আমরা এই পোস্টে অষ্টম শ্রেণী সবুজ জামা কবিতার প্রশ্ন উত্তর / Class 8 Sobuj Jama Kobitar Proshno Uttor শেয়ার করা হলো।
উৎস:
কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত উলুখড়ের কবিতা কাব্যগ্রন্থ থেকে ‘সবুজ জামা’ কবিতাটি নেওয়া হয়েছে।
সবুজ জামা কবিতার বিষয়বস্তু:
কবিতাটি একটি শিশুর সরল চিন্তাধারা ও প্রকৃতির প্রতি তার গভীর আকর্ষণকে কেন্দ্র করে রচিত। কবিতার কেন্দ্রীয় চরিত্র তোতাইবাবু গাছের সবুজ পোশাক দেখে মুগ্ধ হয় এবং সেও তেমন একটি সবুজ জামা পরতে চায়। তবে শুধুমাত্র ইচ্ছা করলেই তো হবে না, তার এখন বিদ্যালয়ে গিয়ে অ-আ-ক-খ শেখার সময়। কিন্তু তোতাই প্রথাগত শি ইজক্ষায় আগ্রহী নয়, সে বিদ্যালয়ে যেতে চায় না।
বড়োদের দৃষ্টিতে গাছ কেবল এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক স্থির জীব, যেমনটা তোতাইয়ের দাদু মনে করেন। কিন্তু তোতাইয়ের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। তার কাছে গাছের স্থিরতা এক ধরনের খেলা, এক অবিরাম প্রাণোচ্ছলতার প্রতীক। সে গাছের মতোই অফুরন্ত প্রাণশক্তি নিয়ে বাঁচতে চায়, প্রকৃতির অংশ হয়ে উঠতে চায়।
কবিতায় দাদুর আরেকটি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে—তিনি চশমা ছাড়া প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন না। এই সীমাবদ্ধতা দেখে তোতাইও দুঃখ পায়।
শেষ পর্যন্ত তোতাইয়ের একান্ত চাওয়া, সে যদি গাছের মতো সবুজ জামা পরে, তাহলে তার গায়ে এসে বসবে প্রজাপতি, তার চারপাশে ফুটে উঠবে লাল-নীল ফুল। সে সত্যিকারের প্রাণময় হয়ে উঠবে, প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে যাবে। কবিতায় শিশুমনের কল্পনা, স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ও প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার এক অনন্য রূপ প্রকাশ পেয়েছে।
অষ্টম শ্রেণী সবুজ জামা কবিতার হাতেকলমে প্রশ্ন উত্তর
Class 8 Sobuj Jama Kobitar Proshno Uttor
১.১ বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কত খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।
১.২ তাঁর রচিত দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর: বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত দুটি কাব্যগ্রন্থ হল ‘গ্রহচ্যুত’ ও ‘মানুষের মুখ’।
২. এক বাক্যে উত্তর দাও:
২.১ তোতাইবাবুর সবুজ জামা চাই কেন?
উত্তর: তোতাইবাবুর ধারণা, গাছেরা সবুজ জামা পরে বলেই তারা প্রাণবান, তাই সেও প্রাণবান হওয়ার ইচ্ছায় গাছেদের মতো একটি সবুজ জামা চাই।
২.২ সবুজ গাছেরা কোন পতঙ্গ পছন্দ করে?
উত্তর: সবুজ গাছেরা প্রজাপতিকে পছন্দ করে।
২.৩ সবুজ জামা আসলে কী?
উত্তর: গাছেদের শরীরে আবৃত রাশি রাশি সবুজ পাতাই প্রকৃতপক্ষে ‘সবুজ জামা’।
২.৪ ‘এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তো খেলা’-এর কোন খেলার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: মানবশিশুর এক পায়ে লাফিয়ে খেলার (যেমন একান খেলা) কথা বলা হয়েছে, যা তোতাইয়ের মনে হয় গাছের দাঁড়িয়ে থাকার মতো।
২.৫ তোতাই সবুজ জামা পরলে কী কী ঘটনা ঘটবে?
উত্তর: তোতাই সবুজ জামা পরলে তার গায়ে এসে বসবে রঙিন প্রজাপতি এবং তার কোলে এসে ফুটবে লাল-নীল ফুল।
৩. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো
৩.১ “দাদু যেন কেমন, চশমা ছাড়া চোখে না।”—এই পঙ্ক্তির মধ্যে ‘যেন’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। এইরকম আর কী কী শব্দ দিয়ে একই কাজ করা যায়?
উত্তর: উদ্ধৃত পঙ্ক্তিতে ‘যেন’ শব্দের মাধ্যমে তোতাইয়ের কণ্ঠে সংশয় প্রকাশিত হয়েছে। দাদুর বয়স হয়েছে, ফলে স্বাভাবিকভাবে তাঁর দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়েছে, তাই তিনি চশমা ব্যবহার করেন। কিন্তু শিশু তোতাই এ বিষয়টি বুঝতে পারে না। তাই তার কাছে এটি বিস্ময়ের বিষয় যে, দাদু চশমা ছাড়া দেখতে পান না। এই সংশয় প্রকাশের জন্যই ‘যেন’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
উদ্ধৃতাংশের ‘যেন’ শব্দের পরিবর্তে নিচের সংশয়সূচক শব্দ ব্যবহার করেও একই অর্থ প্রকাশ করা যায়—
‘হয়তো’, ‘নিশ্চয় নয়’, ‘সম্ভবত’, ‘মনে হয়’, ‘না-জানি’, ‘বোধহয়’, ‘কেমন যেন’, ‘অদ্ভুত’, ‘আশ্চর্য’।
৩.২ “সবুজ জামা” কবিতায় তোতাইয়ের সবুজ জামা চাওয়ার মাধ্যমে কবি কী বলতে চাইছেন, তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর: ‘সবুজ জামা’ কবিতায় তোতাইয়ের সবুজ জামা চাওয়ার মধ্যে প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা ও গাছপালার গুরুত্ব প্রতিফলিত হয়েছে। সবুজ রঙ হলো প্রাণের প্রতীক, সতেজতার প্রতীক। শিশু তোতাইও প্রাণবান, উদ্দীপ্ত। তাই সে গাছেদের মতো সবুজ জামা পরতে চায়।
আসলে কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এই কবিতার মাধ্যমে আমাদের বোঝাতে চেয়েছেন যে, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় গাছ অপরিহার্য। আধুনিক সভ্যতার অগ্রগতির ফলে মানুষ নির্বিচারে বনাঞ্চল ধ্বংস করছে, যার ফলে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। অক্সিজেনের ঘাটতি, দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি এবং জলবায়ুর পরিবর্তন জনজীবনের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে। অথচ আমরা বড়রা এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছি।
এই পরিস্থিতিতে শিশু তোতাইয়ের সবুজ জামার আকাঙ্ক্ষা প্রকৃতপক্ষে গাছপালার প্রয়োজনীয়তার প্রতীকী রূপ। কবি এর মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছেন যে, আমাদের পৃথিবীকে টিকিয়ে রাখতে হলে গাছকে রক্ষা করতে হবে, প্রকৃতিকে শ্যামলিমায় আচ্ছাদিত করতে হবে। গাছ থাকলেই পরিবেশ প্রাণবন্ত থাকবে, প্রকৃতি সুস্থ থাকবে এবং সভ্যতা বিকশিত হবে।
৪. নির্দেশ অনুসারে উত্তর দাও:
৪.১ ‘ইস্কুল’ শব্দটির ধ্বনিতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা লেখো এবং একইরকম আরও দুটি শব্দ লেখো।
উত্তর:
স্কুল → ইস্কুল
এক্ষেত্রে ‘স্কুল’ শব্দের আদিতে ‘ই’ স্বরধ্বনির আগমন ঘটেছে। অর্থাৎ এটি ‘আদি স্বরাগম’-এর একটি উদাহরণ।
একই ধরনের আরও দুটি শব্দ হলো—
১. স্টেশন → ইস্টেশন
২. স্নান → ইস্নান
৪.২ ‘চোখ’ শব্দটিকে ভিন্ন অর্থে ব্যবহার করে অন্তত তিনটি বাক্য লেখো।
উত্তর:
চক্ষু অর্থে – বর্তমানে বহু মানুষ চোখের সমস্যায় ভুগছেন।
নজর রাখা অর্থে (চোখে চোখে রাখা) – বাবলুর ভাই এত দুরন্ত যে, সবসময় ওকে চোখে চোখে রাখতে হয়।
ক্রোধ প্রকাশে (চোখ পাকানো) – মাস্টারমশাই ছাত্রটির দিকে এমন চোখ পাকিয়ে তাকালেন যে, ছাত্রটি ভয়ে কেঁদে ফেলল।
অষ্টম শ্রেণী সবুজ জামা কবিতার অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্তর
Class 8 Sobuj Jama Kobitar Proshno Uttor
১. ‘গ্রহচ্যুত’ কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা কে?
উত্তর: ‘গ্রহচ্যুত’ কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা হলেন কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
২. ‘সবুজ জামা’ কবিতাটির উৎস লেখো।
উত্তর: কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘উলুখড়ের কবিতা’ কাব্যগ্রন্থটি ‘সবুজ জামা’ কবিতাটির উৎস।
৩. গাছেরা কেমনভাবে দাঁড়িয়ে থাকে?
উত্তর: গাছেরা একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
৪. ‘তুই এখন অ-আ-ক-খ শিখবি।’—এখানে ‘তুই’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: এখানে ‘তুই’ বলতে শিশু তোতাইকে বোঝানো হয়েছে।
৫. তোতাইবাবু কেন স্কুলে যেতে চায় না?
উত্তর: গণ্ডিবদ্ধ শিক্ষা অর্জন করতে চায় না বলেই তোতাইবাবু স্কুলে যেতে চায় না।
৬. দাদু চশমা ছাড়া দেখতে পান না কেন?
উত্তর: বয়সজনিত কারণে দাদুর দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেয়েছে, তাই তিনি চশমা ছাড়া দেখতে পান না।
অষ্টম শ্রেণী সবুজ জামা কবিতার অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্তর
Class 8 Sobuj Jama Kobitar Proshno Uttor
১. ‘তুই এখন অ-আ-ক-খ শিখবি।’—কে, কখন এমন কথা বলেছেন?
উত্তর: তোতাইবাবু অ-আ-ক-খ শিখতে চায় না, স্কুলে যেতে চায় না। সে গাছেদের মতো সবুজ জামা পরতে চাইলে দাদু এমন কথা বলেছেন।
২. ‘তাদের জামা তুই গায়ে দিতে চাস কেন?’—উক্তিটি কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে? কাদের জামা কে গায়ে দিতে চায়?
উত্তর: উদ্ধৃত অংশটি কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘সবুজ জামা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
গাছেদের জামা তোতাইবাবু গায়ে দিতে চায়।
৩. ‘তবেই না তার ডালে প্রজাপতি বসবে’—কী হলে প্রজাপতি বসবে?
উত্তর: প্রজাপতিরা সবুজ পাতায় আবৃত গাছের ডালে বসতে পছন্দ করে। তোতাইবাবু গাছেদের মতো সবুজ জামা পরিধান করলে, প্রজাপতিরা ভাববে সেও বুঝি সবুজ-সতেজ উদ্ভিদ—তাহলেই সেখানে প্রজাপতি বসবে।
৪. ‘তার নিজের…’—কার, কী নিজের?
উত্তর: ‘তার’ বলতে এখানে তোতাইবাবুর কথা বলা হয়েছে।
তোতাইবাবু সবুজ জামা পরে গাছের মতো সবুজ হয়ে উঠলে তার কোলের ওপর টুপটুপ করে লাল-নীল ফুলেরা নেমে আসবে—এই ফুলগুলিই হবে তোতাইবাবুর ‘নিজের’ জিনিস।
ক্লাস 8 সবুজ জামা কবিতার অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্তর
ক্লাস VIII সবুজ জামা থেকে প্রশ্ন উত্তর
১. ‘দাদু যেন কেমন, চশমা ছাড়া চোখে দেখেন না’—উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য আলোচনা।
উত্তর: প্রশ্নোদ্ভূত উদ্ধৃতাংশটি কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘সবুজ জামা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
তোতাইবাবু শিশু, সে পড়াশোনার গুরুত্ব বোঝে না। তাই বড়োরা অ-আ-ক-খ পড়তে বললেও তার ভালো লাগে না। সে চায় গাছের মতো সবুজ ও প্রাণবান হতে। কিন্তু দাদুর মতো বড়োরা গাছের দাঁড়িয়ে থাকার মধ্যে প্রাণবন্ততা দেখতে পান না।
বয়সজনিত কারণে দাদুর দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে এসেছে, তাই চশমা ছাড়া তিনি ভালো দেখতে পান না।
বড়োরা শিশুদের মতো গাছের দাঁড়িয়ে থাকার মধ্যে খেলাধুলার আনন্দ অনুভব করতে পারেন না।
গাছেদের প্রাণপ্রাচুর্য তোতাইবাবু বুঝতে পারে, কিন্তু দাদুর মতো মানুষেরা তা দেখতে পান না।
চশমাহীন চোখে দাদু শুধু গাছের স্থির দাঁড়িয়ে থাকা দেখেন, কিন্তু তোতাইবাবু তার চঞ্চলতা, খেলার ছন্দ অনুভব করে। তাই এখানে শিশুর কল্পনাশক্তি ও বড়োদের বাস্তবদৃষ্টি—এই দুই প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য ধরা পড়েছে।
২. ‘আমাদের তোতাইবাবুরও একটি সবুজ জামা চাই।’—এই উক্তির আলোকে কবির ভাবনার পরিচয় দাও।
উত্তর: প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটি কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘সবুজ জামা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোচ্য কবিতায় শিশু তোতাইবাবুর চাওয়ার মধ্য দিয়ে কবির গভীর ভাবনার প্রকাশ ঘটেছে।
তোতাই শিশু, তাই সে দুরন্ত, সে সজীব প্রাণের অধিকারী।
গাছেরা সবুজ পাতায় মোড়া থাকে, যা সবুজ জামার মতো। এই সবুজই প্রাণবন্ততার প্রতীক।
বর্তমান নগরসভ্যতার অরণ্যচ্ছেদনের ফলে গাছের সংখ্যা ক্রমশ কমে যাচ্ছে।
প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, দূষণ বাড়ছে।
পরিবেশদূষণের হাত থেকে সভ্যতাকে রক্ষা করতে হলে গাছকে লালন করতে হবে।
তোতাই প্রথাগত শিক্ষার গণ্ডিবদ্ধ কাঠামোয় যেতে চায় না। সে সবুজ গাছ হয়ে প্রকৃতিকে বাঁচাতে চায়।
গাছ থাকলে প্রজাপতিরা এসে বসবে, ফুলেরা ফুটবে, পরিবেশ হবে আনন্দময়।
প্রকৃতিকে সবুজে পূর্ণ করলেই প্রকৃতির সব জীব স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করবে।
কবির মতে, সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখতে হলে সবুজ গাছ রক্ষা করা ও প্রকৃতির সজীবতা ফিরিয়ে আনাই একমাত্র পথ। এই আকাঙ্ক্ষাই কবি তোতাইবাবুর জবানিতে তুলে ধরেছেন।
আরও দেখো: ক্লাস ৮ বাংলা প্রশ্নপত্র প্রথম ইউনিট টেস্ট 2025
১. বোঝাপড়া কবিতার প্রশ্ন উত্তর