নুন কবিতার প্রশ্ন উত্তর একাদশ শ্রেণীর বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার

এখানে নুন কবিতার প্রশ্ন উত্তর একাদশ শ্রেণীর বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার শেয়ার করা হলো // Class 11 Second Semester Bengali Question Answer // নুন কবিতার বড়ো প্রশ্ন উত্তর / জয় গোস্বামী

নুন কবিতার প্রশ্ন উত্তর একাদশ শ্রেণীর বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার
Class 11 Second Semester Bengali Question Answer
নুন কবিতার বড়ো প্রশ্ন উত্তর

১) শ্রমজীবি বঞ্চিত মানুষদের জীবন যন্ত্রণা ‘নুন’ কবিতায় যেভাবে ফুটে উঠেছে তা লেখো।

উত্তর: জয় গোস্বামীর ‘নুন’ কবিতা শ্রমজীবী মানুষের দৈনন্দিন জীবনসংগ্রাম, দারিদ্র্য, হতাশা এবং তাদের স্বপ্নভঙ্গের বাস্তব চিত্রকে গভীরভাবে তুলে ধরে। আটটি স্তর এবং ষোলোটি চরণে রচিত এই কবিতায় উঠে এসেছে এক নিম্নবিত্ত পরিবারের প্রতিনিধি জীবন, যা লক্ষ লক্ষ বঞ্চিত মানুষের অভিজ্ঞতার প্রতিফলন।

অল্পে তুষ্ট থাকার মানসিকতা

কবিতার বাপ-ছেলের ছোট্ট পরিবারটি সামান্য উপার্জনেই খুশি থাকার চেষ্টা করে। তাদের চাহিদা সীমিত; জীবনের সামান্য সুখ তাদের কাছে “সবুরের দেশ” খুঁজে পাওয়ার মতো।

অভাবে দুঃখ না করা

তাদের জীবন অনটনে ভরা। তবুও তারা জানে, বাস্তবতার মাটিতে বিলাপের কোনো মূল্য নেই। তাই, তারা অভাবকেও জীবনের অংশ হিসেবে মেনে নেয়।

বৈচিত্র্যহীন ও রঙহীন জীবন

তাদের প্রতিদিনের জীবন একঘেয়ে এবং বৈচিত্র্যহীন। কবিতার পঙক্তি—
“আমাদের দিন চলে যায়”
জীবনের নিষ্প্রাণ গতিশীলতাকে প্রকাশ করে।

অসুখ ও ধারদেনার চক্র

পরিবারটি অসুখ এবং ধারদেনার বোঝায় জর্জরিত। প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও, তারা বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যায়।

বাস্তবতা থেকে পালানোর ব্যর্থ চেষ্টা

অভাবের কষ্ট ভুলতে বাপ-ছেলে মাঝে মাঝে গাঁজা খেয়ে মিথ্যা আনন্দের মধ্যে আশ্রয় খোঁজে। এটি তাদের অসহায়তার এক করুণ দিক।

ভাতের সাথে নুনের অভাব

পরিবারের অবস্থা এতটাই করুণ যে কখনো কখনো ভাতের সাথে সামান্য নুন জোগাড় করাও অসম্ভব হয়ে পড়ে। এসময় তাদের ক্ষোভ ফুটে ওঠে সামাজিক বৈষম্যের প্রতি।

ন্যায্য অধিকারের দাবি

কবিতার শেষ অংশে শ্রমজীবী মানুষের ক্ষোভ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তারা প্রশ্ন তোলে—
“যে শ্রম আমাদের দিয়ে চলে সমাজ, সে শ্রমের ন্যায্য বিনিময়ে সামান্য লবণটুকুও কেন পাওয়া যায় না?”

উপসংহার

জয় গোস্বামীর ‘নুন’ কবিতা শুধু শ্রমজীবী মানুষের যন্ত্রণার দলিল নয়। এটি সমাজের অসাম্য আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদ। এখানে যেমন তাদের জীবনসংগ্রামের কষ্ট আছে, তেমনি আছে ন্যায্য অধিকারের দাবিতে দৃঢ় কণ্ঠস্বর। এ কবিতা নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনের গভীর বাস্তবকে তুলে ধরে, যা কখনো শান্ত অশ্রুপাত, আবার কখনো গর্জে ওঠা বিদ্রোহ।

২) “আমাদের শুকনো ভাতে লবণের ব্যবস্থা হোক।”- কে বলেছে? এ দাবি কার কাছে? কেন?

উত্তর:
‘নুন’ কবিতায় নিম্নবিত্ত পরিবারের প্রতিনিধি হিসেবে এই দাবি তুলেছেন কবি জয় গোস্বামী। তিনি শ্রমজীবী মানুষের বঞ্চনা ও অধিকারহীন জীবনের চিত্র তুলে ধরেছেন।

এই দাবি সরাসরি শাসক এবং সমাজের সচেতন অংশের প্রতি। নিম্নবিত্ত মানুষের ন্যূনতম চাহিদা পূরণের আহ্বান এখানে প্রকাশিত হয়েছে।

কেন এই দাবি:

জয় গোস্বামী তাঁর কবিতায় শ্রমজীবী নিম্নবিত্ত পরিবারের দুঃখ-যন্ত্রণা, অসহায়তা, এবং ক্ষোভের কথা বলেছেন। এই পরিবারের মানুষগুলি দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করেও নিজেদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারে না। তাদের জীবন বৈচিত্র্যহীন এবং অভাব-অনটনে ভরা।

তারা অল্পে সন্তুষ্ট থাকে, তবু চরম দারিদ্র্যে সামান্য নুনও যখন ভাতের সাথে মেলে না, তখন তারা ক্ষোভে ফেটে পড়ে।
এই দাবি নিছক খাদ্যের জন্য নয়; এটি একটি প্রতিবাদ, যেখানে নিম্নবিত্ত মানুষেরা তাদের ন্যায্য অধিকার এবং জীবনের মৌলিক প্রয়োজন পূরণের কথা বলেছে।

উপসংহার:

“আমাদের শুকনো ভাতে লবণের ব্যবস্থা হোক” – এ দাবি শুধু এক পরিবারের নয়, লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবী মানুষের আকুল আহ্বান। এটি তাদের অধিকার এবং মর্যাদার জন্য জাগ্রত এক প্রতিবাদ, যা সমাজ ও শাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়।

নুন কবিতার প্রশ্ন উত্তর একাদশ শ্রেণীর বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার
Class 11 Second Semester Bengali Question Answer
নুন কবিতার বড়ো প্রশ্ন উত্তর

৩) ‘নুন’ কবিতাটির নামকরণের সার্থকতা আলোচনা করো।

সাহিত্যের নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, যা কবিতার মূল ভাব, বিষয়বস্তু বা বার্তা প্রকাশ করে। জয় গোস্বামীর ‘নুন’ কবিতার নামকরণ অত্যন্ত অর্থবহ এবং ভাবব্যঞ্জনামূলক, যা শ্রমজীবী মানুষের দুঃখ-যন্ত্রণা, বঞ্চনা এবং ন্যূনতম অধিকার চাহিদার প্রতীক।

অল্পে তুষ্ট থাকার প্রতীক

কবিতার কথক ও তার পরিবার অল্পে খুশি থাকা নিম্নবিত্ত সমাজের প্রতিনিধি। তাদের জীবন ভাত-কাপড়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ। সামান্য চাহিদা নিয়েই তারা জীবনের কঠিন সংগ্রামে এগিয়ে চলে। নুন তাদের জীবনের সেই ন্যূনতম চাহিদার প্রতীক, যা না থাকলে বেঁচে থাকাই দুষ্কর হয়ে ওঠে।

জীবনের মৌলিক চাহিদার সংকট

‘নুন’ শব্দটি নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনের মৌলিক প্রয়োজনকে প্রতীকী রূপে প্রকাশ করে। ভাতের সঙ্গে নুন যেমন দৈনন্দিন আহারের জন্য অপরিহার্য, তেমনই সমাজের শ্রমজীবী মানুষদের ন্যূনতম অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করাও জরুরি। কবিতায় বলা হয়েছে:
“আমাদের শুকনো ভাতে লবণের ব্যবস্থা হোক।”
এ দাবির মাধ্যমে কবি তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আকাঙ্ক্ষাকে ফুটিয়ে তুলেছেন।

সমাজের প্রতি বার্তা

‘নুন’ কেবল একটি খাদ্য উপাদান নয়; এটি শ্রমজীবী মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই এবং সমাজের প্রতি তাদের দাবির প্রতীক। কবি দেখিয়েছেন, সাধারণ মানুষই সমাজের ভিত্তি। তাদের মৌলিক প্রয়োজন উপেক্ষিত হলে, তা শুধু তাদের ক্ষতিই নয়, বরং সমগ্র সমাজের অগ্রগতিকে থামিয়ে দেয়।

নামকরণের ভাবব্যঞ্জনা

নুন ছাড়া যেমন খাবারের স্বাদ থাকে না, তেমনই শ্রমজীবী মানুষের জীবনের মৌলিক চাহিদা পূরণ না হলে সমাজ তার ভারসাম্য হারায়। কবি এই ক্ষোভ এবং প্রতিবাদকে কবিতার নামের মধ্যেই ধারণ করেছেন।

উপসংহার

‘নুন’ কবিতার নামকরণ অত্যন্ত সার্থক। এটি শ্রমজীবী মানুষের দুঃখ ও বঞ্চনার বাস্তবতাকে প্রতীকী রূপে তুলে ধরে। একইসঙ্গে এটি সমাজকে তাদের প্রতি দায়িত্ব পালনের বার্তা দেয়। তাই কবিতার নামকরণ যথাযথ এবং চিন্তাশীল।

৪) “আমরা তো অল্পে খুশি।” অল্পে ‘খুশি’ মানুষদের জীবনযন্ত্রণার যে ছবি ‘নুন’ কবিতায় ফুটে উঠেছে তার পরিচয় দাও।

উত্তর: জয় গোস্বামীর ‘নুন’ কবিতায় শ্রমজীবী মানুষের জীবনযন্ত্রণা ও তাদের অল্পে খুশি থাকার মানসিকতার গভীর চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। আধুনিক সমাজে নিম্নবিত্ত মানুষের দৈনন্দিন সংগ্রাম, অভাব, এবং অল্পে তুষ্ট থাকার চিত্র কবিতার প্রতিটি চরণে স্পষ্ট।

অল্পে খুশি থাকার মানসিকতা

কবিতার কথক এবং তার মতো হতদরিদ্র মানুষরা অল্প আয়েই খুশি থাকে। তারা ভাত-কাপড়ে জীবনযাপন করে এবং তাদের চাহিদা সীমিত।

এদের জীবনে দুঃখ, অভাব, ও অসুস্থতা লেগেই থাকে।
কাজ করতে না পারলে এরা ধারদেনা করতে বাধ্য হয়, যা সারা জীবন তাদের পিছু ছাড়ে না।

দুঃখ ভোলার সাময়িক চেষ্টা

জীবনের যন্ত্রণা ভুলতে এই মানুষরা কখনও কখনও নেশায় ডুবে যায়। কবি বলেছেন:
“রাত্তিরে দু-ভাই মিলে টান দিই গঞ্জিকাতে।”
এটি তাদের অসহায় জীবনের মানসিক চাপ থেকে সাময়িক মুক্তির চেষ্টা।

শখ পূরণের অসঙ্গতি

অবস্থার উন্নতি হলে তারা নিজেরা সামান্য শখ পূরণের চেষ্টা করে।

বাজার থেকে গোলাপ চারা কিনে আনে, যদিও সেই গাছ লাগানোর জায়গাও নেই।
এই সামান্য আনন্দ তাদের জীবনের রঙহীনতায় কিছুটা প্রশান্তি যোগ করে।

নুনের অভাব ও ক্ষোভ

বহু শ্রম করার পরও যদি ঠান্ডা ভাতে নুনের অভাব হয়, তখন তাদের ক্ষোভ ফেটে পড়ে। এ অবস্থা তারা মানতে পারে না এবং প্রতিবাদ জানায়। তাদের দাবি:
“আমাদের শুকনো ভাতে লবণের ব্যবস্থা হোক।”

উপসংহার

‘নুন’ কবিতায় অল্পে খুশি থাকা শ্রমজীবী মানুষের জীবন সংগ্রাম, দুঃখ, এবং তাদের ক্ষোভ-প্রতিবাদ গভীরভাবে ফুটে উঠেছে। কবি সাধারণ মানুষের চাহিদার প্রতি সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

নুন কবিতার প্রশ্ন উত্তর একাদশ শ্রেণীর বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার
Class 11 Second Semester Bengali Question Answer
নুন কবিতার বড়ো প্রশ্ন উত্তর

৫) ‘ফুল কি হবেই তাতে’ / ‘সে অনেক পরের কথা’। কোন ফুল? কেন এই সংশয়? কোন বেদনা? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর:
জয় গোস্বামীর ‘নুন’ কবিতায় দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষের জীবনের অভাব-অনটন এবং ক্ষণিকের আনন্দলাভের অভ্যাস ফুটে উঠেছে। “ফুল কি হবেই তাতে” এবং “সে অনেক পরের কথা”—এই চরণগুলোতে ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় ও বাস্তবতার সংঘর্ষ প্রকাশ পেয়েছে।

কোন ফুল?

এখানে ফুল বলতে বাজার থেকে কিনে আনা গোলাপচারা থেকে ফোটা ফুল বোঝানো হয়েছে। দরিদ্র মানুষদের জীবনে যখন সামান্য অর্থের সঞ্চয় হয়, তখন তারা গোলাপচারা কেনার মতো শখ পূরণের চেষ্টা করে। তবে সেই চারা থেকে ফুল ফুটবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় থাকে।

কেন এই সংশয়?

এই সংশয়ের কারণ নিম্নবিত্ত মানুষের আর্থিক ও সামাজিক বাস্তবতা:

  • গোলাপচারা লাগানোর জমি তাদের নেই।
  • কঠোর পরিশ্রমের পর তারা চরম ক্লান্ত। ভবিষ্যতের কথা ভাবার সময় বা মানসিক অবস্থা তাদের থাকে না।
  • জীবনের প্রতিকূলতায় অভ্যস্ত হয়ে তারা বর্তমানের সামান্য সুখে তুষ্ট থাকার চেষ্টা করে।
কোন বেদনা?

গোলাপফুল ফুটবে কিনা, সেই অনিশ্চয়তা আসলে দরিদ্র মানুষের জীবনের গভীর বেদনা ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের প্রতীক।

  • এই মানুষদের জীবনজুড়ে শুধু সংগ্রাম ও অভাব।
  • তাদের শখ পূরণের সামান্য চেষ্টা ক্ষণস্থায়ী হয়, কারণ তাদের বাস্তবতায় তা বড় এক নিষ্ফল স্বপ্ন।
  • তারা জানে, অভাব ও দারিদ্রের ভারে চেপে ধরে তাদের জীবন।

কবির ভাষায়:
“কিন্তু পুঁতব কোথায়? ফুল কি হবেই তাতে? সে অনেক পরের কথা। টান দিই গঞ্জিকাতে।”

উপসংহার

‘নুন’ কবিতায় “ফুল” এবং তাকে ঘিরে সংশয় শ্রমজীবী মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রাম, সাময়িক সুখলাভ এবং ভবিষ্যতের প্রতি অস্পষ্টতা ও অনিশ্চয়তার প্রতীক। এই চরণগুলো দরিদ্র মানুষের জীবনের অন্তর্নিহিত বাস্তবতা ও মর্মবেদনা গভীরভাবে তুলে ধরে।

৬) ‘নুন’ কবিতায় নিম্নবিত্ত মানুষের দুঃখ-যন্ত্রণার পাশাপাশি তাদের জীবনের সৌন্দর্য ও শখের প্রতি আকাঙ্ক্ষা কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।”

উত্তর: জয় গোস্বামীর ‘নুন’ কবিতায় নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনযাত্রার দুঃখ-যন্ত্রণা যেমন প্রকাশিত হয়েছে, তেমনি তাদের অন্তরে লুকিয়ে থাকা সৌন্দর্যবোধ এবং শখের প্রতিও ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

প্রথমত, কবিতায় দুঃখ-যন্ত্রণার চিত্রের মাধ্যমে নিম্নবিত্ত মানুষের জীবন সংগ্রামের গভীরতা ফুটে উঠেছে। “আমাদের দিন চলে যায় সাধারণ ভাতকাপড়ে” এই লাইন তাদের জীবনের একঘেয়েমি এবং ন্যূনতম চাহিদা পূরণের অসহায়তার পরিচয় দেয়। অসুখ এবং ধারদেনার মধ্য দিয়ে তারা প্রতিদিনের জীবন অতিবাহিত করে।

দ্বিতীয়ত, তাদের জীবনের দুঃখ ভুলে থাকার প্রয়াসও কবিতায় দেখা যায়। “রাত্তিরে দু-ভাই মিলে টান দিই গঞ্জিকাতে” লাইনটি দুঃখময় বাস্তবতা থেকে সাময়িক মুক্তি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে। এটি তাদের মানসিক অবসাদ এবং জীবনযাত্রার ক্লান্তির প্রতীক।

তৃতীয়ত, কবিতায় তাদের শখ এবং সৌন্দর্যের প্রতি আকাঙ্ক্ষার একটি দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় “বাড়িতে ফেরার পথে কিনে আনি গোলাপচারা” লাইনে। প্রতিদিনের অভাবের মধ্যে থেকেও তারা সৌন্দর্যের প্রতি ভালোবাসা লালন করে। গোলাপচারা কিনে আনার মাধ্যমে তাদের অন্তর্নিহিত শখ এবং জীবনের সৌন্দর্য খোঁজার চেষ্টা প্রকাশিত হয়েছে।

চতুর্থত, “কিন্তু পুঁতব কোথায়?” এই লাইনটি তাদের জীবনের বাস্তবতার সঙ্গে শখের সংঘাতকে তুলে ধরে। মাথা গোঁজার মতো জায়গা যেখানে সঙ্কীর্ণ, সেখানে গোলাপচারা পোঁতার জন্য জায়গা খুঁজে পাওয়া একপ্রকার অসম্ভব। এটি তাদের সীমাবদ্ধ জীবনের এক মর্মান্তিক সত্যকে তুলে ধরে।

পঞ্চমত, “ফুল কি হবেই তাতে? সে অনেক পরের কথা।” লাইনটি তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং হতাশার প্রতীক। শখ পূরণের ইচ্ছা থাকলেও, তাদের জীবনে তা বাস্তবায়িত হবে কিনা, সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত নয়।

সার্বিকভাবে, ‘নুন’ কবিতায় নিম্নবিত্ত মানুষের জীবন শুধু দুঃখ-যন্ত্রণার নয়, বরং তাদের মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা শখ এবং সৌন্দর্যবোধের মিশ্র প্রতিফলন। এটি একদিকে তাদের সংগ্রামের কাহিনি, অন্যদিকে তাদের জীবনের আশা ও স্বপ্নেরও প্রকাশ

নুন কবিতার প্রশ্ন উত্তর একাদশ শ্রেণীর বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার
Class 11 Second Semester Bengali Question Answer
নুন কবিতার ছোটো প্রশ্ন উত্তর

১. “আমরা তো সামান্য লোক”- ‘সামান্য’ শব্দটি কীসের ইঙ্গিত দেয়? ‘সামান্য লোক’ হিসেবে কথক কী দাবি জানিয়েছেন?

উত্তর: ‘সামান্য’ শব্দটি নিম্নবিত্ত মানুষের সামাজিক অবস্থানের প্রতি ইঙ্গিত করে। বৈষম্যের সমাজে তাদের ন্যূনতম অধিকার রক্ষিত না হওয়ায় এটি তাদের ক্রোধ ও অভিমানের প্রতীক।
‘সামান্য লোক’ হিসেবে কথক দাবি করেছেন যে, তাদের জন্য শুধুমাত্র শুকনো ভাতে লবণের ব্যবস্থা করাই যথেষ্ট।

২. “আমরা তো অল্পে খুশি;”- কারা, কেন অল্পে খুশি হয়?

উত্তর: এখানে সমাজের নিম্নবিত্ত মানুষের কথা বলা হয়েছে।
তারা অল্পে খুশি হয়, কারণ তাদের জীবন শুধুমাত্র সাধারণ ভাতকাপড়ে কাটে। তাদের জীবনে অতিরিক্ত চাহিদা পূরণের সুযোগ নেই। অল্পে খুশি থাকাটা তাই তাদের জীবনের বাধ্যবাধকতা।

৩. “আমাদের দিন চলে যায় সাধারণ ভাতকাপড়ে।”- কাদের কথা বলা হয়েছে? এর মধ্য দিয়ে কোন সত্য প্রকাশিত হয়?

উত্তর: এখানে নিম্নবিত্ত মানুষের কথা বলা হয়েছে।
এর মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে তাদের দুঃখ-কষ্টে দিনযাপনের সত্য। তারা কোনোরকমে সাধারণ ভাতকাপড়ে দিন কাটিয়ে দেয়।

৪. “কী হবে দুঃখ করে?”- দুঃখ করে কোনো লাভ নেই কেন?

উত্তর: কবি জয় গোস্বামীর মতে, নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনে দুঃখ করে কোনো লাভ নেই, কারণ অভাব, অসুখ, আর দৈনন্দিন সমস্যায় তারা সর্বদা জর্জরিত। তাদের জীবনে সুখের কোনো সম্ভাবনা নেই।

৫. “চলে যায় দিন আমাদের…”- কীভাবে দিন চলে যায়?

উত্তর: নিম্নবিত্ত পরিবারের দিন কাটে অসুখ ও ধারদেনার মধ্য দিয়ে। জীবনের সমস্যায় তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ে। রাত্রে তারা নেশার আশ্রয় নেয়, যা তাদের কঠিন বাস্তবতা থেকে সাময়িক মুক্তি দিতে পারে।

নুন কবিতার প্রশ্ন উত্তর একাদশ শ্রেণীর বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার
Class 11 Second Semester Bengali Question Answer
নুন কবিতার ছোটো প্রশ্ন উত্তর

৬. “রাত্তিরে দু-ভাই মিলে টান দিই গঞ্জিকাতে”- এখানে ‘দু-ভাই’ কারা? এই আচরণ কী ইঙ্গিত করে?

উত্তর: ‘দু-ভাই’ শব্দের সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা কবি দেননি। এটি সহোদর ভাই বা ‘বাপ-ব্যাটা’ অর্থে হতে পারে।
এই আচরণ ইঙ্গিত করে, বাস্তব জীবনের দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি খোঁজার প্রবণতা। নিম্নবিত্ত মানুষরা নেশার মাধ্যমে তাদের কঠিন জীবনযন্ত্রণা ভুলে থাকার চেষ্টা করে। এটি তাদের হতাশাজনক জীবনের করুণ চিত্র তুলে ধরে।

৭. “বাপব্যাটা দু-ভাই মিলে সারা পাড়া মাথায় করি”- এই ‘সারা পাড়া মাথায় করার’ কারণ কী? ‘বাপব্যাটা দু-ভাই’ বিষয়টি ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: গভীর রাতে বাড়ি ফিরে ঠান্ডা ভাতে নুনটুকুও না পাওয়ার কারণে বাবা ও ছেলে মিলে ক্ষোভে এবং অসহায়তায় সারা পাড়া মাথায় করে।
‘বাপব্যাটা দু-ভাই’ শব্দবন্ধে কবি অভাবের যন্ত্রনায় বাবা ও ছেলের সম্পর্ককে একধরনের সমানুভূতির ভিত্তিতে স্থাপিত করেছেন। এখানে বাবা ও ছেলে যেন জীবনযুদ্ধে সহযোদ্ধা।

৮. “সব দিন হয় না বাজার,..”- উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য কী?

উত্তর: নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনে অভাব নিত্যসঙ্গী। ‘অল্পে খুশি’ থাকা তাদের জীবনের বাস্তবতা। প্রতিদিন বাজার করা তাদের কাছে একধরনের বিলাসিতা, যা দুঃখ-কষ্টের মাঝে কখনোই সম্ভব হয়ে ওঠে না।

৯. “… হলে, হয় মাত্রাছাড়া”- কীসের কথা বলা হয়েছে? ‘মাত্রাছাড়া’ কথাটির মাধ্যমে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?

উত্তর: এখানে নিম্নবিত্ত মানুষের বাজার করার কথা বলা হয়েছে।
তারা প্রতিদিন বাজার করতে পারে না, তবে যেদিন বাজার করতে পারে সেদিন মাত্রাছাড়া খরচ করে। ‘মাত্রাছাড়া’ শব্দের মাধ্যমে কবি বোঝাতে চেয়েছেন তাদের বেহিসাবি আনন্দ ও জীবনযাপনের উচ্ছ্বাস, যা তাদের দুঃখ-কষ্টের মাঝে অস্থায়ী মুক্তির প্রতীক।

১০. “মাঝে মাঝে চলেও না দিন…”- এই না চলা কীসের দিকে ইঙ্গিত করে?

উত্তর: এই উক্তি নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনের অনিশ্চয়তা ও দুঃখের প্রতীক।
অভাব আর অসুখ তাদের নিত্যসঙ্গী। কঠোর পরিশ্রম করেও তারা দিনযাপন নিশ্চিত করতে পারে না। এটি তাদের জীবনের অনিশ্চয়তা ও ক্রমাগত লড়াইকে প্রকাশ করে।

১১. “বাড়িতে ফেরার পথে কিনে আনি গোলাপচারা”- এই গোলাপচারা কিনে আনার তাৎপর্য কী?

উত্তর: নিত্য অভাবের মধ্যেও যেদিন উপার্জন সম্ভব হয়, সেদিন নিম্নবিত্ত মানুষদের জীবন উদযাপন করার প্রবণতা প্রকাশ পায়।
‘গোলাপচারা’ কিনে আনা সেই সামান্য আনন্দের প্রতীক। এটি দেখায়, প্রতিদিন বাজার করা সম্ভব না হলেও মানুষ তার শখ পূরণের ক্ষুদ্র আনন্দ খোঁজে।

১২. “করি তো কার তাতে কী?”- কোন প্রসঙ্গে এ কথা বলা হয়েছে? এখানে বক্তার মনোভাব কী, তা লেখো।

উত্তর: গভীর রাতে ঠান্ডা ভাতে নুনটুকু না পেয়ে ‘বাপব্যাটা দু-ভাই’ মিলে সারা পাড়া মাথায় করে।
এই মন্তব্যে তাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে। সমাজ তাদের প্রতি যে উদাসীন ও অবজ্ঞাসূচক আচরণ করে, তার বিরুদ্ধে এই উক্তি একপ্রকার প্রতিবাদ। এটি তাদের স্পর্ধা ও সামাজিক অবিচারের প্রতি বিদ্রোহের প্রতীক।

১৩. “কিন্তু পুঁতব কোথায়?”- কীসের কথা বলা হয়েছে? কথকের এই মন্তব্যের কারণ আলোচনা করো।

উত্তর: এখানে গোলাপচারার কথা বলা হয়েছে।
নিম্নবিত্ত মানুষেরা তাদের শখকে মনের গভীরে লালন করে। তাই সুযোগ পেলে তারা গোলাপচারা কিনে আনে। কিন্তু যাদের মাথা গোঁজার ঠাঁইই যথেষ্ট কষ্টে জোটে, তাদের পক্ষে গোলাপচারা পোঁতার জায়গা পাওয়া কঠিন। এই মন্তব্যে সেই অসহায়তা ফুটে উঠেছে।

১৪. “খেতে বসে রাগ চড়ে যায়,…”- বক্তা কখন খেতে বসেন? রাগ চড়ে যাওয়ার কারণ কী?

উত্তর: দুপুররাতে বাড়ি ফিরে বক্তা খেতে বসেন।
গভীর রাতে খেতে বসে বক্তার রাগ চড়ে যায়, কারণ তিনি দেখেন ঠান্ডা ভাতে নুনটুকুও নেই। এটি তার দুঃখ ও হতাশার প্রকাশ।

নুন কবিতার প্রশ্ন উত্তর একাদশ শ্রেণীর বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার
Class 11 Second Semester Bengali Question Answer
নুন কবিতার ছোটো প্রশ্ন উত্তর

১৫. “সে অনেক পরের কথা।”- কোন ‘কথা’? কবির এই মন্তব্যের কারণ কী?

উত্তর: বহু কষ্টে পোঁতা গোলাপচারায় ফুল ফুটবে কিনা সেই ‘কথা’ প্রসঙ্গে মন্তব্যটি করা হয়েছে।
জীবনসংগ্রামে ব্যস্ত নিম্নবিত্ত মানুষদের পক্ষে গোলাপচারা পোঁতা সম্ভব হলেও, তাতে ফুল ফুটবে কিনা তা তাদের কাছে দূর ভবিষ্যতের বিষয়। এই মন্তব্য তাদের বর্তমান জীবনের অনিশ্চয়তার প্রতীক।

১৬. “নুন” কবিতার শেষে কীসের দাবি জানানো হয়েছে? এর তাৎপর্য কী?

উত্তর: কবিতার শেষে ‘শুকনো ভাতে’ লবণের ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়েছে।
নিম্নবিত্ত মানুষেরা শোভিত খাবারের স্বপ্ন দেখে না। তাদের কাছে একটু লবণই জীবনের রুক্ষ বাস্তবতাকে সহজ করে তোলে। এই দাবিতে তাদের জীবনের কষ্ট ও প্রাথমিক চাহিদার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

১৭. “আমি তার মাথায় চড়ি”- কথক কার মাথায় চড়েন? মাথায় চড়ার কারণ কী?

উত্তর: এখানে কথক রাগের মাথায় চড়ার কথা বলেছেন।
গভীর রাতে বাড়ি ফিরে ঠান্ডা ভাতে নুনটুকুও না পেয়ে কথকের মনের স্থিরতা ভেঙে যায়। সেই রাগ ও হতাশার কারণেই তিনি মাথায় চড়ার কথা বলেন।

১৮. “নুন” কবিতায় কিনে আনা গোলাপচারাটি কীসের প্রতীক?

উত্তর: জয় গোস্বামীর ‘নুন’ কবিতায় গোলাপচারাটি সৌন্দর্যবিলাসের প্রতীক।
নিম্নবিত্ত মানুষেরা তাদের গোপন শখ ও স্বপ্নকে লালন করে। গোলাপচারা তাদের জীবনের সৌন্দর্য ও আনন্দের ইচ্ছার প্রতীক, যা কঠিন বাস্তবতার মাঝে বিরল হলেও আশার বার্তা বহন করে।

আরও দেখো: ভাব সম্মিলন কবিতার প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment

CLOSE

You cannot copy content of this page