দশম শ্রেণী বাংলা কোনি থেকে প্রশ্ন উত্তর।
প্রশ্ন ১: ক্ষিতীশ সিংহ কোনিকে সাঁতারের চ্যাম্পিয়ন করানোর জন্য যে কঠোর অনুশীলনের ব্যবস্থা করেছিলেন, তার পরিচয় দাও।
উত্তর: মতি নন্দীর কোনি উপন্যাসে ক্ষিতীশ সিংহ কোনিকে জাতীয় সাঁতার চ্যাম্পিয়ন করার জন্য অত্যন্ত কঠোর অনুশীলনের ব্যবস্থা করেছিলেন। কোনির দাদার মৃত্যুর পর তিনি শুধু তার অভিভাবকই নন, হয়ে ওঠেন তার প্রশিক্ষক ও পথপ্রদর্শক। কোনিকে নিয়মিত ও কঠোর শৃঙ্খলার মধ্যে রাখা ছিল তার প্রথম কাজ। ভোর থেকে নদীতে সাঁতার কাটানো, নির্দিষ্ট সময় ধরে দীর্ঘক্ষণ অনুশীলন—এসবই তিনি কঠোরভাবে মানাতেন।
অনুশীলনের সময় কোনি ক্লান্ত হয়ে জল ছেড়ে উঠতে চাইলে ক্ষিতীশ বাঁশের লাঠি বা হাতে ইট নিয়ে তাকে আবার জলে নামতে বাধ্য করতেন। কারণ তিনি জানতেন, কঠোর পরিশ্রম ছাড়া বড় সাফল্য আসে না। কোনির শরীরের উপযোগী খাবারের ব্যবস্থাও তিনিই করতেন, যাতে সে শক্তি পায় এবং অসুস্থ না হয়।
শুধু শারীরিক প্রশিক্ষণই নয়, কোনির অপমান ও দারিদ্র্যের অতীত স্মরণ করিয়ে দিয়ে তার মনোবলও বাড়িয়ে তুলতেন ক্ষিতীশ। তাঁর এই কঠোর শাসন, প্রেরণা ও দায়িত্ববোধই কোনিকে শেষ পর্যন্ত জাতীয় সাঁতার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার শক্তি জুগিয়েছিল।
প্রশ্ন ২: “অবশেষে কোনি বাংলা সাঁতার দলে জায়গা পেল।”-কোনি কিভাবে বাংলা সাঁতার দলে স্থান পেল তা লেখো।
উত্তর: মতি নন্দীর কোনি উপন্যাসে দারিদ্র্য, সামাজিক অবহেলা এবং ষড়যন্ত্রের কারণে কোনির জন্য বাংলা সাঁতার দলে স্থান পাওয়া মোটেও সহজ ছিল না। ক্ষিতীশ সিংহের ছাত্রী হওয়ায় কিছু ক্রীড়া-অধিকারীর বিরোধিতা সবসময় তাকে বাধা দিত। তবু তার প্রতিভা, পরিশ্রম এবং ক্ষিতীশের উৎসাহ তাকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
বাংলা অ্যামেচার সুইমিং অ্যাসোসিয়েশন (BASA)-এর নির্বাচন সভায় ধীরেন ঘোষ, বদু চাটুজ্জে ও আরও কয়েকজন কর্মকর্তা সুযোগ নিয়ে অ্যাপোলো ক্লাবের সমস্ত প্রতিযোগীকে, এমনকি কোনিকেও ডিসকোয়ালিফাই করার চক্রান্ত করেন। প্রস্তাবটি প্রায় গৃহীত হতে চলেছিল। ঠিক তখনই বালিগঞ্জ সুইমিং ক্লাবের কোচ এবং হিয়া মিত্রের প্রশিক্ষক প্রণবেন্দু বিশ্বাস এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন।
প্রণবেন্দু বিশ্বাস জানান, বাঙলার স্বার্থে কোনও অবস্থাতেই প্রতিভাবান সাঁতারু কনকচাঁপা পালকে (কোনি) বাদ দেওয়া যাবে না। তিনি যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করেন যে প্রকৃত প্রতিভাই দলে থাকা উচিত। এমনকি তিনি হুঁশিয়ারি দেন—কোনিকে বাদ দেওয়া হলে তিনি বালিগঞ্জ ক্লাবের সব প্রতিযোগীর নাম প্রত্যাহার করে নেবেন। প্রণবেন্দুর অভিজ্ঞতা বলেছিল—“মহারাষ্ট্রের কাছ থেকে চ্যাম্পিয়নশিপ নিতে হলে এই মেয়েটিই দরকার।”
তার দৃঢ় অবস্থান, কোনির প্রতিভা ও কঠোর পরিশ্রম—এই তিনের ফলে শেষ পর্যন্ত কোনি বাংলা সাঁতার দলে জায়গা পায়।
প্রশ্ন ৩: “ওইটাই তো আমি রে, যন্ত্রণাটাই তো আমি “-বক্তা কে? প্রসঙ্গ নির্দেশ করে উক্তিটি তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।
উত্তর: মতি নন্দীর কোনি উপন্যাসে উক্তিটির বক্তা সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহ।
প্রসঙ্গ:
মাদ্রাজে আয়োজিত জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় কোনি ৪×১০০ মিটার রিলে রেসে মহারাষ্ট্রের শক্তিশালী সাঁতারু রমা যোশীকে হারিয়ে বিজয়ী হয়। কিন্তু বিজয়ের মুহূর্তে বহু মানুষ তাকে অভিনন্দন জানালেও কোথাও দেখা মিলছিল না তার প্রিয় প্রশিক্ষক ক্ষিতীশকে। পরে তাকে দেখে কোনি অভিমান ও আবেগে ক্ষিতীশকে মারতে থাকে। কোনির এই মানসিক যন্ত্রণার প্রসঙ্গেই ক্ষিতীশ বলেন—“ওইটাই তো আমি রে, যন্ত্রণাটাই তো আমি।”
উক্তিটির তাৎপর্য:
কোনিকে চ্যাম্পিয়ন করার জন্য ক্ষিতীশ ব্যক্তিগত সুখ, সংসারের স্বাভাবিক জীবন, এমনকি আর্থিক স্থিতিও বিসর্জন দিয়েছেন। যন্ত্রণার মধ্য দিয়েই তিনি কোনিকে গড়ে তুলেছেন। তাই তিনি নিজেকে যন্ত্রণার রূপেই দেখেছেন।
জুপিটার ক্লাবের সদস্যদের কাছ থেকে ক্ষিতীশ বহু অপমান, লাঞ্ছনা ও অবহেলা সহ্য করেছিলেন। কিন্তু এই সব যন্ত্রণা তাকে দুর্বল করেনি; বরং কোনিকে প্রতিষ্ঠিত করার সংকল্প আরও জোরদার করেছে।
ক্ষিতীশ সিংহের আত্মনিয়োগ, ধৈর্য, নিষ্ঠা ও সংগ্রামী মানসিকতা তাঁকে সমাজের নানা বাধা-বিপত্তিকে অতিক্রম করতে সাহায্য করেছে। তিনি যন্ত্রণাকেই শক্তিতে রূপান্তরিত করে কোনিকে চ্যাম্পিয়ন করেছেন।
কোনির প্রতিটি সাফল্যের নেপথ্যে ছিল ক্ষিতীশের কঠোর প্রয়াস, কঠিন অনুশাসন ও নিরলস সংগ্রাম। তাই তিনি ঠিকই বলেন—তিনি কোনির সাফল্যের পেছনে থাকা “যন্ত্রণাটাই”।
শেষ কথা:
ক্ষিতীশ সিংহের উক্তিটি তার আত্মত্যাগ, সংগ্রাম ও দীক্ষাদানের দার্শনিকতা প্রকাশ করে। যন্ত্রণা, অপমান ও কঠোর পরিশ্রমের পথ পাড়ি দিয়েই তিনি কোনিকে চ্যাম্পিয়ন করে তুলতে পেরেছিলেন—যা এই উক্তিকে বিশেষ তাৎপর্যময় করে তোলে।
আরও দেখো : অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতার প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন ৪: ক্ষিতীশের বিরুদ্ধে কি কি অভিযোগ উঠেছিল? ক্ষিতীশ কি জবাব দিয়েছিলেন?
অথবা ‘ওর বিরুদ্ধে যা যা অভিযোগ উঠেছে, সেগুলো তাহলে বলুন’ – অভিযোগগুলি কী কী? অভিযুক্ত ব্যক্তি কী জবাব দিয়েছিলেন?
অথবা ‘আমার বিরুদ্ধে চার্জ গুলো স্পষ্ট করে চিঠিতে বলা নেই’ বক্তার বিরুদ্ধে কী কী চার্জ অভিযোগ উঠেছিল? বক্তা তার কী জবাব দিয়েছিলেন?
অথবা ‘আমার বিরুদ্ধে আর কী অভিযোগ আছে ধীরেন?’ – বক্তা কে? তার বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছিল? তিনি কী জবাব দিয়েছিলেন?
উত্তর: সাহিত্যিক মতি নন্দী রচিত কোনি উপন্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হল ক্ষিতীশ সিংহ। তিনি জুপিটার সুইমিং ক্লাবের চিফ ট্রেনার। কিন্তু ক্লাবেরই কয়েকজন ষড়যন্ত্রকারীর ইন্ধনে সাঁতারুরা ক্ষিতীশের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উত্থাপন করে।
ক্ষিতীশের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলি হলো-
১. ক্ষিতীশ জুনিয়র ছেলেদের সামনে শ্যামলের সঙ্গে আমেরিকার ১২ বছরের মেয়ের সাঁতার-সময়ের তুলনা করে শ্যামলকে অপমান করেছেন।
২. বেঙ্গল রেকর্ড হোল্ডার গোবিন্দকে ক্ষিতীশ কান ধরে ক্লাব থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।
৩. সুহাস ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়ে দিন দশেক ট্রেনিংয়ে অনুপস্থিত থাকায়, ক্ষিতীশ তার বাবাকে অকথ্য ভাষায় অপমান করেছেন।
৪. অমিয়া ও বেলাকে পুরুষদের মতো বারবেল নিয়ে ব্যায়াম করতে এবং পুরুষদের মতো চুল কাটতে জোর করায়, তারা ক্ষিতীশের অতিরিক্ত অনুশাসনে অতিষ্ঠ হয়ে জুপিটার ছেড়ে অ্যাপেলো ক্লাবে চলে গিয়েছিল।
৫. ক্লাবের সদস্যদের সাধারণ অভিযোগ-
ক্ষিতীশের কোনো গৌরবোজ্জ্বল মেডেলজয়ের ইতিহাস নেই এবং
সাঁতারুদের মন ও মেজাজ বোঝার ক্ষমতাও নেই।
তার আচরণের জন্য জুপিটার ক্লাবের সুনাম কালিমালিপ্ত হচ্ছে।
ক্ষিতীশের জবাব:
ক্ষিতীশ ফ্যাশনেবল কয়েকটি মেডেলের লোভে সাঁতারুদের পদলেহন করে নিজের পদ বাঁচিয়ে রাখার পক্ষপাতী নন। তাই তিনি দৃঢ়কণ্ঠে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সকল অভিযোগের জবাব দেন। তিনি বলেন—
(ক) অভিযোগকারী সাঁতারুরা আসলে ফাঁকিবাজ, উৎশৃঙ্খল এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষাহীন। সাঁতার তাদের অনেক কিছু দিলেও, সাঁতারকে তারা কিছুই দেয়নি।
(খ) শ্যামল-গোবিন্দের বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মনের পচন ঘটেছে। সাঁতার জগতে তারা অচল আধুলি।