পথের দাবী গল্পের প্রশ্ন উত্তর / মাধ্যমিক বাংলা / WBBSE

এখানে পথের দাবী গল্পের প্রশ্ন উত্তর শেয়ার করা হলো। / মাধ্যমিক বাংলা পথের দাবী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় / WBBSE

মাধ্যমিক বাংলা
পথের দাবী গল্পের MCQ প্রশ্ন উত্তর

১. ‘পথের দাবী’ উপন্যাসের লেখক কে?
ক) শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
খ) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
গ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ঘ) শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

উত্তর: ক) শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

২. ‘পথের দাবী’ কাহিনিটি যে উপন্যাসের অংশবিশেষ, তা হল—
ক) অরক্ষণীয়া
খ) পথের দাবী
গ) পল্লীসমাজ
ঘ) সব্যসাচী

উত্তর: খ) পথের দাবী

৩. পুলিশস্টেশনে বাঙালিদের মোটঘাট খুলে তদারক শুরু করেছিলেন—
ক) জগদীশবাবু
খ) নিমাইবাবু
গ) অপূর্ব
ঘ) গিরীশবাবু

উত্তর: ক) জগদীশবাবু

৪. জগদীশবাবু পেশায় ছিলেন—
ক) তেলের কারখানার মিস্ত্রি
খ) পুলিশ
গ) ডাক্তার
ঘ) পিয়াদা

উত্তর: খ) পুলিশ

৫. পুলিশস্টেশনে বসে থাকা বাঙালিরা কোথায় কাজ করত?
ক) বর্মা জাহাজঘাটে
খ) বর্মা অয়েল কোম্পানিতে
গ) বর্মা কয়লাখনিতে
ঘ) বর্মা চটকলে

উত্তর: খ) বর্মা অয়েল কোম্পানিতে

৬. বর্মা অয়েল কোম্পানি অবস্থিত ছিল—
ক) রেঙ্গুনে
খ) উত্তর ব্রহ্মদেশে
গ) মিক্সিলায়
ঘ) ভামো শহরে

উত্তর: খ) উত্তর ব্রহ্মদেশে

৭. পুলিশ যাঁর খোঁজে তল্লাশি করছিল, তিনি ছিলেন একজন—
ক) দেশদ্রোহী
খ) রাজদ্রোহী
গ) খুনি
ঘ) অপরাধী

উত্তর: খ) রাজদ্রোহী

৮. পোলিটিক্যাল সাসপেক্টের নাম ছিল—
ক) গিরীশ মহাপাত্র
খ) সব্যসাচী
গ) নিমাইবাবু
ঘ) অপূর্ব

উত্তর: খ) সব্যসাচী

৯. সব্যসাচী মল্লিক পেশায় ছিলেন—
ক) শিক্ষক
খ) ডাক্তার
গ) পুলিশ
ঘ) কেরানি

উত্তর: খ) ডাক্তার

১০. গিরীশ মহাপাত্রের বয়স ছিল—
ক) চল্লিশ-বিয়াল্লিশ
খ) ত্রিশ-বত্রিশের অধিক নয়
গ) পঞ্চাশ-পঞ্চান্ন
ঘ) পঞ্চাশের কাছাকাছি

উত্তর: খ) ত্রিশ-বত্রিশের অধিক নয়

১১. কেবল আশ্চর্য-আশ্চর্য বিষয়টি কী?
ক) শক্ত সবল শরীর
খ) দুই হাতের শক্তি
গ) দুটি চোখের দৃষ্টি
ঘ) কোনোটিই নয়

উত্তর: গ) দুটি চোখের দৃষ্টি

১২. গিরীশ মহাপাত্রের চোখ দুটি ছিল—
ক) ধূর্ততায় ভরা
খ) উদাস ও স্নিগ্ধ
গ) নিষ্প্রভ ও বিষণ্ণ
ঘ) গভীর জলাশয়ের মতো

উত্তর: ঘ) গভীর জলাশয়ের মতো

১৩. গিরীশ মহাপাত্রের চেহারা ও পোশাক-পরিচ্ছদ ছিল—
ক) পরিপাটি ও সাফসুতরো
খ) নোংরা ও বিরক্তিকর
গ) সাদাসিধে
ঘ) অদ্ভুত ও হাস্যকর

উত্তর: ঘ) অদ্ভুত ও হাস্যকর

১৪. গিরীশ মহাপাত্রের জামার রং ছিল-
(ক) গেরুয়া
(খ) নীল
(গ) রামধনু
(ঘ) সাদা

উত্তর: (গ) রামধনু

১৫. গিরীশ মহাপাত্রের চুলে যে-গন্ধ ছিল, তার কারণ ছিল-
(ক) নেবুর তেল
(খ) গাঁজিকা
(গ) প্রসাধনী
(ঘ) বহুদিন স্নান না-করা

উত্তর: (ক) নেবুর তেল

১৬. বুক-পকেটের রুমালে কোন্ প্রাণীর অবয়ব ছিল?
(ক) হরিণ
(খ) বাঘ
(গ) শেয়াল
(ঘ) হায়না

উত্তর: (খ) বাঘ

১৭. ‘কাকাবাবু, এ লোকটিকে আপনি কোনো কথা জিজ্ঞেস না করেই ছেড়ে দিন….’ এক্ষেত্রে অপূর্বর ‘কাকাবাবু’ কে?
(ক) জগদীশবাবু
(খ) গিরীশ মহাপাত্র
(গ) নিমাইবাবু
(ঘ) রামদাস তলওয়ারকর

উত্তর: (গ) নিমাইবাবু

১৮. ‘তবে ও বস্তুটি পকেটে কেন’-পকেটে থাকা বস্তুটি হল-
(ক) কম্পাস
(খ) গাঁজার কলকে
(গ) বাঘ-আঁকা রুমাল
(ঘ) ফুটবল

উত্তর: (খ) গাঁজার কলকে

১৯. গিরীশ মহাপাত্রের ট্যাকে পাওয়া গিয়েছিল-
(ক) দুটি টাকা ও গন্ডা ছয়েক পয়সা
(খ) একটি টাকা ও গন্ডা ছয়েক পয়সা
(গ) একটি টাকা ও গন্ডা চারেক পয়সা
(ঘ) দুটি টাকা ও গন্ডা চারেক পয়সা

উত্তর: (খ) একটি টাকা ও গন্ডা ছয়েক পয়সা

ক্লাস 10 বাংলা
পথের দাবী গল্পের MCQ প্রশ্ন উত্তর

২০. ‘বুড়োমানুষের কথাটা শুনো।’- ‘বুড়োমানুষ’-টি হলেন-
(ক) জগদীশবাবু
(খ) অপূর্ব
(গ) নিমাইবাবু
(ঘ) গিরীশ মহাপাত্র

উত্তর: (গ) গিরীশ মহাপাত্র

২১. ‘দয়ার সাগর। পরকে সেজে দি, নিজে খাঁইনে।’- বক্তা হলেন-
(ক) নিমাইবাবু
(খ) গিরীশ মহাপাত্র
(গ) জগদীশবাবু
(ঘ) অপূর্ব

উত্তর: (গ) জগদীশবাবু

২২. ‘এ শহরে আরও কিছুদিন নজর রাখা দরকার’- কোন্ শহর?
(ক) ভামো
(খ) ম্যান্ডালে
(গ) রেঙ্গুন
(ঘ) উত্তর ব্রহ্মদেশ

উত্তর: (গ) রেঙ্গুন

২৩. ‘অপূর্ব রাজি হইয়াছিল’- অপূর্ব কোন্ ব্যাপারে রাজি হয়েছিল?
(ক) সব্যসাচী মল্লিককে দেখতে যেতে
(খ) রামদাসের স্ত্রীর বানানো মিষ্টান্ন প্রত্যহ গ্রহণ করতে
(গ) নাচ দেখতে যেতে
(ঘ) ভামোর অফিসে চলে যেতে

উত্তর: (খ) রামদাসের স্ত্রীর বানানো মিষ্টান্ন প্রত্যহ গ্রহণ করতে

২৪. ‘এতবড়ো কার্যকুশলা মেয়ে আর যে কেহ আছে মনে হয় না হে তলওয়ারকর।’- ‘কার্যকুশলা মেয়ে’-টি কে?
(ক) তলওয়ারকরের স্ত্রী
(খ) অপূর্বর স্ত্রী
(গ) উপরতলার বাসিন্দা খ্রিস্টান মেয়েটি
(ঘ) অপূর্বর বোন

উত্তর: (গ) উপরতলার বাসিন্দা খ্রিস্টান মেয়েটি

২৫. তেওয়ারি বর্মা নাচ দেখতে যে-স্থানে গিয়েছিল, তার নাম-
(ক) ফয়া
(খ) শোএবো
(গ) মিক্সিলা
(ঘ) এনাঞ্জাংক

উত্তর: (ঘ) এনাঞ্জাংক

২৬. ‘গভর্নমেন্টের কত টাকাই না এরা বুনো হাঁসের পিছনে ছুটোছুটি করে অপব্যয় করলে!’ – ‘বুনো হাঁস’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
(ক) জংলি হাঁসদের
(খ) চোর-ডাকাতদের
(গ) বিদ্রোহীদের
(ঘ) ইংরেজ কর্মচারীদের

উত্তর: (খ) চোর-ডাকাতদের

২৭. ‘কিন্তু বুনো হাঁস ধরাই যে এদের কাজ’ – বক্তা হলেন-
(ক) অপূর্ব
(খ) জগদীশবাবু
(গ) রামদাস
(ঘ) অরুণোদয়

উত্তর: (ক) অপূর্ব

২৮. অপূর্বর পিতার বন্ধু হলেন-
(ক) জগদীশবাবু
(খ) রামদাস
(গ) নিমাইবাবু
(ঘ) গিরীশ মহাপাত্র

উত্তর: (গ) নিমাইবাবু

২৯. দারোগা নিমাইবাবু সম্পর্কে অপূর্বর-
(ক) কাকা
(খ) মামা
(গ) মেসো
(ঘ) পিসেমশাই

উত্তর: (ক) কাকা

৩০. অপূর্বকে লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বার করে দিয়েছিল-
(ক) ফিরিঙ্গি ছোঁড়ারা
(খ) রেলপুলিশ
(গ) টিকিট পরীক্ষক
(ঘ) স্টেশনমাস্টার

উত্তর: (ক) ফিরিঙ্গি ছোঁড়ারা

৩১. বড়োসাহেব অপূর্বকে পাঠিয়েছিলেন-
(ক) ভামোতে
(খ) ম্যান্ডালে
(গ) রেঙ্গুনে
(ঘ) উত্তর ব্রহ্মদেশে

উত্তর: (ক) ভামোতে

৩২. ‘সে ট্রেনে চাপিয়া বসিল’- সে কোথায় যাচ্ছিল?
(ক) বর্মা নগরের উদ্দেশে
(খ) রেঙ্গুন নগরের উদ্দেশে
(গ) ভামো নগরের উদ্দেশে
(ঘ) কোনোটিই নয়

উত্তর: (গ) ভামো নগরের উদ্দেশে

৩৩. ‘তোমার চিন্তা নেই ঠাকুর।’- ‘ঠাকুর’ বলতে যাকে বোঝানো হয়েছে, তার নাম-
(ক) নিমাইবাবু
(খ) গিরীশ মহাপাত্র
(গ) তেওয়ারি
(ঘ) তলওয়ারকর

উত্তর: (গ) তেওয়ারি

৩৪. গিরীশ মহাপাত্রের সাথে অপূর্বর পুনরায় কোথায় দেখা হয়েছিল?
(ক) পুলিশস্টেশনে
(খ) বিমানবন্দরে
(গ) জাহাজঘাটায়
(ঘ) রেলস্টেশনে

উত্তর: (ঘ) রেলস্টেশনে

৩৫. কোথা থেকে গিরীশের দুই বন্ধুর আসার কথা ছিল?
(ক) বর্মা থেকে
(খ) ভামো থেকে
(গ) রেঙ্গুন থেকে
(ঘ) এনাল্লাং থেকে

উত্তর: (ঘ) এনাল্লাং থেকে

মাধ্যমিক বাংলা
পথের দাবী গল্পের অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

১. ‘পুলিশ-স্টেশনে প্রবেশ করিয়া দেখা গেল’—কে, কী?

উত্তর: অপূর্ব দেখল, ছ-জন বাঙালি বসে আছে এবং পুলিশ তাদের মালপত্র তল্লাশি করছে।

২. ‘তাহাকে আর একটা ঘরে আটকাইয়া রাখা হইয়াছে।’—কাকে আটকানোর কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: গিরীশ মহাপাত্র ছদ্মবেশে থাকা রাজবিদ্রোহী সব্যসাচী মল্লিককে আটক করা হয়েছিল।

৩. থানায় আটক করা ছ-জন বাঙালি রেঙ্গুনে এসেছিল কেন?

উত্তর: তারা তেলের খনির মিস্ত্রি ছিল; খারাপ জল-হাওয়ার জন্য অন্য কাজের খোঁজে রেঙ্গুনে আসে।

৪. ‘লোকটি কাশিতে কাশিতে আসিল।’—লোকটির পরিচয় দাও।

উত্তর: লোকটি ছিল গিরীশ মহাপাত্র, ছদ্মবেশে সব্যসাচী, যাকে পুলিশ প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করে।

৫. ‘সহসা আশঙ্কা হয়,’—কোন্ আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: গিরীশের শারীরিক অবস্থার জন্য সে যে মৃত্যুর খুব কাছাকাছি—এই আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে।

৬. ‘কেবল এই জন্যই যেন সে আজও বাঁচিয়া আছে।’—এই বলার কারণ কী?

উত্তর: গিরীশের চোখে ছিল এমন এক গভীর প্রাণশক্তি, যা মৃত্যুকেও জয় করতে পারে।

৭. ‘অপূর্ব মুগ্ধ হইয়া সেইদিকে চাহিয়া ছিল’—অপূর্ব কী দেখে মুগ্ধ হয়েছিল?

উত্তর: গিরীশ মহাপাত্রের অদ্ভুত দুটি চোখ দেখে অপূর্ব মুগ্ধ হয়ে তাকিয়েছিল।

৮. ‘সহসা আশঙ্কা হয়,’—কোন্ আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: গিরীশের কাশির তীব্রতায় মনে হয়েছিল সে হয়তো মৃত্যুর মুখে পড়েছে।

৯. ‘লোকটি কাশিতে কাশিতে আসিল।’—লোকটির পরিচয় দাও।

উত্তর: সে ছিল সব্যসাচী মল্লিক, ছদ্মবেশে গিরীশ মহাপাত্র নাম নিয়ে থানায় এসেছিল।

১০. ‘কেবল এই জন্যই যেন সে আজও বাঁচিয়া আছে।’—এই বলার কারণ কী?

উত্তর: তার দৃষ্টিতে লুকানো ছিল প্রাণশক্তি, যা তাকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে রেখেছিল।

১১. ‘নিমাইবাবু চুপ করিয়া রহিলেন।’—নিমাইবাবু কেন চুপ করে থাকলেন?

উত্তর: অপূর্বর আশ্বাসে বিশ্বাস করলেও সব্যসাচীর বুদ্ধির পরিচয় থাকায় নিমাইবাবু নিশ্চিত না হয়ে চুপ করে থাকেন।

১২. ‘আর যাই হোক্, যাঁকে খুঁজছেন তাঁর কালচারের কথাটা একবার ভেবে দেখুন।’—কার খোঁজ করা হচ্ছিল?

উত্তর: বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিকের খোঁজ করা হচ্ছিল।

১৩. ‘দেখি তোমার ট্যাকে এবং পকেটে কী আছে?’—গিরীশ মহাপাত্রের ট্যাকে ও পকেটে কী কী পাওয়া গিয়েছিল?

উত্তর: ট্যাকে ছিল একটি টাকা ও গণ্ডা ছয়েক পয়সা, আর পকেটে ছিল লোহার কম্পাস, ফুটরুল, বিড়ি, দেশলাই ও গাঁজার কলকে।

১৪. ‘তবে এ বস্তুটি পকেটে কেন?’—কোন ‘বস্তুটি’ পকেটে ছিল?

উত্তর: গাঁজার কলকের কথাই এখানে বলা হয়েছে।

১৫. ‘যদি কারও কাজে লাগে তাই তুলে রেখেছি’—কে, কী তুলে রেখেছিল?

উত্তর: গিরীশ মহাপাত্র রাস্তায় পড়ে থাকা গাঁজার কলকে কুড়িয়ে তুলে রেখেছিল।

১৬. ‘দেখো জগদীশ, কিরূপ সদাশয় ব্যক্তি ইনি।’—ব্যক্তিটিকে সদাশয় বলা হয়েছে কেন?

উত্তর: গিরীশ বলেছিল, গাঁজার কলকে সে নিজের নয়, অন্যের কাজে লাগবে ভেবে পকেটে রেখেছে—এই জন্যই তাকে সদাশয় বলা হয়।

১৭. ‘বুড়োমানুষের কথাটা শুনো।’—বুড়োমানুষ কোন্ কথা বলেছিলেন?

উত্তর: গাঁজা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর—এই পরামর্শ দিয়েছিলেন নিমাইবাবু।

১৮. ‘রাতে মেলট্রেনটির প্রতি একটু দৃষ্টি রেখো’—কেন রাতের ট্রেনের প্রতি দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে?

উত্তর: বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক পালাতে পারে সন্দেহে তাকে ধরার জন্য নিমাইবাবু এই নির্দেশ দিয়েছিলেন।

১৯. ‘এমন সৌভাগ্যকেও অপূর্বর মন যেন গ্রাহাই করিল না।’—কোন বিষয়টি অপূর্বর সৌভাগ্য বলে মনে হয়েছে?

উত্তর: সব্যসাচী ধরা পড়েনি এবং থানায় কোনো বিপদ হয়নি—এটিকেই অপূর্বর সৌভাগ্য বলে মনে হয়েছে।

মাধ্যমিক বাংলা
পথের দাবী গল্পের অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

২০. ‘পরকে সেজে দি, নিজে খাইনে’—কখন এমন উক্তি করা হয়েছে?

উত্তর: গাঁজার কলকে পকেটে থাকায় গিরীশ জানায় সে গাঁজা দেয়, নিজে খায় না—এই কথা শুনে জগদীশবাবু রেগে এমন কথা বলেন।

২১. ‘মিথ্যেবাদী কোথাকার’—কে, কাকে মিথ্যেবাদী বলেছেন?

উত্তর: জগদীশবাবু গিরীশ মহাপাত্রকে ‘মিথ্যেবাদী’ বলেছেন।

২২. ‘মনে হলে দুঃখে লজ্জায় ঘৃণায় নিজেই যেন মাটির সঙ্গে মিশিয়ে যাই।’—কোন্ কথা মনে করে অপূর্বর এই মনোবেদনা?

উত্তর: অপূর্ব বিনাদোষে ফিরিঙ্গি যুবকদের হাতে মার খেয়েও উপস্থিত ভারতীয়দের নীরবতা মনে করে দুঃখিত ও লজ্জিত হয়েছিল।

২৩. ‘সবকটা আফিসেই গোলযোগ ঘটছে’—সবকটা অফিসের নাম লেখো।

উত্তর: ভামো, ম্যান্ডালে, শোএবো, মিথিলা এবং প্রোম—এই পাঁচটি অফিসে গোলযোগ ঘটছিল।

২৪. অপূর্ব ট্রেনের কোন্ শ্রেণির যাত্রী ছিলেন?

উত্তর: অপূর্ব ট্রেনের প্রথম শ্রেণির যাত্রী ছিলেন।

২৫. ভামো যাত্রায় ট্রেনে অপূর্বর কে কে সঙ্গী হয়েছিল?

উত্তর: অপূর্বর সঙ্গে ছিল এক আরদালি ও অফিসের এক হিন্দুস্থানি ব্রাহ্মণ পেয়াদা।

২৬. ‘ইহা যে কত বড়ো ভ্রম তাহা কয়েকটা স্টেশন পরেই সে অনুভব করিল।’—’ভ্রম’-টি কী?

উত্তর: প্রথম শ্রেণির যাত্রী হওয়ায় সম্মান পাবে ভাবলেও বারবার পুলিশি হেনস্তায় অপূর্বর সেই ধারণা ভ্রমে পরিণত হয়।

২৭. ‘ও নিয়ম রেলওয়ে কর্মচারীর জন্য’—কোন্ নিয়ম রেলওয়ে কর্মচারীর জন্য?

উত্তর: পুলিশ অপূর্বকে বলে, রেলওয়ের প্রথম শ্রেণি ভারতীয়দের জন্য নয়, তা শুধু কর্মচারীদের জন্য—এই কথা বলে তারা অপূর্বর ঘুম ভেঙে তল্লাশি করছিল।

মাধ্যমিক বাংলা
পথের দাবী গল্পের ৩ মার্কের প্রশ্ন উত্তর

১. “কেবল আশ্চর্য সেই রোগা মুখের অদ্ভুত দুটি চোখের দৃষ্টি।” – কার কথা বলা হয়েছে? চোখ দুটির বর্ণনা দাও।

উত্তর: এই উক্তিটি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথের দাবী’ গ্রন্থের কেন্দ্রীয় চরিত্র সব্যসাচী ওরফে গিরীশ মহাপাত্রকে লক্ষ্য করে বলা হয়েছে।
গিরীশ মহাপাত্রের চোখদুটি ছিল যেন এক রহস্যের দরজা—ছোটো না বড়ো, টানা না গোল—তা নির্ণয় করা কঠিন। তবু সেই দৃষ্টিতে ছিল এক অদ্ভুত গাম্ভীর্য, যেন গভীর জলাশয়ের মতো, যার নিচে চাপা পড়ে আছে ভয়াবহ স্রোত। সেই চোখে কোনো হাসি নেই, খেলা নেই—আছে কেবল হুঁশিয়ারি, নিঃশব্দ নির্দেশ—”দূরে থাকো!” আসলে, এই দুটি চোখই ছদ্মবেশের অন্তরালে লুকিয়ে থাকা এক অতিমানব সব্যসাচীর পরিচয় বহন করে।

২. “বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে, কিন্তু শখ ষোলোআনাই বজায় আছে তা স্বীকার করতে হবে।” – কার সম্পর্কে এই মন্তব্য করা হয়েছে? তার শখের পরিচয় দাও।

উত্তর: এই মন্তব্যটি এসেছে নিমাইবাবুর মুখ থেকে, আর এতে বোঝানো হয়েছে ছদ্মবেশী গিরীশ মহাপাত্র ওরফে সব্যসাচী মল্লিককে।
শরীর তার দুর্বল হলেও বাহ্যিক শখের কোনো ঘাটতি ছিল না। মাথায় স্টাইলিশ ছাঁটের চুলে সুগন্ধি তেল, পরনে রামধনুর মতো রঙিন জাপানি সিল্কের পাঞ্জাবি, বিলাতি মখমল পাড়ের সূক্ষ্ম কালো শাড়ি, পকেটে বাঘের মুখ আঁকা রুমাল, পায়ে লাল ফিতে দিয়ে বাঁধা সবুজ মোজা আর চকচকে বার্নিশ করা পাম্পশু—এসবই যেন ঘোষণা করে তার সত্তার অলঙ্ঘনীয় রুচিবোধকে। আর সেই সবকিছুর শিখরে—হরিণশিঙের হাতল দেওয়া একটি ছড়ি—যা তার শখকে সম্পূর্ণ করে তোলে এক মোহময় ব্যক্তিত্বে।

৩. “তবে এ বস্তুটি পকেটে কেন?” – কোন বস্তুর কথা বলা হয়েছে? তা পকেটে থাকার সপক্ষে যে যুক্তিটি দেওয়া হয়েছিল, তা কতখানি সন্তোষজনক?

উত্তর: এই উদ্ধৃতাংশে উল্লিখিত ‘বস্তুটি’ হল গাঁজার একটি কলকে।
বর্মায় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের সময় গিরীশ মহাপাত্রের পকেটে এই কলকেটি পাওয়া যায়। জিজ্ঞেস করলে সে জানায়, সে গাঁজা খায় না; রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়ে বন্ধুদের প্রয়োজন হতে পারে ভেবে পকেটে রেখেছিল। কিন্তু অভিজ্ঞ দারোগা নিমাইবাবু তার চেহারার মধ্যে গাঁজা সেবনের লক্ষণ দেখে এই যুক্তিকে একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য মনে করেননি। তাই এই যুক্তি কতখানি সন্তোষজনক—তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থেকেই যায়।

৪. “বুড়োমানুষের কথাটা শুনো।” – এখানে ‘বুড়োমানুষ’টি কে? তিনি কাকে, কোন্ কথা শুনতে বলেছেন?

উত্তর: উক্ত উক্তিতে ‘বুড়োমানুষ’ বলতে বোঝানো হয়েছে পুলিশ দারোগা নিমাইবাবুকে।
তিনি কথাটি বলেছেন গিরীশ মহাপাত্রকে উদ্দেশ্য করে। তল্লাশিতে গাঁজার কলকে পাওয়ার পর, গিরীশ গাঁজা না-খাওয়ার দাবি করে। কিন্তু তার শারীরিক চেহারা দেখে নিমাইবাবু নিশ্চিত হন যে সে গাঁজা খায়। অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি গিরীশকে গাঁজা না খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, “বুড়োমানুষের কথাটা শুনো”—এই পরামর্শ যেন সে মেনে চলে।

৫. “অপূর্ব রাজি হইয়াছিল”—অপূর্ব কীসে রাজি হয়েছিল?

উত্তর: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথের দাবী’ পাঠ্যাংশে দেখা যায়, অপূর্ব যখন রেঙ্গুনে ছিল, তখন তার সহকর্মী তলওয়ারকরের স্ত্রীর অনুরোধ ছিল—অপূর্বর বাড়ির কেউ না-আসা পর্যন্ত অপূর্বকে তাঁর হাতে তৈরি মিষ্টান্নে জলযোগ সম্পন্ন করতে হবে। অপূর্ব এই অনুরোধে রাজি হয়েছিল।

মাধ্যমিক বাংলা
পথের দাবী গল্পের ৩ মার্কের প্রশ্ন উত্তর

৬. ‘বাবাই একদিন এঁর চাকরি করে দিয়েছিলেন।’—’এঁ’ কে? অপূর্বর বাবা কাকে, কী চাকরি করে দিয়েছিলেন?

উত্তর: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ পাঠ্যাংশে উক্ত উক্তির বক্তা হলেন অপূর্ব।
এখানে ‘এঁ’ বলতে বোঝানো হয়েছে নিমাইবাবুকে। অপূর্বর বাবা ছিলেন নিমাইবাবুর শুভানুধ্যায়ী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি। তিনি একসময় নিমাইবাবুকে ব্রিটিশ সরকারের অধীনে পুলিশ বিভাগে চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে সেই নিমাইবাবুই হয়ে ওঠেন ইংরেজ সরকারের একনিষ্ঠ কর্মচারী, যিনি দেশপ্রেমিকদের দমন করে ব্রিটিশদের স্বার্থ রক্ষা করেন।

৭. ‘তিনি ঢের বেশি আমার আপনার।’—কে অপূর্বর বেশি আপনার জন? উক্তিটির মাধ্যমে বক্তার চরিত্রের কোন্ দিকটি ফুটে ওঠে?

উত্তর: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ উপন্যাসের অন্তর্গত উক্ত উদ্ধৃতাংশে অপূর্বর বেশি ‘আপনার জন’ হলেন বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক।
এই উক্তির মাধ্যমে অপূর্বর দেশপ্রেমিক ও আদর্শবাদী চরিত্রের পরিচয় পাওয়া যায়। দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণনিবেদনকারী সব্যসাচীর প্রতি তার অগাধ শ্রদ্ধা ও আস্থা রয়েছে। অপূর্বর মতো তরুণরা দেশপ্রেমের আদর্শে দীক্ষিত, যারা সব্যসাচীর মতো বিপ্লবীদের ব্যক্তিগত আত্মীয়ের চেয়েও আপন মনে করে।

৮. ‘আমি ভীরু, কিন্তু তাই বলে অবিচারে দণ্ডভোগ করার অপমান আমাকে কম বাজে না।’—বক্তা কাকে এ কথা বলেছিল? কোন অবিচারের দণ্ডভোগ তাকে ব্যথিত করেছিল?

উত্তর: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ উপন্যাসে উক্ত কথাগুলি অপূর্বর মুখে রামদাস তলওয়ারকরের উদ্দেশে বলা হয়েছে।
একবার এক ইংরেজ ছোঁড়া বিনা দোষে অপূর্বর গায়ে লাথি মেরে তাকে প্ল্যাটফর্ম থেকে বের করে দেয়। প্রতিবাদ জানালে স্টেশনমাস্টারও তাকে শুধু ভারতীয় হওয়ার অপরাধে তাড়িয়ে দেয়। এই অবিচার ও জাতিগত অপমান অপূর্বর মনে গভীর আঘাত করে। সে নিজেকে ভীরু ভাবলেও অবিচারে দণ্ডভোগ তাকে অসহ্য যন্ত্রণায় কষ্ট দেয়।

৯. ‘তার লাঞ্ছনা এই কালো চামড়ার নিচে কম জ্বলে না।’—বক্তা কে? তার কোন লাঞ্ছনার কথা এখানে বলা হয়েছে?

উত্তর: শরৎচন্দ্রের ‘পথের দাবী’ উপন্যাসের আলোচ্য উক্তিটির বক্তা হলেন অপূর্বর সহকর্মী রামদাস তলওয়ারকর।
একবার রেলস্টেশনে অপূর্বর গায়ে বিনা কারণে লাথি মেরে কিছু ইংরেজ ছোঁড়া তাকে প্ল্যাটফর্ম থেকে বের করে দেয়। প্রতিবাদ জানালে স্টেশনমাস্টারও অপূর্বকে তাড়িয়ে দেয়। এই জাতিগত বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কোনো ভারতীয় প্রতিবাদ করেনি। এই দৃশ্য দেখে রামদাস বুঝতে পারেন—অপূর্বর মতো একজন শিক্ষিত ভারতীয়র অপমানও এই উপনিবেশে কত গভীরভাবে জ্বলে।

১০. “এই সুখবরে তারা সব খুশি হয়ে গেল।”—কারা, কেন খুশি হয়েছিল?

উত্তর: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ উপন্যাসে উদ্ধৃত উক্তিটির ‘তারা’ বলতে রেঙ্গুন রেলস্টেশনে উপস্থিত ভারতীয় দর্শকদের বোঝানো হয়েছে।
অপূর্বর ওপর ফিরিঙ্গি যুবকদের অন্যায় আক্রমণের পর, সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা ভারতীয়দের কেউ প্রতিবাদ করেনি। বরং তারা কৌতূহলী ও উদাসীন দর্শকের ভূমিকা পালন করেছিল।
পরে যখন খবর এল যে অপূর্বর হাড়-পাঁজর ভাঙেনি, তখন তারা তাতে খুশি হল। এটি নিছক মানবিক সহানুভূতি নয়, বরং নিঃসাড় প্রতিবাদহীন মনোবৃত্তিরই একটি লজ্জাজনক প্রকাশ।
এই খুশি হওয়ার মধ্যে ভারতীয়দের আত্মমর্যাদাহীনতা ও পরাধীনতার প্রতি মানসিক অভ্যস্ততা ফুটে ওঠে, যা উপনিবেশিক শাসনের নির্মম বাস্তবতাকে উন্মোচন করে।

মাধ্যমিক বাংলা
পথের দাবী গল্পের ৫ মার্কের প্রশ্ন উত্তর

১. “বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে, কিন্তু শখ ষোলোআনাই বজায় আছে।” — বাবুটি কে? তার সাজসজ্জার পরিচয় দাও। অথবা, তাঁর স্বাস্থ্য ও শখের পরিচয় দাও।

উত্তর: উক্ত ‘বাবুটি’ হলেন ছদ্মবেশী বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক, যিনি ‘গিরীশ মহাপাত্র’ নামে নিমাইবাবুর থানায় এসেছিলেন।

স্বাস্থ্য: গিরীশ মহাপাত্র নামে পরিচিত এই ব্যক্তি ছিলেন রোগাক্রান্ত ও দুর্বল দেহের। তামাটে চামড়া, রোগা শরীর, ক্লান্ত মুখভঙ্গি দেখে মনে হয় যেন তাঁর দেহ ক্ষয়ে যাচ্ছে। হাঁটতে হাঁটতে কাশছেন। কিন্তু চোখের দৃষ্টিতে ছিল এক অদ্ভুত গভীরতা ও প্রাণশক্তি, যা তার অন্তর্লুকানো দৃঢ় মনোবলের ইঙ্গিত দেয়।

শখ ও সাজসজ্জা: অসুস্থ শরীর হলেও গিরীশ ছিলেন অত্যন্ত শৌখিন।

(i) তাঁর মাথার চুলে ছিল ছাঁট ও লেবুর সুগন্ধি তেল।
(ii) পরনে ছিল রামধনু-রঙা জাপানি সিল্কের চুড়িদার পাঞ্জাবি ও বিলাতি মখমল পাড়ের কালো শাড়ি।
(iii) পায়ে বার্নিশ করা পাম্পশু ও লাল রিবনে বাঁধা মোজা।
(iv) হাতে ছিল হরিণশিং-এর হাতলে বাঁধানো ছড়ি।
(v) পকেটে ছিল বাঘ আঁকা রুমাল।

এই রকম সাজসজ্জা দেখে দারোগা নিমাইবাবু রসিকতার ছলে মন্তব্য করেছিলেন— “স্বাস্থ্য গেছে, কিন্তু শখ ষোলোআনাই বজায় আছে।”

২. গিরীশ মহাপাত্রের চেহারা ও পোশাক-পরিচ্ছদের বর্ণনা দাও। তার সঙ্গে থাকা জিনিসপত্রের যে পরিচয় পাওয়া যায়, তা লেখো।

উত্তর: গিরীশ মহাপাত্রের চেহারা ছিল রোগা এবং তামাটে। তার চোখ ছিল গভীর ও বিশ্লেষণধর্মী। গিরীশ মহাপাত্র অত্যন্ত শৌখিন ছিলেন। তার পোশাক ছিল পরিপাটি:
মাথায় বাহারি ছাঁট করা চুল এবং সুগন্ধি তেল, জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের পাঞ্জাবি, কালো শাড়ি, যার পাড় ছিল বিলাতি মখমলের, হাঁটু পর্যন্ত লাল রিবন দিয়ে বাঁধা মোজা এবং বার্নিশ করা পাম্প, হাতে ছিল হরিণের শিঙের হাতল দিয়ে বাঁধা একটি ছড়ি।

গিরীশ মহাপাত্রের সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র:

ভাঙা টিনের তোরঙ্গ,
চাটাই জড়ানো ময়লা বিছানার বান্ডিল,
পকেটে গাঁজার কলক,
একটি টাকা ও ছয়টি পয়সা,
একটি লোহার কম্পাস,
ফুটবল,
বিডি ও দেশলাই।

৩. ‘তাহার পরিচ্ছদের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া মুখ ফিরাইয়া হাসি গোপন করিল।’-কে হাসি গোপন করল? তার হাসি পাওয়ার কারণ কী?

উত্তর: গিরীশ মহাপাত্রের বিচিত্র পোশাক ও আচার-আচরণের দিকে অপূর্বের দৃষ্টি পড়লে সে হাসি গোপন করে।
হাসি পাওয়ার কারণ ছিল গিরীশ মহাপাত্রের অদ্ভুত পোশাক-পরিচ্ছদ। তার মাথায় বাহারি ছাঁট করা চুল, সুগন্ধি তেল, রামধনু রঙের পাঞ্জাবি, মখমল পাড়ের কালো শাড়ি, লাল রিবন দিয়ে বাঁধা মোজা, এবং অন্যান্য শৌখিন সাজ-সজ্জা দেখে অপূর্ব অবাক হয়ে হাসি চাপতে পারে না। এই ধরনের বিচিত্র সাজসজ্জা দেখে তার হাসি প্রাকৃতিকভাবেই বেরিয়ে আসে, কিন্তু সে বুঝতে পারে যে, গিরীশ মহাপাত্রের বাচন ও আচরণ তার ব্যক্তিত্বের এক অদ্ভুত প্রকাশ, তাই হাসি গোপন করে।

দশম শ্রেণীর বাংলা
পথের দাবী গল্পের ৫ মার্কের প্রশ্ন উত্তর

৪. ‘যাঁকে খুঁজছেন তাঁর কালচারের কথাটা একবার ভেবে দেখুন।’-কাকে খোঁজার কথা বলা হয়েছে? যাকে থানায় আনা হয়েছিল তার কালচারের পরিচয় দাও।

উত্তর: ‘পথের দাবী’ উপন্যাসে এই উক্তিটি বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিককে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে।
গিরীশ মহাপাত্রকে থানায় আনা হয়েছিল, কিন্তু তার পোশাক-পরিচ্ছদ ও আচার-আচরণ দেখে অপূর্ব আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছিল যে, যাকে তারা খুঁজছে তার কালচারের কথা একবার ভাবুন।
গিরীশ মহাপাত্রের পোশাক ছিল অত্যন্ত শৌখিন এবং তার আচরণ ছিল একেবারে শহুরে এবং বিদেশি প্রভাবিত, যা সব্যসাচী মল্লিকের চরিত্রের সঙ্গে সম্পূর্ণ মেলে না। গিরীশ মহাপাত্রের বাহারি পোশাক, গাঁজা খাওয়ার অভ্যাস এবং তার অন্যান্য কর্মকাণ্ড তার সংস্কৃতির প্রতি অন্য এক নির্দেশ ছিল, যা তাকে সব্যসাচী মল্লিকের কাছ থেকে আলাদা করে।

৫. ‘এমন সৌভাগ্যকে অপূর্বর মন যেন গ্রাহ্যই করিল না’-এখানে কোন্ ঘটনার ইঙ্গিত করা হয়েছে? তাকে ‘সৌভাগ্য’ বলা হল কেন?

উত্তর: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ উপন্যাসে অপূর্ব থানায় গিয়ে তার ঘরে হওয়া চুরির ব্যাপারে অভিযোগ জানাতে এবং ডাইরি করতে যায়। সেখানে গিয়ে সে দেখে, তার কাকা, থানার বড়োকর্তা নিমাইবাবু এবং তার পুলিশ বাহিনী বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিককে ধরার নামে এক অদ্ভুত নাটক করে চলেছে। এই অদ্ভুত ঘটনারই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

পুলিশস্টেশন থেকে বাড়ি ফেরার পর অপূর্বর মনোযোগ পুরোপুরি তখনকার ঘটনার দিকে। তার ধারণা হয় যে, গিরীশ মহাপাত্র আসলে ছদ্মবেশী সব্যসাচী মল্লিক। দেশের প্রতি সব্যসাচীর অগাধ ভালোবাসা এবং মাতৃভূমির প্রতি তার ত্যাগে অপূর্বর হৃদয় এক গভীর সমর্থন অনুভব করে। গিরীশ মহাপাত্ররূপী সব্যসাচীকে অপূর্ব মনেপ্রাণে শ্রদ্ধা করেছিল, কারণ সে বুঝেছিল, পুলিশের তৎপরতায় সব্যসাচীকে ধরা না-পড়া, অপূর্বর কাছে এক আশ্চর্য সৌভাগ্য।

এ কারণেই, যা পুলিশের জন্য ছিল দুর্ভাগ্য, তা অপূর্বর কাছে সৌভাগ্য হয়ে ওঠে। অপূর্ব অনুভব করেছিল, সব্যসাচী মল্লিকের দ্বারা দেশবাসীকে লজ্জা ও অপমান থেকে মুক্তি দেওয়া তার কাছে অনেক বেশি প্রিয়। তাই, তাকে ‘সৌভাগ্য’ বলা হয়েছিল।

৬. ‘পথের দাবী’ রচনাংশ অবলম্বনে অপূর্ব চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ উপন্যাসে অপূর্ব একজন সৎ, সংবেদনশীল, আদর্শবাদী ও শিক্ষিত তরুণ। চাকরির সন্ধানে তার বর্মায় আগমন। উপন্যাসে তার চরিত্রের দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য পরিষ্কারভাবে উঠে আসে—

দেশপ্রেমিক:

অপূর্ব পরাধীন ভারতের এক চিন্তাশীল ও দেশপ্রেমিক তরুণ। বিপ্লবী সব্যসাচীর প্রতি তার গভীর শ্রদ্ধা ও আকর্ষণ রয়েছে। গিরীশ মহাপাত্রকে প্রথম দেখে সে হাসি চাপতে না পারলেও পরে যখন তার মনে সন্দেহ জন্মায় যে গিরীশই আসলে সব্যসাচী, তখন সে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধায় অভিভূত হয়। পুলিশের তৎপরতা ও সতর্কতা সত্ত্বেও সব্যসাচীর ধরা না-পড়া অপূর্বর মনে আনন্দ জাগায়। সে বিশ্বাস করে, ইংরেজ অনুগত আত্মীয়ের তুলনায় দেশপ্রেমিক অপরিচিত অনেক বেশি আপন। পরাধীনতার যন্ত্রণা তাকে বিব্রত করে এবং মুক্তির স্বপ্ন তার শিরায়-শিরায় প্রবাহিত হয়। এইভাবেই সে হয়ে ওঠে বিপ্লবীদের আদর্শ অনুরাগী।

গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল:

অপূর্বর রাজদ্রোহিতার মতো সাহস না থাকলেও, বিপ্লবীদের প্রতি তার শ্রদ্ধা অপরিসীম। একইসঙ্গে সে গুরুজন, বিশেষত তার পিতার বন্ধু ও ইংরেজ কর্মচারী নিমাইবাবুর প্রতিও শ্রদ্ধাশীল থাকে।

এইভাবে অপূর্বর চরিত্রটি পরাধীন ভারতের এক সজাগ, চিন্তাশীল, নৈতিক শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মের প্রতীক হিসেবে গড়ে উঠেছে। তাঁর মনন ও অনুভূতিতে ধরা পড়ে বাঙালি যুবকদের জাগরণ এবং আত্মপরিচয়ের সন্ধান।

৭. “আমি ভীরু, কিন্তু তাই বলে অবিচারে দন্ডভোগ করার অপমান আমাকে কম বাজে না, রামদাস।”

উত্তর: এই উক্তিটি জনপ্রিয় কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশ থেকে গৃহীত।

উক্তিটি বাঙালি যুবক অপূর্বর মুখনিঃসৃত, যখন সে রামদাসের সঙ্গে নিজের এক করুণ অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিচ্ছে। অপূর্বর মতো এক শিক্ষিত, ভদ্র, শান্ত স্বভাবের যুবক চাকরির সন্ধানে বর্মায় এসে থাকছিল। একদিন স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকার সময় বিনা দোষে কয়েকজন ফিরিঙ্গি ছেলে তাকে লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে ফেলে দেয়। সেই সময় আশপাশে থাকা কোনো ভারতীয় প্রতিবাদ তো করেনইনি, বরং অনেকেই খুশি হয়েছিল এই ভেবে যে, অপূর্বর হাড়-হেমপাঁজর ভাঙেনি।

এই ঘটনার পর অপূর্বর মনে গুমরে উঠতে থাকে এক নিঃশব্দ ক্ষোভ ও অপমানের যন্ত্রণা। বর্ণবাদী ইংরেজদের অত্যাচার এবং নিজ দেশের মানুষের নির্লিপ্ততা তাকে মানসিকভাবে নাড়িয়ে দেয়। সে ভীরু— প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতে ভয় পায়, কিন্তু অন্তরে সে গভীরভাবে আহত ও ক্ষুব্ধ। অপূর্ব বুঝতে পারে, শাসক ইংরেজদের হাতে ভারতবাসী কীভাবে প্রতিনিয়ত লাঞ্ছিত হচ্ছে, আর সেই অবিচার তার হৃদয়ে তীব্র যন্ত্রণা তৈরি করে।

তাই সে রামদাসকে জানায়, সে সাহসী না হলেও এই অবিচার ও অপমান তাকে দগ্ধ করে, কারণ তার আত্মমর্যাদা ও দেশপ্রেম তাকে ব্যথিত করে তোলে।
এই উক্তির মধ্য দিয়ে অপূর্বর সংবেদনশীল মন, আত্মসম্মানবোধ ও পরাধীনতার প্রতি তার ক্ষোভ স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। সে একদিকে ভীরু হলেও অন্যদিকে দেশপ্রেম ও আত্মমর্যাদার প্রশ্নে গভীরভাবে ভাবিত—এমনই এক শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি যুবকের প্রতিচ্ছবি শরৎচন্দ্র এই চরিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।

মাধ্যমিক বাংলা
পথের দাবী গল্পের ৫ মার্কের প্রশ্ন উত্তর

৮. ‘পোলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিককে নিমাইবাবুর সম্মুখে হাজির করা হইল।’ – ‘পথের দাবী’ পাঠ্যাংশে সব্যসাচী মল্লিক সম্পর্কে কী জানা যায়? তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় কী পরিস্থিতি তৈরি হয়?
অথবা,
‘পোলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিককে নিমাইবাবুর সম্মুখে হাজির করা হইল।’ – পোলিটিক্যাল সাসপেক্ট কাকে বলে? নিমাইবাবু কে? যাকে আনা হল তার যে পরিচয় পাওয়া যায় তা লেখো।

উত্তর: ‘পোলিটিক্যাল সাসপেক্ট’ অর্থাৎ রাজনৈতিক সন্দেহভাজন—যে ব্যক্তি সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বা বিদ্রোহে যুক্ত বলে সন্দেহ করা হয়।

নিমাইবাবু বাংলাদেশের একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসার। তিনি অপূর্বর পিতার বন্ধু এবং কাহিনির একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। বিপ্লবী সব্যসাচীর আগমনের গোপন সংবাদ পেয়ে তিনি বর্মা (রেঙ্গুন) এসেছেন তাকে ধরার উদ্দেশ্যে।

যাকে সাসপেক্ট হিসেবে আনা হয় তিনি নিজেকে গিরীশ মহাপাত্র বলে পরিচয় দেন। তিনি তেলের খনির কর্মচারী। তাঁর চেহারায় ছিল এক অদ্ভুত বৈপরীত্য—চরম শারীরিক দুর্বলতার মাঝে ছিল এক গম্ভীর ব্যক্তিত্ব ও উজ্জ্বল দৃষ্টি। রোগা মুখ, তামাটে রং, ছোটো করে ছাঁটা চুলে প্রচুর তেল দেওয়া, পায়ে রঙিন মোজা ও পাম্প শু, পরনে পাঞ্জাবির সঙ্গে শাড়ির মতো পোশাক, হাতে হরিণশিংয়ের হাতল দেওয়া ছড়ি, সঙ্গে ছিল ফুটরুল, কম্পাস, বিড়ি, দেশলাই, কলম ইত্যাদি—যা তাকে সাধারণ ব্যক্তি বলে ভাবা কঠিন করে তোলে।

জিজ্ঞাসাবাদের সময় এক রহস্যময় পরিবেশ তৈরি হয়। তাঁর প্রতিটি কথার মধ্যে ছিল আত্মবিশ্বাস ও কৌতুকরসের মিশ্রণ। তিনি বারবার কাশতে কাশতে হতোদ্যম হলেও ধরা দেয় না তাঁর প্রকৃত পরিচয়। উপস্থিত সকলে, এমনকি অপূর্বর মনে হতে থাকে যে এই লোকই হয়তো ছদ্মবেশী বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক।

এইভাবে রহস্য, নাটকীয়তা ও রাজনৈতিক উত্তেজনার আবহে পাঠক অনুভব করে সব্যসাচীর সাহস, চরিত্র ও চাতুর্যের পরিচয়।

আরও দেখো: প্রলয়োল্লাস কবিতার প্রশ্ন উত্তর

CLOSE

You cannot copy content of this page