও অবসন্ন অবস্থায় আশ্রয়ের জন্য আরব সেনাপতির শিবিরে উপস্থিত হলে, শত্রু জেনেও আরব সেনাপতি তাঁকে সাদরে গ্রহণ করেন। তিনি তাঁর ক্ষুধা-তৃষ্ণা নিবারণের ব্যবস্থা করেন এবং বিশ্রামের সুযোগ দেন। পরে জানতে পারেন, ওই মুর সেনাপতিই তাঁর পিতার হত্যাকারী। প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি অতিথি ধর্ম পালন করেন এবং পালিয়ে যাওয়ার জন্য এক দ্রুতগামী ঘোড়ারও ব্যবস্থা করেন। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে আতিথেয়তায় পৃথিবীতে আরবদের তুলনা নেই।
৩.৩ সহসা আরবসেনাপতির মুখ বিবর্ণ হইয়া গেল। -আরবসেনাপতির মুখ হঠাৎ বিবর্ণ হয়ে ওঠার কারণ কী ?
উত্তর: আরব শিবিরে আশ্রয় পাওয়ার পর মুর সেনাপতি ও আরব সেনাপতি বন্ধুভাবে আলাপ করছিলেন। তারা পরস্পরের পূর্বপুরুষদের সাহসিকতা ও যুদ্ধকৌশল নিয়ে আলোচনা করছিলেন। কথোপকথনের মধ্যেই আরব সেনাপতি বুঝতে পারেন যে মুর সেনাপতিই তাঁর পিতার হত্যাকারী। এই সত্য জানার পরও আতিথেয়তার নিয়ম মেনে তিনি তৎক্ষণাৎ প্রতিশোধ নিতে পারেননি। পিতৃহন্তাকে আশ্রয় দেওয়ার বেদনাদায়ক উপলব্ধিতে তাঁর মানসিক যন্ত্রণা চরমে পৌঁছায়, ফলে সহসা তাঁর মুখ বিবর্ণ হয়ে যায়।
৩.৪ ‘সন্দিহানচিত্তে শয়ন করিলেন।’—এখানে কার মনের সন্দেহের কথা বলা হয়েছে ? তাঁর মনের এই সন্দেহের কারণ কী?
উত্তর: আলোচ্য উদ্ধৃতিতে মুর সেনাপতির মনের সন্দেহের কথা বলা হয়েছে।
আরব সেনাপতি ও মুর সেনাপতি যখন নিজেদের পূর্বপুরুষদের সাহসিকতা ও বীরত্বের গল্প করছিলেন, তখন হঠাৎই আরব সেনাপতি বিবর্ণ মুখে সেখান থেকে চলে যান। পরে তিনি সংবাদ পাঠান যে অসুস্থতার কারণে উপস্থিত থাকতে পারলেন না, তবে মুর সেনাপতির আহার ও বিশ্রামের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি, ভোরে তাঁর জন্য দ্রুতগামী ঘোড়া প্রস্তুত থাকবে এবং সেই সময়ই তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে।
এই আচরণে বৈপরীত্য লক্ষ্য করে মুর সেনাপতির মনে সন্দেহ জাগে। তিনি ভাবতে থাকেন, আরব সেনাপতি কি সত্যিই অসুস্থ, নাকি কোনো কৌশল রচনা করছেন? শত্রুর শিবিরে অবস্থান করায় তাঁর মনে আরও বেশি আশঙ্কা জন্মায়, তাই তিনি ‘সন্দিহানচিত্তে শয়ন করিলেন।’
৩.৫ ‘ ..তাঁহার অনুসরণ করিতেছিল ; …’- কে, কাকে অনুসরণ করছিলেন ? তাঁর এই অনুসরণের কারণ কী?
উত্তর: প্রশ্নোধৃত উক্তি অনুযায়ী আরবসেনাপতি মুরসেনা পতিকে অনুসরণ করছিলেন।
আরব সেনাপতি কথোপকথনের মাধ্যমে জানতে পারেন যে মুর সেনাপতিই তাঁর পিতার হত্যাকারী। আতিথেয়তার নিয়মের কারণে তিনি তখনই প্রতিশোধ নিতে পারেননি, তবে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, সূর্যোদয়ের পর এই হত্যার বদলা নেবেন। তাই তিনি মুর সেনাপতিকে ভোর হওয়ার আগেই দ্রুতগামী ঘোড়া দিয়ে বিদায় করেন।
মুর সেনাপতি আরব সেনাপতির কথায় বিশ্বাস করে দ্রুত ঘোড়া ছুটিয়ে শিবির ত্যাগ করেন। কিন্তু প্রতিশোধের প্রতিজ্ঞায় আরব সেনাপতি তাঁকে হত্যা করার জন্য পিছন থেকে অনুসরণ করতে থাকেন।
৪. প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে :
৪.১ ‘যাহাতে আপনি সত্বর প্রস্থান করিতে পারেন, তদবিষয়ে যথােপযুক্ত আনুকূল্য করিব।’
উৎস: আলোচ্য উদ্ধৃতিটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের লেখা ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গ: আতিথেয়তা রক্ষা ও পিতৃহন্তার প্রতিশোধ গ্রহণ—এই দুটি বিপরীতমুখী টানাপোড়েনে দ্বিধান্বিত আরব সেনাপতি অতিথির প্রাণ রক্ষার প্রসঙ্গে কথাটি বলেছেন।
তাৎপর্য: আরব জাতির আতিথেয়তাবোধ পৃথিবীর অন্য সব জাতির থেকে শ্রেষ্ঠ। পরম বন্ধু ভেবে নিজেদের ও পূর্বপুরুষদের কীর্তিগাথা বর্ণনার সময় আরব সেনাপতি অতিথি মুর সেনাপতির কথা থেকে বুঝতে পারেন যে, এই ব্যক্তিই তাঁর পিতার হত্যাকারী। কিন্তু সৌজন্যের কারণে সেই মুহূর্তে তিনি প্রতিশোধ নিতে পারেন না। তাঁকে অতিথির প্রাণ বাঁচাতে হবে, আবার পিতার মৃত্যুর প্রতিশোধও নিতে হবে। এই দুয়ের টানাপোড়েনে তিনি দুটি দিকই বজায় রাখতে গিয়ে কথাটি বলেছেন।
৪.২ ‘এই বিপক্ষ শিবির-মধ্যে, আমা অপেক্ষা আপনকার ঘোরতর বিপক্ষ আর নাই।’
উৎস: আলোচ্য উক্তিটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গ: বক্তা আরব সেনাপতির পিতৃহন্তা মুর সেনাপতি যাতে তাঁর সংহারী রূপ থেকে রক্ষা পেতে পারে, তাকে তা জানানোর প্রসঙ্গেই আরব সেনাপতি কথাটি বলেছেন।
তাৎপর্য: আরব সেনাপতি মুর সেনাপতির কথাসূত্রে জানতে পারেন যে, ইনিই তাঁর পিতার হত্যাকারী। অথচ তিনি অতিথি। এই মুহূর্তে তাঁকে হত্যা করা অসম্ভব। আবার পিতার হত্যাকারীকে সমুচিত শাস্তি না-দিলে তিনি নিজের কাছে ভীরু প্রতিপন্ন হবেন। এই দুই টানাপোড়েনে আরব সেনাপতি মুর সেনাপতির কাছে ঈপ্সিত সত্য প্রকাশ করে নিজের স্বরূপ উদ্ঘাটন করে আলোচ্য কথাটি বলেছেন। এর দ্বারা তাঁর দুটি দিকই রক্ষা পেল বলে মনে হয়।
৪.৩ ‘আমাদের জাতীয় ধর্ম এই, প্রাণান্ত ও সর্বস্বান্ত হইলেও অতিথির অনিষ্টচিন্তা করি না।’
উৎস: আলোচ্য উক্তিটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গ: আরব জাতির অতিথিপরায়ণ মনোভাবের সম্যক পরিচয় দেওয়ার প্রসঙ্গেই কথাটি বলা হয়েছে।
তাৎপর্য: মুর সেনাপতির সঙ্গে কথোপকথনের সময়ই আরব সেনাপতি বুঝতে পারেন যে, মুর সেনাপতিই তাঁর পিতৃহন্তা। তখন তিনি শুধুমাত্র আতিথেয়তার কারণে তাঁকে হত্যা না করে অতিথির মতো সেবা করেন। আরব জাতির অতিথিসেবার প্রসঙ্গ বলতে গিয়ে লেখক প্রথমেই জানিয়েছেন, আতিথেয়তা বিষয়ে পৃথিবীর কোনো জাতিই আরব জাতির মতো নয়। কাহিনিতেও তার সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। আরব সেনাপতি, মুর সেনাপতির স্বরূপ জেনেও তাঁকে অতিথি হওয়ার কারণে সঙ্গে সঙ্গে হত্যা করতে পারেননি। উপরন্তু তাঁকে পালানোর পূর্ণ সুযোগ দিয়েছেন এবং পরে তাঁর পিছু নিয়েছেন। অর্থাৎ, এই ব্যবহারের মাধ্যমে আরব সেনাপতির আতিথেয়তাবোধ ও জাতীয় মর্যাদার কথাই প্রকাশিত হয়েছে।
অষ্টম শ্রেণী
বিষয়: বাংলা
অদ্ভুত আতিথেয়তা গল্পের হাতে কলমে প্রশ্ন উত্তর
৫. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখাে :
৫.১ গল্পে কার আতিথেয়তার কথা রয়েছে ? তিনি কীভাবে অতিথির আতিথেয়তা করেন ? তার সেই আতিথেয়তাকে ‘অদ্ভুত’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে কেন ?
উত্তর: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে জনৈক আরব সেনাপতির আতিথেয়তার কথা বলা হয়েছে।
রণক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত মুর সেনাপতি ভুলক্রমে আরব সেনাশিবিরের দ্বারে উপস্থিত হয়ে আরব সেনাপতির কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। শত্রুসেনার সদস্য বুঝেও আরব সেনাপতি তাঁকে আশ্রয় ও আহার-নিদ্রার সুব্যবস্থা করে দেন। শুধু তাই নয়, পরদিন সকালে অতিথি যাতে নির্বিঘ্নে নিজের শিবিরে ফিরে যেতে পারেন, তার জন্য এক তেজস্বী ঘোড়ারও ব্যবস্থা করেন। বিদায়কালে অতিথিকে উপযুক্ত সম্ভাষণ করে ঘোড়ায় আরোহণ করিয়ে দ্রুত শিবির ত্যাগের সুযোগ করে দেন।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, মুর সেনাপতির সঙ্গে বন্ধুভাবে আলাপচারিতার সময় আরব সেনাপতি বুঝতে পারেন, মুর সেনাপতির নির্দেশেই তাঁর পিতাকে হত্যা করা হয়েছে। একে তো দেশের শত্রু, তার উপর পিতৃহন্তা, সে আবার তাঁর নাগালের মধ্যেই উপস্থিত—ইচ্ছে করলেই তখন আরব সেনাপতি মুর সেনাপতিকে হত্যা করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি, কারণ মুর সেনাপতি তাঁর অতিথি। আর আরব জাতি প্রাণ দিয়েও অতিথির সেবা করে থাকে।
এই আতিথেয়তা সত্যিই ‘অদ্ভুত’। কারণ, একদিকে প্রতিশোধস্পৃহা, অন্যদিকে অতিথিসেবা—এই দুই-এর টানাপোড়েনে সুযোগ পেয়েও আরব সেনাপতি অতিথির প্রতি সামান্যতম বিরূপতা দেখাননি। আবার বিদায়কালে তাঁর শপথ ও প্রতিজ্ঞার কথা বলে অতিথিকে যথেষ্ট সতর্কও করেছেন। এইভাবে মনের ইচ্ছাকে প্রকাশ করেও তিনি আতিথ্য দেখিয়েছেন। তাই তাঁর এই বিরল ও বিস্ময়কর আতিথেয়তাকে ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
৫.২ আরব-মুর সংঘর্ষের ইতিহাসাশ্রিত কাহিনি অবলম্বনে রচিত এই আখ্যানে লেখকের রচনাশৈলীর অনন্যতার পরিচয় দাও।
উত্তর: সাহিত্য সমাজ-জীবনের দর্পণ। মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, সুখ-দুঃখ, ন্যায়-নীতি সাহিত্যে ফুটে ওঠে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে আরব-মুর সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে এক অনন্য রচনাশৈলীর পরিচয় পাওয়া যায়।
এই কাহিনির প্রথমেই আরব সেনাপতির আতিথেয়তা পাঠকদের মুগ্ধ করে। কিন্তু যখন জানা যায় যে অতিথি আরব সেনাপতির পিতৃহন্তা, তখন তাঁর নৈতিক দ্বন্দ্ব গল্পকে আরও নাটকীয় করে তোলে। একজন যোদ্ধা হয়েও নীতির প্রতি অনুগত আরব সেনাপতি প্রতিশোধপরায়ণ না হয়ে অতিথির প্রতি কর্তব্যপালনে অটল থাকেন। নৈতিকতা, প্রতিশোধস্পৃহা ও অতিথিপরায়ণতার টানাপোড়েন গল্পটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
বিদ্যাসাগরের রচনাশৈলীর আরেকটি বিশেষত্ব হল তৎসম শব্দ ও সাধুভাষার ব্যবহার। গল্পে কিয়ৎক্ষণ, গাত্রোত্থান, পটমণ্ডপদ্বার, মুখরশ্মি, প্রাণসংহার প্রভৃতি তৎসম শব্দ ও সাধুগদ্যের প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। এছাড়া তিনি সমাসবদ্ধ ও সন্ধিবদ্ধ শব্দের ব্যবহারেও পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। যেমন—বিপক্ষতাচরণ, সাধ্যানুসারে, কিঞ্চিৎ, আহারস্থান, পিপাসাশান্তি ইত্যাদি শব্দ কাহিনিকে প্রাঞ্জল ও হৃদয়গ্রাহী করে তুলেছে।
বিদ্যাসাগর বাংলা গদ্যের প্রথম শিল্পী। তিনি সংস্কৃতের গুরুগাম্ভীর্য থেকে বাংলা গদ্যকে মুক্ত করে সহজ ও সরল ভাষায় ইতিহাসনির্ভর ঘটনা তুলে ধরেছেন। তাঁর গদ্য রচনার বিশেষত্ব হল, গভীর দার্শনিকতা ও নীতিবোধকে সরলভাবে উপস্থাপন করার ক্ষমতা। অদ্ভুত আতিথেয়তা গল্পে বিদ্যাসাগরের ভাষার স্বচ্ছতা, গভীরতা ও মানবিক মূল্যবোধের প্রকাশ ঘটেছে। তাই এই কাহিনি বাংলা গদ্যসাহিত্যের এক উজ্জ্বল ও অনন্যসাধারণ দৃষ্টান্ত।
৫.৩ ‘আতিথেয়তা বিষয়ে পৃথিবীর কোনাে জাতিই আরবদিগের তুল্য নহে’ গল্পের ঘটনা বিশ্লেষণ করে মন্তব্যটির যথার্থতা প্রতিপন্ন করাে।
উত্তর: আতিথেয়তা মানবসভ্যতার এক গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও নৈতিক গুণ। তবে আরব জাতি এই গুণের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। তারা অতিথিসেবা ও আশ্রয়প্রার্থীর রক্ষাকেই পরম ধর্ম বলে মনে করে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পের ঘটনাবলি এই মন্তব্যের যথার্থতা প্রমাণ করে।
গল্পে দেখা যায়, একজন রণক্লান্ত মুর সেনাপতি শত্রুপক্ষের (আরব) সেনাশিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। আরব সেনাপতি শত্রু জেনেও তাঁকে আশ্রয়, আহার ও বিশ্রামের ব্যবস্থা করে দেন। অথচ কথোপকথনের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, এই মুর সেনাপতিই তাঁর পিতার হত্যাকারী। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিশোধ নেওয়া খুবই স্বাভাবিক ছিল, কারণ তিনি তখন সম্পূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। কিন্তু আরব সেনাপতি শত্রু জেনেও আতিথেয়তা নীতি ভঙ্গ করেননি। বরং পরদিন সকালে তাঁর নিরাপদ প্রস্থানের ব্যবস্থা করেন এবং বিদায় সম্ভাষণ জানান।
আরব সেনাপতি স্পষ্ট ভাষায় জানান—
“আমাদের জাতীয় ধর্ম এই, প্রাণান্ত ও সর্বস্বান্ত হইলেও, অতিথির অনিষ্টচিন্তা করি না।”
অর্থাৎ, আতিথেয়তা তাদের জাতিগত ধর্ম এবং তারা প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তা পালন করে।
এখানেই আরব জাতির আতিথেয়তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ পায়। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন আত্মত্যাগ ও নীতিনিষ্ঠ আতিথেয়তার নজির খুবই বিরল। শত্রুকে সম্পূর্ণ আয়ত্তে পেয়েও তাঁকে অনিষ্ট না করা, বরং সসম্মানে বিদায় দেওয়া আরব জাতির অনন্য অতিথিপরায়ণতার প্রতীক। তাই “আতিথেয়তা বিষয়ে পৃথিবীর কোনাে জাতিই আরবদিগের তুল্য নহে”—এই মন্তব্য নিঃসন্দেহে যথার্থ।
৫.৪ “বন্ধুভাবে উভয় সেনাপতির কথােপকথন হইতে লাগিল।”—কোন দুই সেনাপতির কথা এখানে বলা হয়েছে ? তাঁদের কীভাবে সাক্ষাৎ ঘটেছিল ? উভয়ের কথােপকথনের সারমর্ম নিজের ভাষায় আলােচনা করাে।
উত্তর: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পের উল্লেখিত উক্তিতে আরব সেনাপতি ও মুর সেনাপতির কথোপকথনের প্রসঙ্গ এসেছে।
তাঁদের সাক্ষাতের ঘটনা:
মুর ও আরবদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছিল। একদিন এক মুর সেনাপতি শত্রুপক্ষের হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে ভুলক্রমে আরব সেনাশিবিরে প্রবেশ করেন। তিনি এতটাই ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত ছিলেন যে ঘোড়ায় চড়ার ক্ষমতাও ছিল না। আরব সেনাপতির কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলে তিনি বিনা দ্বিধায় শরণাগতকে সাদরে গ্রহণ করেন এবং আহার-নিদ্রার ব্যবস্থা করেন। এভাবেই বিপক্ষ দুই সেনাপতির সাক্ষাৎ ঘটে।
কথোপকথনের সারমর্ম:
বিশ্রামের সময় উভয় সেনাপতি নিজেদের জাতি, বীরত্ব, পূর্বপুরুষদের সাহস ও যুদ্ধকৌশল নিয়ে আলোচনা করতে থাকেন। কথোপকথনের একপর্যায়ে আরব সেনাপতি জানতে পারেন যে মুর সেনাপতিই তাঁর পিতার হত্যার নির্দেশদাতা। স্বাভাবিকভাবেই এটি একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা ছিল, কারণ একদিকে মুর সেনাপতি তাঁর জাতির শত্রু, অন্যদিকে তিনি তাঁর পিতার হত্যাকারী। কিন্তু আরব সেনাপতি প্রতিশোধ নেননি, বরং তাঁর অতিথির প্রতি আতিথেয়তা রক্ষা করেছেন।
কথোপকথনের মূল শিক্ষা:
আরব সেনাপতি শত্রুকে পেয়েও প্রতিশোধ না নিয়ে আরব জাতির আতিথেয়তার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তাঁদের শত্রুতার মাঝেও এক ধরনের সৌজন্য ও মানবিক মূল্যবোধের প্রকাশ ঘটে। লেখক এই ঘটনাকে আরব জাতির অসাধারণ অতিথিপরায়ণতার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেছেন এবং আমাদেরকেও মানবিক গুণাবলিতে অনুপ্রাণিত হতে উৎসাহিত করেছেন।
৫.৫ ‘তিনি নির্বিঘ্নে স্বপক্ষীয় শিবিরসন্নিবেশ স্থানে উপস্থিত হইলেন।’—কার কথা বলা হয়েছে? কীভাবে তিনি স্বপক্ষের শিবিরে নির্বিঘ্নে পৌছােলেন? তাঁর জীবনের এই ঘটনার পূর্বাত্রের অভিজ্ঞতার কথা নিজের ভাষায় আলােচনা করাে।
উত্তর: উল্লেখিত উদ্ধৃতিটি মুর সেনাপতির সম্পর্কে বলা হয়েছে। মুর সেনাপতি আরব সেনাপতির শিবিরে আশ্রয় নিয়ে রাতটি অতিবাহিত করেন এবং পরের দিন সূর্যোদয়ের আগেই নির্বিঘ্নে নিজের শিবিরে পৌঁছান।
কীভাবে তিনি স্বপক্ষের শিবিরে পৌঁছালেন:
আরব সেনাপতি তাঁর পিতৃঘাতী মুর সেনাপতির শত্রু হলেও অতিথির প্রতি আতিথেয়তা প্রদর্শন করে তাঁকে কোনো ক্ষতি করেননি। পরদিন তিনি মুর সেনাপতিকে নিরাপদে তাঁর শিবিরে ফিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করেন, এবং তেজস্বী, বলবান ঘোড়া প্রস্তুত রাখেন, যাতে মুর সেনাপতি দ্রুত তাঁর শিবিরে ফিরে যেতে পারেন। এভাবে, মুর সেনাপতি ঘোড়ার পিঠে চড়ে, সূর্যোদয়ের পূর্বেই নির্বিঘ্নে নিজ শিবিরে পৌঁছান।
পূর্বের অভিজ্ঞতা:
এর আগে, মুর সেনাপতি আরব সেনাপতির শিবিরে রাতে অতিথি হিসেবে ছিলেন, এবং আরব সেনাপতি তাঁর প্রতি বিশেষ সহানুভূতি দেখান। দুই সেনাপতির মধ্যে জাতীয় গৌরব, পূর্বপুরুষদের সাহসিকতা নিয়ে আলোচনা চলছিল। হঠাৎ করে আরব সেনাপতি উঠে গিয়ে কিছুটা অসুস্থতার অজুহাতে শয্যায় ফিরে যান এবং মুর সেনাপতির প্রতি আতিথেয়তার ব্যাপারে কিছুটা সন্দেহ সৃষ্টি হয়। তবে, শেষ পর্যন্ত তিনি বুঝতে পারেন না কেন আরব সেনাপতি এত অদ্ভুত আচরণ করেছেন। মুর সেনাপতি তখন মানসিক অস্থিরতায় শয্যা গ্রহণ করেন।
এভাবে, অতিথি হিসেবে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা লাভের পর পরের দিন মুর সেনাপতি নির্বিঘ্নে তাঁর শিবিরে পৌঁছান, আর আরব সেনাপতির আতিথেয়তার ঘটনা মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে।
৫.৬ “তাঁহার অনুসরণ করিতেছিলেন…”—কার কথা বলা হয়েছে? তিনি কাকে অনুসরণ করছিলেন ? তাঁর এই অনুসরণের কারণ কী? শত্রুকে কাছে পেয়েও তিনি ‘বৈরসাধন সংকল্প সাধন করেননি কেন?
উত্তর: এখানে আরব সেনাপতির কথা বলা হয়েছে। তিনি মুর সেনাপতিকে অনুসরণ করছিলেন, যিনি তার পিতার হত্যাকারী। মুর সেনাপতি, যিনি তার শত্রু, রাত্রে আরব সেনাপতির শিবিরে অতিথি হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং পরের দিন সূর্যোদয়ের আগে শিবির ত্যাগ করেছিলেন।
অনুসরণের কারণ:
আরব সেনাপতি পিতার হত্যাকারী মুর সেনাপতিকে অনুসরণ করছিলেন কারণ তার অন্তরে প্রতিশোধের আগুন জ্বলছিল। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, মুর সেনাপতিকে ধরা মাত্র তিনি তার পিতার হত্যার প্রতিশোধ নেবেন। এই কারণেই তার অনুসরণের প্রবণতা ছিল।
বৈরসাধন সংকল্প সাধন না করার কারণ:
এমনকি মুর সেনাপতি তার শত্রু হলেও, আরব জাতি আতিথেয়তা বিষয়ে অতিরিক্ত যত্নশীল। অতিথিকে বিপদের মুখে ফেলার চিন্তা তারা কখনোই করেন না। শত্রুও যদি তাদের শিবিরে আশ্রিত থাকে, তবে তাদের শত্রুকে আঘাত বা কোনো ক্ষতি করতে না পারা আরবদের জাতীয় ধর্ম। এই কারণেই, শত্রুকে কাছে পেয়ে তিনি বৈরিতা সাধন করেননি। যতক্ষণ মুর সেনাপতি তার শিবিরে অতিথি ছিলেন, ততক্ষণ তাকে কোনো ক্ষতি করা তার কাছে অসম্ভব ছিল, কারণ আরব জাতি অতিথির সেবা ও রক্ষার জন্য সর্বস্বান্ত হতে প্রস্তুত থাকে।
অষ্টম শ্রেণী
বিষয়: বাংলা
অদ্ভুত আতিথেয়তা গল্পের হাতে কলমে প্রশ্ন উত্তর
৬. নীচের শব্দগুলির দলবিশ্লেষণ করে মুক্তদল ও রুদ্ধদল চিহ্নিত করাে : সংগ্রাম, অশ্বপৃষ্ঠ, দণ্ডায়মান, করমর্দন, তৎক্ষণাৎ
সংগ্রাম = সং – গ্রাম, [মুক্ত দল—শূন্য (0), রুদ্ধদল-সং’ ও ‘গ্রাম’ (২ টি)]।
অশ্বপৃষ্ঠ = অশ–শ(ব)-পৃষ -ঠ [মুকদল—“শ(ব), ‘ঠ’ (২ টি), রুদ্ধদল—‘অশ’, ‘পৃষ’ (২ টি)] )
দণ্ডায়মান = দন্-ডা-য়-মান্ [মুক্তদল-ডা’, ‘য়’ (২ টি), রুদ্ধদল- দন্-, ‘মান্’ (২ টি)]।
করমর্দন = কর-মর -দন্ [মুক্তদল ‘ক’, ‘র’ (২ টি), রুদ্ধদল—‘মর’, ‘দ (২ টি)]।
তৎক্ষণাৎ = তৎ-ক্ষ-ণাৎ [মুক্তদল—“ক্ষ” (১টি), রুদ্ধদল—তৎ’, ‘ণাৎ’ (২ টি)]।
৭. নির্দেশ অনুযায়ী বাক্য পরিবর্তন করাে:
৭.১ আরবেরা তাঁহার অনুসরণে বিরত হইলে, তিনি স্বপক্ষীয় শিবিরের উদ্দেশ্যে গমন করিতে লাগিলেন। (জটিল বাক্যে)
উত্তর: যখন আরবেরা তাঁহার অনুসরণে বিরত হইল, তখন তিনি স্বপক্ষীয় শিবিরের উদ্দেশ্যে গমন করিতে লাগিলেন।
৭.২ আতিথেয়তা বিষয়ে পৃথিবীতে কোনও জাতিই আরবদিগের তুল্য নহে। (ইতিবাচক বাক্যে)
উত্তর: আতিথেয়তা বিষয়ে পৃথিবীতে সকল জাতির কাছেই আরবেরা অতুলনীয়।
৭.৩ দ্বারদেশে উপস্থিত হইয়া দেখিলেন, তিনি সজ্জিত অশ্বের মুখরশ্মি ধারণ করিয়া দণ্ডায়মান আছেন। (যৌগিক বাক্যে)
উত্তর: তিনি দ্বারদেশে উপস্থিত হইলেন এবং তাকে সজ্জিত অশ্বের মুখরশ্মি ধারণ করিয়া দণ্ডায়মান অবস্থায়। দেখিলেন।
৭.৪ এই বিপক্ষশিবির-মধ্যে আমা অপেক্ষা আপনকার ঘােরতর বিপক্ষ আর নাই। (প্রশ্নবােধক বাক্যে)
উত্তর: এই বিপক্ষ শিবির মধ্যে আমা অপেক্ষা আপনার ঘােরতর বিপক্ষ আর কেউ আছে কি?
৭.৫ তিনি নির্বিঘ্নে স্বপক্ষীয় শিবিরসন্নিবেশ স্থানে উপস্থিত হইলেন। (না-সূচক বাক্যে)
উত্তর: স্বপক্ষীয় শিবিরসন্নিবেশস্থানে উপস্থিত হইতে তিনি কোনাে বিঘ্ন পাইলেন না।
অষ্টম শ্রেণী
বিষয়: বাংলা
অদ্ভুত আতিথেয়তা গল্পের MCQ প্রশ্ন উত্তর
১. ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পটি রচনা করেন-
ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
খ) রামমোহন রায়
গ) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
ঘ) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
উত্তর: গ) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
২. একদা আরবদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছিল-
ক) অসুরদের
খ) মুরদের
গ) ভারতীয়দের
ঘ) সুরদের
উত্তর: খ) মুরদের
৩. দিভ্রম হয়েছিল-
ক) মুর সেনাপতির
খ) আরব সেনাপতির
গ) ভারতীয় সেনাপতির
ঘ) গ্রিক সেনাপতির
উত্তর: ক) মুর সেনাপতির
৪. মুর সেনাপতি প্রার্থনা করেছিল-
ক) জল
খ) খাদ্যদ্রব্য
গ) আশ্রয়
ঘ) বাসস্থান
উত্তর: গ) আশ্রয়
৫. পৃথিবীতে কোন্ জাতির আতিথেয়তা তুলনাহীন?
ক) মুরদের
খ) আরবদের
গ) গ্রিকদের
ঘ) ভারতীয়দের
উত্তর: খ) আরবদের
৬. মুর ও আরব জাতির প্রকৃত সম্পর্ক ছিল-
ক) মিত্রতার
খ) শত্রুতার
গ) আত্মীয়তার
ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর: খ) শত্রুতার
৭. আরব জাতি অনিষ্ট করে না-
ক) শত্রুর
খ) মিত্রর
গ) অতিথির
ঘ) বিজাতির
উত্তর: গ) অতিথির
৮. মুর সেনাপতি হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল-
ক) আরব সেনাকে
খ) আরব সেনাপতির পিতাকে
গ) আরব সেনাপতির ভ্রাতাকে
ঘ) আরব সেনাপতিকে
উত্তর: খ) আরব সেনাপতির পিতাকে
৯. উভয় সেনাপতির কথোপকথন হচ্ছিল-
ক) যুদ্ধক্ষেত্রে
খ) ময়দানে
গ) মুর শিবিরে
ঘ) আরব শিবিরে
উত্তর: ঘ) আরব শিবিরে
১০. আরব সেনাপতি মুর সেনাপতিকে দিয়েছিল-
ক) অশ্ব
খ) হস্তী
গ) অস্ত্র
ঘ) বর্ম
উত্তর: ক) অশ্ব
অষ্টম শ্রেণী
বিষয়: বাংলা
অদ্ভুত আতিথেয়তা গল্পের SAQ প্রশ্ন উত্তর
১: ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে কাদের বৈরতার কথা রয়েছে?
উত্তর: ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ গল্পে আরব জাতি ও মুর জাতির বৈরতার কথা রয়েছে।
২: আলোচ্য কাহিনিতে কে, কার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন?
উত্তর: আলোচ্য কাহিনিতে মুর সেনাপতি আরব সেনাপতির কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন।
৩: সহসা কার মুখ বিবর্ণ হয়েছিল?
উত্তর: সহসা আরব সেনাপতির মুখ বিবর্ণ হয়েছিল।
৪: ‘অশ্বপৃষ্ঠে আরোহণ করাইলেন।’-কে, কার প্রতি এমন আচরণ করেছিলেন?
উত্তর: আরব সেনাপতি মুর সেনাপতির প্রতি এমন আচরণ করেছিলেন।
৫: ‘পটমণ্ডপ’ কথাটির অর্থ লেখো।
উত্তর: ‘পট’ অর্থাৎ কাপড়, ‘মণ্ডপ’ অর্থে এখানে তাঁবু; অর্থাৎ ‘পটমণ্ডপ’ হল কাপড়ের তৈরি তাঁবু।
৬: ‘ক্লান্ত ও হতবীর্য হইয়াছে’-কার সম্পর্কে উক্তিটি করা হয়েছে?
উত্তর: মুর সেনাপতির ঘোড়াটি সম্পর্কে কথাটি বলা হয়েছে।
৭: কার নির্দেশে আরব সেনাপতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছে?
উত্তর: মুর সেনাপতির নির্দেশে আরব সেনাপতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছিল।
ক্লাস 8
বিষয়: বাংলা
অদ্ভুত আতিথেয়তা গল্পের সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
১. ‘আমাদের জাতীয় ধর্ম এই,’-বক্তা কে? তাদের জাতীয় ধর্ম কী?
উত্তর: বক্তা হলেন আরব সেনাপতি।
আরবদের জাতীয় ধর্ম হল- আরবগণ নিজের প্রাণের বিনিময়ে এবং সর্বস্বান্ত হলেও অতিথির কোনো অনিষ্টচিন্তা তারা কখনোই করে না।
২. ‘আহারাদির উদ্যোগ করিয়া দিলেন।’ -কে, কখন এমন উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন?
উত্তর: উদ্যোগ নিয়েছিলেন আরব সেনাপতি।
ক্লান্ত, অবসন্ন, ক্ষুধায় কাতর মুর সেনাপতি আরব সেনাপতির কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলে, তাঁকে ওইরূপ অবস্থায় দেখে আরব সেনাপতি তাঁকে আশ্রয় দেন এবং তখনই তিনি মুর সেনাপতির আহারাদির উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
৩. ‘আমার অতিশয় অসুখবোধ হইয়াছে।’-বক্তার এমন কথার কারণ লেখো।
উত্তর: বক্তা হলেন আরব সেনাপতি।
মুর সেনাপতির সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি জানতে পারেন যে, মুর সেনাপতিই তাঁর পিতৃহন্তা। সে-কথা জেনে তৎক্ষণাৎ তিনি গাত্রোত্থান করেন। কিন্তু অতিথি যাতে তাঁর আচরণে ক্ষুণ্ণ না-হন, তাই আরব সেনাপতি প্রশ্নোদ্ভূত কথাটি বলে পাঠান।
৪. আরব সেনাপতি হঠাৎ কেন গাত্রোত্থান করেন?
উত্তর: আরব সেনাপতি বুঝতে পেরেছিলেন মুর সেনাপতির নির্দেশেই তাঁর পিতাকে হত্যা করা হয়েছে, অর্থাৎ মুর সেনাপতিই তাঁর পিতৃহন্তা। এ কথা জানার পরেও তাঁর সঙ্গে একাসনে কথোপকথন করার মতো মানসিক অবস্থা কারও থাকে না, আরব সেনাপতির পক্ষেও তা সম্ভব হয়নি। তাই তিনি কথার মাঝেই গাত্রোত্থান করেন।
৫. আরব সেনাপতি কেন মুর সেনাপতির জন্য তেজস্বী ঘোড়ার ব্যবস্থা করেন?
উত্তর: মুর সেনাপতির ঘোড়াটি ক্লান্ত ও হতবীর্য হয়ে পড়েছিল। তাই সেই ঘোড়ায় চড়ে মুর সেনাপতি কিছুতেই নিজের শিবিরে দ্রুত পৌঁছোতে পারবেন না বলে আরব সেনাপতি মনে করেছেন। তাই তিনি মুর সেনাপতির সুবিধার্থে তেজস্বী ঘোড়ার ব্যবস্থা করেছিলেন।
৬. অতিথির প্রতি আরব জাতি কেমন আচরণ করেন?
উত্তর: অতিথি রূপে কেউ আরবদের গৃহে থাকলে, আরবরা সাধ্যানুসারে অতিথির সেবাযত্ন করেন। অতিথি যদি শত্রুও হন, তাহলেও তাদের প্রতি কোনো ধরনের অনাদর বা বিদ্বেষ প্রদর্শন করা হয় না। আরব জাতির আতিথেয়তার মূল বৈশিষ্ট্য হল, তারা অতিথিকে সর্বোচ্চ সম্মান দেয় এবং সর্বাত্মক সাহায্য করে, এমনকি শত্রু হলেও অতিথির প্রতি কোনো ক্ষতি করার চিন্তা করে না।
অষ্টম শ্রেণী
বিষয়: বাংলা
অদ্ভুত আতিথেয়তা গল্পের অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্তর
১. ‘আপনি সত্বর প্রস্থান করুন।’-প্রসঙ্গসহ উক্তিটির তাৎপর্য লেখো।
উত্তর: প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত ‘অদ্ভুত আতিথেয়তা’ নামক গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। মুর সেনাপতি যাতে নির্বিঘ্নে নিজের শিবিরে পৌঁছে যেতে পারেন-সেই প্রসঙ্গে আরব সেনাপতি উক্তিটি করেছেন।
আরব সেনাপতি জানেন মুর সেনাপতিই তাঁর পিতৃহন্তা ও চরম শত্রু, কিন্তু বর্তমানে তিনি তাঁরই অতিথি। তাঁর অনিষ্টসাধন সেই অবস্থায় করা হবে না। তবে সূর্যোদয় হলেই মুর সেনাপতি আরব শিবির ত্যাগ করলেই তিনি আর অতিথি থাকবেন না। তখনই তাঁকে আক্রমণ করবেন আরব সেনাপতি।
২. ‘আপনকার অনুসরণে প্রবৃত্ত হইব।’-কে, কখন এমন উক্তি করেছেন?
উত্তর: আরব সেনাপতি এমন উক্তি করেছিলেন।
মুর সেনাপতিকে তেজস্বী অশ্বে আরোহণ করিয়ে, তাঁকে বিদায় দেওয়ার সময় আরব সেনাপতি মুর সেনাপতিকে উদ্ধৃত কথাটি বলেছেন।
৩. ‘আমি শ্রবণমাত্র…’-বক্তা কে? তিনি শ্রবণমাই কী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন?
উত্তর: বক্তা হলেন আরব সেনাপতি।
মুর সেনাপতির নির্দেশেই আরব সেনাপতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছিল—এ কথা শোনামাত্রই আরব সেনাপতি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, সূর্যোদয় হলেই পিতৃহন্তার প্রাণবধসাধনে প্রাণপণে প্রবৃত্ত হবেন।
৪. ‘বারংবার এই শপথ ও প্রতিজ্ঞা করিয়াছি।’-বক্তা কোন্ প্রতিজ্ঞা করেছেন এবং কেন করেছেন?
উত্তর: বক্তা অর্থাৎ আরব সেনাপতি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে- সূর্যোদয় হলেই পিতৃহন্তার প্রাণনাশের চেষ্টায় আপ্রাণ প্রবৃত্ত হবেন।
মুর সেনাপতির সঙ্গে একাসনে বসে কথা বলার সময় আরব সেনাপতি জানতে পারেন যে মুর সেনাপতিই তাঁর পিতৃহন্তা। তখনই তিনি সেখান থেকে উঠে পড়েন কিন্তু মুর সেনাপতি অতিথি বলে তাঁর কোনোরূপ অনিষ্ট তিনি তখন করেননি। তবে অতিথিভাব দূর হলেই তিনি শত্রুকে শাস্তি দিতে পারবেন। তাই পিতৃহন্তাকে শাস্তিদানের উদ্দেশ্যে আরব সেনাপতি বারবার শপথ ও প্রতিজ্ঞা করেছিলেন।
ক্লাস ৮
বিষয়: বাংলা
অদ্ভুত আতিথেয়তা গল্পের অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্তর
লেখক পরিচিতি
বাংলা গদ্যসাহিত্যের একজন স্মরণীয় শিল্পী হলেন পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।
১৮২০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ সেপ্টেম্বর মেদিনীপুরের বীরসিংহ গ্রামে বিদ্যাসাগরের জন্ম হয়। তাঁর পিতার নাম ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাতা ভগবতী দেবী। তাঁর বাল্য ও কৈশোরকাল অতিবাহিত হয়েছিল অত্যন্ত দারিদ্র্যের মধ্যে। তাঁর প্রাথমিক বিদ্যাচর্চা শুরু হয়েছিল গ্রামের পাঠশালাতেই। পিতার সঙ্গে যখন তিনি কলকাতায় আসেন, তখন তাঁর বয়স মাত্র ৯ বছর। এখানে সংস্কৃত কলেজে তিনি ভরতি হন। পরবর্তীকালে এই কলেজের অধ্যক্ষও হয়েছিলেন তিনি (১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে)। শিক্ষা ও সমাজসংস্কারক রূপে তিনি স্মরণীয় কৃতিত্বের অধিকারী। শিক্ষা-পরিদর্শক হিসেবে তিনি বাংলার নানা স্থানে ঘুরেছেন এবং এদেশের শিক্ষাব্যবস্থার করুণ ছবি প্রত্যক্ষ করেছেন। তাঁর প্রচেষ্টায় দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ২০টি আদর্শ বিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছিল। তিনি নারীসমাজের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা অনুভব করেন। তাই নারীশিক্ষার প্রয়োজনে প্রায় ৩০টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন।
বিদ্যাসাগরের রচনাসমূহে উল্লেখযোগ্য হল ‘বোধোদয়’, ‘বর্ণপরিচয়’, ‘কথামালা’, ‘আখ্যানমঞ্জুরী’, ‘বেতাল পঞ্চবিংশতি’, ‘শকুন্তলা’, ‘ভ্রান্তিবিলাস’ প্রভৃতি। তিনি বিধবাবিবাহ প্রচলন, বহুবিবাহ রোধ প্রভৃতি সামাজিক সংস্কারের সঙ্গেও নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিলেন। তাঁর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে বিধবাবিবাহ আইনসিদ্ধ হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে বাংলা গদ্যসাহিত্যের প্রথম সার্থক শিল্পী বলে ভূষিত করেছেন।
১৮৯১ খ্রিস্টাব্দের ২৯ জুলাই বাংলা তথা দেশের গর্ব ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর পরলোকগমন করেন।
অষ্টম শ্রেণী
বিষয়: বাংলা
অদ্ভুত আতিথেয়তা গল্পের অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্তর
বিষয়সংক্ষেপ
আরব জাতির সঙ্গে মুর জাতির যুদ্ধে একদিন আরব সেনা একটি মুর সেনাপতির পিছু নেন। মুর সেনাপতি দিক হারিয়ে শত্রু সৈন্যের শিবিরে চলে যান এবং সেখানে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। একজন আরব সেনাপতি তাকে অতিথি হিসেবে আশ্রয় দেন এবং সেবা-যত্ন করে সুস্থ করে তোলেন। এরপর তারা উভয়ে একে অপরের পূর্বপুরুষের বীরত্ব ও যুদ্ধ কৌশল নিয়ে আলাপ করতে শুরু করেন।
হঠাৎ করে আরব সেনাপতি ভারাক্রান্ত মন নিয়ে উঠে যান এবং কিছুক্ষণ পর মুর সেনাপতিকে জানিয়ে দেন যে, তার শরীর অসুস্থ, তাই তিনি তার সেবা করতে পারছেন না। তবে মুর সেনাপতির ঘোড়ার অবস্থা দেখে, তাকে নিরাপদে তার শিবিরে ফিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেবেন।
রাত শেষে, মুর সেনাপতি যখন ঘুম থেকে ওঠেন, তিনি দেখতে পান আরব সেনাপতি তার ঘোড়ার মুখ ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। আরব সেনাপতি মুর সেনাপতিকে জানান, তিনি জানেন যে, মুর সেনাপতি তাঁর পিতাকে হত্যা করেছেন। তবে, তিনি সূর্যোদয়ের আগে কোনো ক্ষতি করবেন না, কারণ আরবদের জাতীয় ধর্ম অনুসারে, কোনো আশ্রিতকে তাদের শিবিরে হত্যা করা যায় না। তিনি মুর সেনাপতিকে সতর্ক করে দেন যে, সূর্যোদয়ের পর তাকে হত্যা করতে বেরোবেন, তবে যদি মুর সেনাপতি পালাতে পারেন, তবে তিনি বেঁচে থাকবেন। এরপর তিনি মুর সেনাপতিকে নিরাপদে তার শিবিরে ফিরে যাওয়ার জন্য সাহায্য করেন। মুর সেনাপতি ফিরে এসে তার শিবিরে প্রবেশ করেন এবং আরব সেনাপতি ফিরে যান।
আরও দেখো: বোঝাপড়া কবিতার প্রশ্ন উত্তর