ভাব সম্মিলন কবিতার গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর / ক্লাস 11 বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার / WBCHSE Class 11 Second Semester Bengali Question Answer

এখানে ভাব সম্মিলন কবিতার গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর / ক্লাস 11 বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার / WBCHSE Class 11 Second Semester Bengali Question Answer.

একাদশ শ্রেণী দ্বিতীয় সেমিস্টার
বিষয়: বাংলা
ভাব সম্মিলন কবিতার প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্নমান: 2

১) ‘চিরদিনে মাধব মন্দিরে মোর’ কথাটির অর্থ বুঝিয়ে দাও।

উত্তর: বিদ্যাপতি তাঁর রচনায় বিরহ নয়, মিলনের আনন্দকে প্রাধান্য দিয়েছেন। ‘চিরদিনে মাধব মন্দিরে মোর’ কথাটির অর্থ হলো, শ্রীকৃষ্ণ রাধার মনে চিরকালীন আসন গ্রহণ করেছেন। এবার রাধার বিরহের অবসান ঘটেছে, কারণ কৃষ্ণ আর কখনও তাঁকে ছেড়ে যাবেন না। বিদ্যাপতির দৃষ্টিতে এটি রাধাকৃষ্ণের চিরন্তন মিলনের প্রতীক।

২) ‘আঁচর ভরিয়া যদি মহানিধি পাই।’ ‘মহানিধি’ শব্দের অর্থ কী? মহানিধি পেলে কী হবে?

উত্তর: ‘মহানিধি’ শব্দের অর্থ: ‘মহানিধি’ শব্দের অর্থ হলো ‘মহামূল্যবান রত্ন’।
মহানিধি পেলে যা হবে: কর্মের তাগিদে স্বামীরা দূরদেশে যেতে বাধ্য হতেন। একইভাবে, শ্রীকৃষ্ণ মথুরায় চলে গেছেন। শ্রীরাধা মনে করেন, যদি তিনি মহানিধি পেতেন, তবে অর্থের অভাব দূর হতো এবং কৃষ্ণকে আর দূরে যেতে দিতেন না।

৩) “বরিষার ছত্র পিয়া দরিয়ার না ।।” – কার সঙ্গে রাধা এরূপ তুলনা করেছেন? কেন?

উত্তর: তুলনা: এখানে রাধা কৃষ্ণের সঙ্গে এই তুলনা করেছেন।

তুলনার কারণ: কৃষ্ণ রাধাকে সবসময় বিপদ থেকে রক্ষা করেন এবং তাঁর পথপ্রদর্শক হন। বর্ষার ছাতা যেমন বৃষ্টি থেকে রক্ষা দেয়, তেমনি কৃষ্ণ রাধাকে সব কষ্ট থেকে বাঁচান। আবার সমুদ্রের নৌকার মাঝি যেমন সংকটমুক্ত পথ দেখান, তেমনই কৃষ্ণ রাধার জীবনের সমস্ত অন্ধকার থেকে আলো দেখান। রাধা মনে করেন, কৃষ্ণই তাঁর জীবনের একমাত্র আশ্রয়—যিনি তাকে দুঃখ-দুর্দশা থেকে মুক্তি দেন। কৃষ্ণ হলেন রাধার জীবনের অকূলের কুল, অগতির গতি এবং পতিতপাবন—যিনি পাপী ও দুর্বলদের উদ্ধার করেন।

৪) ভণিতার মাধ্যমে বিদ্যাপতি কী বলতে চান?

উত্তর: ভণিতার মাধ্যমে বিদ্যাপতি রাধার মহিমা ও গুণগান তুলে ধরতে চেয়েছেন। তিনি বলতে চান যে, রাধা হলেন নারীশ্রেষ্ঠা, এবং তার মতো পবিত্র ও মহৎ ব্যক্তির জীবনে দুঃখ দীর্ঘস্থায়ী হয় না, কারণ তাঁর প্রেম ও গুণই তাকে সব দুঃখের ঊর্ধ্বে নিয়ে যায়।

কিন্তু শুধু রাধার গুণগান করেই বিদ্যাপতি থেমে যাননি; তিনি নিজের অনুভূতিও ভণিতার মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। তিনি রাধার অনুভূতি নিজের অনুভূতির মতো করে চিত্রিত করেছেন, যা বোঝায় যে, এই পদে বিদ্যাপতির নিজস্ব চিন্তা-ভাবনাও প্রতিফলিত হয়েছে। রাধার জীবনের গভীরতা এবং প্রেমের ঐশ্বরিকতা, তার অভ্যন্তরীণ যন্ত্রণা—সবকিছুই বিদ্যাপতির ব্যক্তিগত অনুভূতির সঙ্গে মিলিত হয়ে এই ভণিতার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

৫) “পাপ সুধাকর যত দুখ দেল।” সুধাকরকে ‘পাপ’ বলা হয়েছে কেন?

উত্তর: এখানে সুধাকর বা চাঁদ কে ‘পাপ’ বলা হয়েছে কারণ চাঁদ তার আলো দিয়ে মানুষকে আকর্ষণ করে, কিন্তু সে কখনও সেই আকর্ষণের পূর্ণ তৃপ্তি দেয় না। চাঁদ যেমন তার আলো ছড়িয়ে মানুষের মনকে মোহিত করে, কিন্তু প্রকৃত শান্তি বা সুখ দিতে পারে না, তেমনি রাধাও কৃষ্ণের বিরহে অস্থির, আর চাঁদের উপস্থিতি তার কষ্টের কথা আরও বাড়িয়ে দেয়।

কৃষ্ণের মথুরায় চলে যাওয়ার পর, রাধার রাতগুলি একা কাটছে, চাঁদ নির্দিষ্ট সময়ে আকাশে উঠলেও কৃষ্ণের দেখা নেই। চাঁদ যখন রাধার দৃষ্টি আকর্ষণ করে, তখন তার হৃদয়ে বিরহের যন্ত্রণা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। চাঁদ রাধার কাছে শ্রীকৃষ্ণের অনুপস্থিতির তীব্র অনুভূতি তুলে ধরে, ফলে রাধা চাঁদকে ‘পাপ’ বলেছেন, কারণ সে তার কষ্টকে আরও বাড়িয়ে দেয়, কিন্তু কোন সুখ বা শান্তি ফিরিয়ে আনে না।

৬) “পিয়া – মুখ দরশনে তত সুখ ভেল।।” উদ্ধৃত উক্তিটির মধ্য দিয়ে রাধা কী বলতে চেয়েছেন?

উত্তর:
এখানে রাধা শ্রীকৃষ্ণের মুখ দর্শনকে চাঁদের আলো দেখার চেয়ে অনেক বেশি সুখকর এবং মহিমান্বিত বলে প্রকাশ করছেন। রাধার কথায়, চাঁদের আলো দেখতে পেলে যেমন মানুষ কিছুটা প্রশান্তি বা সুখ অনুভব করে, তেমনি শ্রীকৃষ্ণের মুখ দর্শন শুধু সেই সুখের চেয়েও বহু গুণ বেশি আনন্দ ও তৃপ্তি দেয়।

রাধার মতে, কৃষ্ণের মুখ দর্শন হল পৃথিবীর সব সুখের উৎস। বিদ্যাপতি রচিত ‘ভাব সম্মিলন’ পদটির মাধ্যমে রাধার হৃদয়ের গভীর অনুভূতি এবং কৃষ্ণের প্রতি তার নিঃস্বার্থ প্রেমের প্রতিফলন ঘটেছে। রাধা মনে করেন, কৃষ্ণের মুখ দেখতে পাওয়ার আনন্দ পৃথিবীর সব দৃষ্টির থেকে অনেক উর্ধ্বে, যার কোনো তুলনা হতে পারে না।

৭) “শীতের ওঢ়নী পিয়া গীরিষির বা।” – কথাটির অর্থ বুঝিয়ে দাও।

উত্তর:
এখানে রাধা শ্রীকৃষ্ণের অনুভূতিকে শীতের ওড়নার মতো আরামদায়ক ও শান্তিদায়ক বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি তার সখীদের কাছে বলছেন, শীতের ওড়না যেমন শরীরকে আরাম দেয় এবং তাপ থেকে রক্ষা করে, তেমনি শ্রীকৃষ্ণের সান্নিধ্যও তার হৃদয় ও মনকে শান্তি এবং তৃপ্তি দেয়।

এছাড়া, গ্রীষ্মের তীব্র গরমে যেমন বাতাস শরীরকে প্রশান্তি দেয়, ঠিক তেমনি কৃষ্ণের স্পর্শও রাধার শরীর ও মনকে শীতল করে, তার কষ্ট এবং দুঃখ দূর করে দেয়। রাধা জানাচ্ছেন, কৃষ্ণের উপস্থিতি তার জন্য সেই শীতল বাতাসের মতো, যা তার সমস্ত দুঃখ ও কষ্টকে প্রশমিত করে, এবং তাকে এক ধরনের পূর্ণতা এবং আনন্দ দেয়।

একাদশ শ্রেণী দ্বিতীয় সেমিস্টার
বিষয়: বাংলা
ভাব সম্মিলন কবিতার প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্নমান: 3

১) “সুজনক দুখ দিবস দুই চারি ।।” – উক্তিটির উৎস লেখো। কবির এই উক্তিটির তাৎপর্য লেখো।

উৎস: এই উক্তিটি মৈখিল কোকিল কবি বিদ্যাপতি তাঁর ‘ভাব সম্মিলন’ পদে শ্রীরাধা সম্পর্কে বলেছেন।

তাৎপর্য:
কবি বিদ্যাপতি এখানে বলছেন যে, শ্রীরাধা পৃথিবীর সবচেয়ে শুদ্ধতম প্রেমিকা। তিনি একজন “সুজন” অর্থাৎ ভালো, দয়ালু ও মহৎ মানুষ। এরকম ভালো মানুষের জীবনে দুঃখ বা বিরহ দীর্ঘস্থায়ী হয় না, তা খুব অল্প সময়ের জন্যই আসে। ঈশ্বরও তাঁকে বেশি কষ্ট দিতে চান না, কারণ তাঁর প্রেম নিষ্কলঙ্ক ও পূর্ণ। এই উক্তির মাধ্যমে কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে, শ্রীরাধার জীবনে কৃষ্ণের প্রতি তার গভীর প্রেমের কারণে বিরহ যন্ত্রণার কিছু সময় পর কৃষ্ণের পুনঃপ্রবেশ ঘটেছে, এবং তিনি সেই দুঃখ থেকে মুক্ত হয়েছেন।

২) “চিরদিনে মাধব মন্দিরে মোর ।।” – মাধব কে। বক্তার এরূপ অনুভূতির কারণ কী?

উত্তর:
মাধবের পরিচয়:
মাধব হলেন শ্রীবিষ্ণু বা শ্রীকৃষ্ণ, যাকে বৈষ্ণব তত্ত্ব অনুযায়ী শ্রীরাধার প্রেমাস্পদ এবং আরাধ্য দেবতা হিসেবে পূজিত করা হয়। মাধবের পূজা এবং বন্দনা করার মাধ্যমে রাধা তাঁর অন্তরের গভীরে কৃষ্ণকে স্থান দিয়েছেন।

বক্তার অনুভূতির কারণ:
বক্তা অর্থাৎ শ্রীরাধা, শ্রীকৃষ্ণের মথুরা গমনের পর এই উপলব্ধিতে পৌঁছেছেন যে, শ্রীকৃষ্ণ তাঁর অন্তরে চিরকাল বিরাজমান। যদিও শ্রীকৃষ্ণ শারীরিকভাবে দূরে চলে গেছেন, রাধার মনে কৃষ্ণের অবস্থান কোনোভাবেই মুছে যাবে না। তিনি অনুভব করেন, শরীরী কৃষ্ণকে যদিও কেউ বঞ্চিত করতে পারে, কিন্তু অন্তরের কৃষ্ণকে কেউ কখনো নিতে পারবে না। তাই, শ্রীকৃষ্ণের মন্দির বা অন্তরের আসনে কৃষ্ণ চিরকাল বসে থাকবেন, এবং এই মিলন সশরীরে না হলেও চিরন্তন এবং শাশ্বত।

৩) “পিয়া – মুখ – দরশনে তত সুখ ভেল।।”-কে’ পিয়া মুখ’ দর্শন করেছেন? তাতে তাঁর সুখের কারণ কী?

উত্তর: ‘পিয়া মুখ’ দর্শনকারী:
এখানে শ্রীরাধা তাঁর প্রিয় শ্রীকৃষ্ণ এর মুখদর্শন করেছেন।

সুখের কারণ:
শ্রীরাধা দীর্ঘদিন ধরে শ্রীকৃষ্ণের অভাবে এবং তাঁদের বিরহের যন্ত্রণায় ভুগছিলেন। কৃষ্ণ ফিরে না আসায়, রাধার মন এক গভীর যন্ত্রণায় ছিল। কিন্তু একসময়, বিরহের চরম মুহূর্তে, রাধা মনে করেন যে তিনি কৃষ্ণকে ফিরে পেয়েছেন, এবং তাঁর অন্তরে কৃষ্ণের উপস্থিতি অনুভব করেন। এই অনুভূতির মাধ্যমে, রাধার সমস্ত দুঃখ ও বিরহ প্রশমিত হয়ে যায়, এবং তাঁর মন শান্তি ও তৃপ্তিতে পূর্ণ হয়ে ওঠে। কৃষ্ণের মুখ দর্শন করে, রাধা সেই গভীর তৃপ্তি এবং আনন্দ লাভ করেছেন, যার ফলে তাঁর সমস্ত দুঃখ মুছে গেছে।

৪) “পাপ সুধাকর যত দুখ দেল।”- সুধাকর কে? তাকে ‘পাপ সুধাকর’ বলার কারণ কী? বক্তাকে কীভাবে সে দুঃখ দিয়েছে?

উত্তর:
সুধাকরের পরিচয়:
সুধাকর হল চাঁদ। চাঁদ তার সৌন্দর্য ও মাধুর্য দিয়ে মানুষের মনকে আকর্ষণ করে, কিন্তু চাঁদ থাকে দূরে, যা মানুষের অন্তরে অতৃপ্তির সৃষ্টি করে।

পাপ সুধাকর বলার কারণ:

চাঁদ মানুষের কাছে আকর্ষণীয় হলেও, তা কখনো পূর্ণতা বা তৃপ্তি দেয় না, কারণ চাঁদ দূরে থাকে এবং আমাদের কাছে পৌঁছায় না। চাঁদের আলো মানুষের হৃদয়ে শুধু ক্ষণিকের আনন্দ ও সৌন্দর্য প্রদান করে, কিন্তু শেষে তা অতৃপ্তির যন্ত্রণা সৃষ্টি করে। এর ফলে চাঁদ প্রতি রাতে এসে কৃষ্ণের অনুপস্থিতি স্মরণ করিয়ে দেয় এবং রাধার মধ্যে বিরহের যন্ত্রণা আরও বাড়িয়ে দেয়। তাই চাঁদকে ‘পাপ সুধাকর’ বলা হয়েছে।

বক্তাকে দুঃখ দেওয়ার কারণ:

রাধা, যিনি বক্তা, শ্রীকৃষ্ণের বিরহে অসহ্য যন্ত্রণায় ভুগছিলেন। কৃষ্ণ যখন মথুরা চলে যান, তখন রাধা শীতল চাঁদের মতো দূর থেকে তাঁর অপেক্ষা করছিলেন। চাঁদ যেমন দূরে থাকে, কৃষ্ণও তাঁর কাছে দূরে চলে গিয়েছিলেন, এবং এই অদৃশ্যতা রাধার দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। চাঁদের আলো রাধার মধ্যে মিলনের অনিশ্চিত আশা জাগায়, যা তাকে আরও বেশি দুঃখিত করে।

একাদশ শ্রেণী দ্বিতীয় সেমিস্টার
বিষয়: বাংলা
ভাব সম্মিলন কবিতার প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্নমান: 5

১) “পাপ সুধাকর যত দুখ দেল?” – ‘সুধাকর’ শব্দের অর্থ কী ও সুধাকরকে ‘পাপী’ বলা হয়েছে কেন? ‘যত দুখ’ বলতে এখানে কীসের ইঙ্গিত করা হয়েছে?

উত্তর: ‘সুধাকর’ শব্দের অর্থ হল চাঁদের আলো বা চাঁদের শুভ্রতা।

সুধাকরকে পাপী বলার কারণ:

বিদ্যাপতির ‘ভাব সম্মিলন’ কবিতায় রাধিকা তাঁর বিরহের যন্ত্রণায় কাতর। যখন কৃষ্ণ বৃন্দাবন ত্যাগ করে মথুরায় চলে যান, তখন রাধার বিরহ আরও তীব্র হয়ে ওঠে। এই সময়ে চাঁদের মায়াবী আলো তাঁকে কৃষ্ণের অভাব অনুভব করিয়ে দেয়, কিন্তু কৃষ্ণের দেখা না পাওয়ার কষ্ট বৃদ্ধি করে। তাই চাঁদকে ‘পাপী’ বলা হয়েছে, কারণ সে রাধার যন্ত্রণাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

যত দুঃখ:

‘যত দুঃখ’ এখানে রাধিকার বিরহ-বেদনার তীব্রতার দিকে ইঙ্গিত করে। চাঁদের আলো, যা স্বাভাবিকভাবে সৌন্দর্য এবং শান্তির প্রতীক, রাধার জন্য সেই আলো দুঃখের কারণ হয়ে উঠেছে, কারণ তা কৃষ্ণের অনুপস্থিতি বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়।

২) “আঁচর ভরিয়া যদি মহানিধি পাই তব হাম পিয়া দূর দেশে না পাঠাই” – ‘পিয়া’ দূর দেশে গিয়েছিলেন কেন? বক্তা শ্রীরাধিকা তাঁকে আর দূরদেশে পাঠাতে রাজি হননি কেন?

উত্তর: এখানে ‘পিয়া’ অর্থাৎ কৃষ্ণের মথুরায় যাওয়া উল্লেখ করা হয়েছে। কৃষ্ণ মথুরায় গিয়েছিলেন কংসকে বধ করার উদ্দেশ্যে। এটি তাঁর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল এবং তিনি বৃন্দাবন ছেড়ে মথুরায় চলে গিয়েছিলেন।

রাজি না হওয়ার কারণ:

শ্রীরাধিকা, যাঁর জীবনে কৃষ্ণই প্রধান ও অমূল্য সম্পদ, তাঁর বিরহ সহ্য করতে পারেননি। কৃষ্ণের মথুরায় চলে যাওয়ার পর রাধার মন যেন শূন্য হয়ে গিয়েছিল, কারণ কৃষ্ণের অনুপস্থিতি তাঁকে পীড়িত করেছিল। যখন কৃষ্ণ আবার তাঁর ভাবজগতে ফিরে আসেন, তখন রাধা অনুভব করেন যে কৃষ্ণ তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার। তাই, তিনি আর কৃষ্ণকে দূরদেশে পাঠাতে রাজি হননি, কারণ বিরহের যন্ত্রণা তাঁর জন্য সহ্য করা অসম্ভব ছিল এবং তিনি তাঁর শ্রেষ্ঠ সম্পদ কৃষ্ণকে হারাতে চাননি।

৩) “ভণয়ে বিদ্যাপতি শুন বরনারি” – ‘বরনারি’ শব্দের অর্থ কী এবং কাকে ‘বরনারি’ বলা হয়েছে? তাঁকে ‘বরনারি’ বলার কারণ কী?

উত্তর:

‘বরনারি’ শব্দের অর্থ:

‘বরনারি’ শব্দের অর্থ হল শ্রেষ্ঠ রমণী বা মহিলা, যাকে বিশেষ শ্রদ্ধা ও সম্মানে অভিহিত করা হয়। এটি এমন একটি পদবী, যা কোনো মহিলাকে তাঁর সৌন্দর্য, গুণ, বা বিশেষ শ্রেষ্ঠত্বের জন্য দেওয়া হয়।

কাকে ‘বরনারি’ বলা হয়েছে:

এখানে ‘বরনারি’ শব্দটি শ্রীরাধাকে উদ্দেশ্য করে ব্যবহৃত হয়েছে। বিদ্যাপতি তাঁর কবিতায় শ্রীরাধাকে সর্বশ্রেষ্ঠ নারী হিসেবে চিত্রিত করেছেন, কারণ তিনি শ্রীকৃষ্ণের প্রতি প্রেমে ও ভক্তিতে পূর্ণ।

‘বরনারি’ বলার কারণ:

বিদ্যাপতি রাধাকে ‘বরনারি’ বলার মাধ্যমে তাঁর প্রেমের বিশেষত্ব তুলে ধরেছেন। শ্রীকৃষ্ণের প্রতি রাধার প্রেম পৃথিবীর সকল প্রেমের চেয়ে গভীর ও নিখুঁত। এই প্রেমের মাধুর্য ও নিষ্কলঙ্কতা রাধাকে অন্যান্য নারীদের থেকে শ্রেষ্ঠ করে তোলে। তাই, রাধাকে ‘বরনারি’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে, কারণ তিনি প্রেমের পরাকাষ্ঠা, যা অতুলনীয় ও শ্রেষ্ঠ। তাঁর মধ্যে এমন এক অমল প্রেম রয়েছে, যা কখনও ক্ষুণ্ণ হয় না, যা শুধুমাত্র শ্রীকৃষ্ণের প্রতি অবিচল বিশ্বাস ও ভালোবাসা থেকে উদ্ভূত।

ক্লাস 11 দ্বিতীয় সেমিস্টার
বিষয়: বাংলা
ভাব সম্মিলন কবিতার প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্নমান: 5

৪) “ভাব সম্মিলন” কাকে বলে? আলোচ্য পদটিতে রাধার আনন্দের যে ছবি ফুটে উঠেছে তা নিজের ভাষায় লেখো।

উত্তর: ‘ভাব সম্মিলন’ হল একটি মানসিক মিলন, যেখানে শ্রীকৃষ্ণ মথুরা যাওয়ার পর শ্রীরাধিকা তাঁর মনে শ্রীকৃষ্ণের পুনঃপ্রবেশ ও মিলনের অনুভূতি লাভ করেন। যদিও কৃষ্ণ শারীরিকভাবে উপস্থিত নন, রাধার অন্তরে তাঁর ফিরে আসার অনুভূতি সৃষ্টি হয়। এই ভাবেই মিলন ঘটে, এবং এই অভ্যন্তরীণ মিলনকে ‘ভাব সম্মিলন’ বলা হয়।

শ্রীরাধিকার আনন্দের চিত্র:

‘ভাব সম্মিলন’ পদে শ্রীরাধিকা তাঁর সখীকে জানান যে, তাঁর আনন্দের সীমা নেই, কারণ তাঁর প্রিয় শ্রীকৃষ্ণ তাঁর ভাবজগতে আবার ফিরে এসেছেন। কৃষ্ণ যখন মথুরায় চলে গিয়েছিলেন, তখন রাধা চাঁদের আলোকে, যা পাপী বলে মনে হয়েছিল, বিরহে কাতর ছিলেন। কিন্তু এখন কৃষ্ণের মুখদর্শনে তাঁর আনন্দের কোন শেষ নেই। রাধা বুঝতে পেরেছেন যে কৃষ্ণ তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ, এবং তাঁর উপস্থিতি মানে জীবনের পূর্ণতা। শ্রীকৃষ্ণ চিরকাল রাধার মনের মন্দিরে বিরাজ করেন, যা রাধার জীবনকে ধন্য করে তোলে। এই মিলনে রাধার অন্তরে এক গভীর শান্তি এবং সুখ বিরাজমান।

৫)“পিয়া-মুখ-দরশনে তত সুখ ভেল।।”
‘পিয়া-মুখ’ কার ও তা দেখে কে সুখ লাভ করেছে? তাঁকে দেখে কীভাবে সুখ পাওয়া গেল?

উত্তর: ‘পিয়া-মুখ’ বলতে পাঠ্য ‘ভাব সম্মিলন’ পদে শ্রীকৃষ্ণের মুখশ্রীর কথা বোঝানো হয়েছে। ‘পিয়া-মুখ’ দর্শন করে স্বয়ং শ্রীরাধিকা সুখ লাভ করেছেন।

যেভাবে সুখ পাওয়া গেল:

বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণের অনুপস্থিতি রাধার হৃদয়জগতে গভীর শূন্যতা ও তীব্র বিরহ সৃষ্টি করেছিল। দীর্ঘ অদর্শনে তাঁর মন জুড়ে ছিল এক অবর্ণনীয় যন্ত্রণা। বিরহকালে চাঁদের আলোও রাধাকে কৃষ্ণের কথা বারবার মনে করিয়ে দিত। ফলে রাধার দুঃখ আরও বহুগুণ বৃদ্ধি পেত।

তবে, ভাবসম্মিলনের মুহূর্তে শ্রীরাধিকা উপলব্ধি করেন যে শ্রীকৃষ্ণ তাঁর মানসপটে সর্বদা বিরাজমান। এই মানসিক মিলনের অনুভূতিতে রাধার হৃদয়ের সমস্ত যন্ত্রণা দূরীভূত হয়। তাঁর মনে গভীর আনন্দ ও শান্তির জন্ম হয়। শ্রীকৃষ্ণের মুখ দর্শন করে রাধিকা যেন বিরহক্লিষ্ট জীবনে নবজীবন লাভ করেন।

উপসংহার:

‘পিয়া-মুখ’ দর্শন রাধার জন্য বিরহ থেকে মুক্তি এবং পরম আনন্দের উপলক্ষ হয়ে ওঠে। এটি রাধার প্রেমের গভীরতা এবং শ্রীকৃষ্ণের প্রতি তাঁর নিবিড় ভালোবাসার প্রতিফলন।

Class 11 Second Semester
বিষয়: বাংলা
ভাব সম্মিলন কবিতার প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্নমান: 5

৬)“সুজনক দুখ দিবস দুই-চারি”
‘সুজন’ কে? তাঁর দুঃখের কারণ কী? তাঁর দুঃখের অবসান কীভাবে ঘটেছিল?

উত্তর:

‘সুজন’ কে:

বিদ্যাপতি রচিত আলোচ্য ‘ভাব সম্মিলন’ কবিতায় ‘সুজন’ বলতে শ্রীমতী রাধিকাকে বোঝানো হয়েছে। তিনি শ্রীকৃষ্ণের প্রিয়তমা এবং তাঁদের প্রেমের সম্পর্ক অনন্ত এবং গভীর।

সুজনের দুঃখের কারণ:

শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবন ছেড়ে মথুরায় চলে গিয়েছিলেন কংসবধের উদ্দেশ্যে। এই বিচ্ছেদ রাধিকার জীবনে তীব্র বেদনা নিয়ে আসে। প্রিয় কৃষ্ণের অনুপস্থিতিতে শ্রীরাধিকা বিরহ যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়েন। বৃন্দাবনের প্রতিটি জিনিস, বিশেষত চাঁদের মায়াবী আলো, তাঁকে কৃষ্ণের কথা মনে করিয়ে দিত, যা তাঁর দুঃখকে আরও গভীর করত। এই দীর্ঘ বিরহ তাঁর জীবনে অসীম কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

সুজনের দুঃখের অবসান ঘটে যেভাবে:

দীর্ঘ বিরহ এবং বেদনার পর, রাধিকা মানসলোকে কৃষ্ণকে ফিরে পান। শ্রীকৃষ্ণ তাঁর অন্তরের মন্দিরে চিরস্থায়ীভাবে ফিরে আসেন। রাধার এই ভাবলোকে কৃষ্ণের উপস্থিতি তাঁকে অসীম সুখ প্রদান করে। প্রিয়কে ফিরে পাওয়ার এই মানসিক অনুভূতি তাঁর সমস্ত দুঃখকে দূর করে দেয়। শ্রীকৃষ্ণকে কাছে পাওয়ার এই ভাব উপলব্ধি রাধিকার মনে চিরন্তন শান্তি এবং আনন্দের সঞ্চার করে।

উপসংহার:

শ্রীমতী রাধিকার দুঃখের কারণ ছিল প্রিয় কৃষ্ণের অনুপস্থিতি। তবে তাঁদের ভাবলোকে পুনর্মিলনের অনুভূতি রাধিকার বিরহজনিত কষ্টের অবসান ঘটায় এবং তিনি সুখী হয়ে ওঠেন। বিদ্যাপতির কবিতায় এই ভাব মিলন অসীম আনন্দের প্রতীক।

৭) বিদ্যাপতি রচিত ‘ভাব সম্মিলন’ পদটিতে রাধাকে কবি বিদ্যাপতি কীভাবে চিত্রিত করেছেন?

উত্তর: বিদ্যাপতি রচিত ‘ভাব সম্মিলন’ পদে রাধাকে চিত্রিত করা হয়েছে একজন চিরপ্রেমিকা হিসেবে, যিনি শ্রীকৃষ্ণের প্রতি অপরিসীম প্রেম ও নিবেদনে অনন্য। কবি বিদ্যাপতি রাধার হৃদয়বেদনা ও প্রেমের গভীরতাকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে প্রকাশ করেছেন।

রাধার চরিত্র চিত্রায়ণ:

প্রেমে একনিষ্ঠ ও নিবেদিতপ্রাণ:

রাধার জীবনে কৃষ্ণই একমাত্র সত্য। তিনি অনুভব করেন যে কৃষ্ণ ছাড়া তাঁর জীবন শূন্য ও অর্থহীন। বিদ্যাপতি এই পদে রাধার একনিষ্ঠ প্রেম ও তাঁর প্রিয়ের প্রতি অপরিসীম আকাঙ্ক্ষার কথা তুলে ধরেছেন।

বিরহজর্জর:

শ্রীকৃষ্ণ মথুরায় চলে যাওয়ার পর রাধা গভীর বিরহ যন্ত্রণা অনুভব করেন। তাঁর দুঃখ যেন সমগ্র বৃন্দাবনের আকাশে-বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিরহ রাধার হৃদয়ে গভীর শূন্যতা সৃষ্টি করলেও তিনি কৃষ্ণকে অনুভব করেন তাঁর মনের অন্তরে।

ভাবলোকে মিলনের আনন্দ:

দীর্ঘ বিরহ যন্ত্রণার পর রাধা ভাবলোকে কৃষ্ণকে ফিরে পান। এই মানসিক পুনর্মিলনে তাঁর সমস্ত দুঃখের অবসান ঘটে এবং তিনি অপার আনন্দ অনুভব করেন। বিদ্যাপতি রাধার এই ভাবসম্মিলনের মাধ্যমে প্রেমের পরম সৌন্দর্যকে তুলে ধরেছেন।

সত্বয় ও লীলাময়ী রাধা:

বিদ্যাপতির রাধা চিরপ্রেমময়ী, যাঁর হৃদয় শ্রীকৃষ্ণের প্রতি অগাধ প্রেম ও ভক্তিতে পরিপূর্ণ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাধাকে ‘সত্বয়’ ও ‘লীলাময়ী’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। রাধার চরিত্রে আনন্দ, প্রেম, এবং ভাবের সমন্বয় বিদ্যাপতির কবিতায় বিশেষভাবে ফুটে উঠেছে।

উপসংহার:

বিদ্যাপতির ‘ভাব সম্মিলন’ পদে রাধাকে প্রেমের সর্বোচ্চ প্রকাশ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। তিনি একদিকে বিরহকাতর, আবার অন্যদিকে ভাবলোকে কৃষ্ণের সান্নিধ্যে চিরশান্তি ও আনন্দ লাভ করেন। বিদ্যাপতির এই রাধা চিরন্তন প্রেমের মূর্ত প্রতীক।

আরও দেখো: লালন শাহ ফকিরের গান প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment

CLOSE

You cannot copy content of this page