বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর / মাধ্যমিক বাংলা

এখানে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর শেয়ার করা হলো। / মাধ্যমিক বাংলা বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান ( রাজশেখর বসু )

মাধ্যমিক বাংলা
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান প্রবন্ধের MCQ প্রশ্ন উত্তর

১. পিতলের চেয়ে হালকা ধাতু হল—
ক) অ্যালুমিনিয়াম
খ) পারদ
গ) স্টেইনলেস স্টিল
ঘ) সোনা

উত্তর: ক) অ্যালুমিনিয়াম

২. অনেক বছর আগে যেসকল বিদ্যোৎসাহী নানা বিষয়ের পরিভাষা রচনা করেছিলেন, তাঁরা যে-সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন তা হল—
ক) সাহিত্য আকাদেমি
খ) বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ
গ) সাহিত্য সংসদ
ঘ) বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ

উত্তর: খ) বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ

৩. ছেলেবেলায় রাজশেখর বসুকে যাঁর বাংলা জ্যামিতি বই পড়তে হয়েছিল তিনি হলেন—
ক) রামমোহন
খ) ব্রজমোহন মল্লিক
গ) কেশবচন্দ্র নাগ
ঘ) ব্রহ্মমোহন মল্লিক

উত্তর: ঘ) ব্রহ্মমোহন মল্লিক

৪. ‘প্রথম শ্রেণির পাঠক ভাষার প্রভাব থেকে মুক্ত।’ — কোন ভাষার প্রভাব?
ক) হিন্দি
খ) বাংলা
গ) ইংরেজি
ঘ) সংস্কৃত

উত্তর: গ) ইংরেজি

৫. যারা ইংরেজি জানে তারা পড়ে—
ক) প্রথম শ্রেণিতে
খ) দ্বিতীয় শ্রেণিতে
গ) তৃতীয় শ্রেণিতে
ঘ) চতুর্থ শ্রেণিতে

উত্তর: খ) দ্বিতীয় শ্রেণিতে

৬. প্রীতির সঙ্গে যে ভাষার পদ্ধতি আয়ত্ত করতে হয় তা হল—
ক) মাতৃভাষার পদ্ধতি
খ) বিদেশি ভাষার পদ্ধতি
গ) হিন্দি ভাষার পদ্ধতি
ঘ) জার্মান ভাষার পদ্ধতি

উত্তর: ক) মাতৃভাষার পদ্ধতি

৭. যাদের জন্য বিজ্ঞান-বিষয়ক বাংলা গ্রন্থ বা প্রবন্ধ লেখা হয় তাদের প্রথম শ্রেণিটি—
ক) ইংরেজি ভাষায় দক্ষ
খ) বাংলা ভাষায় দক্ষ
গ) ইংরেজি জানে না বা অতি অল্প জানে
ঘ) ইংরেজি জানে এবং অল্পাধিক বিজ্ঞান পড়েছে

উত্তর: ঘ) ইংরেজি জানে এবং অল্পাধিক বিজ্ঞান পড়েছে

৮. রাজশেখর বসুর ছদ্মনাম কোনটি?
ক) বনফুল
খ) শ্রীপান্থ
গ) পরশুরাম
ঘ) রূপদর্শী

উত্তর: গ) পরশুরাম

৯. বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার একটি প্রধান বাধা হল—
ক) বাংলা ভাষার প্রতি অনীহা
খ) ইংরেজির প্রতি আকর্ষণ
গ) বাংলা পারিভাষিক শব্দ কম
ঘ) বাংলা পারিভাষিক শব্দ বেশি

উত্তর: গ) বাংলা পারিভাষিক শব্দ কম

১০. অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়ে এবং অল্পশিক্ষিত বয়স্ক লোকেরা যে-শ্রেণিতে পড়ে, সেটি হল—
ক) দ্বিতীয়
খ) প্রথম
গ) চতুর্থ
ঘ) তৃতীয়

উত্তর: খ) প্রথম

১১. যাদের জন্য বিজ্ঞান-বিষয়ক বাংলা গ্রন্থ লেখা হয় তাদের বিভক্ত করা যায়—
ক) দুটি শ্রেণিতে
খ) চারটি শ্রেণিতে
গ) তিনটি শ্রেণিতে
ঘ) একটি শ্রেণিতে

উত্তর: ক) দুটি শ্রেণিতে

১২. যেসব গাছে দু-রকম ফুল হয়, সেগুলির নাম হল—
ক) পুঁই-পালং
খ) অশোক-পলাশ
গ) লাউ-কুমড়ো
ঘ) গোলাপ-গাঁদা

উত্তর: গ) লাউ-কুমড়ো

১৩. ‘অনেকে মনে করেন, ……… বৈজ্ঞানিক শব্দ বাদ দিয়ে বক্তব্য প্রকাশ করলে রচনা সহজ হয়।’ (শূন্যস্থান পূরণ করো)
ক) ইংরেজি
খ) পারিভাষিক

উত্তর: খ) পারিভাষিক

১৪. পরিভাষার উদ্দেশ্য হল—
ক) ভাষার সংক্ষেপ এবং অর্থ সুনির্দিষ্ট করা
খ) কোনো বিষয়কে বর্ণনা করা
গ) অল্প পরিচিত শব্দের ব্যবহার করা
ঘ) শব্দের অর্থের ব্যাখ্যা দেওয়া

উত্তর: ক) ভাষার সংক্ষেপ এবং অর্থ সুনির্দিষ্ট করা

১৫. আলংকারিকগণ শব্দের—
ক) একরকম গুণের কথা বলেছেন
খ) দু-রকম গুণের কথা বলেছেন
গ) তিনরকম গুণের কথা বলেছেন
ঘ) চাররকম গুণের কথা বলেছেন

উত্তর: গ) তিনরকম গুণের কথা বলেছেন

১৬. শব্দের কেবল আভিধানিক অর্থ প্রকাশ করে—
ক) অভিধা
খ) লক্ষণা
গ) ব্যঞ্জনা
ঘ) কোনোটিই নয়

উত্তর: ক) অভিধা

১৭. কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় পরিভাষা সমিতি নিযুক্ত করেছিল—
ক) ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে
খ) ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে
গ) ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে
ঘ) ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে

উত্তর: খ) ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে

১৮. ‘Sensitized Paper’-এর অনুবাদ কী লিখলে ঠিক হয় বলে প্রাবন্ধিক মনে করেছেন—
ক) স্পর্শকাতর কাগজ
খ) সুবেদী কাগজ
গ) সুগ্রাহী কাগজ
ঘ) ব্যথাপ্রবণ কাগজ

উত্তর: গ) সুগ্রাহী কাগজ

১৯. ‘Sensitized Paper’-এর বাংলা অনুবাদ কী লিখলে ঠিক বলে মনে করেন লেখক—
ক) স্পর্শকাতর কাগজ
খ) সুগ্রাহী কাগজ
গ) সুবেদী কাগজ
ঘ) ব্যথাপ্রবণ কাগজ

উত্তর: খ) সুগ্রাহী কাগজ

২০. ‘Sensitive Person’-এর বাংলা অর্থ হওয়া উচিত—
ক) উত্তেজনাপ্রবণ ব্যক্তি
খ) অভিমানী
গ) উত্তেজক
ঘ) ব্যথাপ্রবণ

উত্তর: খ) অভিমানী

২১. ‘হিমালয় যেন পৃথিবীর মানদণ্ড’ — উক্তিটি কার?
ক) রবীন্দ্রনাথের
খ) বঙ্কিমচন্দ্রের
গ) কালিদাসের
ঘ) বিদ্যাসাগরের

উত্তর: গ) কালিদাসের

২২. ‘হিমালয় যেন পৃথিবীর মানদণ্ড’ — কালিদাসের এই উক্তি কীসের উপযুক্ত?
ক) ভূগোলের
খ) কাব্যের
গ) বিজ্ঞানের
ঘ) ইতিহাসের

উত্তর: খ) কাব্যের

মাধ্যমিক বাংলা
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান প্রবন্ধের SAQ প্রশ্ন উত্তর

১. বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের উদ্যোগে কী ত্রুটি ছিল?

উত্তর : বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সঙ্গে যুক্ত বিদ্বান ব্যক্তিবর্গ পরিভাষা রচনায় উদ্যোগী হলেও তাঁরা একত্রে কাজ না করে পৃথকভাবে কাজ করেছিলেন। এটাই তাঁদের ত্রুটি ছিল।

২. কবে, কাদের পৃষ্ঠপোষকতায় দ্বিতীয়বার পরিভাষা সমিতি নিযুক্ত হয়েছিল?

উত্তর : ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন বিষয়ের দিকপালদের নিয়ে পরিভাষা সমিতি গঠিত হয়েছিল। তাকেই দ্বিতীয়বারের পরিভাষা সমিতির নিযুক্তিকরণ বলা হয়।

৩. ‘পারিভাষিক শব্দ’ বলতে কী বোঝ?

উত্তর : ‘পারিভাষিক শব্দ’-এর অর্থ হল পরিভাষা সম্বন্ধীয় শব্দ। পরিভাষা এক ধরনের সংজ্ঞাবিশেষ, যার কোনো অর্থান্তর ঘটে না। ইংরেজিতে একে Glossary বা Technical term বলা হয়।

৪. ‘অনেক বৎসর পূর্বে…’—অনেক বছর পূর্বের কোন প্রসঙ্গ এখানে উত্থাপন করা হয়েছে?

উত্তর : অনেক বছর পূর্বে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তি বিভিন্ন বিষয়ের পরিভাষা রচনা করেছিলেন। এখানে সেই প্রসঙ্গ উত্থাপন করা হয়েছে।

৫. ‘বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর : ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ রচনায় ‘বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভ’ বলতে বিজ্ঞান-বিষয়ক বিভিন্ন প্রবন্ধকে বোঝানো হয়েছে।

৬. ‘বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভ বোঝা কঠিন।’ – কেন?

উত্তর : পাশ্চাত্যের তুলনায় ভারতবর্ষের সাধারণ মানুষের প্রাথমিক বিজ্ঞানের সঙ্গে পরিচয় কম থাকায় বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভ বোঝা কঠিন।

৭. ‘তখন বৈজ্ঞানিক সাহিত্য রচনা সুসাধ্য হবে।’ – কখন সুসাধ্য হবে বলে লেখকের ধারণা?

উত্তর : দেশে বিজ্ঞানশিক্ষা বিস্তৃত হলে বৈজ্ঞানিক সাহিত্য রচনা সুসাধ্য হবে বলে লেখকের ধারণা।

৮. বিজ্ঞান আলোচনার রচনাপদ্ধতির মূল ত্রুটি কী?

উত্তর : অনেক লেখকের ভাষার আড়ষ্টতা ও ইংরেজির আক্ষরিক অনুবাদ রচনাকে দুর্বোধ্য ও দুর্বহ করে তোলে।

৯. ‘এতে রচনা উৎকট হয়।’ – রচনা ‘উৎকট’ হয় কীসে?

উত্তর : লেখক ইংরেজিতে ভেবে সরাসরি বাংলায় অনুবাদ করার চেষ্টা করলে রচনার সাবলীলতা নষ্ট হয়ে তা উৎকট হয়।

১০. ‘এতে রচনা উৎকট হয়।’ – ‘উৎকট’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর : এখানে ‘উৎকট’ বলতে ভাষার আড়ষ্টতা ও দুর্বোধ্যতা বোঝানো হয়েছে।

১১. বিশ্ববিদ্যালয়-নিযুক্ত পরিভাষা সমিতি নবাগত রাসায়নিক বস্তুর ইংরেজি নাম সম্বন্ধে কী বিধান দিয়েছিলেন?

উত্তর : কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-নিযুক্ত পরিভাষা সমিতি বিধান দিয়েছিল যে, নবাগত রাসায়নিক বস্তুর ইংরেজি নামই বাংলা বানানে চলবে, যেমন—অক্সিজেন।

১২. ‘তার ফলে তাঁদের চেষ্টা অধিকতর সফল হয়েছে।’ – ‘তার ফলে’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর : কারণ, ওই সমিতিতে বিভিন্ন বিষয়ের দিকপাল ব্যক্তিদের একত্রিত করে কাজ করানো হয়েছিল।

১৩. ছেলেবেলায় রাজশেখর বসু কার লেখা জ্যামিতি বই পড়তেন?

উত্তর : রাজশেখর বসু ছেলেবেলায় ব্রহ্মমোহন মল্লিকের জ্যামিতি বই পড়তেন।

১৪. প্রয়োজনমতো বাংলা শব্দ পাওয়া না-গেলে কী করা উচিত বলে লেখক মনে করেছেন? (মাধ্যমিক ২০২০)

উত্তর : রাজশেখর বসুর মতে, প্রয়োজনমতো বাংলা শব্দ না-পাওয়া গেলে বৈজ্ঞানিক রচনায় ইংরেজি শব্দই বাংলা বানানে চালানো যেতে পারে।

১৫. ‘Sensitized Paper’-এর অনুবাদ লেখকের মতে কী করলে যথাযথ হয়?

উত্তর : রাজশেখর বসুর মতে, ‘Sensitized Paper’-এর যথাযথ বাংলা অনুবাদ হবে ‘সুগ্রাহী কাগজ’।

১৬. ‘এই ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয়।’ – কোন ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয় বলেছেন লেখক?

উত্তর : অনেকের মতে, বিজ্ঞান আলোচনায় পারিভাষিক শব্দ বাদ দিয়ে সাধারণ শব্দ ব্যবহার করলে রচনা সহজ হয়। কিন্তু এই ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয়।

১৭. পরিভাষার উদ্দেশ্য কী?

উত্তর : পরিভাষার উদ্দেশ্য হলো ভাষাকে সংক্ষিপ্ত করা ও অর্থকে সুনির্দিষ্ট করা। এতে অনর্থক বর্ণনা এড়িয়ে বিষয় সংক্ষেপে প্রকাশ করা যায়।

১৮. ‘আমাদের আলংকারিকগণ শব্দের ত্রিবিধ কথা বলেছেন’ – কোন ‘ত্রিবিধ কথা’র প্রসঙ্গ লেখক স্মরণ করেছেন?

উত্তর : শব্দের ত্রিবিধ প্রসঙ্গ হলো—অভিধা, লক্ষণা ও ব্যঞ্জনা।

১৯. অভিধা কাকে বলে?

উত্তর : অভিধা হলো শব্দের আভিধানিক অর্থ। যেমন—‘অরণ্য’ বলতে বোঝায় বন বা জঙ্গল।

২০. লেখক বৈজ্ঞানিক সাহিত্যে অলংকারের প্রয়োগ কম করতে বলেছেন কেন?

উত্তর : রাজশেখর বসুর মতে, বৈজ্ঞানিক সাহিত্যে অলংকার যত কম থাকে ততই ভালো, কারণ বৈজ্ঞানিক ভাষা হওয়া উচিত সহজ, সরল ও স্পষ্ট।

২১. ‘একটি দোষ প্রায় নজরে পড়ে।’ – কোন দোষের কথা বলা হয়েছে?

উত্তর : বাংলা বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে লেখকরা অনেক সময় না-জেনে বা কম জেনে তথ্য পরিবেশন করেন—এই দোষের কথাই বলা হয়েছে।

২২. ‘এই কথাটি সকল লেখকেরই মনে রাখা উচিত।’ – কোন কথাটি?

উত্তর : রাজশেখর বসুর মতে, বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধের ভাষা সহজ, সরল ও স্পষ্ট হওয়া উচিত—এই কথাটিই সকল লেখকের মনে রাখা উচিত।

মাধ্যমিক বাংলা
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান প্রবন্ধের রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

১. বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান রচনার সমস্যাগুলি আলোচনা করো।
অথবা, ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চায় এখনও নানারকম বাধা আছে।’— লেখক কোন ধরনের বাধার কথা বলেছেন?
অথবা, ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ রচনায় প্রাবন্ধিক বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে যেসব অসুবিধার কথা বলেছেন তা আলোচনা করো।

উত্তর: বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার পথে সম্ভাব্য বাধা সম্পর্কে রাজশেখর বসু তাঁর ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ প্রবন্ধে আলোচনা করেছেন। প্রধান বাধাগুলি হলো—

পাঠকের অসুবিধা – ইংরেজিতে বিজ্ঞান পড়া পাঠকের কাছে বাংলায় লেখা বিজ্ঞান গ্রন্থ সহজে বোধগম্য হয় না।

পারিভাষিক শব্দের অভাব – উপযুক্ত বৈজ্ঞানিক পরিভাষার সংখ্যা কম; সাহিত্য পরিষদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগেও পুরো সমাধান হয়নি।

বিজ্ঞানবোধের অভাব – পাশ্চাত্যের তুলনায় আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান কম, তাই রচনা সহজে বোঝা যায় না।

ভাষার আড়ষ্টতা – অনেক লেখক আক্ষরিক অনুবাদ করেন, ফলে ভাষা দুর্বোধ্য ও অপ্রাকৃত হয়ে পড়ে।

অবাস্তব ভাবনা – পারিভাষিক শব্দ বাদ দিয়ে লেখা সহজ হবে—এই ধারণা সঠিক নয়।

অলংকারের ব্যবহার – উপমা-রূপক ছাড়া অন্যান্য অলংকার বৈজ্ঞানিক আলোচনায় অপ্রয়োজনীয় ও বিভ্রান্তিকর।

মূল্যায়ন: এসব কারণেই বাংলায় বিজ্ঞানচর্চা এখনও নানা বাধার সম্মুখীন, তবে সঠিক পরিভাষা নির্মাণ ও সহজ-সরল ভাষা ব্যবহারে এ সমস্যা দূর হতে পারে।

২. ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চায় এখনও নানারকম বাধা আছে।’ — এই বাধা দূর করতে লেখক কী কী পরামর্শ দিয়েছেন তা আলোচনা করো।

উত্তর: প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু তাঁর ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ প্রবন্ধে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার নানা সমস্যা উল্লেখ করেছেন এবং সেইসঙ্গে সমাধানের পথও নির্দেশ করেছেন। তাঁর পরামর্শগুলি হলো—

ইংরেজি শব্দের বাংলা বানান ব্যবহার – যতদিন না উপযুক্ত বাংলা পারিভাষিক শব্দ রচিত হচ্ছে, ততদিন ইংরেজি শব্দ বাংলায় চালানো উচিত। যেমন— অক্সিজেন, ফার্ন, মালভাসি ইত্যাদি।

স্পষ্ট ও সাবলীল ভাষা প্রয়োগ – আক্ষরিক অনুবাদ বা জটিল ভাষা না ব্যবহার করে সহজ, স্বাভাবিক ও বোধগম্য ভাষায় বৈজ্ঞানিক রচনা করা উচিত। যেমন— সুগ্রাহী কাগজ শব্দ ব্যবহার করাই শ্রেয়।

ভাষার নিজস্বতা বজায় রাখা – ইংরেজিতে ভেবে বাংলায় অনুবাদ করলে ভাষা অপ্রাকৃত হয়। তাই সরাসরি বাংলায় ভাবা ও লেখা উচিত।

পারিভাষিক শব্দের ব্যবহার ও ব্যাখ্যা – অল্প পরিচিত বৈজ্ঞানিক পরিভাষার প্রথমবার প্রয়োগের সময় তার ব্যাখ্যা দেওয়া জরুরি।

অলংকার বর্জন – বৈজ্ঞানিক আলোচনায় উপমা বা রূপক সীমিত থাকলেও অন্যান্য অলংকার এড়িয়ে চলা উচিত।

যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তা – অবিখ্যাত লেখকদের বৈজ্ঞানিক লেখা প্রকাশের আগে অভিজ্ঞদের দ্বারা যাচাই করানো দরকার।

অর্থাৎ, বৈজ্ঞানিক রচনা স্পষ্ট, সহজ ও প্রাঞ্জল হলে এবং যথাযথ পরিভাষার প্রয়োগ থাকলে বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার বাধা অনেকটাই দূর হবে।

৩. পাশ্চাত্য দেশের তুলনায় এ দেশের জনসাধারণের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান নগণ্য।’ — লেখকের এমন মন্তব্যের কারণ কী?

উত্তর : প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু তাঁর ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন যে, পাশ্চাত্যের তুলনায় ভারতবর্ষের সাধারণ মানুষের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান অত্যন্ত নগণ্য। এর কারণসমূহ হলো—

বিজ্ঞানচর্চার অভাব – ভারতীয় জনসাধারণ বিজ্ঞান বিষয়ে তেমন দক্ষ নয়, তাঁদের মধ্যে বৈজ্ঞানিক কৌতূহলও খুব সীমিত।

প্রাথমিক বিজ্ঞানের অজ্ঞতা – সাধারণ মানুষ কেবল টাইফয়েড, আয়োডিন, মোটর, ক্রোটন, জেব্রা প্রভৃতি গুটিকতক ইংরেজি শব্দ জানলেও, আধুনিক বৈজ্ঞানিক তথ্য সম্পর্কে তাঁরা প্রায় অজ্ঞ ছিলেন।

পাশ্চাত্যের তুলনায় পিছিয়ে থাকা – ইউরোপ-আমেরিকায় সাধারণ মানুষও সহজে জনপ্রিয় বিজ্ঞানরচনা বুঝতে পারত, কিন্তু ভারতে প্রাথমিক বিজ্ঞান থেকেই না-শুরু করলে রচনা সাধারণ মানুষের কাছে দুর্বোধ্য হয়ে উঠত।

বাংলায় বৈজ্ঞানিক সাহিত্য রচনার অসুবিধা – পাঠকদের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান সীমিত থাকায় জনপ্রিয় বাংলা বিজ্ঞানরচনা বোঝা কঠিন হয়ে দাঁড়াত।

তাই লেখক বলেছেন, পাশ্চাত্যের তুলনায় এ দেশের মানুষের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান খুবই কম। তবে তিনি আশাবাদী ছিলেন যে, বিজ্ঞানশিক্ষা বিস্তার ঘটলে একদিন এই অসুবিধা কেটে যাবে এবং বাংলায় বৈজ্ঞানিক সাহিত্যরচনা সহজ হবে।

মাধ্যমিক বাংলা
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান প্রবন্ধের রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

৪. বাংলা বিজ্ঞান-বিষয়ক গ্রন্থের পাঠকদের লেখক যে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন, তাদের পরিচয় দাও।
অথবা, ‘তাদের মোটামুটি দুই শ্রেণিতে ভাগ করা যেতে পারে।’ — কাদের দুই শ্রেণিতে ভাগ করা যায়? শ্রেণি দুটির পরিচয় দাও।

উত্তর: প্রখ্যাত রসায়নবিদ ও প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু তাঁর ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ প্রবন্ধে বিজ্ঞানবিষয়ক গ্রন্থের পাঠককে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন।

প্রথম শ্রেণি :

যারা ইংরেজি জানে না অথবা অতি অল্প জানে।
এরা সাধারণত অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়ে বা অল্পশিক্ষিত বয়স্ক মানুষ।
এদের বিজ্ঞান-সংক্রান্ত জ্ঞান খুব সীমিত; কেবল কিছু ইংরেজি শব্দ (যেমন— টাইফয়েড, মোটর, আয়োডিন, জেব্রা) জানে।
তবে ইংরেজির প্রভাবমুক্ত হওয়ায় বাংলায় লেখা বিজ্ঞান এদের কাছে সহজে বোধগম্য হয়।

দ্বিতীয় শ্রেণি :

যারা ইংরেজি জানে এবং ইংরেজিতে বিজ্ঞানপাঠ করেছে।
এদের জন্য বাংলায় বিজ্ঞান পড়া তুলনামূলক কঠিন ও সময়সাপেক্ষ।
কারণ, বিজ্ঞান রচনায় মাতৃভাষাকে গ্রহণ করার জন্য এদের ইংরেজির প্রতি পক্ষপাত বর্জন করতে হয়।

৫. ‘এই দোষ থেকে মুক্ত না হলে বাংলা বৈজ্ঞানিক সাহিত্য সুপ্রতিষ্ঠিত হবে না।’— এই দোষ বলতে কোন্ দোষের কথা বলা হয়েছে? লেখক এই দোষের যে-ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা আলোচনা করো।
অথবা, ‘এই দোষ থেকে মুক্ত না হলে বাংলা বৈজ্ঞানিক সাহিত্য সুপ্রতিষ্ঠিত হবে না।’— কোন্ দোষের কথা বলা হয়েছে? কীভাবে এই দোষ থেকে মুক্ত হওয়া যাবে?

উত্তর : ‘এই দোষ’ বলতে বোঝানো হয়েছে— ভাষার আড়ষ্টতা ও ইংরেজি বাক্যের আক্ষরিক অনুবাদের দোষ।

প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসুর মতে, বাংলায় বৈজ্ঞানিক সাহিত্য রচনায় অনেক লেখকই যথাযথ রীতি রপ্ত করতে পারেননি। তাঁদের ভাষা আড়ষ্ট হয়ে পড়ে এবং ইংরেজি শব্দ বা বাক্যের আক্ষরিক অনুবাদে রচনা শ্রুতিকটু হয়।

লেখকের ব্যাখ্যা :

অনেক সময় ইংরেজি শব্দের অর্থব্যাপ্তি হুবহু বাংলায় আনার চেষ্টা করলে হাস্যকর শব্দ তৈরি হয়। যেমন, sensitized paper-এর অনুবাদ যদি ‘স্পর্শকাতর কাগজ’ করা হয়, তবে তা অদ্ভুত শোনায়; বরং ‘সুগ্রাহী কাগজ’ বলা উপযুক্ত।

আক্ষরিক অনুবাদে বাক্যও বেখাপ্পা হয়। যেমন, “The atomic engine has not even reached the blue print stage”-এর অনুবাদ যদি হয়— “পরমাণু এঞ্জিন নীলচিত্রের অবস্থাতেও পৌঁছোয়নি”, তবে তা উৎকট শোনায়। কিন্তু ভাবানুবাদ করলে হয়— “পরমাণু এঞ্জিনের নকশা পর্যন্ত এখনও প্রস্তুত হয়নি”, যা অনেক বেশি সাবলীল ও সুন্দর।

বাংলা বৈজ্ঞানিক সাহিত্যকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হলে লেখকদের উচিত— আড়ষ্ট ভাষা ও আক্ষরিক অনুবাদের দোষ বর্জন করে সহজ, স্বচ্ছ ও ভাবানুবাদনির্ভর ভাষা ব্যবহার করা।

৬. ‘তাতে পাঠকের অসুবিধা হয়।’— কীসে পাঠকের অসুবিধা হয়? অসুবিধা দূর করার জন্য কী কী করা প্রয়োজন?

উত্তর : পাঠকের অসুবিধা হয়— বাংলা বৈজ্ঞানিক সাহিত্য রচনায় যথাযথ পারিভাষিক শব্দ ব্যবহার না করলে। পারিভাষা এড়িয়ে বা বারবার ব্যাখ্যা দিয়ে বিষয় বোঝাতে গেলে রচনা দীর্ঘায়িত হয় এবং পাঠক বিভ্রান্তিতে পড়ে।

অসুবিধা দূর করার করণীয় :

১. বৈজ্ঞানিক রচনায় যথার্থ ও সংক্ষিপ্ত পারিভাষিক শব্দ ব্যবহার করা উচিত।
২. অপরিচিত বা নতুন পারিভাষার পাশে তার ইংরেজি নাম ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দেওয়া প্রয়োজন।
৩. পাঠকের কাছে শব্দটি পরিচিত হয়ে গেলে কেবল বাংলা পারিভাষাই যথেষ্ট।

অতএব, বাংলা বৈজ্ঞানিক সাহিত্যকে সহজবোধ্য ও নির্ভুল করতে পারিভাষিক শব্দের যথাযথ ও সচেতন প্রয়োগ অপরিহার্য।

মাধ্যমিক বাংলা
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান প্রবন্ধের ৫ মার্কের প্রশ্ন উত্তর

৭. ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ শীর্ষক প্রবন্ধটিতে পরিভাষার প্রসঙ্গে লেখক যে-বক্তব্য প্রকাশ করেছেন তা আলোচনা করো।
অথবা, ‘অনেকে মনে করেন পারিভাষিক শব্দ বাদ দিয়ে বক্তব্য প্রকাশ করলে রচনা সহজ হয়।’— মতটির যাথার্থ্য বিচার করো।

উত্তর : রাজশেখর বসু তাঁর ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ প্রবন্ধে পরিভাষার গুরুত্ব সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করেছেন।

১. পরিভাষার অভাব ও ব্যবহার :
বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার অন্যতম বড় বাধা হলো উপযুক্ত পরিভাষার অভাব। অনেক ইংরেজি শব্দের যথাযথ বাংলা প্রতিশব্দ নেই। তাই যতদিন পর্যন্ত প্রামাণ্য বাংলা পরিভাষা তৈরি না হয়, ততদিন ইংরেজি শব্দকে বাংলা বানানে ব্যবহার করাই যুক্তিসঙ্গত।

২. ভুল ধারণা :
অনেকে মনে করেন পরিভাষিক শব্দ বাদ দিয়ে সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করলে রচনা সহজ হয়। কিন্তু এটি সর্বদা সত্য নয়। যেমন—
অমেরুদণ্ডী বোঝাতে বলা যায় “যেসব প্রাণীর মেরুদণ্ড নেই”।
কিন্তু “আলোকতরঙ্গ” বোঝাতে “আলোর কাঁপন বা নাচন” বললে অর্থ অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর হয়।

৩. পরিভাষার প্রয়োজনীয়তা :
পরিভাষা ভাষাকে করে সংক্ষিপ্ত, স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট। পরিভাষা বাদ দিলে বারবার দীর্ঘ বর্ণনা দিতে হয়, ফলে রচনা ভারী ও অস্পষ্ট হয়ে ওঠে।

৪. সমাধান :
অপরিচিত পরিভাষা প্রথমবার ব্যবহারের সময় তার ইংরেজি নামসহ সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত। পরে প্রচলিত হয়ে গেলে কেবল বাংলা পরিভাষাই যথেষ্ট।

অতএব, বাংলা বৈজ্ঞানিক সাহিত্যের উন্নতির জন্য পরিভাষা অপরিহার্য, একে বাদ দেওয়া নয় বরং যথাযথভাবে ব্যবহার করাই শ্রেয়।

৮. বাংলা বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধাদিতে আর একটি দোষ প্রায় নজরে পড়ে।— কোন দোষের কথা বলা হয়েছে? এই দোষমুক্তির উপায় কী?
অথবা, ‘এই রকম ভুল লেখা সাধারণ পাঠকের পক্ষে অনিষ্টকর।’— কী ধরনের ভুল লেখার কথা লেখক উল্লেখ করেছেন? সেই ভুল সংশোধনের কোন উপায় তিনি নির্দেশ করেছেন লেখো।

উত্তর : ১. দোষের পরিচয় :
রাজশেখর বসু তাঁর ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ প্রবন্ধে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে আরেকটি মারাত্মক দোষের উল্লেখ করেছেন। সেটি হলো-
সঠিকভাবে না জেনে ভুল লেখা।
অনেক লেখক বিজ্ঞানসম্মত তথ্য যাচাই না করে ভুলভাবে পরিবেশন করেন। এতে পাঠকের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয় এবং বৈজ্ঞানিক জ্ঞান আহরণে ক্ষতি হয়। উদাহরণস্বরূপ, কোনো পত্রিকায় লেখা হয়েছিল-
“অক্সিজেন বা হাইড্রোজেন স্বাস্থ্যকর বলে বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই; তারা জীবের বাঁচবার জন্য অপরিহার্য অঙ্গ মাত্র। তবে ওজন গ্যাস স্বাস্থ্যকর।”
এই ধরনের বক্তব্য সম্পূর্ণ ভুল ও অনিষ্টকর।

২. দোষমুক্তির উপায় :

লেখক ও সম্পাদকদের অতিরিক্ত সতর্কতা ও দায়িত্বশীলতা অবলম্বন করতে হবে।

বিজ্ঞানের বিষয়ে যথার্থ ও গভীর জ্ঞান অর্জন করার পরই প্রবন্ধ লেখা উচিত।

কোনো অখ্যাত বা নবীন লেখকের লেখা প্রকাশের আগে তা অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞের দ্বারা যাচাই করিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।

ভুল তথ্য পরিবেশনের দোষ থেকে মুক্ত হয়ে কেবল সত্য ও যাচাইকৃত তথ্য দিয়েই বাংলা বৈজ্ঞানিক সাহিত্য রচনা করতে হবে।

আরোও দেখো: হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর
CLOSE

You cannot copy content of this page