দাঁড়াও কবিতার প্রশ্ন উত্তর / অষ্টম শ্রেণী বাংলা WBBSE

এখানে দাঁড়াও কবিতার প্রশ্ন উত্তর শেয়ার করা হলো / অষ্টম শ্রেণী বাংলা WBBSE / দাঁড়াও শক্তি চট্টোপাধ্যায় / ক্লাস ৮ বাংলা

অষ্টম শ্রেণী বাংলা
দাঁড়াও কবিতার হাতেকলমে প্রশ্ন উত্তর

১.১ শক্তি চট্টোপাধ্যায় কোথায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন ?

উত্তর: শক্তি চট্টোপাধ্যায় দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বহড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

১.২ তাঁর লেখা একটি উপন্যাসের নাম লেখাে। ।

উত্তর: তাঁর লেখা একটি উপন্যাসের নাম হল- ‘অবনী বাড়ি আছাে?”

২. নীচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও :

২.১‘মতাে’ শব্দ ব্যবহার করা হয় কখন ? তােমার যুক্তির পক্ষে দুটি উদাহরণ দাও।

উত্তর: ‘মতো’ একটি তুলনাবাচক অব্যয়। এটি কোন ব্যক্তি, বস্তু বা বিষয়ের সঙ্গে অন্য কিছু সাদৃশ্য বা তুলনার জন্য ব্যবহৃত হয়।

যেমন:
(ক) বিদ্যাসাগরের মতো মানুষ হওয়া খুব কঠিন।
(খ) রবির মতো দায়িত্ববান লোক এই গ্রামে আর নেই।

ব্যাখ্যা: দুটি বিষম বস্তুর মধ্যে সাদৃশ্য বা বৈসাদৃশ্য বোঝাতে ‘মতো’ শব্দ ব্যবহার হয়। যেমন—“চোখটা রক্তজবার মতো লাল।” কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতায় আছে—“হলুদ পাতার মতো সরে যায়”, যেখানে শাড়ির সঙ্গে হলুদ পাতার তুলনা করা হয়েছে।

২.২ কবি পাখির মতাে পাশে দাঁড়াতে বলছেন কেন ?

উত্তর: শক্তি চট্টোপাধ্যায় তাঁর ‘দাঁড়াও’ কবিতায় বলেছেন, মানুষ আসলে অসহায় ও একা। তাই কবি চেয়েছেন, মানুষ যেন পাখির মতো নির্ভার, মুক্ত এবং আন্তরিকভাবে একে অপরের পাশে দাঁড়ায়।
পাখির মধ্যে নেই আত্মকেন্দ্রিকতা বা সামাজিক জটিলতা। তার চঞ্চলতা ও স্বাধীনতা মানুষকে আশার প্রতীক হিসেবে অনুপ্রাণিত করে। কবি চেয়েছেন, মানুষ তার মানবিক গুণাবলি নিয়ে অন্যের দুঃসময়ে পাশে দাঁড়াক, যেমন পাখির ডাক শুনে মন ভরে ওঠে—তেমনই একজন সহানুভূতিশীল মানুষের পাশে থাকা মনকে শান্তি দেয়।

২.৩ ‘মানুষই ফাঁদ পাতছে’—কবি এ কথা কেন বলেছেন ? ‘মানুষ’ শব্দের সঙ্গে ‘ই’ ধ্বনি যােগ করেছেন কেন তােমার কী মনে হয় ?

উত্তর: শক্তি চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘দাঁড়াও’ কবিতায় সমাজসচেতন কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় সমাজের স্বার্থপর লোভী মানুষের প্রতি ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছেন। মানুষের সীমাহীন আকাঙ্খা ও লোভ তার মানসিকতার পরিবর্তন ঘটিয়েছে। সমাজের মানুষ মনুষ্যত্ববোধ যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। জন্তুদের শিকার করার জন্য যেমন ফাঁদ ব্যবহার করা হয় তেমনি একে অপরকে আক্রমণ করার জন্য, ঠকাবার জন্য মানুষ যেন জাল পেতে আছে। তাই কবি এখানে বলেছেন- “মানুষই ফাঁদ পাতছে”।

“মানুষই ফাঁদ পাতছে” অংশে মানুষের প্রতি মানুষের বর্বরতার কথা জোর দিয়ে বোঝাতেই কবি ‘ই’ ধ্বনিটি যোগ করেছেন। মানুষের মধ্যে দয়া-মায়া, ভদ্রতা শিষ্টাচার, পারস্পরিক সাহায্য-সহানুভূতি ইত্যাদির প্রকাশ লক্ষ করা যায়। আবার এই মানুষই মানুষকে ঠকায়, শোষণ করে, খুন করে। ‘মানুষ’ শব্দের সঙ্গে ‘ই’ ধ্বনি যোগ করে মানুষকেই দায়ী করতে চেয়েছেন কবি।

২.৪ তােমার মতাে মনে পড়ছে’ –এই পঙক্তির অন্তর্নিহিত অর্থ কী ?

উত্তর: শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ‘দাঁড়াও’ কবিতায় “তোমার মতো মনে পড়ছে” পঙক্তিটি দিয়ে কবি এমন একজন মানবিক, সহানুভূতিশীল ও সহজ মানুষকে স্মরণ করেছেন, যাঁর মতো মানুষ আজ আর দেখা যায় না। অবক্ষয়গ্রস্ত সমাজে যেখানে মানুষ আত্মকেন্দ্রিক ও নির্মম হয়ে উঠছে, সেখানে কবি এক মানবিক মানুষকে মনে করে তাঁর সদগুণগুলিরই পুনর্জাগরণ কামনা করেছেন।

২.৫ “এসে দাঁড়াও ভেসে দাঁড়াও এবং ভালােবেসে দাঁড়াও”– এই পঙক্তিটির বিশেষত্ব কোথায় ? এই ধরনের দুটি বাক্য তুমি তৈরি করাে।

উত্তর: শক্তি চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘দাঁড়াও’ কবিতায় আলোচ্য পঙক্তিটিতে, ধ্বনির দ্বারা একটি কাব্যসৌন্দর্য প্রকাশ করার চেষ্টা রয়েছে। ‘দাঁড়াও’ এবং সে অক্ষরটি পর পর তিনবার ব্যবহার করার ফলে এই পঙক্তিটিতে এই শব্দটিই বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। মানুষ অসহায় অবস্থায় রয়েছে তাদের দুঃখ কষ্টের সীমা পরিসীমা নেই। এদের পাশে দাঁড়াতে হবে, যেভাবে পারবে সেইভাবে দাঁড়াতে হবে এটাই মূল কথা। এই অর্থ বোঝাতে কবি উপরের শব্দগুলি ব্যবহার করেছেন। মানুষকে ভালোবেসে তার পাশে দাঁড়ানোটাই মানুষের মানবিক কর্তব্য। কবি সেটাই করতে বলেছেন।

এই ধরনের দুটি বাক্য-
(ক) দেশকে ভালোবাসো, দেশের মঙ্গল তোমার মঙ্গল।
(খ) দেশ ডুবছে অন্ধকারে দেশের পাশে দাঁড়াও।

অষ্টম শ্রেণী বাংলা
দাঁড়াও কবিতার হাতেকলমে প্রশ্ন উত্তর

৩. “মানুষ বড়াে কাঁদছে”—কী কারণে কবি এই কথা বলেছেন?

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ‘দাঁড়াও’ কবিতায় কবি আধুনিক সমাজের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন। আজকের পৃথিবীতে যুদ্ধ, হিংসা, ক্ষমতার লড়াই, ধর্মীয় সংঘাত ও সামাজিক বৈষম্যের ফলে মানুষ অত্যন্ত অসহায় হয়ে পড়েছে। একদিকে স্বার্থপরতা, অন্যদিকে আত্মকেন্দ্রিকতা মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে তুলেছে। মানুষের মধ্যে থেকে সহানুভূতি, ভালোবাসা ও মানবিকতা হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে মানুষ আর মানুষকে ভালোবাসে না, সাহায্য করে না—বরং ঠকায় ও শোষণ করে। এই পরিস্থিতিতে মানুষ ভেতরে ভেতরে যন্ত্রণায় কাঁদছে, অথচ কেউ তা শুনতে পাচ্ছে না। এই গভীর মানসিক বেদনা থেকেই কবি বলেছেন—“মানুষ বড়ো কাঁদছে”।

৪. “মানুষ বড়াে একলা, তুমি তাহার পাশে এসে দাঁড়াও”। এই পঙক্তিটিকে তিনবার ব্যবহার করার কারণ কী হতে পারে বলে তােমার মনে হয় ?

উত্তর: কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় রচিত’ দাঁড়াও’ কবিতায় আলোচ্য পঙক্তিটিকে সমগ্র কবিতায় তিনবার ব্যবহার করে কবি বলতে চেয়েছেন যে নানা শোষণে, দুঃখে কষ্টে মানুষ ক্রমশই নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছে। তার দুঃখের কথা শোনার বা সান্ত্বনা দেবার মতো কেউ আর নেই। তাই কবি বলেছেন সেই একাকী মানুষের পাশে দাঁড়ানোটাই আজ সব থেকে বেশি প্রয়োজন।

প্রথমত, মানুষ মানুষকে ঠকাবার জন্য ফাঁদ পাতছে। ফাঁদে পড়া অসহায় মানুষ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না অর্থাৎ সে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ও একলা হয়ে পড়ছে। দ্বিতীয়ত, একাকী মানুষ প্রিয়জনকে পাশে পেতে চায়। তা না পেলে আরও বেশি করে হতাশা ও নিঃসঙ্গতায় ভোগে। তৃতীয়ত, মানুষ প্রগতির সাথে পা মেলাতে না পেরে হতভম্ব হয়ে পড়েছে, কি করবে বুঝে উঠতে না পেরে সবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। তাই একলা হয়ে পড়ে সে কাঁদছে।

৫. কবিতাটির নাম ‘দাঁড়াও’ কতটা সার্থক ? কবিতাটির নাম ‘মানুষ বড়াে কাঁদছে’ হতে পারে কি তােমার উত্তরের ক্ষেত্রে যুক্তি দাও।

উত্তর: শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ‘দাঁড়াও’ কবিতার নামটি অত্যন্ত সার্থক ও ব্যঞ্জনাবহ। কবিতাটিতে কবি অবক্ষয়গ্রস্ত সমাজে মানুষের নিঃসঙ্গতা, যন্ত্রণা ও অসহায়তার চিত্র তুলে ধরেছেন। সেই সঙ্গে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর একটি মানবিক ও আশাবাদী আহ্বান জানানো হয়েছে—”এসে দাঁড়াও, ভেসে দাঁড়াও, ভালোবেসে দাঁড়াও”। এই আহ্বান-ই কবিতার মূল সুর। তাই ‘দাঁড়াও’ নামটি কবিতার বক্তব্য ও আবেগের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত।

অন্যদিকে, ‘মানুষ বড়ো কাঁদছে’ শিরোনামটিও যথার্থ হতে পারত, কারণ তা কবিতায় উল্লেখিত মানুষের যন্ত্রণা ও বেদনাকে তুলে ধরে। তবে সেটি কবিতার একমাত্র দিক—হতাশা—উপস্থাপন করে। কিন্তু কবি শুধু করুণার চিত্র আঁকেননি, বরং মানবিক বোধ জাগিয়ে তোলার এক আহ্বান জানিয়েছেন। তাই আশাবাদের প্রতীক ‘দাঁড়াও’ শিরোনামটি ‘মানুষ বড়ো কাঁদছে’ এর তুলনায় বেশি সার্থক ও উপযুক্ত।

৬. কবি কাকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে অনুরােধ করছেন বলে তােমার মনে হয় ?

উত্তর: কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় রচিত’ দাঁড়াও’ কবিতায় যে প্রকৃত মানুষ, যার হৃদয় অন্যের জন্য কেঁদে ওঠে, অন্যের সুখে যে সুখী হয়, সেই ধরনের মানসিকতা সম্পন্ন মানুষের কথা কবি বলেছেন। তাদের কাছে কবির অনুরোধ মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্য। অসহায় মানুষ বড়ো একলা হয়ে পড়েছে। তার পাশে দাঁড়িয়ে তাকে জীবন যুদ্ধে পথ চলার শিক্ষা দেবে এবং দুঃখে তাদের সান্ত্বনা দেবে। এরকম একজন মানুষকে কবি পাশে দাঁড়াতে বলেছেন।

অষ্টম শ্রেণী বাংলা
দাঁড়াও কবিতার হাতেকলমে প্রশ্ন উত্তর

৭. কবিতাটি চলিত বাংলায় লেখা, শুধু একটা শব্দ সাধু ভাষার। শব্দটি খুঁজে বার করাে এবং শব্দটিকে এভাবে ব্যবহার করেছেন কেন কবি ?

উত্তর: আলোচ্য কবিতাটি চলিত ভাষায় লেখা। শুধু একটিমাত্র শব্দ সাধুভাষায় লেখা, সেটি হল ‘তাহার’।
শব্দটিকে এভাবে ব্যবহার করে কবি সম্ভবত অসহায় মানুষদের বিশেষভাবে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন। নিত্য ব্যবহার্য শব্দের বদলে বা তার পাশাপাশি সাধু শব্দ ‘তাহার’ ব্যবহার করে বক্তব্যকে আরও গভীর করে তুলতে চেয়েছেন কবি। সম্ভবত, এ কারণেই তিনি কবিতার মধ্যে ওই জাতীয় শব্দ ব্যবহার করেছেন। আসলে ‘তার’ শব্দের পরিবর্তে ‘তাহার’ শব্দের বিস্তৃতি অনেক বেশি। তাই, চলিত ভাষার মধ্যে সাধু শব্দের ব্যবহার সেই ব্যক্তিকেই ব্যঞ্জিত করে তোলে।

৮. প্রথম স্তবকের তিনটি পঙক্তির প্রত্যেকটির দলসংখ্যা কত? প্রতিটি পঙক্তি ক-টি রুদ্ধদল ও মুকদল নিয়ে তৈরি?

উত্তর:

প্রথম চরণ:
মানুষ বড়াে কাঁদছে, তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও-মানুষ (মানুষ), বড়াে (বডাে), কাঁদছে (কাঁদ-ছে), তুমি (তুমি), মানুষ (মানুষ), হয়ে (হ-য়ে), পাশে (পা-শে), দাঁড়াও (দাঁড়াও), দলসংখ্যা—১৬টি।

দ্বিতীয় চরণ:
মানুষই ফাঁদ পাতছে, তুমি পাখির মতাে পাশে দাঁড়াও—মানুষই (মা-নুষ-ই), ফাঁদ (ফাঁদ), পাতছে (পাত-ছে), তুমি (তুমি), পাখির (পাখির), মতাে (ম-তাে), পাশে (পা-শে), দাঁড়াও (দা-ডাও), = দলসংখ্যা ১৬টি। )

তৃতীয় চরণ:
মানুষ বড়াে একলা তুমি তাহার পাশে এসে দাঁড়াও—মানুষ (মা – নুষ), বড়াে (ব – ড়াে), একলা (এক – লা), তুমি (তু – মি), তাহার (তা – হার), পাশে (পা – শে), এসে (এ – সে), দাঁড়াও (দাঁ – ডাও), = দলসংখ্যা—১৬টি।

প্রথম স্তবকের তিনটি পঙক্তির প্রত্যেকটির দল সংখ্যা ১৬ (যােলাে)। প্রথম পঙক্তি—১২ টি মুক্তদল এবং ৪টি রুদ্ধদল নিয়ে গঠিত।

দ্বিতীয় পঙক্তি—১১টি মুক্তদল এবং ৫টি রুদ্ধদল নিয়ে গঠিত।

তৃতীয় পঙক্তি—১২ টি মুক্তদল এবং ৪টি রুদ্ধদল নিয়ে গঠিত।

৯. কী ঘটেছে লেখাে : সন্ধ্যা < সন্ধে। ফাদ < ফাঁদ।

উত্তর:
সন্ধ্যা < সন্ধে (স্বরসংগতি)। ফাদ > ফাঁদ (স্বতােনাসিক্যীভবন)।

অষ্টম শ্রেণী বাংলা
দাঁড়াও কবিতার অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্তর

১. ‘দাঁড়াও’ কবিতার রচয়িতা কে?
ক) সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
খ) শক্তি চট্টোপাধ্যায়
গ) জীবনানন্দ দাশ
ঘ) অমিতাভ চৌধুরী

উত্তর: খ) শক্তি চট্টোপাধ্যায়

২. ‘দাঁড়াও’ কবিতাটি মূলত কোন বিষয়ের উপর লেখা?
ক) প্রেম
খ) প্রকৃতি
গ) মানবতা ও সহানুভূতি
ঘ) রাজনীতি

উত্তর: গ) মানবতা ও সহানুভূতি

৩. কবিতায় ‘তুমি’ শব্দটি কাকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে?
ক) ঈশ্বরকে
খ) প্রিয়জনকে
গ) একজন বিবেকবান মানুষকে
ঘ) পাখিকে

উত্তর: গ) একজন বিবেকবান মানুষকে

৪. ‘তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও’ – এই লাইনটি কী বোঝায়?
ক) সহানুভূতিশীল আচরণের আহ্বান
খ) প্রতিবাদ জানানো
গ) নির্লিপ্ত থাকার নির্দেশ
ঘ) আত্মসমর্পণ

উত্তর: ক) সহানুভূতিশীল আচরণের আহ্বান

৫. কবিতায় ‘ভেসে দাঁড়াও’—এখানে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
ক) নদীতে ভাসতে
খ) বাস্তবতা এড়িয়ে চলতে
গ) সহজভাবে পাশে দাঁড়াতে
ঘ) তিরস্কার করতে

উত্তর: গ) সহজভাবে পাশে দাঁড়াতে

৬. “মানুষ বড়ো কাঁদছে”— এই বাক্যটি কবিতায় কতবার এসেছে?
ক) একবার
খ) দুইবার
গ) তিনবার
ঘ) চারবার

উত্তর: খ) দুইবার

৭. কবিতাটি কোন ধরনের ছন্দে লেখা?
ক) মাত্রাবৃত্ত
খ) অমিত্রাক্ষর
গ) গদ্যছন্দ
ঘ) সোপান ছন্দ

উত্তর: গ) গদ্যছন্দ

৮. “তোমাকে সেই সকাল থেকে তোমার মতো মনে পড়ছে” — এখানে কোন অনুভূতি প্রকাশ পায়?
ক) ঘৃণা
খ) বিস্ময়
গ) মমতা ও স্মৃতিচারণ
ঘ) বিরক্তি

উত্তর: গ) মমতা ও স্মৃতিচারণ

৯. ‘দাঁড়াও’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত?
ক) চৈত্রে রচিত পঙক্তিমালা
খ) হে প্রেম, হে নৈঃশব্দ্য
গ) মানুষ বড়ো কাঁদছে
ঘ) অভিমুখে

উত্তর: গ) মানুষ বড়ো কাঁদছে

১০. ‘দাঁড়াও’ শব্দটির ব্যবহার কবিতায় কী বোঝায়?
ক) থেমে যাও
খ) সহানুভূতির সাথে পাশে দাঁড়ানো
গ) নিষ্ক্রিয় হও
ঘ) উপদেশ দাও

উত্তর: খ) সহানুভূতির সাথে পাশে দাঁড়ানো

অষ্টম শ্রেণী বাংলা
দাঁড়াও কবিতার অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্তর

১. “মানুষ বড়ো কাঁদছে”— কবি কেন এ কথা বলেছেন? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: কবিতাটিতে কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় মানবসমাজের অবক্ষয় ও নিঃসঙ্গতার চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, সমাজে নানা ধরনের অন্যায়, অত্যাচার, বিভেদ ও হিংসার ফলে মানুষ অত্যন্ত কষ্টে আছে। মানুষের হৃদয়ে আর নেই ভালোবাসা, নেই সহানুভূতি। ক্ষমতা ও স্বার্থের লড়াইয়ে মানুষ আজ মানুষের শত্রু হয়ে উঠেছে। এই নির্মম অবস্থায় কবির হৃদয় ব্যথিত হয়ে ওঠে। তাই তিনি বলেন, “মানুষ বড়ো কাঁদছে”— এ কান্না শুধুই চোখের জল নয়, এ এক অন্তরের আর্তনাদ। মানুষের এই নিঃসঙ্গতা, বিচ্ছিন্নতা ও বেদনায় তিনি গভীরভাবে মর্মাহত। ফলে কবি মানবিক মানুষদের কাছে আহ্বান জানান— যেন তারা এই দুঃখী মানুষের পাশে এসে দাঁড়ায়।

২. ‘দাঁড়াও’ কবিতায় কবি কী বার্তা দিতে চেয়েছেন? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: ‘দাঁড়াও’ কবিতায় কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় সমবেদনা, ভালোবাসা ও মানবিকতার বার্তা দিয়েছেন। আধুনিক সমাজে মানুষ স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। ফলে অন্যের দুঃখ, কান্না ও কষ্টের প্রতি আমাদের অনুভব নেই। কবি এই অবস্থাকে অমানবিক বলে মনে করেন। তাই তিনি আহ্বান জানান, মানুষ যেন মানুষ হয়ে ওঠে, যেন ভালোবেসে পাশে দাঁড়ায় সেই কাঁদতে থাকা মানুষের, নিঃসঙ্গ মানুষের। তিনি বারবার বলেন, “এসে দাঁড়াও, ভেসে দাঁড়াও এবং ভালোবেসে দাঁড়াও।” এটি একটি করুণ আর্তি, আবার এক গভীর মানবিক আবেদন। কবি চেয়েছেন সমাজে যেন মানুষ একে অপরের পাশে থেকে সহানুভূতির হাত বাড়ায়, তবেই মানুষ হিসেবে তার মর্যাদা রক্ষা পায়।

৩. “এসে দাঁড়াও, ভেসে দাঁড়াও এবং ভালোবেসে দাঁড়াও”—এই আহ্বানের তাৎপর্য কী? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: এই পঙক্তিটি কবিতার মূল বার্তাকে অত্যন্ত শক্তিশালীভাবে তুলে ধরে। এখানে কবি মানুষের প্রতি একটি আবেদন করেছেন— তারা যেন শুধু সহানুভূতি দেখিয়ে থেমে না থাকে, বরং সক্রিয়ভাবে দুঃখী মানুষের পাশে এসে দাঁড়ায়। “এসে দাঁড়াও” মানে বাস্তবে উপস্থিত হয়ে সহায়তা করো; “ভেসে দাঁড়াও” মানে সমস্ত বাধা উপেক্ষা করে এগিয়ে এসো; আর “ভালোবেসে দাঁড়াও” মানে আন্তরিক ভালোবাসা দিয়ে মানুষের পাশে থেকো। এই তিনটি ক্রিয়া শুধুই কাজের নির্দেশ নয়, বরং এক গভীর মানবিক চেতনার প্রকাশ। কবি মনে করেন, সমাজে সত্যিকারের পরিবর্তন তখনই সম্ভব, যখন মানুষ অপরের কষ্টকে নিজের মতো করে অনুভব করবে এবং ভালোবাসা দিয়ে পাশে দাঁড়াবে।

৪. তোমাকে সেই সকাল থেকে তোমার মতো মনে পড়ছে”—এই পঙক্তিটির অন্তর্নিহিত অর্থ কী? কবি কেন এই কথাটি বললেন? বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: এই পঙক্তির মাধ্যমে কবি এক আত্মমগ্ন ভাবনায় পাঠককে যুক্ত করেন। “তোমাকে সেই সকাল থেকে তোমার মতো মনে পড়ছে”—এই কথায় এক গভীর আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এখানে ‘তুমি’ প্রতীকী—এই ‘তুমি’ মানবিক মূল্যবোধ, ভালোবাসা, সহানুভূতি কিংবা এমন এক মানুষ, যার অভাব কবির মনে প্রবলভাবে অনুভূত হচ্ছে। ‘সকাল থেকে মনে পড়ছে’— মানে সেই অভাব কবিকে সারাদিন তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। কবি বলতে চেয়েছেন, এই হৃদয়বান মানুষেরই আজকের সমাজে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। ফলে, এই স্মরণ যেন কেবল আবেগ নয়, বরং মানবতার জাগরণের এক আহ্বানও বটে। এই পঙক্তির মাধ্যমে কবি এক অনুপস্থিত মানবিকতার শূন্যতা উপলব্ধি করেছেন।

৫. “মানুষই ফাঁদ পাতছে, তুমি পাখির মতো পাশে দাঁড়াও”—এই পঙক্তিটি দ্বারা কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: এই পঙক্তিতে কবি সমাজে বিদ্যমান এক কঠিন বাস্তবতাকে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, “মানুষই ফাঁদ পাতছে”—অর্থাৎ মানুষই আজ মানুষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, অত্যাচার করছে, সুযোগ নিচ্ছে। সমাজে স্বার্থপরতা, হিংসা ও নিপীড়ন ছড়িয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে কবি একজন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে আহ্বান জানাচ্ছেন— “তুমি পাখির মতো পাশে দাঁড়াও”। পাখি এখানে স্বাধীনতা, শান্তি ও সৌন্দর্যের প্রতীক। কবির আশা, যারা ফাঁদ পাতছে না, যারা এখনও মানবিক, তারা যেন নিরীহ, সুন্দর পাখির মতো অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায় এবং মানবতাকে রক্ষা করে। এই পঙক্তিটি নৈতিক শিক্ষার দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি মানবিকতার ও সহানুভূতির চেতনাকে উৎসাহিত করে।

আরও দেখো: পল্লীসমাজ গল্পের প্রশ্ন উত্তর

CLOSE

You cannot copy content of this page