পল্লীসমাজ গল্পের প্রশ্ন উত্তর / অষ্টম শ্রেনী বাংলা পশ্চিমবঙ্গ মধ্য শিক্ষা পর্ষদ

এখানে পল্লীসমাজ গল্পের প্রশ্ন উত্তর শেয়ার করা হলো / ক্লাস ৮ বাংলা পশ্চিমবঙ্গ মধ্য শিক্ষা পর্ষদ / Palli samaj class 8 question answer / পল্লীসমাজ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রশ্ন উত্তর WBBSE

অষ্টম শ্রেণী বাংলা
পল্লীসমাজ হাতেকলমে প্রশ্ন উত্তর

১.১. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা দুটি উপন্যাসের নাম লেখো।

উত্তর: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা দুটি উপন্যাস হল ‘বড়দিদি’ এবং ‘দেবদাস’।

১.২. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা দুটি ছোটোগল্পের নাম লেখো।

উত্তর: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা দুটি ছোটোগল্প হল ‘লালু’ এবং ‘মহেশ’।

২. নীচের প্রশ্নগুলির দু-একটি বাক্যে উত্তর লেখোঃ

২.১. গোপাল সরকারের কাছে বসে রমেশ কী করছিল?

উত্তর: গোপাল সরকারের কাছে বসে রমেশ জমিদারির যাবতীয় হিসাবপত্র দেখাশোনা করছিল। তিনি দায়িত্বের সঙ্গে জমিদারির কাজ পরিচালনা করছিলেন।

২.২. গ্রামের একমাত্র ভরসা কী ছিল?

উত্তর: গ্রামের একমাত্র ভরসা ছিল একশো বিঘার মাঠটি। এই মাঠেই গ্রামের চাষবাস হতো এবং মানুষজন জীবিকা নির্বাহ করত।

২.৩. ‘বোধ করি এই কথাই হইতেছিল’ — কোন কথার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে?

উত্তর: অবিরাম বৃষ্টির ফলে একশো বিঘার মাঠটি জলে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। গ্রামের মানুষ এই মাঠটি রক্ষা করতে দক্ষিণ দিকের ঘোষাল ও মুখুজ্যেদের বাঁধ কেটে দেওয়ার পরিকল্পনা করছিল। এখানেই ‘এই কথার’ প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

২.৪. রমা আকবরকে কোথায় পাহারা দেবার জন্য পাঠিয়েছিল?

উত্তর: রমা আকবরকে দক্ষিণ দিকের বাঁধ পাহারা দেবার জন্য পাঠিয়েছিল। সে নিশ্চিত করতে চেয়েছিল যাতে কেউ বাঁধটি কেটে মাঠ ডুবিয়ে দিতে না পারে।

২.৫. ‘পারবি নে কেন?’ — উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কোন কাজটি করতে পারবে না?

উত্তর: এখানে ‘উদ্দিষ্ট ব্যক্তি’ হল আকবর। রমেশ তার উপর লাঠি চালিয়ে আহত করলেও আকবর রমেশের বিরুদ্ধে থানায় নালিশ করতে পারবে না—এই কথাটি বোঝাতে বলা হয়েছে, ‘পারবি নে কেন?’

ক্লাস 8 বাংলা
পল্লীসমাজ হাতেকলমে প্রশ্ন উত্তর

৩. নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর লেখোঃ
৩.১ কুড়িজন কৃষক রমেশের কাছে এসে কেঁদে পড়ল কেন?

উত্তর: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পল্লীসমাজ’ পাঠাংশে দেখা যায়, অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে গ্রামের একমাত্র ভরসা একশো বিঘার মাঠটি জলে ডুবে গিয়েছিল। এই জল বের করতে না পারলে সমস্ত ধান নষ্ট হয়ে যাবে এবং গ্রামে কেউ খেতে পাবে না। গ্রামের প্রতিটি কৃষকেরই কিছু কিছু জমি ঐ মাঠে ছিল। মাঠের চারপাশে বাঁধ থাকলেও দক্ষিণ দিকে ঘোষাল ও মুখুয্যেদের বাঁধ ছাড়া অন্য কোনো দিক দিয়ে জল নিকাশ সম্ভব ছিল না। কিন্তু ঐ বাঁধের গায়ে একটি জলাশয় ছিল, যেখানে বছরে প্রায় দুশো টাকার মাছ পাওয়া যেত বলে জমিদার বেণীবাবু সেখানে কড়া পাহারা বসিয়েছিলেন এবং বাঁধ কাটতে দিচ্ছিলেন না। কৃষকরা সকাল থেকে বেণীবাবুর কাছে কান্নাকাটি করলেও তিনি রাজি হননি। তাই শেষ পর্যন্ত ছোটোবাবু রমেশই একমাত্র ভরসা মনে করে কুড়িজন কৃষক তাঁর কাছে এসে কেঁদে পড়েছিল।

৩.২. রমেশ বেণীর কাছে জল বার করে দেবার হুকুম দেওয়ার জন্য অনুরোধ করল কেন?

উত্তর: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পল্লীসমাজ’ পাঠ্যাংশে দেখা যায়, একশো বিঘার মাঠ জলে ডুবে যাওয়ার ফলে গ্রামের কৃষকরা চরম বিপদের মুখে পড়ে। এই জল বের করার একমাত্র উপায় ছিল দক্ষিণ দিকের বাঁধ কেটে দেওয়া, যেটি ঘোষাল ও মুখুয্যেদের জমির পাশে ছিল। রমেশ জানত, বাঁধ কাটলে চাষিদের ধান রক্ষা পাবে এবং গ্রামের মানুষ না খেয়ে মরবে না। বড়দা বেণীই বড়ো তরফের জমিদার হওয়ায় তিনি চাইলে বাঁধ কাটার নির্দেশ দিতে পারতেন। তাই রমেশ ছোট ভাই হিসেবে কৃষকদের জীবন ও জীবিকা রক্ষা করার জন্য বেণীর কাছে জল বার করার হুকুম দেওয়ার অনুরোধ করেছিল।

৩.৩. বেণী জল বার করতে চায়নি কেন?

উত্তর: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পল্লীসমাজ’ পাঠ্যাংশে বর্ণিত হয়েছে যে, বেণী দুটি কারণে জল বার করতে চাননি। প্রথমত, বাঁধ কেটে জল বার করলে বাঁধের পাশে যে জলাশয় ছিল, তার সব মাছ বেরিয়ে যাবে। এতে বছরে প্রায় দুশো টাকার ক্ষতি হবে বলে তিনি ভেবেছিলেন। দ্বিতীয়ত, তিনি নিজের জমিদারী ব্যবসা বাড়াতে চেয়েছিলেন। তিনি জানতেন, ধান নষ্ট হলে কৃষকরা খাদ্যাভাবে তাদের জমি বন্ধক রাখতে বাধ্য হবে এবং সেই জমিগুলো তিনি সহজেই নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন। এই স্বার্থপর মনোভাব থেকেই বেণী জল বার করতে চাননি।

অষ্টম শ্রেণী বাংলা
পল্লীসমাজ হাতেকলমে প্রশ্ন উত্তর

৩.৪. ‘ঘৃণায়, লজ্জায়, ক্রোধে, ক্ষোভে রমেশের চোখমুখ উত্তপ্ত হইয়া উঠিল’ – রমেশের এমন অবস্থা হয়েছিল কেন?

উত্তর: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পল্লীসমাজ’ পাঠ্যাংশে একশো বিঘার মাঠ জলে ডুবে যাওয়ায় গ্রামের চাষিরা চরম বিপদের মুখে পড়ে। চাষিদের অনুরোধে রমেশ নিজের বড়দা বেণীর কাছে গিয়ে দক্ষিণ দিকের বাঁধ কেটে জল বের করার অনুরোধ করে। কিন্তু বেণী জানায়, বাঁধ কাটলে জলার মাছ বেরিয়ে গিয়ে দুশো টাকার ক্ষতি হবে। সেইসঙ্গে সে আরও জানায়, ধান নষ্ট হলে কৃষকরা জমি বন্ধক রাখতে বাধ্য হবে, আর তাতে জমিদারির আয় বাড়বে। বড়দার মুখে এতটা স্বার্থপরতা, নির্মমতা ও হীনমন্যতার কথা শুনে রমেশ গভীরভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। তার চোখমুখ ঘৃণা, লজ্জা, ক্রোধ ও ক্ষোভে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

৩.৫. ‘রমেশ বিস্ময়ে হতবুদ্ধি হইয়া গেল’ – রমেশের বিস্ময়ের কারণ কী ছিল?

উত্তর: ‘পল্লীসমাজ’ গল্পে দেখা যায়, বড়দা বেণী বাঁধ কেটে জল বার করতে রাজি না হওয়ায় রমেশ রমার কাছে আশার আলো দেখে যায়। রমা ছিল তার বাল্যসখী ও মনের কাছের মানুষ, তাই রমেশ ভেবেছিল অন্তত রমা বাঁধ কাটার অনুমতি দেবে। কিন্তু রমা জানায়, মাছ আটকানোর কোনো উপায় নেই, আর মাছ বেরিয়ে গেলে যে টাকার ক্ষতি হবে তা সে বহন করতে পারবে না। প্রিয়জন রমার মুখেও যখন সে স্বার্থের কথা শুনল, তখন রমেশ বিস্ময়ে হতবুদ্ধি হয়ে গিয়েছিল। তার বিশ্বাস ভেঙে যায় এবং সে আবিষ্কার করে, যার কাছে সে ভালোবাসা ও সহানুভূতির আশা করেছিল, সেও সেই লাভক্ষতির হিসেবেই মগ্ন।

৩.৬. রমা রমেশের অনুরোধে রাজি হয়নি কেন?

উত্তর: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পল্লীসমাজ’ পাঠ্যাংশে দেখা যায়, গ্রামের একশো বিঘা জমি জলমগ্ন হয়ে পড়ায় চাষিদের ধান নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়। দক্ষিণ দিকের বাঁধ কেটে জল বের করলেই চাষিরা রক্ষা পেত। বাঁধসংলগ্ন জলার মালিক ছিলেন বেণী ঘোষাল, রমা, তার নাবালক ভাই যতীন এবং রমেশ। রমা তার ভাইয়ের হয়ে জমিদারি দেখাশোনা করত। জলার মাছ বেরিয়ে গেলে দুশো টাকার ক্ষতি হবে—এই ক্ষতি রমা সহ্য করতে পারেনি। সে মনে করেছিল, যতীনের অভিভাবক হিসেবে সে ভাইয়ের স্বার্থহানির সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তাছাড়া সে বেণী ঘোষালের সঙ্গে বিবাদে যেতে চায়নি। এইসব কারণেই রমা রমেশের অনুরোধে বাঁধ কাটতে রাজি হয়নি।

৩.৭. ‘মানুষ খাঁটি কি না, চেনা যায় শুধু টাকার সম্পর্কে’—কে, কার সম্পর্কে একথা বলেছিল? সে কেন একথা বলেছিল?

উত্তর: ‘মানুষ খাঁটি কি না, চেনা যায় শুধু টাকার সম্পর্কে’—এই কথাটি রমেশ, রমার সম্পর্কে বলেছিল। একশো বিঘার মাঠ জলমগ্ন হয়ে যাওয়ায় চাষিরা বিপদে পড়ে। রমেশ প্রথমে তার বড়দা বেণীর কাছে গিয়ে বাঁধ কাটার অনুমতি চায়, কিন্তু লাভের কথা ভেবে বেণী তাতে রাজি হয় না। এরপর রমেশ রমার কাছে যায়। রমা ছিল তার বাল্যসখী ও মনের কাছের মানুষ। কিন্তু রমা জানায়, বাঁধ কাটলে মাছ বেরিয়ে যাবে, এতে ক্ষতি হবে, আর সে তার ভাই যতীনের ক্ষতির ভার নিতে পারবে না। এমনকি সে বলে, যদি রমেশ এতই দয়ালু হন, তবে তিনি যেন সেই ক্ষতির টাকা মিটিয়ে দেন। রমার এমন হীন, স্বার্থপর এবং ঠান্ডা ব্যবহার দেখে রমেশ গভীরভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয় এবং তখনই বলে ওঠে—”মানুষ খাঁটি কি না, চেনা যায় শুধু টাকার সম্পর্কে”।

৩.৮. ‘রমা বিহ্বল হতবুদ্ধির ন্যায় ফ্যালফ্যাল করিয়া চাহিয়া রহিল’—রমার এমন অবস্থা হয়েছিল কেন?

উত্তর: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পল্লীসমাজ’ পাঠ্যাংশে রমেশ চাষিদের দুর্দশার কথা ভেবে বাঁধ কাটার জন্য রমার কাছে অনুরোধ জানায়। কিন্তু রমা তার ভাইয়ের ক্ষতির কথা ভেবে বাঁধ কাটতে রাজি হয় না এবং রমেশকেই সেই ক্ষতির টাকা মেটানোর কথা বলে। রমার মুখে এমন কথা শুনে রমেশ বিস্মিত ও হতাশ হয় এবং তীব্র অপমানবোধে রাগে ফেটে পড়ে। সে রমাকে নিষ্ঠুর, নীচ এবং হীনমনা বলে দোষারোপ করে। রমেশের মুখে নিজেকে নিয়ে এমন কঠোর কথা শুনে রমা হতবুদ্ধি হয়ে পড়ে এবং বিহ্বলভাবে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে।

৩.৯. রমা আকবরকে ডেকে এনেছিল কেন?

উত্তর: রমার কাছ থেকে বাঁধ কাটার অনুমতি না পেয়ে রমেশ জানায় যে সে গরিব চাষিদের ধান রক্ষা করতে একাই বাঁধ কাটবে। রমার মনে হয় এতে এক ভয়াবহ বিপদ ঘটে যেতে পারে। জল বার হয়ে গেলে বড় ধরনের ক্ষতি হবে এবং রমেশও বিপদে পড়বে। তাই বাঁধ পাহারা দেওয়ার জন্য সে পিরপুরের প্রজা ও লাঠিয়াল আকবরকে ডেকে আনে যাতে রমেশ বাঁধ কেটে জল বের করতে না পারে।

৩.১০. ‘মোরা নালিশ করতি পারব না’—কে এ কথা বলেছে? সে নালিশ করতে পারবে না কেন?

উত্তর: এই কথাটি বলেছিল পিরপুরের প্রজা ও লাঠিয়াল আকবর। বাঁধ পাহারা দেওয়ার সময় রমেশের সঙ্গে সংঘর্ষে সে আহত হয়। রক্তাক্ত অবস্থাতেও সে নালিশ করতে অস্বীকার করে। আকবর ছিল পাঁচখানা গ্রামের সর্দার, তার ছিল প্রবল আত্মসম্মানবোধ। সে জানত লাঠির খেলায় জয়-পরাজয় থাকেই। নালিশ করলে তার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হবে এবং সে নিজেই অপমানিত হবে। উপরন্তু, সে বুঝেছিল রমেশ নিজের জন্য নয়, গরিব চাষিদের ধান রক্ষার জন্য লড়াই করেছে। তাই সে থানায় গিয়ে কোনো অভিযোগ করতে চায়নি।

অষ্টম শ্রেণী বাংলা
পল্লীসমাজ হাতেকলমে প্রশ্ন উত্তর

৪. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো:
৪.১. ‘নইলে আর ব্যাটদের ছোটোলোক বলেছে কেন?’ — বক্তা কে? এই উক্তির মধ্যে দিয়ে বক্তার চরিত্রের কী পরিচয় পাওয়া যায়?

উত্তর: এই উক্তিটি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পল্লীসমাজ’ গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে বক্তা হলেন বেণী ঘোষাল।
গ্রামের একশো বিঘা জমির ধান জলমগ্ন হয়ে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। অসহায় চাষিরা বেণী ঘোষালের কাছে কাতর অনুরোধ জানায়, যাতে বাঁধ কেটে জল বার করে দেওয়া হয়। কিন্তু বেণী তাদের অনুরোধ না মেনে উল্টে তাদের ‘ছোটোলোক’ বলে অবজ্ঞা করে। পরে রমেশ যখন চাষিদের কথা বলে বেণীর কাছে অনুরোধ করে, তখন সে বিরক্ত হয়ে এই উক্তিটি করে— “নইলে আর ব্যাটদের ছোটোলোক বলেছে কেন?”
এই উক্তির মাধ্যমে বেণী ঘোষালের চরিত্রের গভীর স্বার্থপরতা, নিষ্ঠুরতা, লোভ ও বর্ণবিভাজনমূলক মনোভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তিনি একজন পুরোনো ধারার জমিদার, যিনি প্রজাদের কষ্টের প্রতি সহানুভূতিশীল নন। বরং তিনি চান, প্রজারা দুর্দিনে পড়ে তার কাছ থেকে সুদে টাকা ধার নিক, যাতে তিনি বেশি লাভ করতে পারেন।
তার চরিত্রে মানবিকতা ও সহানুভূতির অভাব এবং নিছক অর্থলোলুপতা ও জমিদারি অহংকার প্রকট। তিনি ধনীশ্রেণির ঊর্ধ্বতা বজায় রেখে দরিদ্রদের তুচ্ছ করতে অভ্যস্ত।

৪.২. বেণী, রমা ও রমেশ — চরিত্র তিনটির তুলনামূলক আলোচনা করো। সেইসঙ্গে এই তিনটি চরিত্রের মধ্যে কোন চরিত্রটি তোমার সবথেকে ভালো লেগেছে এবং কেন তা জানাও।

উত্তরঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পল্লীসমাজ’ উপন্যাসে বেণী, রমা ও রমেশ—এই তিনটি চরিত্র জমিদার সমাজের ভিন্ন ভিন্ন মানসিকতা ও আদর্শকে উপস্থাপন করে।

বেণী ঘোষাল বড় তরফের জমিদার। তিনি অত্যন্ত স্বার্থপর, নিপীড়ক ও লোভী প্রকৃতির মানুষ। প্রজাদের কষ্ট দেখে তার মন গললেও তিনি কখনো তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন না। বরং তাদের বিপদে ফেলে সুযোগ নিয়ে সুদে টাকা ধার দিয়ে নিজের লাভ বাড়ান। তিনি প্রজাদের ‘ছোটোলোক’, ‘চাষা’ ইত্যাদি বলে তাচ্ছিল্য করেন। তার চরিত্রে কোনো মানবিকতা বা ন্যায়ের বোধ নেই।

রমা হলেন বেণী ঘোষালের বোন। তিনি শিক্ষিতা, দৃঢ়চেতা ও সংযত স্বভাবের মেয়ে। তার মনের মধ্যে সহানুভূতি ও ন্যায়ের বোধ থাকলেও, সমাজ ও পারিবারিক গণ্ডির বাইরে গিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস তার মধ্যে ছিল না। রমা রমেশকে শ্রদ্ধা করলেও জমিদারির বিষয়ে নিজে কোনও সক্রিয়তা দেখাননি। সে দয়ালু হলেও সংকীর্ণ সামাজিক নিয়ম মান্য করে চলে।

রমেশ ছোট তরফের জমিদার। তিনি সহানুভূতিশীল, প্রজাদরদী ও ন্যায়পরায়ণ মানুষ। প্রজাদের কষ্টে তিনি ব্যথিত হন এবং তাদের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে আসেন। প্রজারা তাকে ভালোবাসে ও শ্রদ্ধা করে। তিনি জমিদারি ব্যবহার করেন সমাজসেবার উপকরণ হিসেবে। তার চরিত্রে মানবতা, শক্ত মানসিকতা এবং আত্মবলিদানের আদর্শ স্পষ্ট।

এই তিনটি চরিত্রের মধ্যে আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে রমেশের চরিত্রটি। কারণ, তিনি একজন আদর্শ মানুষ ও প্রকৃত নেতার মতো প্রজাদের পাশে দাঁড়ান। তার মধ্যে সহানুভূতি, ন্যায়বোধ ও সাহসের অপূর্ব সংমিশ্রণ রয়েছে। তিনি নিঃস্বার্থভাবে পল্লীসমাজের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। এই কারণেই রমেশ চরিত্রটি আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়।

৪.৩. উপন্যাসের নামে পাঠ্যাংশটির নামকরণও ‘পল্লীসমাজ’ রাখা হয়েছে। সেক্ষেত্রে নামকরণটি সুপ্রযুক্ত কিনা সে সম্পর্কে মতামত জানাও।

উত্তরঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পল্লীসমাজ’ উপন্যাসের নির্বাচিত পাঠ্যাংশটির নামকরণ ‘পল্লীসমাজ’ হওয়াটা সম্পূর্ণভাবেই যথাযথ ও সুপ্রযুক্ত। কারণ, এই পাঠ্যাংশে তৎকালীন পল্লীবাংলার সামাজিক কাঠামো, জমিদারি প্রথা, কৃষক-জমিদার সম্পর্ক, প্রজাদের দুঃখ-কষ্ট, সমাজের ভেদাভেদ ও রাজনৈতিক কূটচাল স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।

বেণী, রমা, রমেশ, গোপাল খুড়ো প্রভৃতি চরিত্রগুলির মাধ্যমে পল্লী সমাজের নানা দিক — যেমন নিষ্ঠুরতা, সহানুভূতি, ন্যায়ের লড়াই, পারিবারিক সম্পর্ক, সমাজে নারীর অবস্থান ইত্যাদি গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। এই অংশে ব্যক্তিগত জীবন নয়, বরং সমাজব্যবস্থা, বিশেষ করে গ্রামীণ সমাজব্যবস্থার দ্বন্দ্ব ও রূপটি প্রধান হয়ে উঠেছে।

সুতরাং, এই কাহিনির পটভূমি ও বিষয়বস্তুর সঙ্গে ‘পল্লীসমাজ’ নামটি সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই বলা যায়, পাঠ্যাংশটির নামকরণ যথার্থ ও অর্থবহ।

৪.৪. পল্লীসমাজ পাঠ্যাংশে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার কোনো নিদর্শন পেয়ে থাকলে সে সম্পর্কে আলোচনা করো। এ ধরনের ব্যবস্থার সুফল ও কুফল সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তরঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পল্লীসমাজ’ পাঠ্যাংশে তৎকালীন বাংলার সামন্ততান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার প্রকৃষ্ট নিদর্শন পাওয়া যায়। এই ব্যবস্থায় জমিদার শ্রেণি ছিল সমাজের শাসক এবং প্রজারা ছিল নির্যাতিত। জমিদাররা পরিশ্রম না করেও বিপুল সম্পত্তির অধিকারী হতেন, আর কৃষকরা সারাজীবন খেটে অর্ধাহারে দিন কাটাত।

এই পাঠ্যাংশে বেণী ঘোষাল হচ্ছেন একজন নির্দয়, স্বার্থপর, প্রজানির্যাতনকারী জমিদার। তিনি প্রজাদের বিপদে সাহায্য না করে বরং তাদের দুর্দশাকে নিজের লাভের সুযোগ হিসেবে দেখতেন। প্রজারা যখন ধান রক্ষা করতে বাঁধ কাটার অনুমতি চায়, তখন তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং তাদের ‘ছোটোলোক’ বলে অপমান করেন। এমনকি রমেশ বাঁধ কাটতে চাইলে, তাকে বাধা দেওয়ার জন্য তিনি ও রমা লাঠিয়াল আকবরকে সেখানে পাঠান। এছাড়া, রমেশকে শাস্তি দেওয়ার জন্য তিনি পুলিশের সাহায্য নিতে চেয়েছিলেন। এই সব ঘটনা সামন্ততন্ত্রের নিপীড়নমূলক রূপ তুলে ধরে।

সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার সম্ভাব্য সুফল:

কিছু জমিদার ছিলেন প্রজাদরদি, যেমন রমেশ। তাঁরা প্রজাদের সাহায্য করতেন, উন্নয়নমূলক কাজ করতেন।
জমিদারদের ব্যক্তিগত বাহিনী থাকায় প্রজারা কখনও কখনও বাইরের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেত।
তবে এই ব্যবস্থার প্রধান কুফলগুলি হলো:
(ক) প্রজারা জমিদারদের হাতে সর্বদা নির্যাতিত হতো।
(খ) সমাজে চরম শ্রেণিবৈষম্য তৈরি হতো।
(গ) জমিদারদের অত্যাচারে মানুষ ভিটেমাটি ছেড়ে পালাতো।
(ঘ) কৃষি ও উৎপাদন ব্যবস্থা ধ্বংসপ্রাপ্ত হতো।
(ঙ) প্রজাদের মধ্যে বিদ্রোহ ও ক্ষোভ জন্মাত, যা অনেক সময় সংঘর্ষে রূপ নিত।

৫. সন্ধি করোঃ

উত্তরঃ
বৃষ + তি = বৃষ্টি
অতি + অন্ত = অত্যন্ত
সম্ + বরণ = সংবরণ
অনু + আত্মীয় = অনাত্মীয়
কাঁদ্ + না = কান্না
এক + অন্ত = একান্ত

৬. নীচের শব্দগুলির সন্ধি বিচ্ছেদ করোঃ

উত্তরঃ
নিরুত্তর = নিঃ + উত্তর
নমস্কার = নমঃ + কার
তারকেশ্বর = তারক + ঈশ্বর
যথার্থ = যথা + অর্থ
প্রত্যাখ্যান = প্রতি + আখ্যান
আশ্চর্য = আঃ + চর্য
তদবস্থা = তৎ + অবস্থা

৭. নীচে দেওয়া শব্দগুলির দলবিশ্লেষণ করোঃ

অপরাহ্ন = অ প – রান্ – হ
[মুক্তদল অ, প, হ (৩টি), রুদ্ধদল – রান্ (১টি)]।

অকস্মাৎ = অ- কস্ – মাৎ
[মুক্তদল অ (১টি), রুদ্ধদল কস্, মাৎ (২ টি)]।

আহ্বান = আ – হ – বান্
[মুক্তদল আ, হ (২ টি), রুদ্ধদল বান (১টি)]।

দক্ষিণ = দক্ – ক্ষিণ,
[মুক্তদল শূন্য (০), রুদ্ধদল দক্, ক্ষিণ (২ টি)]।

উচ্ছিষ্ট = উচ – ছিষ – ট
[মুক্তদল- ট (১টি), রুদ্ধদল উচ, ছিষ (২ টি)]।

উত্তপ্ত = উৎ – তপ্ – ত
[মুক্তদল- ত (১টি), রুদ্ধদল – উৎ, তপ্ (২ টি)]।

বিস্ফারিত = বিস্ – ফা – রি ত
[মুক্তদল ফা, রি, ত (৩টি), রুদ্ধদল বিস্ (১টি)]।

দীর্ঘশ্বাস = দীর – ঘ – শ্বাস
[মুক্তদল ঘ (১টি), রুদ্ধদল দীর, শ্বাস (২ টি)]।

অশ্রুপ্লাবিত = অশ – রু প্লা – বি – ত
[মুক্তদল রু, বি, ত (৩টি), রুদ্ধদল অশ, প্লা (২টি)]

হিন্দুস্থানি = হিন – দুস্ – থা – নি
[মুক্তদল থা, নি (২ টি), রুদ্ধদল-হিন, দুস্ (২ টি)]।

অস্বচ্ছ = অ – স্বচ্ – ছ
[মুক্তদল – অ, ছ (২ টি), রুদ্ধদল – স্বচ (১টি)]।

৮. নীচে বাক্যগুলিকে নির্দেশ অনুযায়ী পরিবর্তন করোঃ

৮.১ কথাটা রমেশ বুঝিতে পারিল না। (যৌগিক বাক্যে)
উত্তরঃ রমেশ কথাটা শুনিল, কিন্তু বুঝিতে পারিল না।

৮.২ এ বাড়িতে আসিয়া যখন প্রবেশ করিল তখন সন্ধ্যা হয় হয়। (সরল বাক্যে)
উত্তরঃ সন্ধ্যা হওয়ার সময় এ বাড়িতে আসিয়া প্রবেশ করিল।

৮.৩ ওরা যাবে কি? (নির্দেশক বাক্যে)
উত্তরঃ ওরা যাবে কিনা, তা জানা প্রয়োজন।

৮.৪ বেণীর এই অত্যন্ত অপমানকর প্রশ্নের উত্তর দিবারও তাহার প্রবৃত্তি হইল না। (হ্যাঁ-বাচক বাক্যে)
উত্তরঃ সে বেণীর এই অত্যন্ত অপমানকর প্রশ্নের উত্তর দিতে চাইল না।

৮.৫ তুমি নীচ, অতি ছোটো। (যৌগিক বাক্যে)
উত্তরঃ তুমি নীচ এবং অত্যন্ত ছোটো।

৮.৬ পথে আর এতটুকু কাদা পাবার জো নেই দিদিমা। (প্রশ্নবোধক বাক্যে)
উত্তরঃ দিদিমা, পথে কি আর এতটুকু কাদা পাওয়া যায়?

৮.৭ মাসি উপরে ঠাকুরঘরে আবদ্ধ থাকায় এ সকলের কিছুই জানিতে পারেন নাই। (জটিল বাক্যে)
উত্তরঃ যেহেতু মাসি উপরে ঠাকুরঘরে আবদ্ধ ছিলেন, তাই এ সকলের কিছুই জানিতে পারেন নাই।

৯. নীচে দেওয়া শব্দদুটিকে দুটি আলাদা আলাদা অর্থে ব্যবহার করে বাক্যরচনা করোঃ

(ক) যাত্রা
অর্থ ১ (পালাগান শোনার অর্থে): মোলাপাড়ায় আজ রাতে যাত্রা হবে।
অর্থ ২ (এই মুহূর্তে বা এবার): অমর অপমানের হাত থেকে এ যাত্রায় রক্ষা পেল।

(খ) বাঁধ
অর্থ ১ (নদীর পাড় বা কৃত্রিম প্রাচীর): বাঁধ ভেঙে জল গ্রামে ঢুকে পড়ল।
অর্থ ২ (সুখ-দুঃখ বা অনুভূতির বন্ধন): মানুষের জীবনটা সুখ-দুঃখে বাঁধা।

১০. নীচের বাক্যগুলিতে ব্যবহৃত পদগুলির পরিচয় দাওঃ

১০.১ কিন্তু রমা কাঠের মতো নীরবে বসিয়া রহিল।

কিন্তু – অব্যয়
রমা – বিশেষ্য
কাঠের – বিশেষ্য (উপসর্গসহ: ‘কাঠ’ + ‘এর’ = ‘কাঠের’, এটি ‘মতো’ শব্দটিকে বিশেষিত করছে)
মতো – অব্যয়
নীরবে – ক্রিয়া বিশেষণ (নীরব+এ = কীভাবে বসিয়া রহিল?)
বসিয়া রহিল – যুক্ত ক্রিয়া

১০.২ এরা সারা বছর খাবে কী?

এরা – সর্বনাম
সারা – বিশেষণ
বছর – বিশেষ্য
খাবে – ক্রিয়া
কী – প্রশ্নবাচক সর্বনাম

১০.৩ রমেশ কহিল, তুমি অত্যন্ত হীন এবং নীচ।

রমেশ – বিশেষ্য
কহিল – ক্রিয়া
তুমি – সর্বনাম
অত্যন্ত – ক্রিয়া বিশেষণ (হীন ও নীচ শব্দদ্বয়কে বিশেষিত করছে)
হীন – বিশেষণ
এবং – অব্যয়
নীচ – বিশেষণ

১০.৪ রমা চুপ করিয়া রহিল।

রমা – বিশেষ্য
চুপ – বিশেষণ (ব্যবহৃত হয়েছে অবস্থা বোঝাতে)
করিয়া রহিল – যুক্ত ক্রিয়া

অষ্টম শ্রেণী বাংলা
পল্লীসমাজ অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্তর

১. কোথায় বসে রমেশ জমিদারির হিসাবপত্র দেখছিলেন?
ক) বাড়ির দালানে
খ) চণ্ডীমণ্ডপে গোপাল সরকারের কাছে
গ) নিজের ঘরে
ঘ) জমিদার অফিসে

উত্তর: খ) চণ্ডীমণ্ডপে গোপাল সরকারের কাছে

২. কৃষকরা রমেশকে কেন অনুরোধ করতে আসে?
ক) ঋণ মকুব করার জন্য
খ) তাদের জমির মালিকানা দেওয়ার জন্য
গ) জমিতে জমে থাকা জল সরানোর জন্য
ঘ) রাস্তা তৈরির জন্য

উত্তর: গ) জমিতে জমে থাকা জল সরানোর জন্য

৩. বাঁধের কোন দিক দিয়ে জল নিকাশ সম্ভব ছিল?
ক) পূর্ব
খ) পশ্চিম
গ) উত্তর
ঘ) দক্ষিণ

উত্তর: ঘ) দক্ষিণ

৪. মাছের জন্য বাঁধ কে পাহারা দিতেন?
ক) রমেশ
খ) রমা
গ) বেণীবাবু
ঘ) গোপাল সরকার

উত্তর: গ) বেণীবাবু

৫. মাছ বিক্রি থেকে বছরে কত টাকা আয় হতো?
ক) ১০০ টাকা
খ) ২০০ টাকা
গ) ৫০০ টাকা
ঘ) ১০০০ টাকা

উত্তর: খ) ২০০ টাকা

৬. রমেশ কোথায় গিয়ে বেণীকে জল ছাড়ার কথা বলেন?
ক) জমিদার কাচারিতে
খ) রমার ঘরে
গ) চণ্ডীমণ্ডপে
ঘ) ঘোষালদের বাড়িতে

উত্তর: ঘ) ঘোষালদের বাড়িতে

৭. বেণী রমেশকে কী করতে বলেন চাষিদের প্রতিরোধে?
ক) জল ছাড়তে
খ) দারোয়ান দিয়ে তাড়াতে
গ) মাছ বিক্রি করতে
ঘ) পুলিশে অভিযোগ করতে

উত্তর: খ) দারোয়ান দিয়ে তাড়াতে

৮. বেণীর মতে চাষিরা কীভাবে খাবে?
ক) সরকারী সাহায্যে
খ) ধার করে
গ) শ্রম বিক্রি করে
ঘ) ধান বিক্রি করে

উত্তর: খ) ধার করে

৯. রমার অবস্থান কী ছিল সম্পত্তির বিষয়ে?
ক) পূর্ণ মালিক
খ) সহ-অভিভাবক
গ) কেবল অভিভাবক
ঘ) কেবল কর্মচারী

উত্তর: গ) কেবল অভিভাবক

১০. রমা কেন জল ছাড়ার অনুমতি দেয়নি?
ক) চাষিদের পছন্দ করতেন না
খ) বড়দার মতের বিরোধে যেতে চাননি
গ) টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করেছিলেন
ঘ) জল ছাড়ার উপায় জানতেন না

উত্তর: গ) টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করেছিলেন

১১. রমেশ রমাকে কী অভিযোগ করেন?
ক) সে চাষিদের অবহেলা করছে
খ) সে নিঃস্ব হয়েছে
গ) সে নীচ এবং হীন
ঘ) সে রমেশকে ভালোবাসে না

উত্তর: গ) সে নীচ এবং হীন

১২. রমা কেন রমেশকে বাঁধ কাটতে নিষেধ করেছিল?
ক) মাছের ক্ষতির জন্য
খ) বড়দার মতের জন্য
গ) বিবাদ না চাওয়ার কারণে
ঘ) জল না কমার সম্ভাবনায়

উত্তর: গ) বিবাদ না চাওয়ার কারণে

১৩. চাষিরা কোথায় মাছ বিক্রি করে?
ক) নদীতে
খ) হাটে
গ) ঘোষালদের বাঁধে থাকা জলা থেকে
ঘ) পুকুরে

উত্তর: গ) ঘোষালদের বাঁধে থাকা জলা থেকে

১৪. দাসি রমেশ সম্পর্কে কী বলেছিল?
ক) তিনি দুর্দান্ত জমিদার
খ) তিনি গরিবের বন্ধু
গ) তিনি পথ বানিয়ে দিয়েছেন
ঘ) তিনি ভালো মাছ ধরেন

উত্তর: গ) তিনি পথ বানিয়ে দিয়েছেন

১৫. বেণীবাবু চাষিদের কী বলে সম্বোধন করেন?
ক) ভাই
খ) ভিখারি
গ) হারামজাদা
ঘ) চাষা

উত্তর: গ) হারামজাদা

অষ্টম শ্রেণী বাংলা
পল্লীসমাজ অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্তর

১. তোমার পাঠ্য ‘পল্লীসমাজ’ গদ্যাংশটি কোন্ উপন্যাস থেকে গৃহীত?

উত্তর: আমাদের পাঠ্য ‘পল্লীসমাজ’ গদ্যাংশটি ‘পল্লীসমাজ’ নামেরই মূল উপন্যাস থেকে গৃহীত হয়েছে।

২. ‘পল্লীসমাজ’ উপন্যাসের লেখক কে? তাঁর লেখা একটি ছোটোগল্পের নাম লেখো।

উত্তর: ‘পল্লীসমাজ’ উপন্যাসের লেখক হলেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তাঁর লেখা একটি ছোটোগল্প হল ‘মহেশ’।

৩. ‘পল্লীসমাজ’ উপন্যাসের জমিদারির তিন শরিকের নাম লেখো।

উত্তর: ‘পল্লীসমাজ’ উপন্যাসের জমিদারির তিন শরিকের নাম হল বেণী ঘোষাল, রমা ও রমেশ।

৪. কী কারণে গ্রামবাসীরা রমেশের কাছে কেঁদে পড়েছিল?

উত্তর: গ্রামে একশো বিঘা মাঠের ফসল ডুবে যাওয়ার কারণে এবং জমির জল বের করে দেওয়ার জন্য কৃষকরা রমেশের কাছে কেঁদে পড়েছিল।

৫. ‘বোধ করি এই কথাই হইতেছিল’- এই কথার প্রেক্ষাপটে কী ইঙ্গিত করা হয়েছে?

উত্তর: ‘বোধ করি এই কথাই হইতেছিল’—এই কথার প্রেক্ষাপটে গ্রামের একশো বিঘা মাঠের ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ার বিষয়েই বেণী ঘোষাল ও হালদারের মধ্যে আলোচনা হচ্ছিল।

৬. বেণী হুঁকাটা কার হাতে দিয়েছিলেন?

উত্তর: বেণী হুঁকাটা হালদার মহাশয়ের হাতে দিয়েছিলেন।

৭. “নিরুত্তরে বাহির হইয়া গেল”- রমেশ কোথায় বেরিয়ে গিয়েছিল?

উত্তর: রমেশ উত্তর না দিয়ে বাহির হয়ে রমার কাছে গিয়েছিল।

৮. ‘ভাই’ বলতে এখানে কার কথা বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: ‘ভাই’ বলতে রমার ভাই যতীনের কথা বোঝানো হয়েছে।

৯. মানুষের খাঁটিত্ব নিরূপণের মানদণ্ড কী?

উত্তর: ‘পল্লীসমাজ’ রচনাংশে রমেশের মতে, মানুষ খাঁটি কি না, তা চেনা যায় কেবল টাকার সম্পর্কে তার আচরণের মাধ্যমে।

১০. “রমেশ বিস্ময়ে হতবুদ্ধি হইয়া গেল”- রমেশের হতবুদ্ধির কারণ কী?

উত্তর: রমেশের হতবুদ্ধি হওয়ার কারণ, রমা বলেছিল অত টাকা সে লোকসান করতে পারবেন না।

অষ্টম শ্রেণী বাংলা
পল্লীসমাজ অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্তর

১. ‘পল্লীসমাজ’-এর পটভূমি যে গ্রামটি, তার নাম কী?
উত্তর: ‘পল্লীসমাজ’-এর পটভূমি কুঁয়াপুর গ্রাম।

২. ‘রমেশ’ কে?
উত্তর: ‘রমেশ’ পল্লীসমাজ উপন্যাসের নায়ক।

৩. রমেশের পিতার নাম কি?
উত্তর: রমেশের পিতার নাম তারিণী ঘোষাল।

৪. কী কারণে রমেশকে গ্রামে ফিরতে হয়েছিল?
উত্তর: পিতৃশ্রাদ্ধ সমাপনের জন্য রমেশকে গ্রামে ফিরতে হয়েছিল।

৫. রমা কে?
উত্তর: ‘রমা’ ‘পল্লীসমাজ’ উপন্যাসের নায়িকা।

৬. ‘রমা’-র পিতার নাম কী?
উত্তর: রমার পিতার নাম যদু মুখুয্যে।

৭. রমার সংসারে রমা ছাড়া আর কে কে থাকেন?
উত্তর: রমার সংসারে রমা ছাড়া তার ভাই যতীন এবং রমার এক মাসী থাকতেন।

৮. কে, কাকে রাণী বলে ডাকতেন?
উত্তর: রমেশের মা, রমাকে ছোটবেলায় রাণী বলে ডাকতেন।

৯. রমা ও রমেশ কোথাকার পাঠশালায় পড়তো?
উত্তর: রমা ও রমেশ দু’জনে শীতলাতলার পাঠশালায় পড়তো।

১০. রমেশের পূর্ববর্তী বংশধর কোথা থেকে কুঁয়াপুর গ্রামে আসেন?
উত্তর: রমেশের পূর্ববর্তী বংশধর মহাকুলীন বলরাম মুখুয্যে বিক্রমপুর থেকে কুঁয়াপুর গ্রামে উঠে আসেন।

১১. বলরাম মুখুয্যে কাকে সঙ্গে নিয়ে কুঁয়াপুরে আসেন?
উত্তর: বলরাম মুখুয্যে তার মিতা বলরাম ঘোষালকে সঙ্গে নিয়ে কুঁয়াপুরে উঠে আসেন।

১২. তারিণী ঘোষাল ও বেণী ঘোষালের মধ্যে সম্পর্ক কী?
উত্তর: তারিণী ঘোষাল ও বেণী ঘোষালের মধ্যে খুড়ো-ভাইপোর সম্বন্ধ।

১৩. রমা ও রমেশের জ্যাঠাইমার নাম কী?
উত্তর: রমা ও রমেশের জ্যাঠাইমার নাম বিশ্বেশ্বরী ঘোষাল।

১৪. যতীন কে?
উত্তর: যতীন রমার ভাই।

১৫. দীনু ভট্টাচার্যের কন্যা ও পুত্রের নাম কী?
উত্তর: দীনু ভট্টাচার্যের কন্যার নাম খেঁদি এবং পুত্র নিমাই।

১৬. খেন্তি বামনির মেয়ের নাম কী?
উত্তর: খেত্তি বামনির মেয়ের নাম সুকুমারী।

১৭. রমেশের পিতৃ-শ্রাদ্ধের দিন কাকে কেন্দ্র করে গোলযোগ বাধে এবং কার উপস্থিতিতে সেই গোলযোগ থামে?
উত্তর: রমেশের পিতৃশ্রাদ্ধের দিন খেত্তি বামনির মেয়ে সুকুমারীকে নিয়ে গোলযোগ বাঁধে এবং বিশ্বেশ্বরীর উপস্থিতিতে তা থেমে যায়।

১৮. কুঁয়াপুর অঞ্চলের সমাজপতি কারা?
উত্তর: কুঁয়াপুর অঞ্চলের সমাজপতি হলেন- বেণী ঘোষাল, পরাণ হালদার এবং যদু মুখুয্যের মেয়ে রমা।

১৯. দ্বারিক চক্রবর্তী এবং সনাতন হাজরার আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ার পিছনে কী কারণ ছিল?
উত্তর: বেণী ঘোষাল ও গোবিন্দ গাঙ্গুলীর প্ররোচণায় একটা চালতা গাছ নিয়ে মামলা করে দ্বারিক চক্রবর্তী ও সনাতন হাজরা একেবারে গরীব হয়ে যায়।

২০. তারকেশ্বরে দুধ পুকুরের সিঁড়ির উপর যে রমণীর সঙ্গে রমেশের দেখা হয়েছিল তার নাম কী?
উত্তর: মেয়েটির নাম রমা।

অষ্টম শ্রেণী বাংলা
পল্লীসমাজ অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্তর

২১. রমা ও রমেশ কতদিন পর মুখোমুখি হয়েছিল?
উত্তর: তিনদিন পরে রমা ও রমেশ দুজনে পরস্পরের মুখোমুখি হয়।

২২. তারকেশ্বরে যখন রমা ও রমেশের সাক্ষাৎ হল, তখন তাদের বয়স কত ছিল?
উত্তর: রমেশের বয়স তেইশ বছর ও রমার বয়স প্রায় কুড়ি হবে।

২৩. রমেশের চাইতে রমা কত বছরের ছোট ছিল?
উত্তর: রমেশ অপেক্ষা রমা তিন বছরের ছোট ছিল।

২৪. বিবাহের কত দিনের মধ্যে রমা বিধবা হয়েছিল?
উত্তর: বিবাহের ছ’মাসের মধ্যে রমা বিধবা হয়েছিল।

২৫. বাঁধ কেটে জল বের করে দেবার প্রয়োজন হয়েছিল কী কারণে?
উত্তর: দু’দিন অবিশ্রান্ত বৃষ্টির ফলে একশ বিঘের মাঠ ডুবে যাওয়ার উপক্রম হলে বাঁধ কেটে জল বের করে দেওয়া ছাড়া ধান বাঁচানোর অন্য কোন উপায় ছিল না।

২৬. বাঁধ কাটার জন্য কে জমিদারদের লাঠির বিরুদ্ধে শক্ত হাতে লাঠি ধরেছিল?
উত্তর: রমেশ, বেণী ও রমার পাঠানো লাঠিয়ালদের বিরুদ্ধে শক্ত হাতে লাঠি ধরেছিল।

২৭. আকবর কে?
উত্তর: আকবর রমাদের পীরপুরের প্রজা এবং একজন বড় লাঠিয়াল।

২৮. রমা আকবরকে কেন ডেকে পাঠিয়েছিল?
উত্তর: বাঁধ পাহারা দেবার জন্য রমা আকবরকে ডেকে পাঠিয়েছিল।

২৯. গহর কে?
উত্তর: গহর আকবরের ছেলে।

৩০. গহরের লাঠির আঘাতে কে জখম হয়েছিল?
উত্তর: ভজুয়া।

৩১. আকবর কার লাঠির আঘাতে জখম হয়েছিল?
উত্তর: রমেশের লাঠির আঘাতে আকবর জখম হয়েছিল।

৩২. রমেশ কোন গ্রামে স্কুল তৈরীর উদ্যোগ নিয়েছিল?
উত্তর: মুসলমান প্রধান পীরপুর গ্রামে রমেশ একটি স্কুল তৈরীর উদ্যোগ নিয়েছিল।

৩৩. জাতিভেদের ওপর রমেশের আস্থা ছিল কী?
উত্তর: রমেশের জাতিভেদের উপর কখনও আস্থা ছিল না।

৩৪. পীরপুরের লোক ধনী জাফরকে একঘরে রেখেছিল কেন?
উত্তর: জাফর তার বিধবা সৎমাকে খেতে দেয়নি বলে, পীরপুরের লোক জাফর-কে একঘরে করে রেখেছিল।

৩৫. যতীন রমেশকে কী বলে ডাকতো?
উত্তর: যতীন রমেশকে ছোড়দা বলে ডাকতো।

৩৬. ভজুয়াকে কীজন্য পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল?
উত্তর: রাধানগরের ডাকাতিতে ভজুয়া যুক্ত ছিল, এই অভিযোগে পুলিশ ভজুয়াকে গ্রেপ্তার করেছিল।

৩৭. মুসলমানরা রমেশকে কী বলে মনে করতো?
উত্তর: মুসলমানরা রমেশকে পীর-পয়গম্বর বলে মনে করতো।

৩৮. প্রজারা রমেশকে কী বলে ডাকতো?
উত্তর: প্রজারা রমেশকে ‘ছোটবাবু’ বলে ডাকতো।

৩৯. বর্ষার শেষে রমেশ কোন্ রোগে আক্রান্ত হয়েছিল?
উত্তর: বর্ষার শেষে রমেশ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল।

অষ্টম শ্রেণী বাংলা
পল্লীসমাজ অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্তর

১. “সে কিছুতেই এরূপ উত্তর আশা করে নাই”-কে, কী আশা করেনি?

উত্তর: রমেশ রমার কাছ থেকে যে ধরনের উত্তর আশা করেছিল, তা ছিল অনেক সহানুভূতিশীল এবং চাষিদের প্রতি স্নেহশীল। রমেশ মনে করেছিল, রমা তার আবেদনের প্রতি সম্মান দেখিয়ে চাষিদের স্বার্থে নিজের ক্ষতি স্বীকার করবে, কারণ সে রমাকে খুব বুদ্ধিমতী ও স্নেহশীল ভাবত। কিন্তু রমা তার কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রেখে, একদম বেণী ঘোষালের মতোই, চাষিদের জন্য কোনও সহানুভূতি দেখালো না এবং রমেশের অনুরোধকে একেবারেই উড়িয়ে দিল। এর ফলে রমেশ অত্যন্ত হতাশ ও বিস্মিত হয়ে পড়ে, কারণ সে কখনোই রমার কাছ থেকে এতটা নির্দয় উত্তর আশা করেনি।

২. “মানুষ খাঁটি কি না চেনা যায় শুধু টাকার সম্পর্কে” — কোন প্রসঙ্গে একথা বলেছে? উদ্ধৃতিটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: এই উক্তিটি রমেশ বলেছিল, যখন সে রমার কাছে চাষিদের জন্য কিছু করার অনুরোধ করেছিল, কিন্তু রমা তাতে সাড়া দেয়নি। রমেশ মনে করেছিল, রমা একজন ভালো মানুষ, এবং সে চাষিদের স্বার্থে নিজের ক্ষতি স্বীকার করবে। কিন্তু রমা নিজেকে বেণী ঘোষালের মতোই দেখিয়ে, চাষিদের ব্যাপারে তার কোন আগ্রহ বা সহানুভূতি প্রকাশ করেনি। এর পরেই রমেশ বলেছিল, “মানুষ খাঁটি কি না চেনা যায় শুধু টাকার সম্পর্কে”, অর্থাৎ মানুষ তার প্রকৃত চরিত্র তখনই প্রদর্শন করে যখন তার সামনে কোনো অর্থনৈতিক বা স্বার্থের প্রশ্ন আসে। রমেশ বুঝতে পারে, রমার আসল চরিত্র তার টাকার প্রতি মনোভাব থেকেই স্পষ্ট হয়েছে।

আরও দেখো: সবুজ জামা কবিতার প্রশ্ন উত্তর

পল্লীসমাজ গল্পের প্রশ্ন উত্তর শেয়ার করা হলো / ক্লাস ৮ বাংলা পশ্চিমবঙ্গ মধ্য শিক্ষা পর্ষদ / Palli samaj class 8 question answer / পল্লীসমাজ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রশ্ন উত্তর WBBSE

CLOSE

You cannot copy content of this page