পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা ১৫০, ২৫০, ৩৫০, ৪০০ শব্দের মধ্যে

এখানে পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে চার ধরনের রচনা লিখে দেওয়া হয়েছে।

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা (১৫০ শব্দের মধ্যে)

যে পারিপার্শিক আমাদের দেহ ও মনকে প্রভাবিত করে তাকে পরিবেশ বলে। আমাদের অস্তিত্ব পরিবেশের উপর নির্ভরশীল। বায়ু, জল, মাটি, উদ্ভিদ ও অন্যান্য প্রাণীগুলিই পরিবেশের উপাদান। সমগ্র বিশ্ব পরিবেশ আজ দূষিত হয়ে পড়েছে। সভ্যতার প্রতিটি বস্তু করায় পরিবেশের ভারসাম্যকে নষ্ট করে দিচ্ছে। এখনকার মানুষ জড় প্রকৃতির ওপর আধিপত্য স্থাপন করে নতুন নতুন যন্ত্র আবিষ্কার করে চলেছে। এই যন্ত্র দানবের বিষাক্ত নিঃশ্বাসে আমাদের পরিবেশ দূষিত হয়ে উঠছে উঠেছে। কলকারখানার চুল্লি, অসংখ্য মোটরবাইক থেকে নির্গত ধোঁয়া আমাদের পরিবেশকে বিস্ময় করে তুলেছে।

এ ছাড়া পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের ফলে তেজস্ক্রিয় পদার্থের দ্বারা ঊর্ধ্ব আকাশের বায়ুমণ্ডলও দূষিত হচ্ছে। এর ফলে দুরারোগ্য ব্যাধির প্রাদুর্ভাব ঘটছে। জলও নানা কারণে দূষিত হচ্ছে। নদীতে আবর্জনা ফেলে মলমূত্র ত্যাগ করে নানা রকম অ্যাসিড ও কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ ফেলে জল দূষিত হচ্ছে। এছাড়া মানুষ নির্বিচারে গাছ কেটে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করে দিচ্ছে। তাছাড়া শব্দ দূষণও হচ্ছে নানাভাবে।

পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে আজ সচেতন হবার সময় এসেছে। পরিবেশ দূষণের মূল কারণ মানুষ ও তার সীমাহীন অজ্ঞতা। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে আজ পরিবেশের উপর চাপ পড়ছে। পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে সচেতন করার জন্য শুধু সরকার চেষ্টা করলেই হবে না জনসাধারণকেও সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা (২৫০ শব্দের মধ্যে)

মানুষের সভ্যতা যতই এগিয়ে চলেছে পরিবেশ ততই দূষিত হচ্ছে। পরিবেশ দূষণ বলতে বোঝায় দূষিত পরিবেশ। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য জল স্থল এবং বাতাস এই তিনটি উপাদান খুবই প্রয়োজনীয়। উপাদানগুলি সবই আজ দূষিত।

পরিবেশ দূষণের কারণ:

শহরের নর্দমার নোংরা জল, কলকারখানার বিষাক্ত তরল পদার্থ এবং গ্রামাঞ্চলে চাষের জমিতে রাসায়নিক সার প্রয়োগ, বিষাক্ত ওষুধ ইত্যাদির ব্যবহারের ফলে নদী নালার জল দূষিত হচ্ছে। গাছপালা ধ্বংস করে ফেলার জন্য স্থল বা মাটির উর্বর শক্তি কমে যাচ্ছে। কলকারখানা ও যানবাহনের বিষাক্ত গ্যাস ও ধোয়া বায়ুতে মেশার ফলে বায়ু দূষিত হচ্ছে। গাছপালা কেটে ফেলার জন্য বায়ু দূষিত হচ্ছে। বায়ুতে অক্সিজেনের ভাগ কমে যাচ্ছে। অন্যান্য বিষাক্ত গ্যাসের পরিমাণ বাড়ছে। এছাড়া আছে শব্দ দূষণ।

পরিবেশ দূষণের ফল:

জল দূষণের ফলে জলে মাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। মানুষ আন্ত্রিক, কলেরা, আমাশয় প্রভৃতি রোগে ভুগছে। স্থলে দূষণের ফলে জমিতে ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে। বায়ু দূষণের ফলে মানুষ নানারকম রোগে ভুগছে। যেমন হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, ক্যান্সার, চর্মরোগ। আবার শব্দ দূষণের ফলে কানে কম শোনা, মাথার যন্ত্রণা, হজমের গন্ডগোল প্রভৃতি দেখা দিচ্ছে।

উপসংহার:

পরিবেশ দূষণের ফল মারাত্মক। মানুষ নিজেই তার পরিবেশকে দূষিত করে তুলেছে। পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বেশি পরিমাণে গাছপালা লাগাতে হবে। কলকারখানা এবং যানবাহনের ধোঁয়া যাতে বায়ুমণ্ডল কে দূষিত করতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। শহরের নর্দমার নোংরা জল নদী নালায় ফেলা বন্ধ করতে হবে। চাষের জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে হবে।

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা (৩৫০ শব্দের মধ্যে)

ভূমিকা:

“জীবনের সার্থকতা পরিবেশ নির্ভর
নির্মল অঙ্গনে সব কিছু মনোহর”

সার্থক জীবন নির্ভর নির্মল প্রকৃতি আজ আর নেই। এক বিংশ শতাব্দীর বর্তমান প্রজন্মের কাছে পরিবেশের দূষিত হওয়া এক জ্বলন্ত সমস্যা। যন্ত্রযুগের বিষবাষ্পে এবং নগর কেন্দ্রিক সভ্যতার আঘাতে পরিবেশ ক্রমে দূষিত হচ্ছে; বিষিয়ে উঠছে বায়ু, নিভে যেতে বসেছে সভ্যতার আলো।এই পরিবেশ দূষণকে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যথা- বায়ু দূষণ, জল দূষণ, ভূমি দূষণ, শব্দ দূষণ এবং মনস্তাত্ত্বিক দূষণ।

বায়ু দূষণ:

বর্তমান বিশ্বে নানাবিধ মারণাস্ত্র, নানা ধরনের পারমাণবিক পরীক্ষা ও বিস্ফোরণের তেজস্ক্রিয় কণা, শিল্প কারখানায় চালানো গ্যাস ও আবর্জনা, যানবাহনের জ্বালানি দ্বারা বায়ু বিষাক্ত ও দূষিত হয়ে পড়েছে।

জল দূষণ:

আজকের দিনে জল দূষণ এক ভয়ংকর সমস্যা। কলকারখানার দূষিত বর্জ্য পদার্থ দ্বারা পানীয় জল সরবরাহের উৎস গুলি দূষিত হচ্ছে। এর ফলে মানুষ ও জলচর প্রাণীর প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছে।

ভূমি দূষণ:

চাষের জমিতে নানা রকম রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ওষুধ প্রয়োগের ফলে ভূমি দূষিত হচ্ছে। শিল্প কারখানার বর্জ্য পদার্থ ও শহর এলাকার আবর্জনার স্তূপ পচে মাটি দূষিত হচ্ছে। এর ফলে নানা সংক্রামক ব্যাধির দ্রুত বিস্তার ঘটছে।

শব্দ দূষণ:

অতি যান্ত্রিকতার ফলে শব্দ আজ মানব জীবনে নিদারুণ সংকট সৃষ্টি করে চলেছে। কল কারখানার শব্দ, যন্ত্রদানবের বিচিত্র হর্ন, বিমানের শব্দ, বাজি-পটকার আওয়াজ – মারাত্মক আকার ধারণ করে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট করছে। সড়ক ও শহরের পথে যানবাহনের বিকট আওয়াজে অনেকে শ্রবণ শক্তি হারাচ্ছে।

মনস্তাত্ত্বিক দূষণ:

মনস্তাত্ত্বিক দূষণ হল আর এক জাতীয় দূষণ। সামাজিক অপসংস্কৃতি, বেকারত্ব, অতি পাশ্চাত্য ভাবধারা প্রীতি, সিনেমা, কুরুচিকর পত্রিকা, পুস্তক, বিভিন্ন রকমের ইলেকট্রনিক গ্যাজেট, ইন্টারনেট প্রভৃতি যুবক-যুবতী বিশেষভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের নৈতিক অধঃপতন ঘটাচ্ছে।

দূষণের প্রতিকার ও ছাত্র সমাজের ভূমিকা:

পরিবেশ দূষণের হাত থেকে মুক্তির জন্য সংবাদপত্র, টিভি, রেডিও প্রভৃতি গণমাধ্যম গুলির মাধ্যমে প্রতিকারের প্রচার বাড়াতে হবে এবং ছাত্র-ছাত্রীদেরও সচেতন হতে হবে। শব্দ দূষণ, জল দূষণ, মাটি দূষণ রোধ করার জন্য সরকারি আইন কঠোরভাবে বলবৎ করতে হবে। সাংস্কৃতিক দূষণ যাতে না ছাড়াই তার জন্য সমস্ত নাগরিক, অভিভাবক, শিক্ষক প্রমুখকে সচেষ্ট হতে হবে। সামাজিক বনসৃজন এর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

উপসংহার:

রাষ্ট্রসংঘ সার্বিক দূষণ প্রতিকারের জন্য এগিয়ে এসেছে। প্রতিবছর জনগণকে পরিবেশ সচেতন করার জন্য ৫ই জুন দিনটি ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ হিসেবে পালিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সমীক্ষা থেকে জানা যায় ভারতবর্ষে পূর্বাপেক্ষা দূষণের হার কমেছে। কিন্তু তা আশ্বস্ত হওয়ার পক্ষে যথেষ্ট নয়। আমাদের পরিবেশ মালিন্য মুক্ত করতে চাই সর্বজনীন শিক্ষা ও সচেতনতা। অন্যথায় ‘সুন্দর কুসুমিত মনোহরা’ ধরাই একদিন ‘জরা ও মৃত্যু- ভীষণা’ ধরায় পরিণত হবে।

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা (৪০০ শব্দের মধ্যে)
ভূমিকা:

একজন ব্যক্তি মানুষের চারপাশে আলো, বায়ু, জল, মাটি, বৃক্ষলতা, ঘরবাড়ি, মানুষ, কীটপতঙ্গ, পশুপাখি প্রভৃতি জড় ও জীব কে নিয়ে গঠিত পরিমন্ডলই তার পরিবেশ। পরিবেশের মধ্যেই মানুষের জন্ম, বৃদ্ধি ও মৃত্যু -জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে থাকা এরূপ পরিবেশ আজ দুর্ভাগ্যজনকভাবে দূষণ কবলিত যে দূষণের মূলে রয়েছে মানুষেরই লোভ। প্রকৃতি ও পরিবেশ মানব জীবনের ধাত্রী। অর্থনৈতিক, ভৌগোলিক, পারিবারিক, সামাজিক পরিমণ্ডল মানুষের জীবন যাপন, দেহ গঠন, চরিত্র নির্মাণ ও মানসিক বিকাশকে প্রভাবিত করে বলেই পরিবেশ জীবনেরই এক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। পরিবেশ থেকেই আমরা প্রাণ ধারণের ও জীবন চালনার রসদ সংগ্রহ করি বলে পরিবেশের দূষণ মানব সভ্যতার পক্ষে আত্মঘাতী।

পরিবেশ দূষণের কারণ:

প্রাকৃতিক পরিবেশের মূল উপাদান বায়ু, জল, মাটি প্রভৃতি আজ বিষাক্ত। এর মূলে রয়েছে জনসংখ্যার অপরিকল্পিত বৃদ্ধি, নগরায়ন- উন্নয়ন- শিল্পায়নের নামে বৃক্ষছেদন, আধুনিক প্রযুক্তির অপব্যবহার, কলকারখানার বর্জ্য নর্দমাযোগে নদীজলে বিসর্জন, যানবাহন ও কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া, বৈদুতিক যন্ত্র থেকে বিষবাষ্পের নিগর্মণ প্রভৃতি। নির্বিচারে বনভূমি উচ্ছেদের ফলে বাতাসে অক্সিজেন কমছে, ধূলিকণা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যানবাহন ও কারখানা থেকে নির্গত বিভিন্ন গ্যাস যথা, কার্বন-মনোক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড, রেজিন ,হ্যালোজেন, সিলিকন বায়ুস্তরকে দূষিত করছে। জেনারেটর, ফ্রিজ, এসি মেশিন থেকে নির্গত গ্যাস যে বাতাসের ওজন স্তরকে ছিদ্র করছে তাও আজ প্রমাণিত। উচ্চ ফলনশীল রাসায়নিক সার, কীটনাশক প্রভৃতির ব্যবহার কৃষি উন্নয়ন ঘটালেও তা পরোক্ষভাবে মাটি ও জল দূষণের কারণ।
যানবাহনের তীব্র হর্ন কলকারখানার বিকট আওয়াজ, লাউডস্পিকারের উচ্চ গ্রামে ব্যবহার শব্দদূষণের জন্য দায়ী। সর্বোপরি দেশেদেশে যুদ্ধের আবহে বিধ্বংসী অস্ত্রের ব্যবহার ও বিস্ফোরণ পরিবেশ দূষণে ক্রিয়াশীল।

দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব:

মানুষেরই অপরিনামদর্ষিতা, বেপরোয়া জীবনযাপন ও প্রকৃতি সংহারের ফলে আজ বিশ্বজুড়ে উষ্ণায়ন। বৃষ্টির অভাবে ও তীব্র উষ্ণায়নে পৃথিবীতে একদিকে যেমন জলাভাব, অনবরতাজনিত মরুভূমির প্রসার ঘটবে ,অন্যদিকে মেরুপ্রদেশের গলিত বরফ জলে তেমন প্লাবন দেখা দেবে। তার আগেই অবশ্য বায়ুদূষণের পরিণামে বাড়ছে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ,ফুসফুস ওহ হৃৎপিণ্ডের অসুখ। বিষাক্ত কৃষিজ ফসল যেমন ব্যাধি ও অপুষ্টির কারণ, তেমনি ওজন স্তরের ছিদ্রপথে অতিবেগুনি রশ্মির প্রবেশ ক্যান্সারের প্রসার ঘটাচ্ছে, শব্দ দূষণে বাড়ছে বধিরতা। আর্সেনিক যুক্ত পানি ও জল ও ব্যাধি ও মৃত্যুর জন্য দায়ী।

প্রতিকার:

এই বিপর্যয়ের দ্রুত সার্বিক প্রতিরোধ প্রয়োজন। এখনই পরিবেশকে বিষমুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার সরকারি ও বেসরকারি সর্বস্তরে। মিটিং, মিছিল ,আলোচনাচক্র প্রভৃতির মাধ্যমে জনসচেতনার প্রসার ঘটিয়ে পরিবেশকে বিশুদ্ধ করতে সকলকেই সক্রিয় করে তুলতে হবে। বৃক্ষরোপণ ,কীটনাশকের অপপ্রয়োগ বন্ধ করা, শব্দনিরোধকের ব্যবহার প্রভৃতির সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদেরও এই কর্মযজ্ঞে শামিল করা উচিত- যেহেতু তারাই দেশের ভবিষ্যৎ।

উপসংহার:

পরিবেশকে বিষমুক্ত করার সার্বিক ও কার্যকরী প্রচেষ্টায় পাড়ে প্রাণীকুল ও পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কিশোর কবির মতোই আমাদেরও পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে যাওয়ার অঙ্গীকার গ্রহণ করতে হবে।

FAQs: Frequently Asked Questions

১. পরিবেশ কাকে বলে?

উত্তর: আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে যেমন মাটি, জল, গাছপালা, আকাশ, বায়ু, জীবজন্তু, পশু-পাখি, সূর্যের আলো, ঘর বাড়ি, বন্ধুবান্ধব ইত্যাদি তা নিয়েই আমাদের পরিবেশ।

২. পরিবেশ কয় প্রকার ও কি কি?

উত্তর: পরিবেশ দুই প্রকার। যথা- (১) প্রাকৃতিক পরিবেশ বা ভৌত পরিবেশ এবং (২) সামাজিক পরিবেশ বা কৃত্রিম পরিবেশ।

আরও দেখুন: পঞ্চম শ্রেণী দ্বিতীয় ইউনিট টেস্ট

Leave a Comment

CLOSE

You cannot copy content of this page