বিজ্ঞান ও কুসংস্কার প্রবন্ধ রচনা // ১০০, ২৫০, ৩০০ এবং ৪০০ শব্দের মধ্যে

বিভিন্ন ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিজ্ঞান ও কুসংস্কার সম্পর্কে প্রবন্ধ রচনা লিখে দেওয়া হলো।

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার প্রবন্ধ রচনা: ১

“Superstition is to religion what astrology is to astronomy-the mad daughter of a wise mother.”
-Voltaire

ভূমিকা:

বিজ্ঞানমনস্কতা আর বৈজ্ঞানিক তথ্য সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করা – এ দুয়ের মধ্যে অনেক তফাত রয়েছে। বৈজ্ঞানিক বিষয় সম্পর্কে কোনো ব্যক্তি অবহিত হলেই যে তিনি বিজ্ঞানমনস্কও হয়ে উঠবেন, এমনটা নয়।

আসলে বাইরের জগতের বস্তুতান্ত্রিক নিয়মের কার্যকারণ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান লাভ করেই বিজ্ঞানচর্চা সম্ভব। কিন্তু পৃথিবীর সব ঘটনাই যে এই কার্যকারণ সম্পর্কের আওতায় পড়ে, এই সহজ যুক্তিকাঠামোটিকে উপলব্ধি করা এবং সেই অনুযায়ী নিজের জাগতিক ও মানসিক যুক্তিবোধ গড়ে তোলা-এই-ই হল বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে ওঠার প্রথম ধাপ।

সংঘাত:

পৃথিবীর সহজ সত্যিগুলোকে মানুষ যখন কুসংস্কারের অন্ধকারে ঢেকে ফেলে, নিজের চোখ বা কানের চেয়েও অন্যের বলা কথাকে চটকের জোরে সত্যি বলে মানতে থাকে, তখনই তৈরি হয় যুক্তি আর সংস্কারের মধ্যে সংঘাত।

অন্য সব প্রাণীর চেয়ে মানুষ যেখানে তার বুদ্ধিবৃত্তি ও বিচারশক্তির জোরে, উৎকর্ষ লাভ করেছে, সেখানেই বিজ্ঞান- মনস্কতার সূত্রপাত-যার হাত ধরে লক্ষকোটি বছরব্যাপী বিবর্তনের ধারায় মানুষ পৃথিবীতে হয়ে উঠেছে শ্রেষ্ঠ প্রাণী। অথচ বিজ্ঞানের এই প্রবলতেজা গতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার।

কুসংস্কারের কারণ:

আসলে সভ্যতার আদিপর্বে মানুষ যখন বনবাসী, তখন প্রকৃতির কাছে সে ছিল নিতান্তই অসহায়। তার না জানা ছিল প্রকৃতিকে কাজে লাগানোর শক্তি, না জানা ছিল সেই দুর্যোগের কারণ। সে শুধু অজানা ভয়ে শঙ্কিত হত, বাঁচার রাস্তা খুঁজত।

বিশাল প্রাকৃতিক শক্তির প্রতি তুচ্ছ মানুষের তখন স্বাভাবিকভাবেই ভয়মিশ্রিত সম্ভ্রমবোধ জাগত। সেই সম্ভ্রমবোধ থেকে মানুষ সেই শক্তির কাছে নতজানু হওয়া শুরু করল। তার নিজস্ব বোধবুদ্ধির বাইরে বেরিয়ে গিয়ে সেই কাল্পনিক অপদেবতাদের শান্ত করার জন্য কিছু কল্পিত আচার, ক্রিয়াকর্ম সে পালন করতে লাগল। এভাবেই শুরু হয় আধিদৈবিক ও আধিভৌতিক শক্তির ওপর মানুষের অন্ধবিশ্বাসমূলক নির্ভরতার যুগ।

কুসংস্কারের ধরন:

কিন্তু, আজও যখন বিজ্ঞানের রথের চাকা এগিয়ে গেছে বহুদূর, তবুও আমাদের মধ্যে এই কুসংস্কারের ধারা অব্যাহত। আজও হাঁচি, কাশি, জাতিভেদ, বর্ণভেদ, তাবিজ, কবচ, তুকতাক, ঝাড়ফুঁক, ডাইনি-সবমিলিয়ে সমাজ ক্ষয়িষুপ্রায়। সেজন্যেই মাউসে ক্লিকরত আঙুলে চকচক করে ওঠে হরেক আংটির ছটা। কার্যকারণ সূত্রের মধ্য দিয়ে সত্যে পৌঁছোনোর চেয়ে, চটজলদি সুখের জন্য হাপিত্যেশ করে ঘুরতে ঘুরতে মানুষ, আজ পরমুখাপেক্ষী হয়ে থাকতেই বেশি স্বস্তি বোধ করেছে। ফলে ভণ্ডদের জুয়াচুরির হারও বেড়ে গেছে।

উপসংহার:

কুসংস্কারের হাত থেকে মানুষকে মুক্তি দেওয়ার ক্ষমতা বিজ্ঞানের নেই, আছে বিজ্ঞানচেতনার। যুক্তি, মুক্তচিন্তা ও কার্যকারণ সূত্রের মিশেলই মানুষকে এক স্বচ্ছ পৃথিবীর সন্ধান দিতে পারে, বলতে পারে-
‘তমসো মা জ্যোতির্গময়ঃ’

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার প্রবন্ধ রচনা: ২

“যখনই বিজ্ঞান, লইয়া প্রমাণ তর্জনী তুলিয়া দাঁড়ায়। তখনই কুসংস্কার ছাড়িয়া হুংকার, রাজ্য ছাড়িয়া পালায়।”

অবৈজ্ঞানিক মন:

একবিংশ শতব্দীতে পা দিয়েও-আমাদের মন থেকে কুসংস্কারের ভূত যায় নি।, আজও সে আমাদেরকে ভয় দেখায়। কারণ, টিকটিকি ডাকলে অশুভ জ্ঞান করি, হাঁচি পড়লে আমরা থেমে যাই, পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে দইয়ের ফোঁটা পরে যাই। এ সব বিশ্বাস কি আমাদের সংস্কার? না কুসংস্কার?

কুসংস্কার কী?

কুসংস্কার হল মানুষের অন্ধ বিশ্বাস, মিথ্যা ধারণা। ইংরেজিতে একে বলে ‘Superstition’ যা বহুদিন ধরে চলে আসছে-এমন অন্ধ বিশ্বাস মানুষের অজ্ঞতার কারণে কুসংস্কারে পরিণত হয়েছে। বিজ্ঞানের যুগেও মানুষ তন্ত্রমন্ত্র ঝাঁড়ফুক করে ভূত প্রেত, ডাইনি, জিন ইত্যাদি তাড়ায়।

আধুনিকতা ও বিজ্ঞান চেতনা:

প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই মানুষ প্রকৃতির রহস্য ভেদ করার এবং অবাধ্য প্রকৃতিকে নিজের আয়ত্তে আনার চেষ্টা করছে। তাই প্রাচীন গ্রন্থগুলির মধ্যে আমরা পাই বিজ্ঞান চর্চার কিছু কিছু আভাস।
কখনও জ্যোতির্বিজ্ঞানের আভাস, কখনও বা পদার্থবিদ্যার তত্ত্ব আমরা দেখতে পাই ঋকবেদের সূক্তে বা বাইবেলের কবিতায়। আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরোপে রেনেশাঁসের পরে বিজ্ঞানচর্চার সূচনা দেখা দেয়। মানুষের বস্তু জগতে সুখ স্বাচ্ছন্দ্য এবং আরাম বহন করে আনল বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কার। এরই প্রবাহ বেয়ে আমরা পেলাম দ্রুতগামী যন্ত্রচালিত যান, বৈদ্যুতিক আলো, উন্নত সংযোগ ব্যবস্থা, জীবনদায়ী ওষুধ।

অন্ধ বিশ্বাস থেকে মুক্তি পেতে হলে:

বিজ্ঞানের ক্রমবর্ধমান প্রসার মানুষের অন্ধবিশ্বাস, অসহায় ধর্ম-আনুগত্যের অচলায়তনে আঘাত হানল। সেই প্রথম মানুষ সন্দেহ প্রকাশ করল ধর্মীয় ব্যাখ্যায়। এই সন্দেহবাদ মানুষকে এগিয়ে দিল যুক্তি-তর্কের দিকে। গড়ে উঠল নতুন এক মূল্যবোধ এবং বিশ্বাস, -মানুষ বুঝল, সব প্রাচীন তত্ত্ব, তথ্য এবং মতবাদই চোখবুজে গ্রহণযোগ্য নয়, বিচার ও যুক্তিশীলতার কষ্টিপাথরে যাচাই করে তবেই গ্রহণীয় হবে সবকিছু। এই সন্দেহের মধ্য দিয়ে মানুষের যথার্থ বিজ্ঞান-যুক্তির প্রতি বিশ্বাসই বৃদ্ধি পেল। কবি Tennyson তাই বলেছিলেন, “There live many faiths in honest doubt’।

অন্ধ কুসংস্কার কাকে বলে?

বিজ্ঞানচেতনার মাধ্যমে প্রকৃতির বিপরীতমুখিতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই অবস্থান করছে কুসংস্কার এবং অন্ধবিশ্বাস। একদিকে যখন চলছে বিজ্ঞানের জয়যাত্রা, অন্যদিকে ইংল্যাণ্ডে তখনও ডাইনি বলে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে অসহায়া নারীদের। ভারতে চলছে সতীদাহ-সহমরণ, চলছে হাঁচি-টিকটিকি, মাদুলি-তাবিজ-কবচ। অতি সুসভ্য সমাজে আজও টিকে রয়েছে এমন ধরনের কত অন্ধবিশ্বাস।

কালো বিড়াল সামনে দিয়ে গেলে সুসভ্য ইউরোপের অনেক লোকই আজও গাড়ি থামিয়ে বসে থাকে। আবার ইংল্যাণ্ডের নাবিকেরা সমুদ্র যাত্রার সময় সঙ্গে করে নিয়ে যায় কালো বিড়াল, কারণ তারা বিশ্বাস করে এই বিডালই তাদের জাহাজডুবি থেকে রক্ষা করবে। আজও অনেক সুশিক্ষিত মানুষ খাওয়ার টেবিলে তেরো জনে খেতে বসেন না। কিন্তু কেন এই মানসিকতা? কী এর উৎস? – এর কারণ মানুষের কুসংস্কার, যা কিছুতেই যেতে চায় না। এমন কিছু ক্ষেত্র আছে যেখানে বিজ্ঞান এখনও যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। এ শতকের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছিলেন “It is this undefined source of fear and hope which is the genesis of irrational superstition” অর্থাৎ ভয় এবং আশার এই অব্যাখ্যাত উৎস থেকেই অযৌক্তিক কুসংস্কারের সৃষ্টি।

সামাজিক কুসংস্কার, যা এখনো প্রবল:

আধুনিক ভারত যদিও বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির পথে এগিয়ে চলেছে, তবু আমাদের দেশ আজও কুসংস্কারের বেড়া জালে আবদ্ধ। আজও ডাইনি হত্যা, শিশু বলির মতো ঘটনা ভারতের বুকে প্রায়শই ঘটে চলেছে। তবু সবচেয়ে বিস্ময়কর এবং লজ্জাজনক বোধহয় ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের ২১শে সেপ্টেম্বরের ঘটনা। গণেশ মূর্তির দুধপান। পদার্থ বিজ্ঞানের ভাষায় যা পৃষ্ঠটান। বর্তমানে সমুদ্রের জল সুপেয় হওয়ার ঘটনাও কুসংস্কারের পর্যায়ে পড়ে।

শিক্ষিত মানুষের কুসংস্কার:

সঠিক অর্থে কুসংস্কার মানে সেইসব আচরণ যা ব্যক্তি ও মানুষের মনে জাগিয়ে তোলে অহিতকর মানসিক অন্ধত্ব! আমাদের দুঃখ এই যে, আমাদের দেশে বিজ্ঞান জেনেও বহু মানুষ কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। বৈজ্ঞানিকদের হাতে তাবিজ-কবচ প্রায়ই দেখা যায়। ডাক্তারেরা নির্ভর করেন জ্যোতিষীর ওপরে। জ্যোতিষীর নির্দেশে বহু শিক্ষিত লোক হাতে গ্রহরত্ন ধারণ করে চলেছেন। এঁরা ‘জলপড়া’ খান চোখ বুজে। গুরু চরণামৃত ভক্তির সঙ্গে পান করেন। এইসব কাজের সময় তাঁরা বিজ্ঞানকে দূরে সরিয়ে রাখেন।

পথের দিশা:

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার দুই-ই মানব মনের ফসল। প্রকৃত যুক্তিবাদী মানুষকে তার সংস্কারমুক্ত মন নিয়ে খুঁজে নিতে হবে সঠিক এবং মঙ্গলকর পথটি। তবেই পৃথিবী এবং মানবজাতির আলোকময় যাত্রাপথ হবে সুনিশ্চিত। –দূরীভূত হবে কুসংস্কার। -নতুবা দুইই চলবে পাশাপাশি।

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার প্রবন্ধ রচনা: ৩
ভূমিকা:

‘Dictionary of Philosophy’ গ্রন্থে বিজ্ঞান সম্পর্কে বলা হয়েছে – “Science is becoming a direct productive force ot society.”বিজ্ঞান আধুনিক মানব সভ্যতার সেই আশ্চর্য প্রদীপ যার সাহায্যে মানুষ অসম্ভবকে অনায়াসে আয়ত্ত করেছে। এই বিজ্ঞান নামক অত্যাশ্চর্য জীয়নকাঠির স্পর্শে মানবকল্যাণের নান্দীপাঠ শুরু। কিন্তু এই বিজ্ঞানের যুগে একবিংশ শতাব্দীতেও মানুষের মনে বাঁসা বেঁধে রয়েছে নানা কুসংস্কার।

বিজ্ঞান ও কুসংস্কারের পারস্পারিক সম্পর্ক:

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার দুই পরস্পর বিরোধী বিষয়।উভয়ের অবস্থান বিপরীত মেরু- তে।বিজ্ঞান হল এমন এক জ্ঞান,যা পরীক্ষিত সত্য, যা মানুষের কল্যাণের জন্যই মুখ্যত ব্যবহৃত হয়। তাই বলা হয় – “Science is everyday life.” কিন্তু কুসংস্কার হলো দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা কিছু ভুল ধারনা, যা মানু- ষের অগ্রগতির পথে বাধা সৃষ্টি করে। কুসংস্কার সবসময়ই অযৌক্তিক ও অবৈজ্ঞানিক। Bertrand Russel-এর মতে “Fear is the main source of superstition.”

কুসংস্কারের উৎপত্তি:

আদিম যুগে বিজ্ঞানের জন্মের আগে অতিপ্রাকৃত সত্তায় মানুষ বিশ্বাসী ছিল। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বিপর্যয়ের মূলে অপদেবতারা ক্রিয়াশীল – এই বিশ্বাস সেকালের মানুষের মনে দৃঢ়বদ্ধ হয়েছিল। আর এভাবেই কুসংস্কার মানুষের মনে বাসা বাঁধে।

বিবিধ কুসংস্কারের অস্তিত্ব:

এই একবিংশ শতাব্দীতেও আমাদের মধ্যে নানা কুসংস্কারের ধারা অব্যাহত। আজও ডাইনি সন্দেহে মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়। মাদুলি- তাবিজ-কবজ ঝোলে বিজ্ঞান পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকার গলায়। অনেকের কাছে ওষুধ অপেক্ষা দেব- তার চরণামৃত অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়।

কম্পিউটারের মাউসে ক্লিক রত আঙ্গুলে চকচক করে ওঠে হরেক আংটির ছটা। সমাজের এই স- মস্ত অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের অন্ধগলিতে বিপর্যস্ত বর্তমান বিজ্ঞান প্রদীপ্ত সভ্যতার আলোকচ্ছটা। তাই বলতে হয় – ” তাগা তাবিজ মাদুলি সভ্য দুনিয়ার শিকলি।”

কুসংস্কার দূরীকরণ:

আইনস্টাইনের মতে “Undefined source of fear and hope which is the Genesis of irrational superstition.” বৈজ্ঞানিক সত্যের আলোকচ্ছটা পারে সেই কুসংস্কারের জাল ছিন্ন করতে। আমাদের লক্ষ্য হবে –
১) মানুষকে বিজ্ঞান মনস্ক করে তুলতে হবে।
২) বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাত্র ও যুব সংগঠন গুলিকে বিজ্ঞান চেতনার প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে।
৩) জনসাধারণের মনে বিজ্ঞানচেতনা জাগিয়ে তোলার জন্য সারাদেশে জনবিজ্ঞান আন্দোলন শুরু করতে হবে।
৪) সর্বোপরি বিজ্ঞানচেতনা-ই হল কুসংস্কার দূর করার প্রধান অস্ত্র।

কুসংস্কার দূরীকরণে ছাত্র ছাত্রীর ভূমিকা:

ছাত্ররা জাতির মেরুদন্ড। তারা অমৃতস্য পুত্রা। ছাত্রজীবনই সমাজসেবার উপযুক্ত সময়। তাদের মধ্যে নিহিত থাকে অফুরন্ত প্রাণশক্তি। জাতির উন্নতিকে পিছনের দিকে ঠেলে দেয় অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার। ছাত্ররাই পারে তাদের শিক্ষার আলো দিয়ে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের চেতনা ফিরিয়ে আনতে এবং যে সমস্ত ভ্রান্ত ধারণা যুগ যুগ ধরে মানুষের মনে বাসা বেঁধে আছে সে গুলোকে দূর করে মানুষকে যুক্তিনিষ্ঠ ও বিজ্ঞানমুখী করে তুলতে। কারণ ছাত্ররা জানে –

“মোদের চোখে বিশ্ববাসীর
স্বপ্ন দেখা হোক সফল
আমরা ছাত্রদল।”

উপসংহার:

কুসংস্কার জানে ঘাতকের মন্ত্র, অন্যদিকে বিজ্ঞানে মৃত সঞ্জীবনী মন্ত্র। তাই একমাত্র বিজ্ঞান চেতনাই পারে মানুষকে কুসংস্কারের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে এক স্বচ্ছ পৃথিবীর’ সন্ধান দিতে। বলতে পারে-“তমসো মা জ্যোতির্গময়ঃ।” কবিগুরুর বাণীকেসত্য করে তাই আমাদের মূলমন্ত্র-

“ধর্মকারার প্রাচীরে বজ্র হানো
এ অভাগা দেশে জ্ঞানের আলোেক আনো।”

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার প্রবন্ধ রচনা: ৪
ভূমিকা:

মঙ্গলের অভিযান সফল হলেও অমঙ্গলের হাত থেকে বাঁচার জন্য মানুষ এখনও কুসংস্কারকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। মানুষ আজ চাঁদে পৌঁছে গেলেও বিজ্ঞান ও কুসংস্কার নামক দুটি বিপরীতার্থক শব্দ সমান্তরালভাবে এগিয়ে চলেছে। এরফলে সমাজ এক পা এগোনোর সাথে সাথে এক পা করে পিছিয়েও পড়ছে।

কুসংস্কার কী?

কুসংস্কার হল মানুষের যুক্তি বিচারহীন অন্ধ -বিশ্বাস, মিথ্যা ধারণা। এমন অন্ধবিশ্বাস মানুষের অজ্ঞতার কারণে কুসংস্কারে পরিণত হয়েছে। বিজ্ঞানের যুগেও মানুষ তন্ত্র-মন্ত্র, ঝাড়ফুঁক করে ভূত-প্রেত, ডাইনি ইত্যাদির ভয়ে মরে।

বিজ্ঞানের জয়যাত্রা:

বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিষ্কারের মধ্যে দিয়েই মানুষ তার জীবনযাত্রার মান উন্নত করেছে। আদিম মানুষ যেদিন আগুন জ্বালাতে শিখেছিল সেদিনই পরোক্ষভাবে শুরু হয়েছিল বিজ্ঞানের জয়যাত্রা। মানুষ তার প্রয়োজনে বিভিন্ন জিনিস বানাতে শুরু করলো। শুরু হলো গবেষণাগারে পরীক্ষা নিরীক্ষা। কিন্তু বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও বৈজ্ঞানিক বোধ এক জিনিস নয়। অজ্ঞতাকে দূর করে জ্ঞানের আলো আনাই বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য। তার জন্য বৈজ্ঞানিক বোধের বিকাশ ঘটাতে হবে, আর এই বিকাশ বোধ জাগ্রত হলেই সামগ্রিক উন্নতি ঘটবে জাতির ইতিহাসে।

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার:

বৈজ্ঞানিক বোধ বিকাশের ক্ষেত্রে রয়েছে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা। এর মধ্যে রয়েছে অন্ধ কুসংস্কার। বিজ্ঞান- মনস্কতাই মানুষের এই মোহান্ধ দূর করতে পারে। মানুষ আজও অলৌকিকতাকে বিশ্বাস করে। শিখিল অনুদার ধর্মানুষ্ঠানে তারা মগ্ন। বিজ্ঞানই মানুষের মধ্যে শাশ্বত সত্যকে জাগিয়ে তুলতে পারে।

কুসংস্কার দূরীকরণ ও বিজ্ঞানের বিকাশ:

আধুনিক বিজ্ঞান- ভিত্তিক যুগে বিজ্ঞানই অবহেলিত। এখন সমাজে রয়েছে কুসংস্কার। বিজ্ঞানের ছাত্র-শিক্ষক হয়েও তারা নিজেরাই বিজ্ঞান বিমুখ। আর তাই সারা দেশ জুড়ে চলছে কুসংস্কার দূর করে বিজ্ঞোনমস্ক ব্যাক্তি গড়ে তোলার জন্য জনবিজ্ঞান আন্দোলন। গঠিত হয়েছে ‘ভারত জ্ঞানবিজ্ঞান জাঠা। সারা দেশে এর উদ্দেশ্য বৃহত্তর বিজ্ঞান আন্দোলন। বিজ্ঞান প্রদর্শনী, বিজ্ঞান মেলা, আলোচনা চক্র ইত্যাদি আয়োজনের মাধমে মানুষের মন থেকে কুসংস্কার দূর করে বিজ্ঞান চেতনার প্রসার ঘটানো যেতে পারে।

উপসংহার:

আজও মানুষের প্রথাগত কুসংস্কার সমাজে বাসা বেঁধে রয়েছে। বিজ্ঞান যদি মানুষের মনের অন্ধকার দূর করতে না পারে, তাহলে বড়ো বড়ো আবিষ্কারের ক্ষেত্রে তার যত অবদানই থাকুক না কেন, সব অর্থহীন হয়ে যায়। বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি তখনই সার্থকতা লাভ করবে যখন মানুষ বিজ্ঞানকে গ্রহণ করবে মনে-প্রাণে, বৈজ্ঞানিক চেতনার আলোকে হয়ে উঠবে কুসংস্কারমুক্ত।

আরও দেখো: বাংলার উৎসব প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment

CLOSE

You cannot copy content of this page