ভারতের জাতীয় পতাকা রচনা ১০০, ১৫০, ২০০ শব্দে

Spread the love

এখানে ভারতের জাতীয় পতাকা রচনা ১০০, ১৫০, ২০০, ২৫০, ৪০০ শব্দে শেয়ার করা হলো।

ভারতের জাতীয় পতাকা রচনা ১০০ শব্দে

পৃথিবীর প্রতিটি স্বাধীন দেশেরই একটি নিজস্ব জাতীয় পতাকা থাকে। জাতীয় পতাকা প্রতিটি দেশের স্বাধীনতার প্রতীক। আমাদের দেশ ভারতবর্ষেরও একটি জাতীয় পতাকা আছে। এই পতাকা গেরুয়া, সাদা ও সবুজ — এই তিনটি রঙে বিভক্ত। পতাকার প্রতিটি রঙের নিজস্ব অর্থ আছে। নিচের সবুজ রং যৌবনশক্তি ও উৎপাদনের প্রতীক, মাঝখানের সাদা রং শান্তির প্রতীক, আর উপরের গেরুয়া রং সাহস ও ত্যাগের প্রতীক। সাদা অংশের মাঝখানে একটি নীল রঙের অশোকচক্র রয়েছে, যা ন্যায় ও সৌভ্রাতৃত্বের প্রতীক। জাতীয় পতাকা আমাদের দেশের সম্মান বহন করে। এই পতাকার অবমাননা করা অনুচিত। আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত জাতীয় পতাকার যথাযোগ্য সম্মান রক্ষা করা।

ভারতের জাতীয় পতাকা রচনা ১৫০ শব্দে

সূচনা:

পৃথিবীর প্রত্যেক স্বাধীন দেশেরই একটি জাতীয় পতাকা থাকে। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ভারতেরও একটি জাতীয় পতাকা রয়েছে। জাতীয় পতাকা যে কোনো দেশের গৌরব ও সম্মানের প্রতীক।

বর্ণনা:

ভারতের জাতীয় পতাকায় তিনটি রঙ রয়েছে। উপরে গেরুয়া, মাঝখানে সাদা, আর নিচে সবুজ রঙ। পতাকার আকার আয়তকার। গেরুয়া রং সাহস ও ত্যাগের প্রতীক, সাদা রং সত্য, সরলতা ও শান্তির প্রতীক এবং সবুজ রং সমৃদ্ধি ও বিশ্বাসের প্রতীক। সাদা অংশের মাঝে একটি নীল রঙের অশোকচক্র রয়েছে। এই চক্র ন্যায়, কর্মপ্রগতি ও মহান সম্রাট অশোকের শান্তিনীতি নির্দেশ করে।

ব্যবহার:

ভারতের জাতীয় পতাকা প্রতিটি ভারতবাসীর কাছে গৌরবের বিষয়। স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস এবং বিভিন্ন মহান দেশনেতার জন্মদিনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এসময় জাতীয় সংগীত ‘জন গণ মন’ এবং ‘বন্দে মাতরম’ গান গাওয়া হয়। জাতীয় শোক পালনের সময় পতাকাটি অর্ধনমিত রাখা হয়।

উপসংহার:

জাতীয় পতাকার উপরে অন্য কোনো পতাকা রাখা যায় না। এটি দেশবাসীর কাছে অত্যন্ত পবিত্র। জাতীয় পতাকার মান ও মর্যাদা রক্ষা করা প্রত্যেক ভারতবাসীর একান্ত কর্তব্য।

ভারতের জাতীয় পতাকা রচনা ২০০ শব্দে

ভারতের জাতীয় পতাকা তিন রঙের পতাকা। এই পতাকাকে ত্রিবর্ণ পতাকা বলা হয়। জাতীয় পতাকা দেশের গর্ব ও ঐক্যের প্রতীক।

ইতিহাস:

ভারতীয় পতাকার বর্তমান নকশা প্রথম গৃহীত হয় ১৯৩১ সালে অল-ভারত কংগ্রেস সভায়। ১৯৪৭ সালের ২২ জুলাই এটি আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা হিসেবে গৃহীত হয়। স্বাধীনতা দিবসে (১৫ আগস্ট ১৯৪৭) প্রধানমন্ত্রী লালকেল্লায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।

বর্তমান বর্ণনা:

পতাকা তিনটি সমান আনুভূমিক ডোরা বিশিষ্ট। উপরের ডোরার রং গেরুয়া, মাঝেরটি সাদা ও নিচেরটি সবুজ। মাঝের সাদা ডোরার কেন্দ্রে নীল অশোক চক্র আছে, যার মধ্যে ২৪টি রেখা রয়েছে।

রঙ ও প্রতীকের তাৎপর্য:

গেরুয়া রং বীরত্ব এবং আত্মত্যাগের প্রতীক। সাদা রং শান্তি ও সত্যের প্রতীক। সবুজ রং দেশের কৃষি ও সমৃদ্ধির প্রতীক। নীল অশোক চক্র (ধর্মচক্র নামে পরিচিত) সৎপথ ও অগ্রগতির প্রতীক।

ব্যবহারের নিয়ম:

জাতীয় পতাকাকে সম্মানের সঙ্গে ব্যবহার করতে হয়। পতাকা কখনো মাটিতে ফেলতে বা অসম্মানজনকভাবে ব্যবহার করা যাবে না। পতাকাটি প্রতিদিন সূর্যোদয়ের পর উত্তোলন করে সূর্যাস্তের আগে নামিয়ে রাখতে হয়। জাতীয় এবং সরকারি অনুষ্ঠানে পতাকা উত্তোলনের নিয়ম অনুসরণ করতে হয়।

উপসংহার:

ভারতের পতাকা আমাদের গর্ব এবং ঐক্যের প্রতীক। এ পতাকা দেশের স্বাধীনতা ও সাফল্যের গল্প বলে। এটি নাগরিকদের মধ্যে দেশপ্রেম ও একাত্মতার বোধ জাগ্রত করে। আমাদের উচিত এই পতাকাকে সর্বদা সম্মানে রাখা।

ভারতের জাতীয় পতাকা রচনা ২৫০ শব্দে

সূচনা:

জাতীয় পতাকা একটি দেশের গৌরব, মর্যাদা ও স্বাধীনতার প্রতীক। এটি শুধু একটি কাপড়ের টুকরো নয়—এর মধ্যে লুকিয়ে থাকে জাতির আত্মত্যাগ, সংগ্রাম ও অহংকারের ইতিহাস। ভারতের জাতীয় পতাকাও তেমনি আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক অনন্য সাক্ষ্য।

জাতীয় পতাকার ইতিহাস ও বিবর্তন:

ভারতের জাতীয় পতাকার ইতিহাস দীর্ঘ এবং পরিবর্তনশীল। প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয়েছিল ১৯০৬ সালে কলকাতায়। এরপর ১৯০৭ ও ১৯১৭ সালে দুটি আলাদা নকশার পতাকা প্রচলিত হয়। ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধীর প্রস্তাবে একটি পতাকা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়, যার মধ্যে ছিল গেরুয়া, সাদা ও সবুজ রঙ এবং মধ্যিখানে ছিল চরকা। পরবর্তীতে পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়ার নকশায় ১৯৪৭ সালের ২২ জুলাই ভারতীয় সংবিধান সভা বর্তমান জাতীয় পতাকার রূপ অনুমোদন করে।

জাতীয় পতাকার গঠন ও রংয়ের তাৎপর্য:

ভারতের জাতীয় পতাকা আকারে আয়তাকার এবং এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ৩:২। এটি তিনটি অনুভূমিক রঙে বিভক্ত—উপরে গেরুয়া, মাঝে সাদা এবং নিচে সবুজ। সাদা অংশের কেন্দ্রে রয়েছে নীল রঙের একটি অশোকচক্র, যার ২৪টি কাঁটা রয়েছে।

গেরুয়া রঙ: ত্যাগ ও সাহসিকতার প্রতীক।
সাদা রঙ: শান্তি ও সত্যের প্রতীক।
সবুজ রঙ: উর্বরতা, সমৃদ্ধি ও জীবনশক্তির প্রতীক।
অশোকচক্র: ধর্ম, ন্যায় ও গতিশীলতার প্রতীক।

জাতীয় পতাকার মর্যাদা ও ব্যবহার:

জাতীয় পতাকার অপমান মানে দেশের অপমান। এই পতাকা ব্যবহার ও উত্তোলনের নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে, যা ‘ফ্ল্যাগ কোড অফ ইন্ডিয়া’-তে বলা আছে। স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস বা বিশেষ সরকারি অনুষ্ঠানে পতাকা উত্তোলনের সময় সকলকে উঠে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হয়। পতাকাকে কাপড়, পোশাক বা অন্য কোনো বস্তুর সাজ হিসেবে ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।

উপসংহার:

ভারতের জাতীয় পতাকা আমাদের স্বাধীনতা, গর্ব ও ঐক্যের প্রতীক। এ পতাকার তলায় অসংখ্য বীর সন্তান আত্মবলিদান দিয়েছেন। তাই আমাদের দায়িত্ব, এই জাতীয় পতাকার মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখা এবং এর মান উঁচুতে ধরে রাখা।

ভারতের জাতীয় পতাকা রচনা ৪০০ শব্দে

সূচনা:

“জগৎ জুড়িয়া আছে এক জাতি”— এই কথাটি একজন উদার মনের কবির কণ্ঠে উচ্চারিত। কবি, দার্শনিক প্রায়ই দেশ, জাতি ও ধর্মের সীমারেখা ছাড়িয়ে গোটা বিশ্বকে আপন করে নিতে চান। কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে পৃথিবী মানে তাঁর জন্মভূমি। মানুষ নিজের জন্মভূমিকে মায়ের মর্যাদা দেয়, আর সেই জন্মভূমির অপমানকে সে নিজের অপমান বলে মনে করে। জাতীয় পতাকার প্রতি এই শ্রদ্ধা প্রতিটি দেশের নাগরিকের মধ্যেই বিদ্যমান।

পরাধীন যুগে জাতীয় পতাকার মর্যাদা:

ভারতবর্ষ পরাধীন থাকাকালীন সময় থেকেই জাতীয় পতাকার গুরুত্ব উপলব্ধি করা হয়। সেই সময় ভারতীয়রা নিজেদের একটি জাতীয় পতাকা তৈরি করে নিয়েছিল। ‘বন্দেমাতরম’ ধ্বনি তুলে হাতে পতাকা নিয়ে নবীন-প্রবীণেরা ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। দিল্লির লালকেল্লায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের স্বপ্ন দেখেছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। বহু সংগ্রামের মাধ্যমে সেই পতাকাকে আমরা আজ স্বাধীন ভারতের প্রতীক হিসেবে দেখছি।

জাতীয় পতাকার ইতিহাস ও পরিবর্তন:

ভারতের জাতীয় পতাকার বর্তমান রূপটি চিরকাল ছিল না। প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয় ১৯০৫ সালের ৭ই আগস্ট। তখন পতাকাটিতে লাল, হলুদ ও সবুজ রঙ ব্যবহৃত হয়েছিল। লাল অংশে আঁকা হয়েছিল আটটি তারকা, হলুদ অংশে লেখা ছিল ‘বন্দেমাতরম’। ১৯০৭ সালে তারকার সংখ্যা কমে দাঁড়ায় সাতটিতে। ১৯১৭ সালে পতাকায় যুক্ত হয় তারা ও চাঁদের নকশা। ১৯৩০ সালে মহাত্মা গান্ধী প্রচলন করেন গেরুয়া, সাদা ও সবুজ রঙের পতাকা, যার সাদা অংশে ছিল একটি চরকা। ১৯৪৭ সালের ২২শে জুলাই ভারতের বর্তমান জাতীয় পতাকাটি অনুমোদিত হয়। এতে চরকার পরিবর্তে বসানো হয় অশোকচক্র।

জাতীয় পতাকার বর্ণনা:

ভারতের জাতীয় পতাকাটি আয়তকার, যার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ৩:২। এটি তিনটি সমান ও সমান্তরাল অংশে বিভক্ত। উপরের অংশটি গেরুয়া রঙের, মাঝেরটি সাদা এবং নিচের অংশটি গাঢ় সবুজ। সাদা অংশের মাঝখানে একটি গাঢ় নীল অশোকচক্র রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ২৪টি দণ্ড। গেরুয়া রং ত্যাগ ও সাহসের, সাদা রং শান্তি ও সত্যের এবং সবুজ রং বিশ্বাস ও সমৃদ্ধির প্রতীক। অশোকচক্র ধর্ম ও ন্যায়ের প্রতীক।

জাতীয় পতাকার গুরুত্ব:

জাতীয় পতাকা কেবল একটি কাপড় নয়, এটি একটি দেশের আত্মমর্যাদা ও গৌরবের প্রতীক। স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস ও অন্যান্য জাতীয় অনুষ্ঠানে পতাকা উত্তোলন করা হয়। তখন জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে সম্মান জানানো হয়। পতাকাকে কখনও বিছানার চাদর, পোশাক বা বিজ্ঞাপন সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। পতাকা উত্তোলনের সময় সকলকে দাঁড়িয়ে সম্মান জানাতে হয়।

উপসংহার:

আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। জাতীয় পতাকা আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক এবং গর্বের চিহ্ন। এর মর্যাদা রক্ষা করা আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য। পতাকাটিকে সর্বদা ঊর্ধ্বে স্থাপন করে আমরা বিশ্বকে জানাব— আমরা গর্বিত ভারতীয়, এই মহান ঐতিহ্যমণ্ডিত দেশের নাগরিক।

আরও দেখো: বাঘ প্রবন্ধ রচনা

CLOSE

You cannot copy content of this page