এই পোস্টে খাঁচায় বন্দি একটি পাখির আত্মকথা সম্পর্কে প্রবন্ধ রচনা লিখে দেওয়া হলো।
একটি খাঁচায় বন্দি পাখির আত্মকথা প্রবন্ধ রচনা: ১
ভূমিকা:
আমি একটি টিয়াপাখি। আমার গায়ের রং সবুজ আমার ঠোঁটটি লাল রঙের। আমার নাম সোনা। এ বাড়িতে আমাকে বাবলু নিয়ে এসেছে। বাবলু এই বাড়ির বড় ছেলে বাবলু আমাকে দেখাশোনা করে, বাবলু আমাকে ভীষণ ভালোবাসে। ওই আমাকে মুনসির হাট থেকে কিনে এনেছে।
আমার জীবন:
আমি একটা গাছের কোটরে বাবা মার সঙ্গে থাকতাম। হাসিখুশি বেশ ভালো কাটছিল আমার জীবন হঠাৎ একদিন একটা শিকারি আমাকে জাল দিয়ে ধরে ফেলে। আমি জাল কেটে বেরিয়ে যাবার অনেক চেষ্টা করি কিন্তু পারিনি। আমার মা-বাবা ও অনেক চেষ্টা করেছিল আমাকে বাঁচাবার কিন্তু পারেনি। আমি আমার মা-বাবার অনেক কান্না শুনেছি। এরপর শিকারি আমাকে একটি খাঁচায় ভরে তার বাড়িতে নিয়ে গেল। কিছুদিন সেই লোকটার বাড়িতে ছিলাম। এরপর একদিন লোকটা একটা বড় খাঁচায় ভরে আরো অনেক পাখির সঙ্গে সাপ্তাহিক হাটে হাত মুন্সির হাটে আমাকে নিয়ে এলো বিক্রি করতে। হাটে এসে দেখলাম কত লোকজন কত চিৎকার চেঁচামেচি, অনেক লোকজন দেখে আমার খুব ভালো লাগলো আবার ভয়ও করছিল।
অনেক লোকজন আমাকে দেখছিল তাদের মধ্যে বাবলু ও ছিল একজন। বাবলু ওর বাবা মায়ের সঙ্গে হাটে এসেছিল আমাকে দেখে বাবলু ওর বাবা-মায়ের কাছে আবদার করলো আমাকে ও বাড়ি নিয়ে যাবে। ওর বাবা লোকটার সঙ্গে দাম দর করে আমাকে একটা নতুন। খাঁচায় ভরে ওদের বাড়িতে নিয়ে এলো। সেদিন থেকে ওদের আমি বাড়িতেই পোষা পাখি হয়ে আছি। বাবলু আমাকে খুব ভালবাসে আদর করে। বাবলু আমাকে পাকালঙ্কা, ছোলা, পাকা পেয়ারা, কলা, চালের গুঁড়ো, দুধ ভাত আরো অনেক কিছু খেতে দেয়।
আমার আদর যত্ন করে আমাকে মাঝে মাঝে স্নান করায়, গা মুছিয়ে দেয় বং কথাও বলতে শেখায়। এখন আমি অল্প অল্প কথা বলতে পারি। মানুষের কথা বসতেও পারি। কিন্তু এখানে অনেক আদর যত্ন পেলেও আমার মনটা মাঝে মাঝে খুব হয়ে যায় যখন কোন পাখিকে মনের আনন্দে খাঁচার বাইরে উড়তে দেখি। তখন আমি মনে মনে ভাবি আমি যদি খাঁচার বাইরে থাকতাম তাহলে আমিও মনের আনন্দে। ইচ্ছে মতো নীল আকাশের বুকে উড়ে বেড়াতে পারতাম। কিন্তু এখন আমার সেই উপায় নেই আমি এখন বন্দি পরাধীন পাখি।
উপসংহার:
কখনো কখনো আমি ভাবি বাকি পাখিদের মত আমিও যদি মনের আনন্দে উড়তে পারতাম এই খাঁচা কেটে বেরিয়ে যেতে পারতাম তাহলে ভীষণ ভালো হতো। আবার পরক্ষণেই ভাবি আমি যদি চলে যাই তাহলে বাবলুর খুব কষ্ট হবে। এই সব কথা চিন্তা করেই আমি দোটানায় পড়ে যাই। তাই আমি আর যাওয়ার চেষ্টা করি না। তাই আমার পরিচয় আমি এক খাঁচায় হাজার বন্দি পাখি। এখানে যদিও আমি সময় মতো খাবার পাই কিন্তু খোলা আকাশ ছেড়ে খাঁচায় বন্দি থাকতে কার ভালো লাগে।
একটি খাঁচায় বন্দি পাখির আত্মকথা প্রবন্ধ রচনা: ২
সূচনা:
আমি একটি টিয়া পাখি। আমি খুব ছোট বয়স থেকেই খাঁচায় বন্দি জীবন কাটাচ্ছিলাম। কিন্তু আমি এই বন্দি জীবন কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না। তাই যখনই সুযোগ পেয়েছি মুক্তি খুঁজেছি। এখন আমি বার্ধক্য পৌঁছেছি। আমার আত্মকথা মানেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় দীর্ঘ বন্দী জীবনের ইতিহাস। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে রয়েছে কত বিচিত্র ঘটনা। যে ঘটনার সাথে মিশে আছে কখনো একটু খুশি কিন্তু বেশির ভাগটাই জুড়ে রয়েছে বন্দি খাঁচা থেকে মুক্তির তীব্র আকাঙ্ক্ষা।
জন্ম ও বেড়ে ওঠা:
একটি হরিতকী গাছের ওপরে আমার জন্ম হয়েছিল। আজ থেকে বেশ কয়েক বছর আগের কথা। আমি যখন একটু একটু উঠতে শিখলাম একদিন এবং কৃষকের পাতা জালে আমি আজকে আষ্টে পিষ্টে জড়িয়ে পড়লাম। আমার মা বাবা অনেক চেষ্টা করেও আমাকে জাল কেটে ছাড়াতে পারল না। কৃষক এসে পড়ায় আমার বাবা মা ভয় পেয়ে উড়ে যায় আর আমাকে ধরে নিয়ে যাই কৃষকের বাড়ি। সেখানে নিয়ে আমায় ভরে দিল খাঁচার মধ্যে।
খাঁচার মধ্যে বসে আমি ডানা ঝাপটাতে লাগলাম আর আমার কচি ছোট ঠোট দিয়ে হাজার দরজা ঠকরাতে লাগলাম বেরোনোর জন্য। কিন্তু আমি নিরুপায় হয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। কিছুতেই ওই খাঁচা থেকে বের হতে পারছিলাম না। ওরা আমায় একসঙ্গে খাবার ও জল এনে দিল। ভেজানো ছোলা, পাকা লঙ্কা, গম এই সব। কিন্তু আমার কিছুই খেতে ইচ্ছে করছিল না। শুধু বাবা মায়ের কথা মনে পড়ছে আর মন কেমন করছিল। এইভাবে দুই তিন দিন চলে গেল কিছু না খেয়েই। খিদের জ্বালায় আর থাকতে না পেরে একটু একটু খেতে শুরু করলাম।
বন্দী জীবন:
একটি বছর এইভাবে কেটে গেল। হঠাৎ একদিন আমি খাঁচার ফাক দিয়ে কিভাবে উড়ে গেলাম। উড়তে উড়তে গিয়ে পড়লাম আর এক জালের কাধের ওপর। যে আমায় অনায়াসেই ধরে নিয়ে তার বাড়িতে নিয়ে এলো। সেখানে ও খাঁচায় বন্দি। এখন আমি একটু বড় হয়েছি এখানে সবাই আমায় ভীষণ ভালোবাসতো। আমিও যেন তাদের অনুগত হতে লাগলাম। ওরা আমার নাম রাখল ভক্ত। ওদের প্রশিক্ষণে আমি এখন অনেক কথা বলতে পারি। ওরা যখন দুধ ভাত নিয়ে এসে আমায় ডাকত ভক্ত দুধ ভাত সেই কথাটি আমিও শিখে ফেললাম আমিও শুনে বলে উঠতাম ভক্ত দুধভাত। এরকম আরো অনেক কথা আমি শিখে ফেললাম।
যখন আমার খিদে পেত তখন আমি বলে উঠতাম অশোক দুধ ভাত/গণেশ দুধ ভাত। ওরা তখন বুঝতো আমার খিদে পেয়েছে তখন আমার জন্য খাবার নিয়ে আসতো। খুবই ভালো কাটছিল দশটি বছর। ওরা ঘুরতে গেলে আমায় সঙ্গে নিয়ে যেত। কিন্তু বাবা মায়ের কথা আর আমার সেই জন্মস্থান হরিতকি গাছের কথা যখন মনে পড়তো। তখন আমার ভীষণ মন খারাপ করতো।
তখন শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করতাম খাঁচার দরজা খুলতে। ঠোঁট দিয়ে ঠোকরাতে ঠোকরাতে পা দিয়ে আঁচড়ে আঁচড়ে খাঁচার মধ্যে প্রবল যুদ্ধ চলত তখন। কিছুতেই আর পারলাম না বের হতে। ক্লান্ত হয়ে পড়লাম ধীরে ধীরে এই বন্দী জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি। এক বৈচিত্রহীন একঘেয়ে জীবনে আমার মন উদাস হয়ে যায়। নীল আকাশ আমায় হাতছানি দিয়ে ডাকে। আমার ডানা মেলে আবারও উড়ে যেতে ইচ্ছা করে। কিন্তু আমি ধরে নিয়েছি সেই স্বাদ আমার কোন দিনে পূর্ণ হবে না।
বহু ঘটনার স্মৃতি:
এই বাড়িতে আমার আসার পর আমার চোখের সামনে ঘটেছে নানা ঘটনা। এই বাড়ির বড় বউ এবং বড় ছেলে আমায় খুবই ভালোবাসতো। বড় বউয়ের ছেলে অশোক সব সময় আমার খাঁচার সামনে বসে আমার আমার সাথে খুনসুটি করতো। বাড়ির মেজো ছেলে গনেশ ও আমায় স্নেহ করতো।
একদিন বড় বউ এর হার্টের অসুখ ধরা পরল। ডাক্তার বিশ্রামে থাকতে বলাই সে আর বিছানা থেকে বেশি ওঠা নামা না করাই আমার আদর যত্ন যেন ক্রমশ কমতি দেখা গেল। সবাই মনমরা হয়ে থাকে তাই আমার জন্য তেমন কেউ আর ভাবে না। একবার খাবার দিয়ে রেখে যায় তাই সারাদিন খাই। এই বাড়ির ছোট ছেলের মাথার ব্যামো ধরা পরল। বাড়ি আছে, মানুষও আছে। আমায় খেতে দেয় কিন্তু সেই আনন্দ উচ্ছল দিনগুলি যেন কোথায় চলে গেল। বড় বাবুর বাবা হঠাৎ একদিন স্টক করে দুদিন অজ্ঞান অবস্থায় থেকে পরে মারা গেলেন। পিসিমণি বিয়ে করে চলে গেলেন। বাড়িটা যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেল।
উপসংহার:
একদিন কে যেন আমার খাঁচার দরজা খুলে আসে। আমি সুযোগ পেয়ে গেলাম বেরোনোর আমি খুব দ্রুত উড়ে গিয়ে সামনে পুকুর পাড়ের কোণে একটি ডুমুর গাছে গিয়ে বসলাম। ওরা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল কিন্তু আমি কিছুক্ষন ডুমুর গাছে বসে। ধাতস্থ হয়ে পূর্ব দিকের আকাশে উড়ে গেলাম। দীর্ঘবন্দী জীবন কাটিয়ে আজ আমি মুক্তির সাধ পেয়েছি। খুবই আনন্দ আজ আমার মনে। কিন্তু মনে পড়ে সেই পেছনে ফেলে আসা বন্দি দিনগুলোর কথা। আমরা পাখি জাতি আমাদের তো মানুষের মত স্নান করিয়ে দেওয়া আদর করা এগুলো সম্ভব নয়। মানুষের কাছ থেকে এগুলো পেয়েছি।
এই নিস্বার্থ স্নেহ কখনো অসীম ভালোবাসা উজাড় করে দিয়েছে তা ভোলার নয়। তবে আমি মাঝে মাঝে এখানে ফিরে আসি কিন্তু দুঃখের বিষয় সেই চেনা লোক দেখা পাই না। তারা আর এখানে বাস করে না। তারা সবাই এদেশ ছেড়ে ভারতে চলে গেছে। আমার খুব ইচ্ছে হয়। এই মানুষগুলোকে দেখতে একবার হলেও।
একটি খাঁচায় বন্দি পাখির আত্মকথা প্রবন্ধ রচনা: ৩
ভূমিকা:
আমি খাঁচায় বন্দি এক পাখি। আমার জন্মের কয়েক মাস পর থেকে আমাকে খাঁচায় বন্দী করে রাখা হয়েছে। আমার আত্মকথা মানেই তো দুঃখ কষ্ট ও যন্ত্রণাভরা বন্দী জীবনের ইতিহাস।
জন্ম ও বেড়ে ওঠা:
জন্মের কয়েক দিন পরে আমি প্রথম পৃথিবীর আলো দেখেছিলাম। মায়ের আদর ও যত্নে আমি একটু একটু করে বাড়তে থাকি। ধীরে ধীরে উড়তেও শিখি। প্রথমে এ ডাল থেকে সে ডাল, তারপর মাটি থেকে আকাশে। নিজের ইচ্ছে মত এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ায়, পোকামাকড় ধরে খায় রাত্রে বাবা-মায়ের সঙ্গে কোটরে রাত কাটায়। এভাবেই চলছিল।
বন্দী জীবন:
তারপর হঠাৎ একদিন এক শিকারির হাতে ধরা পরি। আমাকে খাঁচায় বন্দি করে বিক্রি করার জন্য মেলায় আনা হলো। এক বাবু খাঁচা শুদ্ধ আমায় কিনে নিলেন। প্রথম প্রথম আমি খুব আদর যত্ন পেলাম। কিন্তু যতদিন যায়, আমার প্রতি অবহেলা বাড়তে থাকে। বাবু মারা যাওয়ার পর ছেলেরা সব আলাদা হয়ে যায়।
ভাগাভাগির সময় কেউ আমাকে নিতে না চাইলে বড় ছেলে দয়া করে আমাকে রাখতে রাজি হয় । এরপর আমার দুঃখ কষ্ট আরো বাড়তে থাকে। খাওয়ার, জল কোনটাই সময় মত পাই না। অন্য পাখিরা যখন আকাশে উড়ে, আমি তখন ডানা ঝাঁপতে ওড়ার বৃথাই চেষ্টা করি। মাঝে মাঝে মনে পড়ে ছোটবেলার কথা, মা বাবার কথা। তখন আমার চোখে জল এসে যায়। কিন্তু মানুষের কাছে আমার চোখের জলের কোন দাম নেই।
উপসংহার:
ভাবি মানুষ কত নিষ্ঠুর। আমাকে খাঁচায় আটকে রেখে তারা যে কি আনন্দ পায় কে জানে। আমাকে এভাবে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য মানুষের কি কোন শাস্তি হবে না।