ছুটি গল্পের প্রশ্ন উত্তর ক্লাস 11 বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার

এখানে একাদশ শ্রেণীর ছুটি গল্পের বড়ো প্রশ্ন উত্তর শেয়ার করা হলো। প্রতিটি প্রশ্নের মান: ৫ // Class 11 Second Semester Bengali Question Answer // ছুটি গল্পের লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ছুটি গল্পের বড়ো প্রশ্ন উত্তর ক্লাস 11 সেকেন্ড সেমিস্টার বাংলা
প্রশ্নমান: ৫

১. ছুটি গল্পের ফটিক চরিত্রটি আলোচনা করো।

উত্তর:- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ গল্পের ফটিক চরিত্রটি তরুণ সমাজের হৃদয় রহস্যের গভীরে ডুব দিয়ে অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের এক শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। ‘ছুটি’ গল্পটি মূলত ফটিককে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে, এবং গল্পের বিভিন্ন অংশে তার চরিত্রের নানা দিক উঠে এসেছে।

ক. নেতা সুলভ মানসিকতা:

গল্পের শুরুতেই তেরো-চৌদ্দ বছরের ফটিককে বালকদের সর্দার বলা হয়েছে। নদীর ধারে শাল গাছের গুঁড়ি মাস্তুলে পরিণত করার পরিকল্পনা, মাখনলাল সেই গুঁড়ির উপর চেপে বসলে তাকে গড়িয়ে দেওয়া—এগুলো ফটিকের ডানপিটে স্বভাব ও নেতৃত্ব দেওয়ার মানসিকতার প্রমাণ।

খ. ডানপিটে স্বভাব:

মাখনলাল কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির দিকে গেলে ফটিক কাশফুল চিবাতে থাকে, মা ডাকলেও ‘যাব না’ বলে সাড়া দেয়, মায়ের চড় খেলে তাকে ঠেলে দেয়, আবার চক্রবর্তী বাবুদের বাড়ি কোথায় জানতে চাইলে ‘জানি নে’ বলে। ফটিকের এই কাজগুলো তার ডানপিটে স্বভাবের প্রকাশ।

গ. জন্মভূমির প্রতি টান:

ফটিকের মামা বিষম্ভরবাবু তাকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিলে ফটিক প্রথমে রাজি হয়। তবে বন্ধনমুক্ত পরিবেশে অভ্যস্ত ফটিক কলকাতায় যাওয়ার পর গ্রামে খেলার সাথী ও নদীর ধারের মাঠের কথা বারবার মনে করতে থাকে। এতে তার জন্মভূমির প্রতি টান স্পষ্ট হয়।

ঘ. ভাইয়ের প্রতি ভালোবাসা:

মাখনলালের দুরন্তপনায় বিরক্ত হলেও, সে যখন গুঁড়ি থেকে পড়ে যায়, ফটিকই তার যত্ন নেয়। আবার কলকাতা যাবার সময় ফটিক মাছ ধরার ছিপ, ঘুড়ি, লাটাই সব মাখনলালকে দিয়ে যায়। এতে তার ভাইয়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ পায়।

ঙ. মায়ের প্রতি ভালোবাসা:

গ্রামে মায়ের কথার অবাধ্য হওয়া ফটিক কলকাতার বন্দী জীবনে মায়ের কথা বারবার মনে করে। অসুস্থ অবস্থায় ফটিকের মায়ের জন্য আকুলতা ও “মা, আমাকে মারিস নে” বলার মধ্যে মায়ের প্রতি তার গভীর ভালোবাসা ফুটে ওঠে।

চ. আত্মসম্মানবোধ:

লেখাপড়ায় অমনোযোগী ফটিক স্কুলে ও মামার বাড়িতে বারবার অপমানিত ও তিরস্কৃত হয়েছে। মামীর কটু কথা তার আত্মসম্মানবোধে আঘাত করেছে, ফলে সে গ্রামে মায়ের কাছে ফিরে যেতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছে এবং অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে।

পরিশেষে বলা যায়, ফটিকের মধ্যে কিশোর বয়সের চপলতা, নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা, মা ও ভাইয়ের প্রতি ভালোবাসা, জন্মভূমির প্রতি টান এবং আত্মসম্মানের সমন্বয়ে এক জীবন্ত কিশোর চরিত্র ধরা দিয়েছে।


২. ছুটি’ গল্পে কিশোর মনস্তত্ত্বের যে ছবি ফুটে উঠেছে তা আলোচনা করো।

উত্তর: ‘ছুটি’ গল্পটি ফটিক নামক তেরো বছরের এক কিশোরের জীবনকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে। তেরো বছর বয়সের ফটিকের শিশুসুলভ চপলতা, অবাধ্যতা, উচ্ছৃঙ্খলতা, আর খেলা-ধুলায় মেতে ওঠার প্রবণতা স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে। কলকাতা শহরে মামার বাড়িতে গিয়ে গণ্ডীবদ্ধ জীবনে আবদ্ধ হওয়া এবং মামীর স্নেহ-মমতাহীন আচরণে তার মনের দুঃখ ও যন্ত্রণার করুণ ছবি গল্পে ফুটে উঠেছে, যা কিশোর মনস্তত্ত্বেরও পরিচায়ক।

ফটিক যখন প্রকৃত সংকটের মুখোমুখি হয়, তখন তার মনের অবস্থা ক্রমেই জটিল হয়ে ওঠে। মামীর অপছন্দ ও প্রতিনিয়ত তিরস্কার তার কোমল মনে গভীর আঘাত হানে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই সংকটজনক অবস্থাকে তেরো-চৌদ্দ বছরের কিশোর বয়সের স্বাভাবিক সমস্যার প্রতিচ্ছবি হিসেবে তুলে ধরেছেন। লেখক বলেছেন, “তেরো-চৌদ্দ বছরের ছেলের মতো পৃথিবীতে এমন বালাই আর নাই। এদের না লাগে কোনো কাজে, না থাকে কোনো শোভা। এদের জন্য মনে কোনো স্নেহের উদ্রেক তো হয়ই না, এদের সান্নিধ্যও কেউ পেতে চায় না।”

তেরো-চৌদ্দ বছরের কিশোরদের ক্ষেত্রে প্রগলভতা, ন্যাকামি, এবং আধো-পাকা কথা তাদের চারপাশের মানুষের কাছে বিরক্তিকর বলে মনে হয়। এই বয়সে তারা শৈশবের লালিত্য এবং কণ্ঠস্বরের মিষ্টতা হারায়, এবং তাদের পরিবর্তিত দেহভাষা ও পোশাকের অস্বাভাবিকতা মানুষকে বিরক্ত করে। এই সময়ে তাদের দোষগুলো যেন অসহ্য মনে হয়। কিশোররাও বুঝতে পারে যে তারা কোথাও মানিয়ে নিতে পারছে না। ফলে তারা সব সময় নিজেকে অপরাধী এবং ক্ষমাপ্রার্থী মনে করে, এবং স্নেহের জন্য ক্ষুধার্ত থাকে।

ফটিকের ক্ষেত্রেও এটাই হয়েছে। কলকাতার পরিবেশে সে মানিয়ে নিতে না পেরে সবসময় মায়ের স্নেহের জন্য ব্যাকুল হয়েছে। গ্রামে ফিরে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা তার মনে ক্রমেই বেড়ে ওঠে। তার অসুস্থতা এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর মধ্য দিয়ে, তার কিশোর বয়সের মনস্তত্ত্বের জটিলতা ও সংগ্রাম স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।

সুতরাং, ‘ছুটি’ গল্পে ফটিকের মধ্য দিয়ে গল্পকার তেরো-চৌদ্দ বছরের কিশোর বয়সের মনস্তত্ত্বের একটি পূর্ণাঙ্গ ও জীবন্ত ছবি তুলে ধরেছেন।


ক্লাস 11 সেকেন্ড সেমিস্টার বাংলা বিষয়ের ছুটি গল্পের প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্নমান: ৫

৩. “মা, এখন আমার ছুটি হয়েছে- মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি”- বক্তা কে? কাকে উদ্দেশ্য করে কখন এই কথাগুলো বলা হয়েছে? আলোচ্য অংশের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো। ১+২+২

উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘ছুটি’ গল্পের প্রধান চরিত্র ফটিক উদ্ধৃত কথাগুলি বলেছেন।

কাকে উদ্দেশ্য করে এবং কখন বলেছে:

ফটিক এই কথা তার মাকে উদ্দেশ্য করে বলেছে। গল্পের শেষে, যখন ফটিক মারাত্মকভাবে অসুস্থ এবং মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে, তখন সে নিজের মায়ের সঙ্গে দেখা করার প্রবল ইচ্ছা প্রকাশ করে। তার মনের মধ্যে মা ও গ্রামের কথা বারবার ফিরে আসে। এই অবস্থায় ফটিক নিজের মাকে উদ্দেশ্য করে বলে, “মা, এখন আমার ছুটি হয়েছে- মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি।”

আলোচ্য অংশের তাৎপর্য:

এই উক্তির মাধ্যমে ফটিক তার জীবনের সকল কষ্ট, যন্ত্রণা এবং দুঃখের থেকে মুক্তি পাওয়ার ইঙ্গিত দেয়। ‘ছুটি’ শব্দটি এখানে প্রতীকী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে—এটি শুধু স্কুলের ছুটি নয়, বরং জীবনের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি। ‘বাড়ি যাওয়া’ বলতে এখানে তার মায়ের কাছে ফিরে যাওয়া এবং মৃত্যুর মাধ্যমে চিরশান্তিতে বিশ্রাম নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশিত হয়েছে।

মামার বাড়িতে থাকা অবস্থায় সে মা ও গ্রামের কথা বারবার স্মরণ করত, কারণ সেখানে সে ছিল বন্দী, নির্যাতিত ও অসহায়। মামীর অবজ্ঞা, স্কুলের অসন্তোষ এবং কলকাতার গণ্ডিবদ্ধ জীবন ফটিকের জীবনে অসহনীয় হয়ে ওঠে। ফটিক শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। তার মনে গ্রামের মুক্ত পরিবেশ, মায়ের স্নেহ, এবং শৈশবের সুখ স্মৃতির কথা বারবার ফিরে আসে।

অবশেষে, অসুস্থ ও মৃত্যুপথযাত্রী ফটিকের মনে হয়, সে জীবনের সব দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি পেয়েছে। ‘বাড়ি’ বলতে এখানে ফটিক তার মায়ের কাছে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা এবং মৃত্যুর মাধ্যমে চিরশান্তির দিকে অগ্রসর হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ফটিকের মৃত্যুকে শোকাবহ করলেও, এর মধ্যে এক ধরনের মুক্তির প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেছেন, যেখানে ফটিক সকল যন্ত্রণা থেকে চিরতরে মুক্তি পায়।


৪. বালকদিগের সর্দার ফটিক চক্রবর্তীর মাথায় চট করিয়া একটা নূতন ভাবোদয় হইল”,
ফটিক চক্রবর্তী কে ছিলেন? তার নূতন ভাবোদয় কী ছিল? ফটিক চক্রবর্তী কী তার নতুন ভাবোদয়ের কাজটি সম্পূর্ণ করতে পেরেছিল?

উত্তর: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘ছুটি’ গল্পের ফটিক চক্রবর্তী হলেন ছুটি গল্পের প্রধান চরিত্র। তেরো বৎসর বয়সী বালক ফটিক চক্রবর্তীর মনের অন্তর্দ্বন্দ্ব গল্পটির প্রধান আলোচ্য বিষয়।

নূতন ভাবোদয়:

ফটিক চক্রবর্তী তার ভাই মাখনলাল এবং সমবয়সী বন্ধুদের সঙ্গে নদীর ধারে খেলছিলো। সেখানে একটি শালকাঠ নৌকার মাস্তুলের ব্যবহারের জন্য পড়েছিল। ছেলের দলের মধ্যে ফটিক ছিল প্রধান সর্দার। তার মাথায় নূতন ভাবোদয় হলো সেই শালকাঠটি সকলে মিলে গড়িয়ে নিয়ে যাবে।

ফটিক চক্রবর্তী তার নতুন ভাবোদয়ের কাজটি সম্পূর্ন করতে পারেনি কারন তার ভাই মাখন লাল খেলার প্রতি উদাসীন থেকে সেই শালকাঠের গুঁড়ির উপর বসে পড়ল। গুঁড়ি ঠেললে গুঁড়ি থেকে তার থেকে তার পড়ে যাওয়ার ভয়ে সকলে অল্প ঠেলল। ফাটক তাকে বলল, ‘দেখ, মার খাবি! এইবেলা ওঠ।’ মাখন তার কথায় গুরুত্ব না দিয়ে আরো স্থায়ীভাবে বসে রইল। এইসময়। ফটিকের মাথায় নতুন একটা খেলার উদয় হলো। ঠিক হল মাখনকে সুদ্ধ ঐ কাঠ গড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।. ছেলেরা কোমর বেঁধে ঠেলতে লাগল এবং এক পাঁক ছেলেরা ঘুরতে না ঘুরতে মাখন কাঠের উপর থেকে মাটিতে পড়ে গেল। মাখন তখন উঠে গিয়ে ফটিককে অন্ধভাবে মারতে লাগল। ফটিকের নাকে মুখে আঁচড়ে দিয়ে সে বাড়ীতে চলে গেলা।


একাদশ শ্রেণী দ্বিতীয় সেমিস্টার বাংলা বিষয়ের ছুটি গল্পের প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্নমান: ৫

৫. “অ্যাঁ, তুই আমার গায়ে হাত তুলিস!”
বক্তা কে? কাকে উদ্ধৃত উক্তিটি করেছিল? বক্তা কখন কথাটি বলেছিল? বক্তার চরিত্রের কোন দিকটি এখানে প্রকাশিত হয়েছে?

উত্তর:

ক) বক্তা কে? বক্তা কাকে উদ্ধৃত উক্তিটি করেছিল?

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘ছুটি’ গল্পে উদ্ধৃত লাইনটির বক্তা হলেন গল্পের প্রধান চরিত্র ফটিক চক্রবর্তীর মা।
ফটিকের মা উদ্ধৃত উক্তিটি করেছিলেন তার ছেলে ফটিক চক্রবর্তীকে।

খ) বক্তা কখন কথাটি বলেছিল?

নদীতীরে বালকদের খেলার শেষে ফটিকের ভাই মাখনলাল ফটিককে মেরে তার নাকে মুখে আঁচড় কেঁটে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির দিকে চলে গেল এবং তার মায়ের কাছে গিয়ে ফটিক তাকে মেরেছে বলে নালিশ জানাল। ফটিক বাড়ি ফেরা মাত্র তার মা ফটিকের উপর অগ্নিমূর্তি ধারন করে বলল,’ আবার তুই মাখনকে মেরেছিস!’ ফটিক বলল সে মাখনকে মারেনি, মাখনকে জিজ্ঞাসা করতে বলল। মাখনকে জিজ্ঞাসা করা হলে মাখন তার আগের নালিশের সমর্থন করে বলল যে ফটিকই তাকে মেরেছে। ফটিক মাখনের এই মিথ্যা কথা সহ্য করতে না পেরে মাখনকে সশব্দে এক চড় মারল। ফটিকের মা মাখনের পক্ষ নিয়ে ফটিকের পিঠে দুই তিনবার প্রবলভাবে চড় মারল। তখন ফটিক তার মাকে ঠেলে দিল এবং তার মা তখন চিৎকার করে উপরিউক্ত উক্তিটি করেছিল।

গ) বক্তার চরিত্রের কোন দিকটি এখানে প্রকাশিত হয়েছে?

উদ্ধৃত লাইনটির বক্তা ফটিকের মা, তার চরিত্রের মধ্যে এক বিবেকহীন সত্তা কাজ করছে। তার দুই সন্তান ফটিক ও মাখনের প্রতি তার সমান স্নেহ ও ভালোবাসা অর্পিত হয়নি। ফটিক যেহেতু দূরন্ত স্বভাবের এবং মাখন শান্ত স্বভাবের তাই মাখনের প্রতি অতিরিক্ত স্নেহ এবং ফটিকের প্রতি এক বিচারহীন অনাদর আমরা ফটিকের মায়ের চরিত্রে দেখতে পাই | মাখন শান্ত স্বভাবের বলে মাখনের মিথ্যা কথাকে তিনি না বিচার করেই মেনে নিলেন এবং ফটিকের সত্য কথাকে মিথ্যা বলে মনে করে তিনি ফটিককে চড় পর্যন্ত মারলেন। সন্তানের প্রতি বিচারহীন ও পক্ষপাতদুষ্ট স্নেহ গল্পের এই অংশে আমরা ফটিকের মায়ের চরিত্রে দেখতে পাই।


৬. “ফটিক, তোর মাকে আনতে পাঠিয়েছি।”
বক্তা কে? বক্তা কেন তার মাকে আনতে পাঠিয়েছে? উদ্ধৃত উক্তির আলোকে বক্তার চরিত্র বিশ্লেষণ করো।

উত্তর:

ক) বক্তা কে?

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত’ছুটি’ গল্পে রচিত’ছুটি’ গল্পে উদ্ধৃত লাইনটির বক্তা হলেন ফটিকের মামা বিশ্বম্ভরবাবু।

খ) বক্তা কেন তার মাকে আনতে পাঠিয়েছে?

মামার বাড়িতে ফটিক প্রবল জ্বরে আক্রান্ত হয়। মামির স্নেহহীন ভালোবাসার প্রত্যাশী সে ছিল না। মা ছাড়া আর কারও কাছে সে স্নেহের প্রত্যাশী ছিল না। ফটিক তার মামার কাছে জানতে চায় তার ছুটি হয়েছে কিনা। ফটিক নিজের বাড়ি যেতে চায়। তার মনের অন্তঃকোনে একটা আন্তরিক মা মা কান্না কেবলই আলোড়িত হতো। জ্বরে আক্রান্ত ফটিককে তার মামা আশ্বাস দেয় তার মাকে আনতে পঠিয়েছি।

গ) উদ্ধৃত উক্তির আলোকে বক্তার চরিত্র বিশ্লেষণ করো।
অথবা, ছুটি গল্পের বিশ্বম্ভরবাবুর চরিত্র আলোচনা করো।

ফটিকের মামা বিশ্বম্ভরবাবু দয়া, মায়া মমতায় ভরা এক সহজ সরল চরিত্র। পশ্চিমে কাজ করতে যাওয়ার জন্য বহুদিন বোনের সাথে দেখা হয়নি। তাই কলকাতায় ফিরেই তিনি বোনের বাড়ির অচেনা গ্রামের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছেন। বোনের বাড়িতে আনন্দের সঙ্গে দিন কাটিয়েছেন। বোনের ছেলেদের পড়াশোনা সম্বন্ধে খোঁজ নিযেছেন এবং ভাগ্নে ফটিককে নিজের বাড়িতে রেখে মানুষ করার আশ্বাস দিয়েছেন। নিজের তিন ছেলে থাকা সত্বেও ফটিককে তার বাড়িতে রেখে মানুষ করার ইচ্ছা তার অন্তরের স্বার্থহীনতাকেই প্রকাশ করে।
কলকাতায় মামার বাড়িতে ফটিক একমাত্র তার মামার কাছ থেকেই স্নেহ পেত। পুলিশের লোক যখন জ্বরে আক্রান্ত ফটিককে বাড়িতে দিয়ে গেল তখন তার মামাই তাকে কোলে করে নিয়ে গেল। ফটিকের জন্য ডাক্তার তিনিই ডেকে আনেন আবার ফটিকের শীর্ন তপ্ত হাতখানি হাতের উপরে তুলে তার কাছে বসে রুমালে চোখ মোছেন। ফটিকের অবস্থা আরও খারাপ হলে সর্বদা তার রোগশয্যার পাশে রসে তার সেরা করে দয়া, মায়া, স্নেহ মমতায় ভরা এক চরিত্র মায়া বিশ্বম্ভরবাবু।


Class XI Second Semester বাংলা বিষয়ের ছুটি গল্পের ৫ নম্বরের প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্নমান: ৫

৭. “মামা, আমার ছুটি হয়েছে কি?”
বক্তা কে? বক্তা কেন তার মামাকে একথা বলেছিল? উদ্ধৃত উক্তির আলোকে বক্তার চরিত্র বিশ্লেষণ করো।

উত্তর:

ক) বক্তা কে?

উঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘ছুটি’ গল্পে উদ্ধৃত লাইনটির বক্তা হলেন ছুটি গল্পের প্রধান চরিত্র ফটিক চক্রবর্তী।

খ) বক্তা কেন তার মামাকে একথা বলেছিল?

শহর কলকাতায় বদ্ধ পরিবেশে আবদ্ধ জীবনে ফটিক হাঁপিয়ে উঠেছিল। মামির স্নেহহীন ভালোবাসা। স্কুলের মাস্টারের মারধোর, অপমান, নিজের প্রতি হীনতা, দৈন্যতায় সে ক্রমশ অসুস্থতার দিকে চলে গিয়েছিল। প্রবল জ্বরে যখন কাঁদা মাখা শরীরে বিশ্বম্ভরবাবু তাকে ঘরে নিয়ে এলেন তখন ফটিক কেঁদে উঠে বলে সে মার কাছে যাচ্ছিল, তাকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। প্রবল জ্বরে আক্রান্ত ফাটিক তার মামার কাছে জানতে চায় তার ছুটি হয়েছে কিনা কারন তার মামা তাকে পুজোর ছুটিতে বাড়িতে মার কাছে নিয়ে যাবে বলেছিল।

গ) উদ্ধৃত উক্তির আলোকে বক্তার চরিত্র বিশ্লেষণ করো।

‘ছুটি’ গল্পের প্রধান চরিত্র ফটিক চক্রবর্তী সরল, সাদাসিধে এক গ্রাম্য চরিত্র। গ্রামের স্বচ্ছন্দ পরিবেশ, নদীতীর, মাঠঘাট প্রভৃতির প্রতি ফটিকের এক কাঙ্খিত মনোভাব ছিল। সে যখন তার মামার বাড়ি কলকাতায় এল তখন বদ্ধ পরিবেশে নিজেকে আর মানিয়ে নিতে পারছিল না। মামার বাড়িতে সে যেন অপরাধীর মতো দিন কাটাতে লাগল। নিজের প্রতি দৈন্যতা ও হীনতায় তার লজ্জা হতে লাগল। মামার বাড়ির পরিবেশ থেকে সে মুক্তির সন্ধানী হতে চেয়েছিল। প্রবল জ্বরগ্নস্ত শরীরে সে কারও সেবার প্রত্যাশী হতে চায় নি।

আত্মমর্যাদায় কঠিন তেরো বছর বয়সী স্নেহ বঞ্চিত এক বালক হৃদয় নিজের পথ নিজেই করে নিতে চেয়েছিল বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে হয়ে গিয়ে। প্রবল জ্বরে আক্রান্ত ফটিকের চেতনায় উঠে আসে মার প্রতি অভিমান,’ মা আমাকে মারিসনে মা।’ মার অতাচারী, অবিচারিনী মূর্তি ফটিকের চোখে ভেসে উঠলেও অসুস্থ শরীর তার মার স্নেহের প্রত্যাশী ছিল। ফটিক যে মিথ্যা সহ্য করতে পারেনা তার প্রমাণ আমরা গল্পের প্রথমে পাই | ভাই মাখন তার নামে মিথ্যা অপবাদ দিলে ফটিক তা সহ্য করতে পারে না। আত্মমর্যাদায় বলিয়ান, সাহসী এক চরিত্র এই ফটিক চরিত্র।


৮. “বিধবা এ প্রস্তাবে সহজেই সম্মত হইলেন”
বিধবা কে? প্রস্তাবটি কে দিয়েছিল? প্রস্তাবটি কী ছিল? বিধবা কেন প্রস্তাবে সহজেই সম্মত হলেন?
ক) বিধবা কে?

উঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত’ছুটি’ গল্পে বিধবা হলেন ফটিকের মা।

খ) প্রস্তাবটি কে দিয়েছিল? প্রস্তাবটি কী ছিল?

ফটিকের মামা বিশ্বম্ভরবাবু পশ্চিমে কাজ করতে গিয়েছিলেন। বহুদিন পরে দেশে ফিরে তিনি তার বোনকে দেখতে এসেছেন।তিনি প্রস্তাবটি দিয়েছিলেন। বোনের বাড়িতে কয়েকদিন সমারোহের সাথে কাটানোর পরে, বিদায় নেওয়ার দুই একদিন আগে বিশ্বম্ভরবাবু তার বোনকে ছেলেদের পড়াশোনা ও মানসিক উন্নতি সম্বন্ধে প্রশ্ন করলেন। তিনি জানতে পারলেন ফটিকের অবাধ্যতা ও উচ্ছৃঙ্খলতা এবং পড়াশোনার প্রতি অমনোযোগিতা এবং তার ভাই মাখনের শান্ত স্বভাব এবং পড়াশোনার প্রতি অনুরাগের কথা। ফটিকের মা আরও ব মা আরও বললেন ফটিক তার হাড় জ্বালাতন করে দিচ্ছে। ফটিকের এইরূপ আচরনের জন্য বিশ্বম্ভরবাবু প্রস্তাব করলেন, তিনি ফটিককে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে নিজের কাছে রেখে শিক্ষা দেবেন। প্রস্তাবটি শুনে ফটিকের মা সহজেই সম্মত হলেন।

গ) বিধবা কেন প্রস্তাবে সহজেই সম্মত হলেন?

ফটিকের মা বিশ্বম্ভরবাবুর প্রস্তাবে সহজেই সম্মত হলেন। কারন তার মনে হয়েছিল দূরন্ত স্বভাবের ফটিক কোনদিন তার ভাই মাখনকে জলে ফেলে দেবে বা মাথা ফাটিয়ে দেবে বা কোনও দূর্ঘটনা ঘটিয়ে দেবে। এই কারনে তিনি ফটিককে তার ভাই মাখনের থেকে দূরে সরিয়ে দিতে চাইলেন। ফটিককে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাবে ফটিকের মা তাই সহজেই সম্মত হলেন।


Read also: My Last Duchess Questions Answers Class 11 English Second Semester

ছুটি গল্পের প্রশ্ন উত্তর Class 11 // বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার // WBCHSE Second Semester

Leave a Comment

CLOSE

You cannot copy content of this page