এখানে ভাঙার গান কবিতার প্রশ্ন উত্তর শেয়ার করা হলো। নবম শ্রেণী বাংলা ভাঙার গান কাজী নজরুল ইসলাম
নবম শ্রেণী বাংলা
ভাঙার গান কবিতার MCQ প্রশ্ন উত্তর
১. “ভাঙার গান” কবিতার রচয়িতা কে?
ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
খ) মাইকেল মধুসূদন দত্ত
গ) কাজী নজরুল ইসলাম
ঘ) সুকান্ত ভট্টাচার্য
উত্তর: গ) কাজী নজরুল ইসলাম
২. “ভাঙার গান” কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?
ক) অগ্নিবীণা
খ) ভাঙার গান
গ) বিষের বাঁশি
ঘ) দোলনচাঁপা
উত্তর: খ) ভাঙার গান
৩. “ভাঙার গান” কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় কত সালে?
ক) ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে
খ) ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে
গ) ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে
ঘ) ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে
উত্তর: খ) ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে
৪. “কারার ওই লৌহকপাট ভেঙে ফেল” — এ লৌহকপাট কিসের প্রতীক?
ক) শৃঙ্খল
খ) ঔপনিবেশিক কারাগার
গ) অন্ধকার
ঘ) অজ্ঞতা
উত্তর: খ) ঔপনিবেশিক কারাগার
৫. কবিতায় কার তুলনা মহাদেব শিবের সঙ্গে করা হয়েছে?
ক) ইংরেজ শাসক
খ) তরুণ বিপ্লবী
গ) কবি নিজে
ঘ) কারাবন্দি
উত্তর: খ) তরুণ বিপ্লবী
৬. “ওরে ও তরুণ ঈশান”— এখানে ঈশান বলতে বোঝানো হয়েছে—
ক) বজ্রদেবতা
খ) শিবের রূপ
গ) বায়ু দেবতা
ঘ) অগ্নিদেব
উত্তর: খ) শিবের রূপ
৭. কোন প্রতীক ব্যবহার করে কবি বিপ্লবের আহ্বান জানিয়েছেন?
ক) বাঁশি
খ) প্রলয়-বিষাণ
গ) কণ্ঠস্বর
ঘ) পদধ্বনি
উত্তর: খ) প্রলয়-বিষাণ
৮. “ভাঙার গান” মূলত কোন উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছিল?
ক) প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বর্ণনা
খ) দেশপ্রেম জাগানো
গ) প্রেমের গান গাওয়া
ঘ) ভগবানের বন্দনা
উত্তর: খ) দেশপ্রেম জাগানো
৯. “হা হা হা পায় যে হাসি, ভগবান পরবে ফাঁসি?” — এর দ্বারা কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
ক) ভগবানকেও ফাঁসি দেওয়া সম্ভব
খ) স্বাধীনতাকে হত্যা করা যায় না
গ) ভগবান মানুষের মতোই
ঘ) ভগবান পাপী
উত্তর: খ) স্বাধীনতাকে হত্যা করা যায় না
১০. কবিতায় “পাগলা ভোলা” কাকে বলা হয়েছে?
ক) শিবকে
খ) তরুণ বিপ্লবীদের
গ) কারারক্ষীকে
ঘ) কবিকে
উত্তর: খ) তরুণ বিপ্লবীদের
১১. “মার হাঁক হৈদরী হাঁক”— এর দ্বারা কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
ক) হজরত আলীর সাহসী ডাক
খ) বিদ্রোহী স্লোগান
গ) বজ্রধ্বনি
ঘ) যুদ্ধের গান
উত্তর: ক) হজরত আলীর সাহসী ডাক
১২. কবিতায় ‘গাজনের বাজনা’ কোন অর্থে ব্যবহার হয়েছে?
ক) ধর্মীয় অনুষ্ঠান
খ) মৃত্যুকে জয় করার আহ্বান
গ) বিনোদন
ঘ) শোক প্রকাশ
উত্তর: খ) মৃত্যুকে জয় করার আহ্বান
১৩. কবির মতে কারা ‘অমর’?
ক) ইংরেজ শাসক
খ) বিপ্লবী ও ভগবান
গ) সাধারণ মানুষ
ঘ) প্রকৃতি
উত্তর: খ) বিপ্লবী ও ভগবান
১৪. কবিতায় ‘আগুন জ্বালা, আগুন জ্বালা’ — এর অর্থ কী?
ক) আলোকিত হওয়া
খ) বন্দিশালা ধ্বংস করা
গ) ধর্মীয় যজ্ঞ
ঘ) অগ্নিদেবকে আহ্বান
উত্তর: খ) বন্দিশালা ধ্বংস করা
১৫. “ভাঙার গান” কবিতার মূল বক্তব্য কী?
ক) ভোগ-বিলাসের আহ্বান
খ) প্রকৃতির বন্দনা
গ) স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামের ডাক
ঘ) ভগবানের বন্দনা
উত্তর: গ) স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামের ডাক
১৬) যে নেতার বন্দিদশায় নজরুল রচনা করেন ভাঙার গান তিনি হলেন—
ক) অরবিন্দ ঘোষ
খ) ক্ষুদিরাম বসু
গ) দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ
ঘ) প্রফুল্ল চাকী
উত্তর: গ) দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ
১৭) “ওরে ও … ঈশান” — শূন্যস্থানে হবে—
ক) বালক
খ) তরুণ
গ) বৃদ্ধ
ঘ) শিশু
উত্তর: খ) তরুণ
১৮) ‘বিষাণ’ শব্দটির অর্থ হলো—
ক) সানাই
খ) ঢাক
গ) শিঙা
ঘ) বেহালা
উত্তর: গ) শিঙা
১৯) ‘ধ্বংস-নিশান’— এখানে ‘নিশান’ শব্দের অর্থ—
ক) পতাকা
খ) নৌকা
গ) রথ
ঘ) চিহ্ন
উত্তর: ক) পতাকা
২০) ধ্বংস নিশান কোথায় উড়বে?
ক) প্রাচীর ভেদ করে
খ) অট্টালিকা ভেদ করে
গ) যজ্ঞভূমি ভেদ করে
ঘ) পাষাণবেদি ভেদ করে
উত্তর: ক) প্রাচীর ভেদ করে
নবম শ্রেণী বাংলা
ভাঙার গান কবিতার MCQ প্রশ্ন উত্তর
২১) “উড়ুক প্রাচীর প্রাচীর ভেদি”— এখানে প্রাচীর কী অর্থে ব্যবহৃত?
ক) প্রাকার অর্থে
খ) পৃথিবীর পূর্বাঞ্চল তথা ভারতবর্ষ অর্থে
গ) বিদেশ তথা পাশ্চাত্য অর্থে
ঘ) পূর্বোক্ত কোনোটি নয়
উত্তর: খ) পৃথিবীর পূর্বাঞ্চল তথা ভারতবর্ষ অর্থে
২২) কবিতায় কীসের বাজনা বাজাতে বলা হয়েছে?
ক) গাজনের
খ) পূজোর
গ) রথযাত্রার
ঘ) বোধনের
উত্তর: ক) গাজনের
২৩) কবিতাটিতে বাঙালির যে আঞ্চলিক উৎসবের কথা আছে তা হল—
(ক) গাজন
(খ) রাস
(গ) বিবির মেলা
(ঘ) রথযাত্রা
উত্তর: (ক) গাজন
২৪) ‘গাজন’ যে মাসে অনুষ্ঠিত হয় সেটি হল—
(ক) চৈত্র
(খ) শ্রাবণ
(গ) ভাদ্র
(ঘ) মাঘ
উত্তর: (ক) চৈত্র
২৫) ‘কে দেয় সাজা’- ‘সাজা’ দেবে কাকে?
(ক) মুক্ত স্বাধীন সত্যকে
(খ) মুক্ত স্বাধীন বিপ্লবীকে
(গ) মুক্ত স্বাধীন মিথ্যাকে
(ঘ) মুক্ত স্বাধীন ভারতীয়কে
উত্তর: (ক) মুক্ত স্বাধীন সত্যকে
২৬) “হা হা হা পায় যে হাসি” — হাসি পায় কেন?
(ক) বিপ্লবী পরবে ফাঁসি
(খ) শয়তান পরবে ফাঁসি
(গ) ভগবান পরবে ফাঁসি
(ঘ) ডাকাতেরা পরবে ফাঁসি
উত্তর: (গ) ভগবান পরবে ফাঁসি
২৭) কার ফাঁসির কথা শুনে কবির হাসি পায়?
(ক) মানুষ
(খ) ভগবান
(গ) শয়তান
(ঘ) ভূত
উত্তর: (খ) ভগবান
২৮) “… শিখায় এ হীন তথ্য কে রে?” শূন্যস্থান পূরণ করো।
(ক) সর্বনাশী
(খ) বিধ্বংসী
(গ) ভয়ংকর
(ঘ) মঙ্গলময়
উত্তর: (ক) সর্বনাশী
২৯) “সর্বনাশী শিখায়…” — কী শিক্ষা দেয়?
(ক) ভুল তথ্য
(খ) হীন তথ্য
(গ) সঠিক তথ্য
(ঘ) অর্থহীন তথ্য
উত্তর: (খ) হীন তথ্য
৩০) কবিতায় যে দেবতার নাম উল্লেখ আছে তিনি হলেন—
(ক) ব্রহ্মা
(খ) পাগলা ভোলা
(গ) বনবিবি
(ঘ) দক্ষিণ রায়
উত্তর: (খ) পাগলা ভোলা
৩১) ‘পাগলা ভোলা’-কে কী দিতে বলা হয়েছে?
(ক) প্রলয় ঠেলা
(খ) প্রলয় দোলা
(গ) প্রলয় নাচন
(ঘ) প্রলয় বাধা
উত্তর: (খ) প্রলয় দোলা
৩২) ‘গারদগুলো’-কে কী করবে?
(ক) জোরসে-ধরে হ্যাঁচকা টান দেবে
(খ) খুলে ফেলবে
(গ) বন্ধ করবে
(ঘ) ভেঙে ফেলবে
উত্তর: (ক) জোরসে-ধরে হ্যাঁচকা টান দেবে
৩৩) ‘মার হাঁক’ কেমন হাঁক?
(ক) জোরালো
(খ) হৈদরী
(গ) ভয়ংকর
(ঘ) মৃদু
উত্তর: (খ) হৈদরী
৩৪) ‘হৈদরী হাঁক’ হল—
(ক) উচ্চৈঃস্বরে ডাকা
(খ) নীচুস্বরে ডাকা
(গ) গানের সুরে ডাকা
(ঘ) কান্নার সুরে ডাকা
উত্তর: (ক) উচ্চৈঃস্বরে ডাকা
৩৫) ‘মৃত্যুকে ডাক’ — কোন্ দিকে ডাকবে?
(ক) জীবন পানে
(খ) সমুখপানে
(গ) ঊর্ধ্বপানে
(ঘ) আকাশপানে
উত্তর: (ক) জীবন পানে
৩৬) “নাচে ওই / কাটাবি কাল বসে কি?” এখানে কার কথা বলা হয়েছে?
(ক) পাগলা ভোলা
(খ) কাল-বোশেখি
(গ) তরুণ ঈশান
(ঘ) সর্বনাশী শিখা
উত্তর: (খ) কাল-বোশেখি
৩৭) “দেরে দেখি…” — কী দিতে বলা হচ্ছে?
(ক) আগুন জ্বালিয়ে
(খ) নষ্ট করে
(গ) ভীম কারার ভিত্তি নাড়িয়ে
(ঘ) ধ্বংস করে
উত্তর: (গ) ভীম কারার ভিত্তি নাড়িয়ে
৩৮) “দেরে দেখি / ভীম কারার ওই ভিত্তি নাড়ি!” — এখানে ‘ভীম’ শব্দের অর্থ—
(ক) ভয়ংকর
(খ) সুন্দর
(গ) স্বার্থপর
(ঘ) শক্তিশালী
উত্তর: (ক) ভয়ংকর
৩৯) তালা কীভাবে ভাঙতে বলা হচ্ছে?
(ক) হাতুড়ি দিয়ে
(খ) লাথি মেরে
(গ) শাবল দিয়ে
(ঘ) বন্দুক দিয়ে
উত্তর: (খ) লাথি মেরে
৪০) কবি কোথায় আগুন জ্বালাতে বলেছেন?
(ক) মন্দিরে
(খ) মসজিদে
(গ) অস্ত্রাগারে
(ঘ) বন্দিশালায়
উত্তর: (ঘ) বন্দিশালায়
নবম শ্রেণী বাংলা
ভাঙার গান কবিতার অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
১। ‘ভেঙে ফেল, কররে লোপাট’—কী ভেঙে ফেলার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: কবি নজরুল তাঁর ভাঙার গান কবিতায় বন্দি বিপ্লবীদের কারাগারের লোহার দরজা ভাঙতে নির্দেশ দিয়েছেন।
২। ‘শিকল-পুজোর পাষাণ-বেদী’-তে কাদের রক্ত জমাট হয়ে আছে?
উত্তর: ইংরেজ সরকারের দ্বারা অত্যাচারিত ভারতের বীর স্বাধীনতা সংগ্রামীদের রক্ত জমাট হয়ে আছে।
৩। ‘রক্ত-জমাট শিকল-পুজোর পাষাণ-বেদী’-এখানে ‘পাষাণ-বেদী’ কথার অর্থ কী?
উত্তর: ইংরেজদের কারাগারই এখানে ‘পাষাণ-বেদী’, যেখানে স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীদের রক্ত জমাট হয়ে আছে।
৪। “ওরে ও তরুণ ঈশান!”—‘ঈশান’ কথার অর্থ লেখো।
উত্তর: ‘ঈশান’ মানে মহেশ্বর বা শিব।
৫। ‘বাজা তোর প্রলয়-বিষাণ’—কাদের উদ্দেশে কবি বলেছেন?
উত্তর: কবি ভারতের তরুণ বিপ্লবীদের উদ্দেশে বলেছেন।
৬। ‘প্রলয়-বিষাণ’ কী?
উত্তর: বিষাণ মানে শিঙা। এখানে ‘প্রলয়-বিষাণ’ বলতে শিবের শিঙা বোঝানো হয়েছে, যা ধ্বংসের আহ্বান জানায়।
৭। ‘ধ্বংস নিশান, উড়ুক প্রাচীর ভেদি’—ধ্বংস নিশান কোথায় উড়বে?
উত্তর: ভারতের পরাধীনতার প্রাচীর ভেদ করে ধ্বংস নিশান উড়বে।
৮। ‘প্রাচীর ভেদি’—এখানে ‘প্রাচীর’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ভারতের পরাধীনতার বাঁধন বা শৃঙ্খল।
৯। ‘নিশান’ কথাটির অর্থ কী?
উত্তর: নিশান মানে পতাকা বা ধ্বজা।
১০। “গাজনের বাজনা বাজা!”—‘গাজন’ কী জাতীয় উৎসব?
উত্তর: গাজন হল লোকউৎসব, যা চৈত্র মাসের শেষে মহাদেবের আরাধনাকে কেন্দ্র করে হয়।
১১। ‘গাজনের বাজনা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: গাজন উৎসবে ঢাক-ঢোলের যে আওয়াজ, তাকেই ‘গাজনের বাজনা’ বলা হয়েছে।
১২। “হা হা হা পায় যে হাসি”—কবির হাসি পায় কেন?
উত্তর: ভগবানকে যেমন ফাঁসি দেওয়া অসম্ভব, তেমনি বিপ্লবীদের ফাঁসি দিয়েও স্বাধীনতার লড়াই বন্ধ করা যায় না—এই হাস্যকর ভাবনা দেখে কবির হাসি পেয়েছে।
নবম শ্রেণী বাংলা
ভাঙার গান কবিতার অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
১৩। ‘ভগবান পরবে ফাঁসি?’—এই তথ্যকে কবি হীন বলেছেন কেন?
উত্তর: কারণ ভগবানকে ফাঁসি দেওয়া যেমন অসম্ভব, তেমনি বিপ্লবীদের ফাঁসি দিয়েও স্বাধীনতাকে দমন করা যাবে না। তাই এটি হীন তথ্য।
১৪। ‘এ হীন তথ্য কে রে?’—‘হীন তথ্য’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ভগবান বা অমর বিপ্লবীদের ফাঁসি দিয়ে স্বাধীনতার স্বপ্নকে শেষ করা যায়—এই ভুল ধারণাই ‘হীন তথ্য’।
১৫। “ওরে ও পাগলা ভোলা”—‘পাগলা ভোলা’ কে?
উত্তর: দেবাদিদেব মহাদেব।
১৬। শিবকে ‘পাগলা ভোলা’ বলা হয় কেন?
উত্তর: ভোলানাথ শ্মশানে ঘুরে বেড়ান, ভিক্ষা করেন, ভস্ম মাখেন—এই অদ্ভুত আচরণের কারণে তাঁকে ‘পাগলা ভোলা’ বলা হয়।
১৭। ‘দে রে দে প্রলয়-দোলা’—‘প্রলয়-দোলা’ কী?
উত্তর: ‘প্রলয়-দোলা’ মানে ধ্বংসের দোলা বা মৃত্যুর দোলা।
১৮। ‘পাগলা ভোলা’ কীভাবে প্রলয় দোলা দেবে?
উত্তর: গারদগুলো সজোরে ধরে হ্যাঁচকা টান মেরে প্রলয় দোলা দেবে।
১৯। “গারদগুলো” কী করবে?
উত্তর: সজোরে ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে ভাঙবে।
২০। “মার হাঁক হৈদরী হাঁক”—‘হৈদরী হাঁক’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: হজরত আলি (হায়দার)-এর শত্রুনাশী হাঁকের মতো প্রবল আহ্বান।
২১। ‘মৃত্যুকে ডাক জীবন পানে’—কে ডাকবে?
উত্তর: তরুণ বিপ্লবীরা বা ‘পাগলা ভোলা’।
২২। ‘মৃত্যুকে ডাক জীবন পানে’—এর মানে কী?
উত্তর: বিপ্লবীরা হাসিমুখে মৃত্যুকে বরণ করবে, কারণ তাতেই স্বাধীনতার জীবন আসবে।
২৩। “নাচে ওই কাল বোশেখি”—‘কাল বোশেখি’ কীসের প্রতীক?
উত্তর: কালবৈশাখী ঝড় ধ্বংস ও সৃষ্টির প্রতীক।
২৪। “কাটাবি কাল বসে কি”—কবি কী করতে বলেছেন?
উত্তর: বসে থেকে সময় নষ্ট না করে ভয়ংকর কারাগারের ভিত নাড়িয়ে দিতে বলেছেন।
২৫। “লাথি মার ভাঙরে তালা”—কোন তালা ভাঙতে বলেছেন?
উত্তর: ইংরেজ শাসকের কারাগারের তালা।
২৬। তালা কেন ভাঙতে হবে?
উত্তর: ভারতের বন্দি বিপ্লবীদের মুক্ত করার জন্য।
২৭। কারা তালা ভাঙবে?
উত্তর: স্বাধীনতাকামী তরুণ বিপ্লবীরা।
২৮। “আগুন জ্বালা, আগুন জ্বালা”—কোথায় আগুন জ্বালাতে বলেছেন কবি?
উত্তর: ইংরেজদের বন্দিশালায়, যেখানে বিপ্লবীদের বন্দি রাখা হয়েছে।
নবম শ্রেণী বাংলা
ভাঙার গান কবিতার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
১। “কে মালিক? কে সে রাজা?”— এখানে ‘মালিক’ ও ‘রাজা’ কারা?
উত্তর: ভাঙার গান গীতিকায় ‘মালিক’ ও ‘রাজা’ বলতে কাজী নজরুল ইসলাম অত্যাচারী সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ শাসককে বুঝিয়েছেন। তারা পরাধীন ভারতবাসীর উপর একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিল। কবি তাই ব্রিটিশ শাসককে ভারতবাসীর ‘রাজা’ বা ‘মালিক’ বলে চিহ্নিত করেছেন।
২। “‘কে দেয় সাজা / মুক্ত স্বাধীন সত্যকে রে?’”— উৎস লেখো এবং তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
উৎস: অংশটি কাজী নজরুল ইসলামের ভাঙার গান কবিতা থেকে গৃহীত।
তাৎপর্য: কবি এখানে বলতে চেয়েছেন যে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখা ভারতবাসীর জন্মগত অধিকার। কোনো অত্যাচারী ‘রাজা’ বা ‘মালিক’ সেই অধিকারকে কেড়ে নিতে পারে না। মুক্তির আকাঙ্ক্ষার জন্য কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না— এই সত্যই কবি উচ্চারণ করেছেন।
৩। “হা হা হা পায় যে হাসি”— কার হাসি পায়? কেন হাসি পায়?
উত্তর: এখানে কবি নজরুল ইসলামের হাসির কথাই বলা হয়েছে।
কারণ: ইংরেজ শাসকেরা ভেবেছিল বিপ্লবীদের ফাঁসি দিয়ে স্বাধীনতার আন্দোলন দমন করবে। কবি একে ভগবানকে ফাঁসি দেওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন। যেমন ভগবানের ফাঁসি অসম্ভব, তেমনি বিপ্লবীদের বিনাশ করে স্বাধীনতার স্বপ্নকে দমন করা যায় না। এই অবাস্তব ধারণা কবির কাছে হাস্যকর মনে হয়েছে।
৪। “ওরে ও পাগলা ভোলা”— ‘পাগলা ভোলা’ কে? কবি তাকে কী বলেছেন?
উত্তর: আপাত অর্থে ‘পাগলা ভোলা’ বলতে মহাদেবকে বোঝানো হলেও ভাঙার গান কবিতায় কবি আসলে ভারতীয় তরুণ বিপ্লবীদেরই ‘পাগলা ভোলা’ বলেছেন।
কবি তাকে যা বলেছেন: তিনি আহ্বান জানিয়েছেন যেন তারা প্রলয়ের দোলা দেয়, ইংরেজদের গারদগুলো সজোরে ধরে হ্যাঁচকা টান মেরে ধ্বংস করে স্বাধীনতার পথ রচনা করে।
৫. “গাজনের বাজনা বাজা”— গাজনের বাজনা কখন এবং কেন বাজে?
উত্তর: বাংলা বছরের শেষ দিনে অর্থাৎ চৈত্রসংক্রান্তিতে গাজন উৎসব পালিত হয়। এটি মূলত দেবাদিদেব মহাদেব শিবকে কেন্দ্র করে পালিত একটি লৌকিক উৎসব। ঢাক, ঢোল, বাঁশি, কাঁসি প্রভৃতি দেশীয় বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে এই গাজন অনুষ্ঠিত হয়। গ্রামবাংলায় শিবের আরাধনা ও প্রলয়ের আনন্দে মেতে ওঠাই গাজনের মূল উদ্দেশ্য। কবি নজরুল ইসলাম এই গাজনের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন তাঁর কবিতায়, কারণ গাজনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ধ্বংস ও পুনর্গঠনের শক্তি। যেমন গাজনে প্রলয়ের দেবতা শিবকে বন্দনা করা হয়, তেমনই স্বাধীনতার সংগ্রামে ব্রিটিশ দমননীতিকে ভেঙে নতুন ভোর ডেকে আনার শক্তি কবি দেখেছেন।
৬. “গাজনের বাজনা বাজা”— কবিতায় ‘গাজনের বাজনা’র প্রসঙ্গ কেন?
উত্তর: গাজনের বাজনা কেবল ধর্মীয় উৎসবের আনন্দের প্রতীক নয়; নজরুলের কাছে তা হয়ে উঠেছে বিপ্লবের আহ্বান। চৈত্রসংক্রান্তির এই বাজনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রলয়ের প্রতীক শিব। কবি চাইছেন তরুণ বিপ্লবীরা গাজনের ঢাক-ঢোলের মতোই বজ্রধ্বনিতে ইংরেজ কারাগারের প্রাচীর ভেঙে ফেলুক। গাজনের বাজনার প্রলয়ের ইঙ্গিতকে কবি স্বাধীনতার সংগ্রামের প্রতীকে রূপান্তর করেছেন। তাই এখানে গাজনের বাজনা বলতে বোঝানো হয়েছে—ধ্বংসের মধ্য দিয়েই নতুনের জন্ম হবে।
৭. “কে দেয় সাজা মুক্ত স্বাধীন সত্যকে রে”— কেন সাজা দেওয়া যায় না?
উত্তর: সত্য সর্বদাই স্বাধীন ও মুক্ত। কোনো শাসক কিংবা কোনো শক্তি সত্যকে দমন করতে পারে না। নজরুল বলেন, মুক্ত স্বাধীন সত্যকে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা অবাস্তব। ইংরেজরা ভারতীয় বিপ্লবীদের কারারুদ্ধ করে, ফাঁসির দড়িতে ঝোলাতে পারে, কিন্তু তাদের আদর্শ, তাদের সত্যপ্রেমকে কখনও ধ্বংস করতে পারবে না। সত্য অমর, মানুষের হৃদয়ে তার অবস্থান। তাই কবির বক্তব্য—“কে দেয় সাজা মুক্ত স্বাধীন সত্যকে রে?”—একটি প্রতিবাদী ঘোষণা, যা স্বাধীনতার স্বপক্ষে অমোঘ শক্তি হিসেবে ধ্বনিত হয়েছে।
৮. “ভগবান পরবে ফাঁসি / সর্বনাশী শিখায় এ হীন তথ্য কে রে”— ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: এই অংশে কবি ব্যঙ্গ করেছেন ব্রিটিশ শাসকদের দমননীতিকে। তিনি বলছেন, ভগবান অমর, তাঁকে কেউ ফাঁসি দিতে পারে না। বিপ্লবীরা দেশের ভগবানসম, তাঁরা মানবতার প্রতীক, সত্যের ধারক। তাঁদের ফাঁসি দেওয়া হলেও তাঁদের আদর্শ, তাঁদের মুক্তির বার্তা চিরকাল বেঁচে থাকবে। ভগবানকে ফাঁসি দেওয়া যেমন অসম্ভব, তেমনি স্বাধীনতার আদর্শকে দমন করা যায় না। ব্রিটিশদের এই মূর্খতা কবির কাছে হাস্যকর মনে হয়েছে। তাই তিনি প্রশ্ন তুলেছেন—কে এমন সর্বনাশী শিক্ষা দিয়েছে, যে ভাবে স্বাধীনতার সত্যকে ফাঁসির দড়ি দিয়ে নিঃশেষ করা যাবে?
৯. “মার হাঁক হৈদরী হাঁক”— ‘হৈদরী হাঁক’ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘হৈদরী হাঁক’ বলতে বোঝানো হয়েছে ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলির বজ্রকণ্ঠের আহ্বানকে। যুদ্ধে তাঁর হাঁক শত্রুর হৃদয়ে ভয়ের সঞ্চার করত। নজরুল সেই ঐতিহাসিক প্রতীককেই ব্যবহার করেছেন। কবি চান ভারতীয় বিপ্লবীরা এমনই বজ্রকণ্ঠে, এমনই শক্তিশালী হাঁকে অত্যাচারী ইংরেজ শাসকদের কাঁপিয়ে তুলুক। বিদ্রোহী কবির মতে, মুক্তির সংগ্রামে ভয়হীন কণ্ঠই শক্তি জোগায়। তাই বিপ্লবীদের প্রতি তাঁর আহ্বান—তাঁরা যেন আলির মতোই তেজী হাঁকে দেশকে মুক্তির পথে এগিয়ে নেয়।
১০. “ডাক ওরে ডাক মৃত্যুকে ডাক জীবনপানে”— মৃত্যুকে জীবনপানে ডাকা কীভাবে সম্ভব?
উত্তর: নজরুলের মতে, মৃত্যুকে জয় করেই সত্যিকারের জীবন লাভ করা যায়। বিপ্লবীরা জানেন যে স্বাধীনতার সংগ্রামে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী, তবু তাঁরা ভয় পান না। কারণ তাঁদের মৃত্যুই জাতির মুক্তির পথ প্রশস্ত করে। ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়েও তাঁরা জীবনের জয়গান গেয়ে যান। তাঁদের রক্ত, তাঁদের আত্মবলিদানেই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম স্বাধীনতার আলো দেখতে পায়। তাই মৃত্যু এখানে শেষ নয়, বরং জীবনের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের পথ। এই কারণেই কবি বলেছেন—“মৃত্যুকে ডাক জীবন পানে।”
১১. “কাটাবি কাল বসে কি”— কেন বসে বসে কাল কাটানো উচিত নয়?
উত্তর: নজরুল মনে করেন, পরাধীন দেশের মানুষ বসে বসে সময় নষ্ট করলে স্বাধীনতা আসবে না। ব্রিটিশ শাসক দেশকে কারাগারে বন্দি করেছে, জাতির প্রাণ দমবন্ধ হয়ে আসছে। এই অবস্থায় অলসভাবে বসে থাকার অর্থ হচ্ছে দাসত্ব মেনে নেওয়া। তাই কবি দেশবাসীকে আহ্বান করেছেন—এখনই উঠে দাঁড়াও, শৃঙ্খল ভেঙে ফেলো। বৃথা সময় নষ্ট না করে সকলে মিলে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়লেই কারাগারের প্রাচীর ভাঙা সম্ভব হবে। স্বাধীনতার সংগ্রামে তাই বসে থাকা নয়, কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়াই জরুরি।
নবম শ্রেণী বাংলা
ভাঙার গান কবিতার বড়ো প্রশ্ন উত্তর
১. ‘ভাঙার গান’ পাঠ্যাংশে কবির যুগচেতনা ও স্বদেশ ভাবনা কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে?
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম প্রখরভাবে যুগসচেতন কবি। তিনি নিজেই বলেছেন—
“বর্তমানের কবি আমি ভাই, ভবিষ্যতের নই নবি।”
এই বর্তমানবোধই তাঁকে যুগচেতনার কবি করেছে। অসহযোগ আন্দোলনের উত্তাল সময়ে, ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে রচিত ভাঙার গান-এ নজরুল যুগসচেতন বিপ্লবী কণ্ঠস্বর হিসেবে আবির্ভূত হন।
কবিতায় ধরা পড়েছে সমকালীন ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি—দেশের বিপ্লবীদের কারারুদ্ধ করা, ফাঁসিতে ঝোলানো, শাসকদের ভীতি প্রদর্শন ও নিষ্ঠুর দমননীতি। এর বিরুদ্ধে কবি দেশের তরুণ সমাজকে বিদ্রোহে আহ্বান জানান। তাঁর বিশ্বাস—তরুণরাই মুক্ত স্বাধীন সত্যের সাধক, আর সত্যকে কখনো দমন করা যায় না। তাই তিনি ডেকেছেন—
“কারার ওই লৌহকপাট ভেঙে ফেল, কররে লোপাট।”
নজরুলের স্বদেশ ভাবনা এখানে স্পষ্ট। তাঁর কাছে দেশমাতা বন্দিনী; শৃঙ্খলমুক্ত করাই সন্তানের কর্তব্য। তিনি বিপ্লবীদের উদ্দেশে উচ্চারণ করেছেন—
“লাথি মার ভাঙরে তালা, যত সব বন্দিশালায়
আগুন জ্বালা, আগুন জ্বালা ফেল উপাড়ি।”
এখানে কবির আহ্বান শুধু কারাগারের বন্দিদের মুক্ত করাই নয়, বরং গোটা দেশকে বিদেশি শাসনের শৃঙ্খলমুক্ত করা। এভাবেই ভাঙার গান কবিতায় নজরুলের যুগচেতনা ও প্রবল স্বদেশপ্রেম ফুটে উঠেছে।
২. ‘ভাঙার গান’ পাঠ্যাংশে কবির বিদ্রোহী মনোভাবের পরিচয় কীভাবে পাওয়া যায়?
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী মনোভাব ভাঙার গান কবিতায় স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। ‘বিদ্রোহী’ শীর্ষক কবিতার মাধ্যমে বাংলা কাব্যে তাঁর আবির্ভাব ঘটে। ভাঙার গান-এও দেশের মুক্তিকামী জনগণের প্রতি বিদেশি রাজশক্তির ক্রমাগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে কবি বিদ্রোহী কণ্ঠে ডাক দিয়েছেন।
দেশমাতার শৃঙ্খলমোচনে ব্রতী বীর সন্তানরা অনেকেই কারাবন্দি। তাই কবি কারার ওই লৌহকপাট ভেঙে ফেলতে তরুণ বিপ্লবী শক্তিকে আহ্বান জানিয়েছেন। ‘তরুণ ঈশান’দের প্রলয়-বিষাণ বাজিয়ে কারাগারের প্রাচীর ভেদ করে ধ্বংসনিশান উড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ক্ষুদ্ধ শিবের মতো ধ্বংসের শিঙা বাজিয়ে, পুরনো সংস্কার ও অত্যাচারী শাসনের প্রতি ভয়-ভীতি ভুলে দুরবস্থা মেটানোর বার্তা দিয়েছেন।
কবির আহ্বানে খ্যাপা ভোলানাথের মতো প্রলয় দোলা দিয়ে সজোরে হ্যাঁচকা টান মেরে গারদগুলো নিশ্চিহ্ন করতে বলা হয়েছে। দুন্দুভি ঢাক কাঁধে নিয়ে সশস্ত্র যুদ্ধের মতো ভয়ংকর হাঁক ছাড়তে বলেছেন। কালবৈশাখী ঝড়ের শক্তিতে ভীমকারার ভিত্তি নাড়িয়ে, লাথির আঘাতে বন্দিশালার দরজা ভেঙে ফেলতে পারবেন তরুণ দেশপ্রেমীরা।
এভাবে আত্মদান ও বলিষ্ঠ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিপ্লবীরা মৃত্যুকে জীবনপানে ডাকবে। বন্দি করে বা ফাঁসি দিয়ে ইংরেজ সরকার মুক্ত স্বাধীন সত্য বা দেশের স্বাধীনতা-স্পৃহাকে স্তব্ধ করতে পারবে না। মানবতার জয় হবেই। ভাঙার গান-এ কবির বিদ্রোহী মনোভাব গভীর দেশপ্রেম ও মানবতাবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং সমগ্র কবিতায় সেই বিদ্রোহের সুর ধ্বনিত হয়েছে।
৩. ‘আগুন জ্বালা, ফেল উপাড়ি’ – কবির এই ধ্বংসাত্মক আহ্বান কাদের উদ্দেশ্যে ও কেন?
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলামের ভাঙার গান কবিতায় “আগুন জ্বালা, ফেল উপাড়ি” কথার মাধ্যমে তিনি দেশের স্বাধীনতাকামী তরুণ বিপ্লবী সমাজকে আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর এ আহ্বান কোনো সাধারণ ধ্বংসের নির্দেশ নয়, বরং অত্যাচারী ইংরেজ শাসক ও তাদের কারাগারে বন্দি বীর বিপ্লবীদের মুক্তি দিতে, দেশের শৃঙ্খলমুক্তি সাধনের উদ্দেশ্যে।
কবির ধ্বংসাত্মক উচ্চারণ দেশের সমাজ পরিস্থিতির প্রতিফলন। বাংলার জনগণ দীর্ঘদিন নিপীড়নের শিকার। বাঙালি সমাজে অসন্তোষ, বিদ্রোহ ও সংগ্রামের বীজ গজাতে থাকে। নজরুল সেই সময়ের ব্রিটিশ শাসনের নির্যাতন, কারাগারের লৌহকপাট, বন্দিশালার শিকল, ও দেশের শোষিত মানুষের অবস্থা লক্ষ্য করে তরুণদের সজাগ ও সক্রিয় হতে বলেন।
তিনি বলেন, সমাজের এই অবরুদ্ধ পরিস্থিতি ভেঙে মুক্তি অর্জনের জন্য লৌহকপাট ভাঙতে, কারাগারের তালা ভেঙে আগুন জ্বালাতে হবে। এই প্রতীকী ধ্বংসের মাধ্যমে নবজাগরণ ও স্বাধীনতার সূচনা সম্ভব হবে। কবি দেখান যে, ধ্বংস ও প্রতিশোধের আহ্বানও মূলত দেশপ্রেম ও মানবতার জন্য প্রণোদিত।
নবম শ্রেণী বাংলা
ভাঙার গান কবিতার বড়ো প্রশ্ন উত্তর
৪. “ওরে ও তরুণ ঈশান!” – কবি এই আহ্বান জানিয়ে তাদের কী কী কাজ করতে বলেছেন?
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ভাঙার গান কবিতায় “ওরে ও তরুণ ঈশান!” বলে দেশের স্বাধীনতাকামী তরুণ বিপ্লবীদের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তারা কারাগারের লৌহকপাট ভেঙে ফেলুক, বন্দিশালার তালা ভাঙুক, শিকল-বন্ধনমুক্ত করে দেশমাতার মুক্তি নিশ্চিত করুক।
কবি আরও বলেন, তারা ‘প্রলয়-বিষাণ’ বাজিয়ে পরাধীনতার প্রাচীর ভেদ করে ধ্বংসের নিশান উড়াক। ‘পাগলা ভোলা’র মতো শক্তি ও সাহসে কারাগারের গারদগুলো দুলিয়ে প্রলয় দোলা সৃষ্টি করুক। তারা ‘হৈদরী হাঁক’ ছাড়ুক, দুন্দুভি ঢাক কাঁধে নিয়ে মৃত্যুকে উপেক্ষা করে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ুক।
কবি তরুণ বিপ্লবীদের উদ্দেশ্যে দেশের শৃঙ্খলমুক্তি, স্বাধীনতা ও বিদ্রোহী সাহস প্রকাশের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এই আহ্বান কেবল শারীরিক শক্তি নয়, বরং মানসিক দৃঢ়তা ও দেশপ্রেমের উদ্দীপনাও জাগায়।
৫. “ডাক ওরে ডাক মৃত্যুকে ডাক জীবনপানে” – মৃত্যুকে জীবনপানে ডাক দিতে হবে কেন? কেমন করে সেই ডাক দেওয়া সম্ভব?
উত্তর: ভাঙার গান-এ কবি কাজী নজরুল মৃত্যুকে জীবনপানে ডাক দিয়ে দেশের স্বাধীনতাকামী তরুণদের উদ্দীপনা জাগান। মৃত্যুকে জীবনপানে ডাক দিতে হবে, কারণ মৃত্যু মানেই পরাজয় নয়, বরং দেশের স্বাধীনতার জন্য আত্মদানের প্রতীক। অত্যাচারী ইংরেজ শাসকের কারাগারে বহু বিপ্লবী বন্দি, তাঁদের রক্ত জমাট হয়ে পাষাণ বেদীতে লেগে আছে। ফাঁসির মঞ্চেও অনেক দেশপ্রেমী প্রাণ দিয়েছেন। কিন্তু এই দৈহিক মৃত্যু কোনোভাবেই সত্য, মানবতা বা স্বাধীনতার মৃত্যু নয়।
কবি তরুণ দেশপ্রেমীদের বলেছেন, মৃত্যুভয়ে ভীত হবেন না। বিপ্লবীরা যেমন ক্ষুদিরামের মতো ফাঁসির মঞ্চে জীবনের জয়গান গেয়ে গেছেন, তেমনি তাদের দৈহিক অবসানও দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে দেশের মানুষের জীবন ও স্বদেশের মুক্তির জন্য আত্মদান করা মানেই মৃত্যুকে জীবনপানে ডাক দেওয়া।
দেশের জন্য আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে, দৃঢ় সংকল্প ও সাহসে মৃত্যুকে জয়ের এবং জীবনের স্বার্থে কাজে লাগানোই সেই ডাক বাস্তবায়ন করে।
৬. “সর্বনাশী/শিখায় এ হীন তথ্য কে রে?” – কোন তথ্যকে ‘সর্বনাশী’ ও ‘হীন’ বলা হয়েছে? কবি কেন এরূপ মন্তব্য করেছেন?
উত্তর: কবি কাজী নজরুল ইসলাম ভাঙার গান-এ ‘ভগবান পরবে ফাঁসি’—এই ভাবনাটিকে ‘সর্বনাশী’ ও ‘হীন’ বলেছেন। তিনি এভাবে বলার মাধ্যমে ইংরেজ শাসকদের উত্থাপিত ভয়ঙ্কর ও অযৌক্তিক শাস্তির ধারণার ব্যঙ্গ করেছেন।
কারণ:
কবিতার প্রেক্ষাপটে ভারতের বীর বিপ্লবীরা স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য লড়ছে। তাদের কোনো অপরাধ নেই, তারা শুধুই দেশের মুক্তির জন্য আত্মদান করছে। তাই তাদেরকে সাজা দেওয়ার চেষ্টা বৃথা। একইভাবে, ভগবানকে ফাঁসি দেওয়ার ধারণাও অবান্তর ও হাস্যকর। ব্রিটিশ শাসক বা কোনো ‘রাজা’ বা ‘মালিক’ দেশের মুক্তিকামী মানুষকে দমন করতে পারবে না। কবি এই কারণে এই তথ্যকে সর্বনাশী ও হীন বলে অভিহিত করেছেন।
কবির মন্তব্য শুধু ব্যঙ্গাত্মক নয়; এটি তরুণ দেশপ্রেমীদের প্রতি উদ্দীপনা জাগানো আহ্বান। তিনি দেখিয়েছেন যে সত্য, স্বাধীনতা ও মানবতার মূল শক্তি কোনো শাসকের ভয় বা শাস্তিতে বিনষ্ট করা যায় না। বিপ্লবীদের প্রলয়ংকর তেজ, ধ্বংসের শক্তি ও অদম্য সাহস এই ‘হীন তথ্য’কে শুধুই হাস্যকর বানিয়ে দেয়। কবি এভাবেই দেশের মুক্তিকামী তরুণদের সাহস ও উদ্দীপনা উদযাপন করেছেন।
৭. “ওরে ও পাগলা ভোলা” – ‘পাগলা ভোলা’ কে? কবি অন্য কবিতায় এ নামের বিকল্প ব্যবহার করেছেন কীভাবে? ‘পাগলা ভোলা’ এসে কী করবে?
উত্তর: ‘পাগলা ভোলা’ বলতে কাজী নজরুল ইসলাম ভাঙার গান-এ দেবাদিদেব মহাদেবকে বোঝিয়েছেন। এখানে মহাদেবের দুটি রূপ প্রকাশ পায়—একটি মঙ্গলময় এবং অন্যটি ধ্বংসাত্মক।
কবি তাঁর অন্য কাব্য ফণিমনসা-র ‘পথের দিশা’ কবিতায় একই রূপকে ‘ভাঙনদেব’ নামে অভিহিত করেছেন। এ নামেও তিনি ধ্বংসাত্মক শক্তির প্রতীক তৈরি করেছেন, যা নর ও দেবতাদের মধ্যে যেকোনো বন্ধন ভেঙে দিতে সক্ষম।
পাগলা ভোলা আসবে ভারতের পরাধীনতার প্রাচীর ভাঙতে এবং বিপ্লবীদের কারাগারের লৌহকপাট ভেঙে প্রলয় দোলা দিয়ে গারদগুলো জোরসে ধরে হেঁচকা টানতে। এর মাধ্যমে দেশমাতার শৃঙ্খলমোচন হবে এবং স্বদেশের মুক্তিকামী বীর তরুণরা স্বাধীনতার চেতনায় উদ্দীপিত হবেন। কবি এভাবেই ‘পাগলা ভোলা’-কে দেশপ্রেমী ও বিদ্রোহী শক্তির প্রতীক হিসেবে উদ্দীপনা ও প্রলয়ের রূপে আহ্বান করেছেন।
নবম শ্রেণী বাংলা
ভাঙার গান কবিতার গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর
ভাঙার গান কবিতার সারসংক্ষেপে
কাজী নজরুল ইসলামের “ভাঙার গান” কবিতাটি ১৯২৪ সালে রচিত এবং তার ভাঙার গান কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত। কবি এই কবিতায় পরাধীন ভারতবাসীকে শৃঙ্খলমুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন। শুধু কারাগারের লোহার কপাট ভাঙবার কথাই তিনি বলেননি, বরং সমগ্র ভারতবর্ষকে যে ঔপনিবেশিক কারাগারে বন্দি করে রেখেছিল ইংরেজ সরকার, তার ভিত নাড়িয়ে ধ্বংস করার ডাক দিয়েছেন।
কবিতায় কবি তরুণদের শিবের সঙ্গে তুলনা করেছেন। শিব যেমন প্রলয়ের মাধ্যমে নতুন সৃষ্টির পথ উন্মুক্ত করেন, তেমনি ভারতীয় তরুণদের ধ্বংসের মাধ্যমে স্বাধীন ভারতের নতুন ভোর আনতে বলেছেন নজরুল। তিনি তরুণদের “পাগলা ভোলা” নামে সম্বোধন করেছেন, যারা নিঃশঙ্কচিত্তে শত্রুর শিকল ছিঁড়ে মুক্তির পথ দেখাবে। কবি বলেছেন, স্বাধীনতাকে কেউ শাস্তি দিতে পারে না, যেমন ভগবানকে ফাঁসিতে ঝোলানো অসম্ভব তেমনই স্বাধীনতাকে বন্দি করা যায় না।
কবিতার প্রতিটি পংক্তিতে বিপ্লবের ঝড়ো আহ্বান ধ্বনিত হয়েছে। কবি তরুণদের বলেছেন লাথি মেরে কারাগারের তালা ভাঙতে, আগুন জ্বালিয়ে দাসত্বের সব বন্ধন ছাই করে দিতে। তিনি মৃত্যুকেও তুচ্ছ করে নিতে বলেছেন, কারণ স্বাধীনতার জন্য মৃত্যুই হবে জীবনের সবচেয়ে গৌরবময় উৎসর্গ।
এখানে নজরুল শিবের প্রলয় নৃত্য, গাজনের বাজনা, আবার হজরত আলীর “হায়দরী হাঁক”—এসব প্রতীক ব্যবহার করেছেন। ফলে হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সব তরুণকেই তিনি এক কাতারে দাঁড় করিয়েছেন। এই কবিতায় নজরুল কেবল বিদ্রোহের ডাক দেননি, বরং নতুন স্বাধীন ভারতের স্বপ্নকেও জাগিয়ে তুলেছেন।
তাই বলা যায়, “ভাঙার গান” মূলত এক প্রলয়গীত, যা তরুণদের মনে মৃত্যুকে জয় করার সাহস জাগিয়ে তুলেছিল এবং স্বাধীনতার সংগ্রামে অদম্য প্রেরণার উৎস হয়েছিল।
নবম শ্রেণী বাংলা
ভাঙার গান কবিতার গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর
ভাঙার গান কবিতার নামকরণের তাৎপর্য
কাজী নজরুল ইসলামের রচিত ভাঙার গান কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা হলো “ভাঙার গান” (১৯২৪)। অসহযোগ আন্দোলনের সময় রচিত এ গীতিকায় কবি প্রায় দু’শো বছরের ইংরেজ শাসনের শৃঙ্খল ভাঙবার অগ্নিঘোষণা করেছেন। সশস্ত্র বিপ্লবীরা যেন কারাগারে বন্দি দেশপ্রেমিকদের মুক্ত করে সমগ্র ভারতবর্ষকে ঔপনিবেশিক শাসন থেকে উদ্ধার করতে পারে—এই দুর্বার সংকল্প কবিতাটিতে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রথম পংক্তি থেকেই কবি ভাঙার ডাক দিয়েছেন—
“কারার ওই লৌহ-কপাট ভেঙে ফেল, কররে লোপাট।”
এখানে কেবল কারাগারের দরজা ভাঙার আহ্বান নেই, বরং ইংরেজ শাসনের মূল ভিত ধ্বংস করারই নির্দেশ রয়েছে। সমগ্র কবিতাজুড়ে ধ্বংস ও মুক্তির মন্ত্র ধ্বনিত হয়েছে। কবি তরুণদের শিবের প্রলয় নৃত্যের সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, যেমন প্রলয়ের ভস্মস্তুপ থেকে নতুন সৃষ্টির জন্ম হয়, তেমনি ধ্বংসের মাধ্যমে জন্ম নেবে স্বাধীন ভারত।
নজরুলের মতে, স্বাধীনতাকে শাস্তি দেওয়ার অধিকার কারও নেই। ভগবানকে যেমন ফাঁসিতে ঝোলানো অসম্ভব, তেমনি বিপ্লবীদের প্রাণদণ্ড দিয়েও স্বাধীনতার সংগ্রামকে দমন করা যায় না। তাই কবি তরুণদের প্রলয় দোলায় হ্যাঁচকা টান দিয়ে কারাগার ধ্বংস করতে, মৃত্যুকে জয় করে নতুন জীবনের দ্বার খুলতে আহ্বান জানিয়েছেন।
এইভাবে দেখা যায়, কবিতার প্রতিটি স্তবকেই “ভাঙা” বা “ধ্বংস” এর ডাক প্রতিধ্বনিত হয়েছে। জেলখানার লোহার কপাট ভাঙা থেকে শুরু করে পরাধীনতার কারাগার ভাঙা পর্যন্ত—সব জায়গায় একই সুর। সুতরাং সংকলকদের প্রদত্ত “ভাঙার গান” নামটি বিষয়বস্তুর সঙ্গে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং যথার্থ।
আরও দেখো: