এখানে প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে দুই বন্ধুর সংলাপ রচনা লিখে দেওয়া হলো।
প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে দুই বন্ধুর সংলাপ রচনা: ১
রাহুল: বৃষ্টি আজ যেন থেমে গেল। ক’দিন কী অবস্থা হয়েছে, দেখেছিস?
সায়ন্তনী: রাস্তাঘাট দেখেছিস? প্লাস্টিক আর কুড়ানো বর্জ্য ম্যানহোল ও ড্রেনগুলোতে জমে গেছে। জল বেরোতে পারছে না, তাই রাস্তায় হাঁটতে গেলে ভিজে যাওয়া অজস্র।
রাহুল: সত্যিই, প্লাস্টিক ব্যবহারের এতো ক্ষতি আর চোখে না পড়লে বিশ্বাস করা মুশকিল। মানুষ কেন একেবারে বন্ধ করতে পারছে না?
সায়ন্তনী: মনে কর, আট বছর আগে পাতলা প্লাস্টিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। বাস্তবে কতটা কার্যকর হয়েছে? মুদি দোকান, শপিং মল—প্রতিটি জায়গাতেই এখনও প্লাস্টিকের ব্যবহার চলছে।
রাহুল: হ্যাঁ, তবে বড়ো বড়ো শপিং মলে এখন প্লাস্টিকের ব্যাগ দেওয়া সীমিত।
সায়ন্তনী: কিন্তু খুব সীমিত। অনেক মানুষ এখনো পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করে। আমরা যদি সচেতনভাবে পাট বা সুতোর ব্যাগ ব্যবহার করি, তাহলে পরিস্থিতি অনেক ভালো হবে।
রাহুল: সত্যি, এখন সুন্দর ডিজাইনের পরিবেশবান্ধব ব্যাগ তৈরি হচ্ছে। এগুলো সহজেই ব্যবহার করা যায় এবং মাটিতে পচে যায়।
সায়ন্তনী: প্লাস্টিক কখনো পচে না, তাই আমাদের সবাইকে এটি মগজে রাখতে হবে। বিজ্ঞাপন ও প্রচারও বাড়াতে হবে।
রাহুল: তার চেয়েও জরুরি হলো বাজারে সহজলভ্য কাগজ বা পাটের ব্যাগ। মানুষ যাতে সহজে বিকল্প বেছে নিতে পারে।
সায়ন্তনী: সম্প্রতি আমি দেখেছি, কলকাতার একটি বইমেলায় প্লাস্টিক জমা দিলে বই উপহার হিসেবে দেওয়া হচ্ছে। এই ধরনের উদ্যোগ সচেতনতা তৈরি করতে খুব কার্যকর।
রাহুল: স্কুল ও কলেজে যদি নিয়মিত প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে সেমিনার, নাটক, এবং সচেতনতার কর্মসূচি চলে, তাহলে ছোটদের মধ্যে প্লাস্টিক ব্যবহারের ক্ষতি সম্পর্কে ধারণা গড়ে উঠবে।
সায়ন্তনী: একদম ঠিক। আমাদের মতো ছাত্র-ছাত্রীদেরই এগিয়ে আসতে হবে। ধীরে ধীরে পৃথিবী প্লাস্টিকমুক্ত করা সম্ভব।
প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে দুই বন্ধুর সংলাপ রচনা: ২
রোহিত: তুমি জানো কি, বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো সমস্যা পরিবেশ দূষণ?
মিথিলা: হ্যাঁ, এবং তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ কারণ হলো প্লাস্টিক বা পলিথিন। প্রতিদিন আমরা কত কিছুতে প্লাস্টিক ব্যবহার করি—জল, খাবার, আসবাবপত্র, দরজা-জানালা—প্রায় সবকিছুতেই।
রোহিত: সত্যি, প্লাস্টিক সুবিধাজনক হলেও প্রকৃতিতে মিশে যায় না। মাটিতে জমে গিয়ে দূষণ ঘটায়। গাছের বৃদ্ধিতে বাধা দেয় এবং প্রাণীকূলের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে।
মিথিলা: ভুলবশত খাদ্যের সঙ্গে প্লাস্টিক গেলে মানুষ ও গবাদি পশু বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। কিডনি সমস্যা, ক্যান্সার বৃদ্ধি এবং প্রাণহানির ঝুঁকি বাড়ে।
রোহিত: তাই ক্রমাগত সচেতনতা জরুরি। মানুষকে বোঝানো দরকার প্লাস্টিকের ক্ষতির ব্যাপারে। ছোটো কাগজ বা কাপড়ের সামগ্রী ব্যবহার করতে পারি।
মিথিলা: একমাত্র প্লাস্টিক বর্জন-এর মাধ্যমে আমরা পৃথিবীকে আসন্ন বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারি।
রোহিত: ঠিক তাই! আমাদের স্লোগান হওয়া উচিত—
“সবুজ পৃথিবী করতে আমাদের জয় শত্রু প্লাস্টিক আর ব্যবহার নয়।”
প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে দুই বন্ধুর সংলাপ রচনা: ৩
অর্পণ: জানিস সায়নী, আজকাল প্লাস্টিক দূষণ ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে।
সায়নী: একদম ঠিক বলছিস। বারবার প্রচার হলেও মানুষ সচেতন হচ্ছে না। রাস্তায়, বাজারে, এমনকি ড্রেনে—সবখানেই প্লাস্টিক জমে থাকছে।
অর্পণ: হ্যাঁ, এর ফলেই জলনিকাশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। একটু বৃষ্টি নামলেই কলকাতা শহর আর শহরতলিতে হাঁটু-জল দাঁড়িয়ে যায়। মানুষকে যে কী ভোগান্তি পোহাতে হয়!
সায়নী: কিন্তু জানিস, আমাদের মতো স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাই এখন সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে। তারা মানুষকে বোঝাচ্ছে কীভাবে প্লাস্টিক পরিবেশকে ক্ষতি করছে।
অর্পণ: সত্যি? দারুণ খবর! আমি শুনেছি বিভিন্ন প্রদর্শনী আর প্রচারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে শামিল করা হচ্ছে।
সায়নী: হ্যাঁ, আর সবাইকে একটাই স্লোগান দেওয়া হচ্ছে—
“প্লাস্টিক হঠাও, পরিবেশ বাঁচাও।”
অর্পণ: খুব ভালো উদ্যোগ। যদি আমরা সবাই একসাথে সচেতন হই, তবেই এই বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে দুই বন্ধুর সংলাপ রচনা: ৪
সায়ন: অর্পিতা, জানো, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে প্লাস্টিক এখন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অর্পিতা: একদম ঠিক বলেছিস। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমরা নানা কাজে প্লাস্টিক ব্যবহার করি—পানীয়ের বোতল, বাজারের ব্যাগ, খেলনা, এমনকি আসবাবপত্র পর্যন্ত।
সায়ন: হ্যাঁ, কিন্তু সমস্যার জায়গাটা হলো প্লাস্টিক প্রকৃতিতে সহজে নষ্ট হয় না। এটা শত শত বছর পর্যন্ত অক্ষত থাকে। ফলে মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়, গাছপালার বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়।
অর্পিতা: শুধু তাই নয়। শহরের ড্রেন আর নালাগুলোতেও প্লাস্টিক জমে থাকে। একটু বৃষ্টি হলেই জল বেরোতে পারে না, চারিদিকে জল জমে যায়। এতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয় আর মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকে না।
সায়ন: ঠিক বলেছিস। জলাবদ্ধতা থেকে আবার মশার বংশবিস্তার হয়, ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়ার মতো রোগ ছড়িয়ে পড়ে। আর সমুদ্র ও নদীতে গেলে দেখা যায়, কত কচ্ছপ, মাছ, এমনকি তিমির পেট থেকেও কিলো কিলো প্লাস্টিক বেরোচ্ছে। জলজ প্রাণীরা ভুল করে প্লাস্টিক খেয়ে মারা যাচ্ছে।
অর্পিতা: ভয়াবহ ব্যাপার! মানুষের ক্ষেত্রেও ঝুঁকি কম নয়। খাবারে বা জলে প্লাস্টিক মিশে গেলে ক্যান্সার, কিডনির সমস্যা এমনকি হরমোনজনিত অসুখ পর্যন্ত হতে পারে।
সায়ন: তাই বলছি, এখনই যদি সচেতন না হই, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।
অর্পিতা: একদম। আর সমাধানও আমাদের হাতেই আছে—
একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যাগ, স্ট্র, গ্লাস ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। ব্যবহৃত প্লাস্টিক রিসাইকেল করে পুনঃপ্রয়োগ করতে হবে। কাপড়, কাগজ বা পাটের ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। মানুষকে সচেতন করার জন্য স্কুল, কলেজ ও গণমাধ্যমে প্রচার চালাতে হবে।
সায়ন: আর সরকারেরও কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। শুধু আইন করলেই হবে না, দোকানদার থেকে সাধারণ মানুষ—সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে।
অর্পিতা: আমাদের মতো ছাত্রছাত্রীদেরও এগিয়ে আসা জরুরি। নাটক, প্রদর্শনী, স্লোগান ইত্যাদির মাধ্যমে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
সায়ন: হ্যাঁ, মনে রাখতে হবে—
“সবুজ পৃথিবী চাই, প্লাস্টিক ব্যবহার আর নয়।”
আরও দেখো: অরণ্য সপ্তাহ পালন বিষয়ে প্রতিবেদন রচনা