এখানে বাঘ প্রবন্ধ রচনা 100, 200, 250, 300, 400 শব্দে শেয়ার করা হলো। বাঘের রচনা ।। বাংলা রচনা বাঘ ।। জাতীয় পশু বাঘ ।। বিশ্ব বাঘ দিবস
বাঘ প্রবন্ধ রচনা 100 শব্দে
জাতীয় পশু – বাঘ
বাঘ ভারতের জাতীয় পশু। এটি একটি হিংস্র ও মাংসাশী প্রাণী। বাঘের গায়ে হলুদ রঙের ওপর কালো ডোরাকাটা দাগ থাকে। এর চারটি পা, একটি লম্বা লেজ, দুটি কান ও ধারালো দাঁত-নখ রয়েছে। বাঘ সাধারণত জঙ্গলে বাস করে এবং হরিণ, বুনো শুয়োর, গরু ইত্যাদি শিকার করে মাংস খায়। সুন্দরবনের ‘রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার’ বিশ্ববিখ্যাত। বাঘ খুব ভালো সাঁতার কাটতে পারে এবং নিরবে চলাফেরা করতে পারে। বর্তমানে বন কমে যাওয়ার কারণে বাঘের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। তাই বাঘ সংরক্ষণে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
বিষয়: বাঘ প্রবন্ধ রচনা 200 শব্দে
বাঘ বনের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং ভয়ঙ্কর প্রাণী। এটি ভারতের জাতীয় পশু। বাঘ দেখতে অনেকটা বড় বিড়ালের মতো হলেও আকারে অনেক বড় ও শক্তিশালী। একটি পূর্ণবয়স্ক বাঘ প্রায় পাঁচ থেকে সাত হাত লম্বা এবং উচ্চতায় প্রায় দু’হাত হয়। এর চারটি পা, দুটি কান, দুটি চোখ এবং একটি বড় লেজ থাকে। সারা শরীর লোমে ঢাকা থাকে, মুখ গোলাকার এবং মুখে গোঁফ দেখা যায়।
বাঘের গায়ের রং সাধারণত হলদে, তার ওপর কালো ডোরা কাটা দাগ থাকে। আবার চিতাবাঘের গায়ে হলুদের ওপর কালো ছোপ দেখা যায়। নেকড়ে বাঘ আকারে তুলনামূলক ছোট হলেও এরা খুব ধূর্ত। বাঘের পায়ের তলায় নরম মাংস থাকে, ফলে চলাফেরার সময় কোনো শব্দ হয় না। তারা নিঃশব্দে শিকার ধরতে পটু।
বাঘ সাঁতার কাটতে পারে এবং গাছে উঠতেও সক্ষম। সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার সারা বিশ্বে বিখ্যাত। একটি বাঘিনী সাধারণত একসঙ্গে দুই থেকে তিনটি বাচ্চার জন্ম দেয় এবং তাদের শিকার ধরার কৌশল শেখায়।
বাঘ একটি মাংসাশী প্রাণী। তারা বনের জীবজন্তু শিকার করে খায়। এরা সাধারণত ২৫ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। ভারত, চীন, মায়ানমার (ব্রহ্মদেশ), আফ্রিকা প্রভৃতি দেশে বাঘ দেখা যায়। কোথাও কোথাও বিরল প্রজাতির সাদা বাঘও পাওয়া যায়।
বর্তমানে বাঘের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে। লোভী মানুষেরা বাঘের চামড়া ও অন্যান্য অঙ্গের জন্য অবাধে বাঘ হত্যা করছে। তাই সরকার আইন করে বাঘ শিকার নিষিদ্ধ করেছে এবং সংরক্ষিত বন তৈরি করেছে। আমাদের সকলের কর্তব্য এই জাতীয় পশুটিকে রক্ষা করা এবং প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখা।
বাঘ প্রবন্ধ রচনা 250 শব্দে
ভূমিকা:
বাঘের নাম শুনলেই আমাদের মনে ভয় জাগে। তবে এই হিংস্র প্রাণীই ভারতের জাতীয় পশু। মনে পড়ে সত্যজিৎ রায়ের ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’-এর সেই মজার বাঘমামার কথা। বাঘ হলো বিড়াল জাতীয় হিংস্র বন্যপ্রাণী, তবে আকারে অনেক বড়। পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার বিশ্ববিখ্যাত। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশসহ আরও কিছু রাজ্যে বাঘ দেখা যায়। ১৯৭২ সালে ভারত সরকার বাঘকে জাতীয় পশুর মর্যাদা দেয়।
বর্ণনা:
বাঘের দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি অত্যন্ত প্রখর হলেও ঘ্রাণশক্তি ততটা নয়। এর মুখ গোলাকার, গায়ের রং সাধারণত হলুদ এবং তাতে থাকে কালো ডোরাকাটা দাগ। বাঘের চারটি শক্তিশালী পা ও একটি লম্বা লেজ থাকে। এর তীক্ষ্ণ দাঁত ও ধারালো নখবিশিষ্ট থাবা দিয়ে এটি সহজেই শিকারকে কাবু করতে পারে। বাঘের থাবায় ভয়ানক জোর থাকে।
স্বভাব:
যদিও বাঘ হিংস্র, তবুও বাঘিনির মধ্যে রয়েছে মাতৃত্বের কোমল মমতা। বাঘিনী সাধারণত একসঙ্গে তিন-চারটি বাচ্চার জন্ম দেয় এবং তাদের শিকার ধরা ও সাঁতার কাটা শেখায়। আট মাস বয়সে বাচ্চাদের জঙ্গলে জীবনযুদ্ধের জন্য ছেড়ে দেয়। দেড় বছর বয়সে তারা পূর্ণাঙ্গ বাঘ হয়ে ওঠে। বাঘ সাধারণত দিনে ঘুমিয়ে কাটায় এবং রাতে শিকারে বের হয়। আগুনকে তারা খুব ভয় পায়। সুন্দরবনের লবণাক্ত জলের কারণে অনেক সময় বাঘের স্বভাব আরও হিংস্র হয়ে ওঠে।
উপসংহার:
বাঘ একটি মাংসাশী প্রাণী। হরিণ ও অন্যান্য ছোট প্রাণী এদের প্রধান খাদ্য। সুন্দরবনের হলুদ ডোরাকাটা বাঘ তার আকার, শক্তি ও হিংস্রতায় সবার সেরা। এজন্যই তাকে “রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার” বলা হয়। কিন্তু আজ সংরক্ষণের অভাবে এবং চোরাশিকারিদের হাতে বাঘের সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। তাই বাঘকে রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তাকে বাঁচিয়ে রাখাই প্রকৃতিকে রক্ষা করার একটি বড় দায়িত্ব।
বাঘ প্রবন্ধ রচনা 300 শব্দে
ভূমিকা:
বাঘ ভারতের জাতীয় পশু। এটি একটি শক্তিশালী, সাহসী ও হিংস্র মাংসাশী প্রাণী। সাধারণত এরা গভীর বন, নদী, ঝরনা বা জলাশয়ের কাছে বাস করে। নির্জন পরিবেশ এদের খুব প্রিয়।
আকৃতি:
বাঘ দেখতে বিড়ালের মতো হলেও আকারে অনেক বড়। একটি প্রাপ্তবয়স্ক বাঘ প্রায় চার-পাঁচ হাত লম্বা হয়। এদের চারটি পা, দুটি কান, দুটি চোখ ও একটি লেজ রয়েছে। সমস্ত শরীর ঘন লোমে আবৃত। গায়ের রং সাধারণত হলুদ, যার উপর কালো ডোরা দাগ থাকে। এদের চেহারা দেখলে ভয় ও বিস্ময় দুই-ই জাগে।
প্রকৃতি:
বাঘ খুব হিংস্র ও একাকী জীবনযাপনকারী প্রাণী। এটি অত্যন্ত চতুর ও দক্ষ শিকারি। রাত্রিবেলায় এরা শিকারে বের হয়। এদের দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি অত্যন্ত প্রখর। বাঘ সাধারণত পোষ মানে না। তবে কিছু বাঘকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সার্কাসে খেলা দেখানো হয়। বাঘ সাঁতার কাটতেও পারে এবং বেশি গরম সহ্য করতে পারে না।
জাতিভেদ:
বাঘ নানা জাতের হয়ে থাকে। যেমন—চিতাবাঘ, নেকড়ে বাঘ ও রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। চিতাবাঘের গায়ে ছোপ ছোপ দাগ থাকে ও আকারে বড় হয়। নেকড়ে বাঘের আকার তুলনামূলকভাবে ছোট হলেও খুব ধূর্ত ও হিংস্র। সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার পৃথিবীখ্যাত। এদের চেহারা বড় ও রাজসিক।
খাদ্য:
বাঘ একটি মাংসাশী প্রাণী। এটি হরিণ, মহিষ, বুনো শুকর, ছাগল প্রভৃতি প্রাণী শিকার করে খায়। সুযোগ পেলে এরা গৃহস্থের গরু-ছাগলও ধরে নিয়ে যায়। সাধারণত বাঘ মানুষ খায় না, তবে একবার মানুষের স্বাদ পেলে তা মানুষখেকো হয়ে ওঠে।
উপকারিতা ও অপকারিতা:
বাঘ প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দুর্বল ও অসুস্থ প্রাণীদের শিকার করে এরা জীবজগতে একটি সুস্থ ধারাকে বজায় রাখে। বাঘের চামড়া, দাঁত, নখ ও চর্বি থেকে ওষুধ ও নানা জিনিস তৈরি হয়। তবে মাঝে মাঝে এরা গৃহস্থের গবাদি পশু মেরে ফেলে ক্ষতি করে এবং জনবসতির কাছে এলে আতঙ্কের সৃষ্টি করে।
উপসংহার:
এশিয়া ও আফ্রিকার নানা অঞ্চলে বাঘ দেখা যায়। ভারতে পশ্চিমবঙ্গ, অসম, উড়িষ্যা, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র প্রভৃতি রাজ্যে বাঘ বাস করে। এদের আয়ুষ্কাল প্রায় পঁচিশ থেকে তিরিশ বছর। বর্তমানে বন ধ্বংস ও শিকারির হাতে এদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তাই সরকার এদের সংরক্ষণের জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। আমাদের সকলের উচিত এই জাতীয় পশুকে রক্ষা করা।
বাঘ প্রবন্ধ রচনা 400 শব্দে
ভারতের জাতীয় পশু — বাঘ
ভূমিকা:
বাঘ একটি চতুষ্পদ, হিংস্র বন্যপ্রাণী। এদের হিংস্রতার জন্য সকলে ভয় পায়। বাঘের মতো হিংস্র ও শক্তিশালী প্রাণী খুব কম দেখা যায়। এটি ভারতের জাতীয় পশু। বনজ প্রাণীদের মধ্যে বাঘ অত্যন্ত শক্তিশালী ও ভয়ঙ্কর। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনে বাসকারী রয়েল বেঙ্গল টাইগার জাতীয় পশুর মর্যাদা পেয়েছে।
আকৃতি:
বাঘের গায়ে কালো ডোরাকাটা দাগ থাকে, মুখ গোলাকার ও দুটি পিঙ্গল বর্ণের চোখ, চারটি পা, দুটি কান এবং একটি লেজ থাকে। সারা শরীর ঘন লোমে আবৃত এবং মুখে গোঁফ দেখা যায়। গায়ের রং সাধারণত হলুদাভ, যার ওপর কালো ডোরা থাকে। বাঘের দাঁত ও নখ খুবই তীক্ষ্ণ ও ধারালো। এরা লম্বায় দুই থেকে তিন মিটার এবং উচ্চতায় প্রায় এক মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। দেখতে অনেকটা বড় বিড়ালের মতো হলেও আকার ও গঠনে বিশাল ও ভয়ঙ্কর। এদের পায়ের তলায় নরম মাংস থাকে, ফলে চলাফেরার সময় কোনো শব্দ হয় না। এরা নিঃশব্দে শিকারের কাছে গিয়ে এক লাফে তার ঘাড়ে থাবা মেরে বড় প্রাণীকে সহজেই মেরে ফেলতে পারে।
প্রকৃতি:
বাঘ অত্যন্ত হিংস্র ও মাংসাশী প্রাণী। শিকার ধরার লোভ ও দক্ষতা এদের প্রবল। বাঘের শরীরে প্রচুর শক্তি থাকে। গরু, মোষ ইত্যাদি শিকারের পর মুখে তুলে নিয়ে খাল-নালা পেরিয়ে বহুদূরে চলে যেতে পারে। এরা শিকারের জন্য ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে থেকে সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। একবার নাগালের মধ্যে এলে শিকারের ঘাড়ে লাফিয়ে পড়ে এবং এক থাবায় তা শেষ করে দেয়। বাঘ ভালো সাঁতার কাটতে পারে এবং গাছে উঠতেও সক্ষম। এদের দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি প্রখর হলেও ঘ্রাণশক্তি অপেক্ষাকৃত দুর্বল। সাধারণত বনের জলের ধারে এদের বাস দেখা যায়, কারণ এরা গরম সহ্য করতে পারে না। বাঘ আগুনকে খুব ভয় পায়। একটি বাঘিনী একসঙ্গে তিন থেকে চারটি শাবক প্রসব করে এবং বড় হলে তাদের শিকার ধরার প্রশিক্ষণ দেয়। বাঘের গড় আয়ু প্রায় পঁচিশ থেকে তিরিশ বছর।
খাদ্য:
বাঘ একটি নিরেট মাংসাশী প্রাণী। মাংস ছাড়া এরা কিছুই খায় না। বনের হরিণ, বুনো শুকর, মহিষ ইত্যাদি শিকার করে খায়। সুযোগ পেলে গৃহস্থের গরু, ছাগল, ভেড়া এমনকি মানুষকেও হত্যা করতে দ্বিধা করে না।
প্রাপ্তিস্থান:
ভারত, চীন, নেপাল, থাইল্যান্ড, ভুটান, আফ্রিকা প্রভৃতি দেশে বাঘ দেখা যায়। কিছু কিছু অঞ্চলে সাদা বাঘও দেখতে পাওয়া যায়, যা বিরল।
উপসংহার:
আজকের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে, যারা বাঘের থেকেও হিংস্র, যারা লোভের বশবর্তী হয়ে বাঘ হত্যা করছে। মূল্যবান চামড়া ও অন্যান্য অঙ্গের জন্য নির্বিচারে শিকারের ফলে বাঘ প্রায় বিলুপ্তির পথে। বর্তমানে সরকার আইন করে বাঘ শিকার বন্ধ করেছে। সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার বিশ্বের মধ্যে খ্যাতনামা। তাই সুন্দরবনে ‘প্রজেক্ট টাইগার’ (ব্যাঘ্র প্রকল্প) গ্রহণ করে বাঘ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমাদের সকলের উচিত এই জাতীয় প্রাণীকে রক্ষা করা।
আরও দেখো: আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রচনা