এখানে বোঝাপড়া কবিতার প্রশ্ন উত্তর শেয়ার করা হলো। / ক্লাস 8 বাংলা / অষ্টম শ্রেণী বোঝাপড়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
অষ্টম শ্রেণী
বিষয়: বাংলা
বোঝাপড়া কবিতার হাতে কলমে প্রশ্ন উত্তর
১.১ জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত কোন পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিয়মিত লিখতেন।
উত্তর: জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত ভারতী ও বালক পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিয়মিত লিখতেন।
১.২, ভারতের কোন প্রতিবেশী দেশে তাঁর লেখা গান জাতীয় সংগীত হিসেবে গাওয়া হয় ?
উত্তর: ভারতের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা গান ‘আমার সােনার বাংলা’ জাতীয় সংগীত হিসেবে গাওয়া হয়।
২. নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর দাও:
২.১ ‘সেইটে সবার চেয়ে শ্রেয়।’ — কোনটি সবার চেয়ে শ্রেয় ?
উত্তর: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘বোঝাপড়া’ কবিতায় বলেছেন-
‘ভেসে থাকতে পারো যদি
সেইটে সবার চেয়ে শ্রেয়,’
অর্থাৎ নানাপ্রকার বিপদ বা সংকটে মাথা ঠান্ডা রেখে, বিচলিত হয়ে না-পড়ে, ঝগড়া-বিবাদে মত্ত না-হয়ে সব কিছুকে মানিয়ে নিয়ে চলাটাই শ্রেষ্ঠ পন্থা।
২.২ ‘ঘটনা সামান্য খুবই।” —কোন্ ঘটনার কথা বলা হয়েছে ?
উত্তর: ‘ঘটনা সামান্য খুবই’ উক্তিতে কবি এমন একটি ঘটনাকে বোঝাতে চেয়েছেন, যা আপাতদৃষ্টিতে তুচ্ছ মনে হয় এবং মানুষ সাধারণত অবহেলা করে। কিন্তু সেই সামান্য ঘটনাই কখনো বড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
‘বোঝাপড়া’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দেখিয়েছেন, মানুষ যে বিষয় নিয়ে কখনো শঙ্কিত হয় না বা ভয় পায় না, অনেক সময় সেগুলিই অপ্রত্যাশিত বিপর্যয় ডেকে আনে। তাই কবি এ ধরনের ঘটনাকেই ‘সামান্য’ বলেছেন।
২.৩ ‘তেমন করে হাত বাড়ালে / সুখ পাওয়া যায় অনেকখানি।’ — উদ্ধৃতিটির নিহিতার্থ স্পষ্ট করাে।
উত্তর: উদ্ধৃত পংক্তিতে কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে প্রকৃত সুখ অর্জনের জন্য স্বার্থপরতা ত্যাগ করে পরার্থপর হতে হয়। সাধারণত মানুষ আত্মকেন্দ্রিক, নিজের স্বার্থের বাইরে খুব কমই চিন্তা করে। কিন্তু যখন সে নিঃস্বার্থভাবে অন্যের পাশে দাঁড়ায়, তখনই প্রকৃত আনন্দের সন্ধান পায়।
এই বিশ্বে মানুষ নিজের তৈরি করা মন্দ-ভালোর বিভেদের গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকে, ফলে তারা প্রকৃত সুখ থেকে বঞ্চিত হয়। কবির মতে, যদি মানুষ স্বার্থপরতার সীমা অতিক্রম করে, উদার হৃদয়ে সকল কিছুকে গ্রহণ করতে শেখে, তাহলে সে জীবনে সত্যিকারের সুখ অনুভব করতে পারবে।
২.৪ ‘মরণ এলে হঠাৎ দেখি/মরার চেয়ে বাঁচাই ভালাে।’— ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর: উদ্ধৃত অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বোঝাপড়া’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে কবি বলেছেন, মানুষ কখনো জীবনকে অবহেলা করে, দুঃখে অতিষ্ঠ হয়ে মৃত্যুকামনা করে। কিন্তু যখন সত্যিই মৃত্যু আসন্ন হয়, তখন সে বুঝতে পারে, বাঁচার আকাঙ্ক্ষাই প্রকৃত সত্য।
সংকটের মুহূর্তে জীবনকে ত্যাগ করতে ইচ্ছে হলেও, প্রকৃতপক্ষে মানুষ বেঁচে থাকতেই চায়। তাই কবি বলেন, “মরার চেয়ে বাঁচাই ভালো”—অর্থাৎ দুঃখের মাঝেও জীবনই শ্রেষ্ঠ।
২.৫ ‘তাহারে বাদ দিয়েও দেখি / বিশ্বভুবন মস্ত ডাগর।’— উদ্ধৃতিটির মধ্য দিয়ে জীবনের কোন্ সত্য প্রকাশ পেয়েছে ?
উত্তর: উদ্ধৃত অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বোঝাপড়া’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে, পার্থিব জীবনে মানুষ মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ থাকে এবং নির্দিষ্ট ব্যক্তির অনুপস্থিতিকে অসহ্য মনে করে। তবে বাস্তব সত্য হলো, ব্যক্তিবিশেষের অনুপস্থিতিতেও এই বিশাল পৃথিবী চলতে থাকে, জীবন থেমে থাকে না।
মানুষ যখন তার সংকীর্ণ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে বিশ্বচরাচরের বিশালতাকে উপলব্ধি করে, তখন সে বুঝতে পারে যে কোনো ব্যক্তি বা সম্পর্কের অভাব জীবনকে শূন্য করে না। দুঃখ ক্ষণিকের, সময়ের প্রবাহে মানুষ তা ভুলে গিয়ে নতুন স্বপ্নে জীবন সাজায়। তাই কবির মতে, বিশ্বভুবন মস্ত ডাগর—অর্থাৎ জীবন কখনো শূন্য হয় না, বরং এগিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন পথ তৈরি হয়।
২.৬ কীভাবে মনের সঙ্গে বােঝাপড়া করতে হবে ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘বোঝাপড়া’ কবিতায় বলেছেন, জীবনে যা-ই ঘটুক, সেটাকে মেনে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। সুখ-দুঃখ, ভালো-মন্দ, প্রতারণা-ভরসা—সবই জীবনের অঙ্গ। মনকে বোঝাতে হবে যে এই পার্থক্য স্বাভাবিক এবং এগুলোকে মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে।
কখনো জীবনে এমন কিছু ঘটে, যা সহজে মেনে নেওয়া কঠিন। কিন্তু বাস্তবতাকে অস্বীকার করলে দুঃখ আরও বাড়ে। তাই মনকে স্থির রেখে জীবনের সত্যকে গ্রহণ করাই উত্তম পথ। কবির মতে, বোঝাপড়া মানেই নিজেকে বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া এবং জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা।
২.৭ “দোহাই তবে এ কাৰ্যটা / যত শীঘ্র পারাে সারাে।”– কবি কোন্ কার্যের কথা বলেছেন ? সেই কার্যটি শীঘ্র সারতে হবে কেন ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘বোঝাপড়া’ কবিতায় এই উদ্ধৃতিতে কবি বলতে চেয়েছেন, যখন কেউ বিধির বা জীবনের সহজ সত্যকে অস্বীকার করে, তখন সে নিজের পায়ে কুড়ুল মারছে। অর্থাৎ, নিজের অহংকার বা ভুল ধারণায় বিভ্রান্ত হয়ে, যদি জীবনকে আরো কঠিন করে তোলা হয়, তাহলে তা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা শীঘ্রই করতে হবে।
কবি বলেন, এই ভুল যত তাড়াতাড়ি সংশোধন করা যাবে, ততই মঙ্গল। অহংকার ও দোষারোপ ছেড়ে, মনের শান্তি ও জীবনের সহজ সত্য গ্রহণ করলে, মানুষ সামনে এগিয়ে যেতে পারবে।
২.৮ কখন আঁধার ঘরে প্রদীপ জ্বালানাে সম্ভব ?
উত্তর: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘বোঝাপড়া’ কবিতায় বলেছেন, যখন মানুষ হতাশাগ্রস্ত হয়ে জীবনের অন্ধকারে ডুবে যায়, তখন সে মনের সাথে বোঝাপড়া করে, দুঃখগুলো ভুলে গেলে আঁধার ঘরে প্রদীপ জ্বালানো সম্ভব।
যেমন একটি প্রদীপ অন্ধকার ঘরকে আলোকিত করতে পারে, তেমনি নিজের দুঃখ এবং হতাশা ভুলে, সহজভাবে জীবনকে মেনে নিতে পারলে মনের অন্ধকার দূর হয়। দুঃখকে বাড়িয়ে না দেখে, মনকে শান্ত রেখে এগিয়ে চললে জীবনে আলো আসবে।
২.৯ ‘ভুলে যা ভাই, কাহার সঙ্গে / কতটুকুন তফাত হলাে।’—এই উভৃতির মধ্যে জীবনের চলার ক্ষেত্রে কোন্ পথের ঠিকানা মেলে?
উত্তর: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘বোঝাপড়া’ কবিতায় বলেছেন, জীবনের চলার পথে মানুষের মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকে। কেউ বেশি পায়, কেউ কম পায়, কিন্তু এই তুলনা বা অমিল নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা না করে, মানুষকে সেই যা পেয়েছে, তাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
উদ্ধৃতিটি জীবনে এক ধরনের সমন্বয়ের পথের ইঙ্গিত দেয়। যদি মানুষ অপরের সঙ্গে তুলনা না করে, বরং নিজের ভাগ্যকে গ্রহণ করে, তাহলে জীবনের অপ্রাপ্তির কষ্টও কমে যাবে। জীবনের শান্তি তখন আসে, যখন আমরা অন্যদের থেকে কতটা পার্থক্য হল—এটা নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা না করি।
২.১০ ‘অনেক ঝঞ্ঝা কাটিয়ে বুঝি/এলে সুখের বন্দরেতে,—“ঝঞ্ঝা কাটিয়ে আসা বলতে কী বােঝাে?
উত্তর: ঝঞ্ঝা’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হল ঝড়-তুফান, কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘বোঝাপড়া’ কবিতায় প্রাকৃতিক ঝড়-তুফান অর্থে ‘ঝঞ্ঝা’ শব্দটি ব্যবহার করেননি। মানুষের জীবনে নানা সময়ে নানাভাবে নানাপ্রকার সমস্যা এসে উপস্থিত হয়, যাদের আঘাতে জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। মানুষ নিজের চেষ্টাতেই সেই বিপদ, সংকট তথা সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টায় লিপ্ত থাকে। ‘ঝঞ্ঝা’ বলতে জীবনের এমন সমস্যাকেই বুঝিয়েছেন কবি। এই সমস্যারূপ ঝঞ্ঝায় মানুষ অনেক সময় দিশেহারা হয়ে পড়ে কিন্তু আপন প্রাণশক্তিতে জেগে উঠে সেই ঝঞ্ঝাকে অতিক্রম করেই মানুষ সুখ-শান্তিময় জীবনে পৌঁছে যায়। ‘ঝঞ্ঝা কাটিয়ে আসা’ বলতে কবি এ কথাই বোঝাতে চেয়েছেন।
অষ্টম শ্রেণী
বিষয়: বাংলা
বোঝাপড়া কবিতার হাতে কলমে প্রশ্ন উত্তর
৩. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখাে:
৩.১ ‘ভালাে মন্দ যাহাই আসুক / সত্যেরে লও সহজে।’– তুমি কি কবির সঙ্গে একমত ? জীবনে চলার পথে নানা বাধাকে তুমি কীভাবে অতিক্রম করতে চাও?
উত্তর: আমি কবির এই কথার সঙ্গে একমত। কবি বলেছেন যে, জীবনে যা-ই আসুক, তা যদি আমরা সত্য হিসেবে মেনে নিই, তাহলে মানসিক শান্তি পাওয়া সহজ হয় এবং জীবনের জটিলতা কমে। জীবনে নানা বাধা-বিপত্তি আসে, কিন্তু সেগুলোকে যদি আমরা সত্য হিসেবে গ্রহণ করি, তবে তা আমাদের কষ্ট কমিয়ে দিতে সাহায্য করে।
আমার মতে, সত্যকে মেনে নিয়ে আমরা জীবনের প্রতিটি পরিস্থিতিকে সহজভাবে গ্রহণ করতে পারি। ভুল হলে তা স্বীকার করে, মিথ্যার আশ্রয় না নিয়ে, কঠিন মুহূর্তগুলো সহজভাবে পার করা সম্ভব। আমি বিশ্বাস করি, জীবনে কখনো বিচ্ছেদ, দুঃখ বা সমস্যায় পড়লে, ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস রেখে এবং নিজের মধ্যে শক্তি খুঁজে, সেই কঠিন সময় অতিক্রম করা যায়।
জীবনে চলার পথে নানা বাধা আসে, কিন্তু আমি চেষ্টা করি যে, এসব বাধাকে মানসিকভাবে ভেঙে না পড়েই মোকাবিলা করি। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ মানুষের পরামর্শ গ্রহণ করি, যেটা আমাকে সহায়তা করে এবং জীবনের যাত্রা আরও সহজ হয়।
৩.২ মনেরে আজ কহ যে, / ভালাে মন্দ যাহাই আসুক। সত্যেরে লও সহজে। -কবির মতাে তুমি কি কখনও মনের সঙ্গে কথা বলো? সত্যকে মেনে নেওয়ার জন্য মনকে তুমি কীভাবে বােঝাবে—একটি নীচের শব্দগুলির দল বিশ্লেষণ করে মুক্ত দল ও পরিস্থিতি কল্পনা করে বুঝিয়ে লেখাে।
উত্তর: হ্যাঁ, কবির মতো আমিও কখনো-কখনো মনের সঙ্গে কথা বলি। যখনই কোনো কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হই, তখন আমি চেষ্টা করি মনের সাথে বোঝাপড়া করে মানসিক শান্তি অর্জন করতে। সত্যকে মেনে নেওয়ার জন্যও আমি মনের সাথে কথা বলি এবং তাকে দৃঢ় করে তুলি।
ধরা যাক, আমি অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং ভূগোল পরীক্ষা নিয়ে সব সময় ভয় পাই। পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে আমি ভাবি, “আজ তো কঠিন প্রশ্ন আসবে!” কিন্তু যখন প্রশ্নপত্র হাতে নেব, তখন হয়তো একটা কঠিন প্রশ্ন দেখতে পাব। এই মুহূর্তে, আমি আমার মনকে বোঝাব, “ভয় নেই, আমি জানি! পরের প্রশ্ন নিশ্চয় সহজ হবে, আমি শান্তভাবে উত্তর লিখব।” মনকে সাহস দিয়ে লিখতে থাকব, এবং যখন মনকে বুঝিয়ে দেব যে আমি এই কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠব, তখন মনে হবে সত্যিই আমি পারব।
এভাবে মনকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে আমি যেকোনো পরিস্থিতিকে সহজভাবে গ্রহণ করতে পারি। জীবনে যখন কোনো বাধা আসে, আমি মনে করি যে এটা সাময়িক এবং এর পরেই সফলতা আসবে। যেমন, যদি কোনো পরীক্ষায় খারাপ ফল আসে, আমি নিজেকে বলব, “এটা এক সময়ের ব্যাপার। আমি আরও পরিশ্রম করব এবং পরবর্তী পরীক্ষায় ভালো ফল পাব।”
এমনভাবে মনের সঙ্গে কথা বলার মাধ্যমে আমি নিজের হতাশা দূর করি এবং বিশ্বাস রাখি যে, যেকোনো কঠিন সময়ই শেষ হবে এবং নতুন সুযোগ আসবে।
৩.৩ তেমন করে হাত বাড়ালে / সুখ পাওয়া যায় অনেকখানি।—তেমন করে কথাটির অর্থ বুঝিয়ে দাও। এখানে কবি কী ধরনের সুখের ইঙ্গিত করেছেন লেখাে।
উত্তর: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বোঝাপড়া’ কবিতায় ‘তেমন করে হাত বাড়ালে / সুখ পাওয়া যায় অনেকখানি’ এই কথার মাধ্যমে কবি আমাদের শিখিয়ে দিতে চেয়েছেন যে, একমাত্র অটুট আত্মবিশ্বাস এবং উদার মনোভাব নিয়ে যখন আমরা অন্যদের সাথে একত্রে কাজ করি, তখনই প্রকৃত সুখ এবং আনন্দ লাভ করা সম্ভব। অনেক সময় মানুষ অহংকারের কারণে নিজের থেকে আলাদা হয়ে যায়, কিন্তু যখন সেই অহংকারকে পরিত্যাগ করে আমরা সহানুভূতি, সাদৃশ্য এবং আন্তরিকতা নিয়ে অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ি, তখন সেই সুখ আমাদের জীবনে আসবে।
এখানে কবি কোনো বস্তুগত সুখের কথা বলেননি, বরং মানসিক সুখ এবং শান্তির কথা বলেছেন। এই সুখ হলো সেই সুখ যা আমাদের মনকে প্রশান্তি দেয় এবং আমাদের জীবনে সত্যিকারের শান্তি এবং স্বস্তি এনে দেয়। অর্থ, দৌলত, বা বাহ্যিক সফলতা চিরকালীন সুখ প্রদান করতে পারে না, কিন্তু আন্তরিকতার সঙ্গে, সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে, একে অপরের সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিলেই জীবন হয়ে ওঠে আনন্দময় এবং পূর্ণতা পায়।
কবির এই কথার মানে, ‘তেমন করে’ বলতে, যে উপায়ে আমরা আন্তরিকভাবে, অঙ্গীকার সহকারে সুখের সন্ধানে বেরোই, তেমন ভাবেই জীবনে প্রকৃত সুখের উন্মোচন সম্ভব।
৪. নীচের শব্দগুলির দল বিশ্লেষণ করে মুক্তদল ও রুদ্ধদল চিহ্নিত করো:
বোঝাপড়া, কতকটা, সত্যেরে, পাঁজরগুলো, বিশ্বভুবন অশ্রুসাগর
উত্তর:
বোঝাপড়া = বাে-ঝা-প-ড়া
মুক্তদল– বাে, ঝা, প, ড়া, (৪টি), রুদ্ধদল– শূন্য (০)
কতকটা = ক-তক্ – টা
মুক্তদল — ক, টা, (২ টি), রুদ্ধদল– তক (১টি)
সত্যেরে = সত্ – তে – রে
মুক্তদল– তে, রে (২ টি), রুদ্ধদল– সতু (১টি)
পাজরগুলাে = পাঁ – জর – গু – লাে
মুক্তদল– পাঁ, গু, লাে (৩টি), রুদ্ধদল– জর (১টি)]।
বিশ্বভুবন = বিশ্ –শ (ব)-ভু-বন্
মুক্তদলশ– শ (ব), ভু (২ টি), রুদ্ধদল– বিশ, বন্ (২ টি)
অশ্রুসাগর= অশ্ – রু – সা – গর
মুক্তদল– রু , সা (২ টি), রুদ্ধদল– অশ, গর (২ টি)
৫. নীচের প্রতিটি শব্দের তিনটি করে সমার্থক শব্দ লেখাে : মন , জখম, ঝঞ্জা , ঝগড়া, সামান্য, শঙ্কা, আকাশ।
উত্তর:
মন = হৃদয়, হিয়া, চিত্ত
জখম = ক্ষত, আঘাত, চোট
ঝঞ্জা = ঝড়, বাদল, ঝটিকা
ঝগড়া = কলহ, বিবাদ, বচসা
সামান্য = তুচ্ছ, অল্প, কম
শঙ্কা = ভয়, আশঙ্কা, সংশয়
আকাশ = গগন, অম্বর, শূন্য
৬. নীচের প্রতিটি শব্দের বিপরীতার্থক শব্দ দিয়ে শব্দজোড় তৈরি করে বাক্য রচনা করাে : আঁধার, সত্য, দোষ, আকাশ, সুখ।
উত্তর:
আঁধার (আলো) = আলো-আঁধার
ঘন জঙ্গলে সূর্যের আলো পড়েছে, যেন আলো-আঁধারের খেলা চলছে।
সত্য (মিথ্যা) = সত্য-মিথ্যা
সত্য-মিথ্যা যাচাই করে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
দোষ (গুণ) = দোষ-গুণ
মানুষের জীবন দোষ-গুণে ভরা, আর সেগুলোকেই সমন্বয় করে চলতে হয়।
আকাশ (পাতাল) = আকাশ-পাতাল
কিছুই না, এতো আকাশ-পাতাল ভাবলে চলবে না।
সুখ (দুঃখ) = সুখ-দুঃখ
জীবনে সুখ-দুঃখ পালাক্রমে আসে, তাই সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে।
অষ্টম শ্রেণী
বিষয়: বাংলা
বোঝাপড়া কবিতার অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্তর
১. ‘বোঝাপড়া’ কবিতাটির কবি হলেন—
ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
খ) যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত
গ) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ঘ) রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর
উত্তর: ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
২. ‘বোঝাপড়া’ কথার অর্থ—
ক) সুখ
খ) সমঝোতা
গ) ফাঁকি
ঘ) অশ্রুসাগর
উত্তর: খ) সমঝোতা
৩. ‘বোঝাপড়া’ কবিতাটির মূল কাব্যগ্রন্থের নাম—
ক) খেয়া
খ) গীতাঞ্জলি
গ) ক্ষণিকা
ঘ) নৈবেদ্য
উত্তর: গ) ক্ষণিকা
৪. সত্যকে মেনে নিতে হবে—
ক) তর্কসাপেক্ষে
খ) শর্তসাপেক্ষে
গ) সহজে
ঘ) কঠিনভাবে
উত্তর: গ) সহজে
৫. শঙ্কা যেখানে নেই, সেখানে কী হতে পারে?
ক) ভরাডুবি
খ) জাহাজডুবি
গ) নৌকাডুবি
ঘ) মৃত্যু
উত্তর: খ) জাহাজডুবি
৬. বিশ্বভুবন কেমন?
ক) সুন্দর
খ) অসুন্দর
গ) মস্ত-ডাগর
ঘ) নাতিদীর্ঘ
উত্তর: গ) মস্ত-ডাগর
৭. ‘ডাগর’ শব্দের অর্থ হল—
ক) ক্ষুদ্র
খ) বিশাল
গ) সুন্দর
ঘ) নাতিদীর্ঘ
উত্তর: খ) বিশাল
৮. আকাশ তবু কেমন থাকে?
ক) সুবিমল
খ) নির্মল
গ) নাতিদীর্ঘ
ঘ) সুনীল
উত্তর: ঘ) সুনীল
৯. ‘দীপালিকা’-এর কোন প্রতিশব্দ ‘বোঝাপড়া’ কবিতায় আছে?
ক) দীপ
খ) প্রদীপ
গ) কুড়ুল
ঘ) অস্তাচলে
উত্তর: খ) প্রদীপ
১০. পাঁজরগুলো কেঁপে ওঠে—
ক) উল্লাসে
খ) হতাশায়
গ) আতঙ্কে
ঘ) আর্তরবে
উত্তর: ঘ) আর্তরবে
অষ্টম শ্রেণী
বিষয়: বাংলা
বোঝাপড়া কবিতার অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্তর
১. ‘নিজের ছায়া মস্ত করে…’— ‘নিজের ছায়া’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: এখানে ‘নিজের ছায়া’ বলতে কবি মানুষের নিজের তৈরি করা মানসিক অন্ধকার বা হতাশার জালকে বোঝাতে চেয়েছেন। এই অন্ধকারের জালে আটকে গিয়ে মানুষ মহাবিশ্বের আনন্দযজ্ঞে অংশ নিতে পারে না। অর্থাৎ, মানসিক হীনম্মন্যতাই এখানে ‘নিজের ছায়া’র প্রতীক।
২. ‘নিজের পায়েই কুড়ুল মারো’— এর অর্থ কী?
উত্তর: ‘নিজের পায়েই কুড়ুল মারা’ বলতে এমন কাজ বোঝানো হয়, যা একজন মানুষ নিজের অজ্ঞানতা বা ভুল সিদ্ধান্তের কারণে করে এবং এর ফলে সে নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অর্থাৎ, নিজের কর্মকাণ্ডের ফলে নিজেই সমস্যায় পড়াকে বলা হয় ‘নিজের পায়ে কুড়ুল মারা’।
৩. ‘মান্ধাতারই আমল থেকে/চলে আসছে এমনি রকম-‘ -‘মান্ধাতারই আমল’ কী? তখন থেকে কী চলে আসছে?
উত্তর: ‘বোঝাপড়া’ কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘মান্ধাতারই আমল’ বলতে সুপ্রাচীন কালের কথা বোঝাতে চেয়েছেন।
কবি বলেছেন, মহাবিশ্বের চিরাচরিত নিয়ম হলো—কখনো কোনো ব্যক্তি অন্যকে ফাঁকি দেবে, আবার সেই ব্যক্তিও কখনো না কখনো অন্যের দ্বারা ফাঁকিতে পড়বে। কেউ কিছু পাবে, আবার কারও ভাগ্যে কিছু কম পড়বে। এই আদান-প্রদানের রীতিই মান্ধাতার আমল থেকে চলে আসছে।
অষ্টম শ্রেণী
বিষয়: বাংলা
বোঝাপড়া কবিতার অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্তর
৪. ‘সবার তরে নহে সবাই’— উদ্ধৃতিটি কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে? উদ্ধৃতাংশটি ব্যাখ্যা করো। (১+২)
উত্তর: উদ্ধৃত অংশটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বোঝাপড়া’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
উদ্ধৃতাংশের ব্যাখ্যা:
কবি এই কবিতায় বলেছেন, মানুষকে সর্বদাই নিজের মনের সঙ্গে বোঝাপড়া করে চলতে হবে। জীবনে সুখ-দুঃখ, ভালো-মন্দ, সাফল্য-ব্যর্থতা যা-ই আসুক, তাকে স্থিরচিত্তে গ্রহণ করতে হবে। কবি এখানে বোঝাতে চেয়েছেন যে, প্রতিটি মানুষের চাওয়া-পাওয়া, স্বভাব-প্রকৃতি আলাদা। কেউ আমাকে ভালোবাসবে, আবার কেউ হয়তো অপছন্দ করবে। কেউ আছে, যারা নিজেকে অন্যের কাছে বিকিয়ে দেয়, আবার কেউ কারও কাছে ঋণী হতে চায় না। জীবনে কিছু সাফল্য আমার ভাগ্যে আসবে, আবার কিছু অন্যের ভাগ্যে যাবে। তাই মনকে বোঝাতে হবে যে, সবকিছু আমার জন্য নয় এবং সবাইও আমার জন্য নয়।
৫. “তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম।”— প্রসঙ্গসহ উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য লেখো। (১+২)
উত্তর: উদ্ধৃত অংশটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বোঝাপড়া’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য:
কবি এখানে বোঝাতে চেয়েছেন যে, মানুষের জীবন সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার সংমিশ্রণে গঠিত। জীবনে কখনো শুধু সুখ থাকবে না, আবার শুধুই দুঃখও থাকবে না। সবাই আমাকে ভালোবাসবে—এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। যেমন সব সাফল্য আমার ভাগ্যে আসবে না, তেমনই সব বিপদও আমাকে এড়িয়ে যাবে না। তাই মানুষকে সব পরিস্থিতির জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। জীবন চলার পথে কখন কোনো সমস্যা বা আঘাত আসবে, তা আগে থেকে বোঝা সম্ভব নয়। তাই কবি এখানে বাস্তব সত্যকেই প্রকাশ করেছেন যে, বিপদ-আপদ আমাদের জীবনেই আসবে এবং সেগুলোকে মোকাবিলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
আরও দেখো: ক্লাস 10 আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি কবিতার প্রশ্ন উত্তর