বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রবন্ধ রচনা ১০০ শব্দে, ১৫০ শব্দে, ২০০ শব্দে, ৩০০ শব্দে, ৪০০ শব্দে

Spread the love

এখানে বিশ্ব উষ্ণায়ন ( গ্লোবাল ওয়ার্মিং) সম্পর্কে প্রবন্ধ রচনা লিখে দেওয়া হলো।

বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রবন্ধ রচনা: ১
ভূমিকা:

“উন্মুক্ত বন্দর সব নীল সমুদ্রের
পায়ে-পায়ে মানুষ ও মেশিনের যৌথ শক্তিবলে
নীলিমাকে আটকেছে ইঁদুরের কলে।”
-জীবনানন্দ দাশ

একুশ শতকে বিজ্ঞানের আলোকিত অগ্রগতি যেমন মানবসভ্যতাকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনই অনিয়ন্ত্রিত প্রয়োগ, ভারসাম্যহীন উন্নয়ন নিয়ে এসেছে আশঙ্কার কালো মেঘ। বিশ্ব উষ্ণায়ন, যার ইংরেজি প্রতিশব্দ Global Warming এরকমই একটি আতঙ্কের নাম।

বিশ্ব উষ্ণায়ন কী?

আপাতভাবে বিশ্ব উষ্ণায়ন কথাটির অর্থ পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি। ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে নোবেলজয়ী সুইডিশ বিজ্ঞানী আরথেনিয়াস বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তাঁর আশঙ্কাকে সত্যি প্রমাণিত করে ১৮৫০ থেকে ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন ২০৩০ খিস্টাব্দের মধ্যে উষ্ণতা বৃদ্ধির এই হার হবে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ফল হবে মানবসভ্যতার সর্বনাশ।

বিশ্ব উষ্ণায়ন ও গ্রিনহাউস গ্যাস:

বাতাসে গ্রিনহাউস গ্যাসসমূহ যেমন- কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, নাইট্রোজেন অক্সাইড, কোরোফ্লুরোকার্বন, জলীয় বাষ্প ইত্যাদির বৃদ্ধি তাপীয় ভারসাম্যকে বিনষ্ট করে দিচ্ছে।
শিল্পবিপ্লবের আগে ১৭৫০ খ্রিস্টাব্দে বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ ছিল ২৮০ পিপিএম, ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮২ পিপিএম। একইভাবে বছরে গড়ে ৪৪০-৬০০ মিলিয়ন টন মিথেন বায়ুমণ্ডলে এসে মিশছে। গ্রিনহাউস এফেক্টে এই মিথেনের অবদান প্রায় ১৩ শতাংশ।

মানুষের দায়িত্ব:

পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি তথা গ্রিনহাউস এফেক্ট তৈরিতে মানুষেরই ভূমিকা প্রধানতম। নির্বিচারে অরণ্য ধ্বংস করা, কাঠ এবং জীবাশ্মকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা, সিমেন্ট শিল্পের প্রসার ইত্যাদি বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের বৃদ্ধি ঘটায়। এ ছাড়া সার শিল্প, অ্যালুমিনিয়াম শিল্প, এয়ারকন্ডিশনার ও রেফ্রিজারেটর শিল্প ইত্যাদি বাতাসে নানারকম গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলছে।’

বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব:

গ্রিনহাউস এফেক্ট এবং বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে বিশ্বজুড়ে আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দ গত দুশো বছরে উষ্ণতম বছর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, এই অবস্থা বজায় থেকেছে পরবর্তী সময়েও। খরা, বন্যা, তুষারঝড় ইত্যাদি নানান বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে এক মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫৬২ টি টর্নেডো হয়েছে। মেরু অঞ্চলের বরফ গলছে। গত ৩০ বছরে সুমেরুর বরফ গলেছে ৩৮,০০০ বর্গকিমি। এর ফলে সমুদ্রের জলের উচ্চতা বেড়ে চলেছে বর্তমানে প্রতিবছর ৩.১ মিলিমিটার হারে। ফলে এক বিস্তীর্ণ উপকূলবর্তী ভূখণ্ড চিরকালের মতো হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় প্রহর গুনছে। ডেঙ্গু, এনকেফেলাইটিস, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি অসুখের প্রাদুর্ভাব ঘটছে- এমনটাই জানিয়েছেন হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথের চিকিৎসকরা। জীবকুলের অস্তিত্বও বিপন্ন হচ্ছে। বরফ গলে যাওয়ায় পেঙ্গুইন, মেরুভল্লুক ইত্যাদি প্রাণীরা দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী থেকে।

প্রতিরোধের প্রয়াস:

গ্রিনহাউস গ্যাস বেরোনো বন্ধ করতে ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে ব্রাজিলের রিও-ডি-জেনেরোতে বসেছিল বসুন্ধরা শীর্ষসম্মেলন। পরবর্তীকালে ২০০২-এ জোহেনসবার্গে, ২০০৫-এ জাপানের কিয়োটো শহরে এবং ২০০৭-এ ইন্দোনেশিয়ার বালিতে একই উদ্দেশ্যে সম্মেলন হয়। কিন্তু এই বিপর্যয়ের জন্য যে উন্নত দেশগুলি প্রধানত দায়ী তাদের অসহযোগিতায় কোনো সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। তাই আশঙ্কার কালো মেঘে ঢাকা পড়ে আছে একুশ শতকের বিজ্ঞানপ্রদীপ্ত মানবসভ্যতা।

বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রবন্ধ রচনা: ২
ভূমিকা:

পৃথিবীর সামনে আজ ঘোর বিপদ। বিশ্ব পরিবেশ আজ গভীর সংকটের মুখে আর এর কারণ পৃথিবীর উষ্ণতা ক্রমশ বাড়ছে।

উষ্ণায়নের পরিমাণ:

বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা উদ্বিগ্ন। তাঁরা দেখছেন, গত শতাব্দীতে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছিল ০.৭৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই শতাব্দীতে আরও ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়লেই পৃথিবীর ২০ থেকে ৩০ শতাংশ প্রজাতির জীবন বিপন্ন হবে। মেরু অঞ্চলে বরফ গলবে এবং পাহাড়ে পাহাড়ে যে হিমবাহ গলতে শুরু করেছে, তা গলতেই থাকবে।

বিষাক্ত গ্যাস ও তার পরিণাম:

পৃথিবীর এই উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণ কিন্তু আমরাই। আমাদের আধুনিক বিজ্ঞানের যথেচ্ছ বিধ্বংসী আবিষ্কার আমাদের পৃথিবীর ‘গ্রিনহাউস’ গ্যাসকে বাড়িয়ে তুলে পৃথিবীর শ্বাসরোধ করে তুলেছে। এই গ্রিনহাউস গ্যাসে রয়েছে কার্বন ডাইঅক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, মিথেন, বিভিন্ন ক্লোরোফ্লুরোকার্বন ইত্যাদি। এরা পৃথিবীর উপর বিকীর্ণ তাপরশ্মিকে শোষণ করে নেয়, তাদের বেরোতে দেয় না, ফলে ভয়ংকর এক রুদ্ধশ্বাস অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং:

ক্রমবর্ধমান নগরায়ণ, শিল্পায়ন, অরণ্যনিধন সহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাবে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের আকস্মিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ঘটছে, যা পরিবেশে সংকট সৃষ্টি করছে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের এই উষ্ণতা বৃদ্ধিই গ্লোবাল ওয়ার্মিং নামে পরিচিত।

বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধির চরম ক্ষতিকর প্রভাব:

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আকস্মিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে মেরু প্রদেশের বেশ কিছু অংশের বরফ গলে গিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সমুদ্রে জলস্ফীতি ঘটবে। বিজ্ঞানীদের মতে, এক মিটার সামুদ্রিক জলস্ফীতিতে ভারতের উপকূল অঞ্চলের প্রায় ১,৭০০ বর্গকিলোমিটার কৃষিক্ষেত্র জলমগ্ন হবে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের আকস্মিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে মধ্য আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া এবং আমেরিকা মহাদেশের বেশ কিছু অঞ্চলে অনাবৃষ্টির জন্য দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনা আছে।

গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের ফলে ২০৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রায় ১,১০০ প্রজাতির প্রাণীর চিরতরে বিলুপ্তি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে এবং বর্তমান শতাব্দী শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই বিশ্বের ৭০% পানীয় জলের উৎস প্রায় কোনো তুষার হিমবাহই আর অবশিষ্ট থাকবে না। শুধু তাই নয়, গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের ফলে মেরু প্রদেশের বরফ গলার ফলে বাংলাদেশ, নেদারল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া এবং গোটা সুন্দরবন সহ ভারতের বেশ কিছু সমুদ্রোপকূলবর্তী অঞ্চল এবং সম্পূর্ণ মালদ্বীপ সমুদ্রের জলের তলায় চলে যাবে, যার ফলে উদ্বাস্তু হবে পৃথিবীর প্রায় ১০০ কোটি মানুষ।

প্রতিকারের উপায়:

নানারকম ভাবনাচিন্তা করে এই বিজ্ঞানীরা পৃথিবীকে এই সংকট থেকে বাঁচাতে কয়েকটি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দেশে দেশে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের ‘বসুন্ধরা’ সম্মেলনে তা গৃহীতও হয়েছে। গাছপালা লাগিয়ে গ্রিনহাউস গ্যাস নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে, ওজোন স্তরের ছিদ্র মেরামত করতে হবে, কলকারখানা থেকে বিষাক্ত ধোঁয়া ছাড়া যাবে না। কার্বন ডাইঅক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড ইত্যাদি বাতাস যাতে দূষিত করতে না-পারে, তা দেখতে হবে। এ ছাড়া বিশ্বসংকটের হাত থেকে আমাদের রেহাই নেই।

উপংসহার:

বিশ্বায়নের পর বাজারভিত্তিক অর্থনীতিতে তেল ও অস্ত্রের যে গুরুত্ব প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পেয়েছে, সেক্ষেত্রে পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি নতুন মোড় নিয়েছে। উন্নয়নের নামে সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে পরিবেশ। এই বিপন্নতার হাত থেকে মুক্তি পেতে আমাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে, নইলে পৃথিবীর বিপন্নতার জন্য আমরাই দায়ী থাকব।

বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রবন্ধ রচনা: ৩
ভূমিকা:

শুধু পরিবেশের দিক থেকে নয়, পৃথিবীর সার্বিক অগ্রগতিতে বিশ্ব উষ্ণায়ন এক জ্বলন্ত সমস্যা। মনে রাখতে হবে যে পৃথিবী মানুষের বসতির একমাত্র স্থান, তা আজ বিপন্ন। পৃথিবীর বিপন্নতাজনিত পরিবেশের যে সংকট বর্তমানে সবচেয়ে তীব্র হয়ে উঠেছে, সেই সংকটের নাম গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি। এর জন্য দায়ী মানুষের অতিরিক্ত ভোগাকাঙ্ক্ষা এবং গ্রিন হাউস এফেক্ট। রাষ্ট্রসংঘ এই বিপদকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে এই সমস্যার সমাধানে তৎপর হয়েছে। সেজন্য ২০০৭-এর মে মাসের প্রথম সপ্তাহে থাইল্যান্ডের ব্যাঙ্কক শহরে ১২০টি দেশের চারশত প্রতিনিধি মিলিত হয়ে ইতিকর্তব্য নির্ধারণ করেছেন।

বিশ্ব উষ্ণায়ন কী?

আপাতভাবে বিশ্ব উষ্ণায়ন কথাটির অর্থ পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি। ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে নোবেলজয়ী সুইডিশ বিজ্ঞানী আরথেনিয়াস বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তাঁর আশঙ্কাকে সত্যি প্রমাণিত করে ১৮৫০ থেকে ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন ২০৩০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে উষ্ণতা বৃদ্ধির এই হার হবে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ফল হবে মানবসভ্যতার সর্বনাশ।

বিশ্ব উষ্ণায়ন ও গ্রিনহাউস গ্যাস:

বাতাসে গ্রিনহাউস গ্যাসসমূহ যেমন- কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, নাইট্রোজেন অক্সাইড, কোরোফ্লুরোকার্বন, জলীয় বাষ্প ইত্যাদির বৃদ্ধি তাপীয় ভারসাম্যকে বিনষ্ট করে দিচ্ছে। শিল্পবিপ্লবের আগে ১৭৫০ খ্রিস্টাব্দে বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ ছিল ২৮০ পিপিএম, ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮২ পিপিএম। একইভাবে বছরে গড়ে ৪৪০-৬০০ মিলিয়ন টন মিথেন বায়ুমণ্ডলে এসে মিশছে। গ্রিনহাউস এফেক্টে এই মিথেনের অবদান প্রায় ১৩ শতাংশ।

আশঙ্কা:

সারা পৃথিবী জুড়ে উষ্ণতার ক্রমবর্ধমান অবস্থাকে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং’ (Global Warming)। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে ক্রমশ বেড়ে চলেছে। ১৮৫০ থেকে ১৯০০ সালের মধ্যে বায়ুমণ্ডলে গড়ে তাপ বেড়েছে ০.৫° সে.। আবার ১৯০০ থেকে ২০০০ সনের মধ্যে ১ ডিগ্রী। ১৯২২ সালে UNEP গঠিত Inter-Governmental Panel or Climate Change (IPCC) হুঁশিয়ারী দিয়েছেন যে, যে মাত্রায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড সহ অন্যান্য গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসৃত হচ্ছে তা যদি কমানো না হয় তাহলে ২০৪০ সালে আবহাওয়ার তাপমাত্রা বর্তমান তাপমাত্রার চাইতে ১ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড বাড়বে।

মেরু অঞ্চলে এই বৃদ্ধি সর্বাধিক হবে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বরফ গলে যাবে, সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাস দেখা দেবে, মাটি শুকিয়ে যাবে, ব্যাপক দাবানলে বনাঞ্চল ধ্বংস হবে এবং পরিবেশ বিপর্যস্ত হবে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণের বিরাট হেরফের ঘটবে। ক্ষতিকারক পতঙ্গের প্রজনন ক্ষমতা হঠাৎ বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে শস্য উৎপাদন কমে যাবে। গৃহপালিত জীবজন্তুর অসুস্থতা বাড়বে। কিছু শস্য ধ্বংসকারী ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া উষ্ণ ও আর্দ্র অবস্থায় ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে এবং তার মারাত্মক প্রভাব পড়বে দেশীয় অর্থনীতির উপর। খরা মারাত্মক আকার নেবে, মরু অঞ্চলের আয়তন বাড়বে। এলনিনোর মতো আবহ বিধ্বংসী ঝঞ্ঝার মাত্রা ও সংখ্যা বেড়ে যাবে। তাপদাহজনিত যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে হৃদযন্ত্র সংক্রান্ত অসুখে মৃত্যুর হার বাড়বে। তাছাড়া হিমবাহ থেকে বরফ গলে নেমে আসবে; অনেক দেশ, শহর জলের নীচে চলে যাবে, সমুদ্রের জীবকুলের মৃত্যু ঘটবে এবং খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পাবে।

উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণ:

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি, মানুষের অপরিমিত ভোগের চাহিদা, প্রাকৃতিক সম্পদের লুণ্ঠন, শিল্পায়ন, নগরায়ন এবং সর্বোপরি বিশ্বায়ন মানব সভ্যতাকে যেমন ধ্বংসের মুখে দাঁড় করিয়েছে, তেমনি পৃথিবীর উষ্মীকরণের সমস্যা তীব্রতর হয়েছে। বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত কার্বন- ডাই-অক্সাইড, জলীয় বাষ্প, মিথেন,ক্লোরোফ্লুরোকার্বন ইত্যাদি ভূ- পৃষ্ঠ থেকে বিকীর্ণ অবলোহিত রশ্মির কিছুটা অংশ ভূ-পৃষ্ঠে বিকিরণ করে। ফলে ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় ও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এই ঘটনাকে গ্রিন হাউস এফেক্ট বলা হয়ে থাকে। ইউরোপে শিল্পবিপ্লবের আগে উত্তর গোলার্ধের বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইড-এর গাঢ়ত্ব ছিল ২৮০ PPM (Parts Per Million) এবং বর্তমানে তার মান ৩৫৬PPM। এই মাত্রা প্রতি বছরই বাড়ছে। এর বাড়ার কারণ হল-
(ক) জীবাশ্ম জ্বালানির দহনের ফলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বৃদ্ধি।
(খ) পচা জৈব আবর্জনা, গবাদি পশুর গোবর, ধান খেত থেকে নিঃসৃত গ্যাস থেকে মিথেন বৃদ্ধি।
(গ) রং শিল্প, ইলেকট্রনিক শিল্প, রেফ্রিজারেশন প্রক্রিয়ায় ক্লোরোফ্লুরোকার্বন বৃদ্ধি।
(ঘ) নাইট্রোজেন সারের অতিরিক্ত ব্যবহার, বন কাটা প্রভৃতির জন্য নাইট্রাস অক্সাইড বৃদ্ধি প্রভৃতি।
পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রের অবদান ২১%, সি. আই. এস.-এর অবদান ১৪%, ফ্রান্স-জার্মানি প্রভৃতি ইউরোপের শিল্পসমৃদ্ধ দেশের অবদান ১৪% এবং ভারতের অবদান 8% ।

উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলাফল:

পৃথিবীর এই উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলাফল বেশ ভয়ংকর। কারণ—
(ক) আগামী ৫০ বছরে গড় দৈনিক তাপমাত্রা ২০ থেকে ৫° সেন্টিগ্রেড বৃদ্ধি পাবে।
(খ) বাস্তুতন্ত্র ও সমস্ত জীবজগতের অপূরণীয় ক্ষতি হবে।
(গ) হিমবাহ এবং উত্তর ও দক্ষিণ মেরুরস্থলভাগের বরফ গলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উত্তোলন ঘটবে।
(ঘ) অসংখ্য উদ্ভিদ ও প্রাণীর অস্তিত্ব বিপন্ন হবে— প্রায় ৪৪% স্তন্যপায়ী প্রাণী বিলুপ্ত হবে। অনেক পাখি ও কীটপতঙ্গের প্রজাতি অবলুপ্ত হবে।

(ঙ) উপকূলের নীচু জমি প্লাবিত হওয়ার ফলে ঐ এলাকার কৃষিজমি, জনবসতি, বন্দর প্রভৃতির ক্ষতি হবে। মুম্বাই, কলম্বো, টোকিও প্রভৃতি সমুদ্রের ধারে গড়ে ওঠা বড়ো শহর ও বন্দরগুলি তলিয়ে যাবে।

(চ) কিছু গবেষকের হিসাব, তিব্বতের কিংখাই মালভূমির আকাশে প্রায় ২৫ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ওজোন গ্যাসের স্তর পাতলা হয়ে গেছে। এর ফলে তিব্বতের আকাশে ওজোনের ঘনত্ব কমে দাঁড়িয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪৫ শতাংশ কম। যার ফলে মানস সরোবর ভ্রমণেচ্ছুদের সাবধান হতে হবে।

প্রতিকার:

রাষ্ট্রপুঞ্জের ইন্টার-গভর্নমেন্টাল প্যানেল অব ক্লাইমেট চেঞ্জ (আই. পি. সি. সি.) -এর ব্যাঙ্কক বৈঠকে ওয়ার্কিং গ্রুপের সহ- সভাপতি ডেভিডসন জানিয়েছেন, “এখন যা চলছে, তা চললে পৃথিবীর বিপদ সাঙ্ঘাতিক। তাই সমস্যা সমাধানের পথ বাতলানোর কথা ভাবা হয়েছে।” সেই পথ সম্বন্ধে ঐ সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে শিল্পায়নের আগে পৃথিবীর উষ্ণতা যা ছিল, তার জেরে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি আটকাতে গেলে বায়ুমণ্ডলে গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ ০-০.৪৪৫ শতাংশ মাত্রায় আনতে হবে।

এজন্য প্রয়োজন বেশি করে জ্বালানি সাশ্রয়ের ব্যবস্থা করা। তেল ও কয়লার ব্যবহার কমিয়ে অচিরাচরিত শক্তির উৎসকে ব্যবহারে লাগানো। গ্রিন হাউস গ্যাস বিশেষ করে কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে মাটির নীচে পুঁতে ফেলতে হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের উৎস হিসেবে পরমাণু শক্তির ব্যবহার করতে হবে। উন্নত দেশগুলি যেভাবে সি. এফ. সি. নির্গমন করে চলেছে এবং যার ফলে বায়ুমণ্ডলে ওজোন স্তরে যে সব ছিদ্রের সৃষ্টি হয়েছে সে সম্বন্ধে দেশগুলির এখনই সাবধান হতে হবে।

উপসংহার:

বিশ্বায়নের পর বাজারভিত্তিক অর্থনীতিতে তেল ও অস্ত্রের যে গুরুত্ব বেড়েছে, সেক্ষেত্রে পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি নতুন মোড় নিয়েছে। উন্নয়নের নামে এই যে পরিবেশের সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা আমাদের আত্মঘাতী রূপ-কে প্রকট করে তুলেছে। নিন্দুকেরা বলতে শুরু করেছে, উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়নকে থমকে দিতে এ ধরনের প্রচার চলছে। কিম্বা উন্নত দেশগুলি এই সংকটের কথা না ভেবে শুধু মুনাফার বৃদ্ধিকেই গুরুত্ব দিচ্ছে। এই উভয় দিকই গ্রহণীয় নয়। বরং সময় থাকতে সমস্যার সমাধানে তৎপর হওয়া যে বুদ্ধিমানের কাজ—সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই, নতুবা পৃথিবীর বিপন্নতার জন্য আমরাই দায়ী থাকব।

বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রবন্ধ রচনা: ৪
ভূমিকা:

পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। পৃথিবীর এই তাপমাত্রা বেড়ে চলাকে বিশ্ব উষ্ণায়ন বলা হয়। এর ফলে মানুষের জীবন এবং মানব সভ্যতার বিপদ বেড়ে চলেছে।

তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ:

নানা কাজে কয়লা, খনিজতেল প্রভৃতি জ্বালানির ব্যবহার ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এর ফলে বায়ুতে কার্বন ডাইঅক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, মিথেন প্রভৃতি গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। এই গ্যাসগুলিকে গ্রীন হাউস গ্যাস বলা হয়। সূর্য থেকে যে তাপ পৃথিবীতে আসে তার অনেকটাই আবার মহাশূন্যে ফিরে যায়। কিন্তু গ্রীন হাউস গ্যাস এই তাপকে মহাশূন্যে ফিরে যেতে বাধা দেয়। এর ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমশ বেড়ে চলেছে।

তাপমাত্রা বাড়ার ফল:

তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মেরু প্রদেশের বরফ গলছে। হিমবাহ এবং পাহাড়ের চূড়ার বরফও গলছে। বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়ছে। খরা, বন্যা ঝড়, দাবানল, ভূমিকম্প প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে চলেছে। উদ্ভিদের ফলন কমছে, মাছের উৎপাদন কমছে। বিভিন্ন প্রাণী আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে মারা যাচ্ছে। কোনো কোনো জীবাণু নতুন ভাবে সৃষ্টি হয়ে বিভিন্ন কঠিন রোগের সৃষ্টি করছে। আবহাওয়া এবং জলবায়ুতেও পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে।

উপসংহার:

মানুষ নতুন করে বন সৃষ্টি করে এবং কয়লা, খনিজ তেল প্রভৃতি জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে প্রকৃতির এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে পারে। এক কথায়, পরিবেশদূষণ কমাতে হবে।

বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রবন্ধ রচনা: ৫
ভূমিকা:

আজকাল পৃথিবীর তাপমাত্রা অনেক বেড়েই চলেছে, যা একটি খুবই বড়ো সমস্যার কথা। মানুষের বাসস্থান হলো পৃথিবী, যা সাজ অনেক বড়ো বিপদে আছে, পৃথিবীর এই তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে নাম দেওয়া হয়েছে গ্লোবাল ওয়ার্মিং

বিশ্ব উষ্ণায়নের কারন:

১৮০০ সাল থেকে পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। প্রমানে দেখা দিয়েছে যে এটি মানুষের কাজকর্মের কারনে হচ্ছে। কিন্তু শিল্প বিপ্লব শুরু হওয়ার পর থেকে, পরিস্থিতি আরও বেশি খারাপ হয়ে চলেছে। কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং তেলের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর পরিমান বেড়ে গিয়েছে। এর ফলে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমান বাড়তে শুরু করে যেটি আমাদের পৃথিবীর জন্য খুবই স্বতিকারক। ১৮৬০ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর তাপমাত্রা প্রায় ১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউনাইটেড নেশন ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (UNFCCC) এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে বর্তমানে বাতাসে যেভাবে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমান বেড়ে চলেছে তা যদি কমানো না যায়, তাহলে ২০৪০ সালের মধ্যে পৃথিবীতে তাপমাত্রা আরও “১ ডিগ্রি ” বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে প্রচুর ধরনের ক্ষতি হবে।

বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলাফল:

১) পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মেরু অঞ্চলে উষ্ণতা বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলতে শুরু করবে। তার জন্য সমুদ্রের জলের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। আর নিকটবর্তী স্থান জলের তলায় চলে যাবে।
২) আমাদের পৃথিবীতে হারিকেন ও ঘূর্ণিঝড় এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে এবং বড় বড় নিম্নচাপের সৃষ্টি হবে।
৩) বিভিন্ন স্থানে প্রবল বন্যা বা খরা দেখা দেবে।
৪) বিভিন্ন স্থানে দাবানল সৃষ্টি হতে পারে।
৫) সামুদ্রিক জীবের ভীষণভাবে ক্ষতি হবে।
৬) মানুষেরা বিভিন্ন রকম রোগের প্রকোপে পড়বে, বিশেষ করে হৃৎযন্ত্র বা শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যার।
৭) বিভিন্ন ধরনের মারাত্মক ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হবে।

এক কথায় বলা যায় যে বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে। এর ফলে পৃথিবী ধ্বংসের মুখে চলে যাবে।

নিয়ন্ত্রণের উপায়:

১) বিশ্ব উষ্ণায়ন কমাতে হলে পৃথিবীতে প্রচুর পরিমানে গাছ লাগাতে হবে।
২) গ্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, পেট্রোলিয়াম, ইত্যাদি; জাতীয় বস্তুর ব্যবহার কমাতে হবে।
৩) আমাদের সৌর শক্তি, বায়ু শক্তি, জলশক্তি, জোয়ার ভাটা শক্তি, ভূ-তাপীয় শক্তি এবং বায়োমাস শক্তির ব্যবহার শুরু করতে হবে।
৪) পেট্রোল ও ডিজেল গাড়ির পরিবর্তে, আমাদের ইলেকট্রিক গাড়ি ও হাইড্রোজেন গাড়ির ব্যবহার চালু করতে হবে।

উপসংহার:

আমাদের পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো সমস্যা হল গ্লোবাল ওয়ার্মিং। এর থেকে পৃথিবীকে মুক্ত করতে হলে, আমাদের সবাইকে সতর্ক ও সজাগ হতে হবে। কারন আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সুস্থ পৃথিবী গড়ে তুলতে, আমাদের সকলকে সজাগ হতে হবে। সকলে মিলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে হবে এবং এই প্রচেষ্টার বাস্তব রূপ দিতে হবে। সুজলা সুফলা শস্য-শ্যামলা পৃথিবী আমাদের সকলের কাম্য। তাই পৃথিবীকে চিরহরিৎ গড়ে তুলতে গেলে, গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমানোর প্রতি আমাদের সকলকে সচেষ্ট হতে হবে। তবেই আমরা গড়ে তুলতে পারব এক নতুন সুন্দর পৃথিবী।

আরও রচনা দেখো:

১. বাংলার উৎসব

২. বিজ্ঞান ও কুসংস্কার

Leave a Comment

CLOSE

You cannot copy content of this page