এই পোস্টে গাছ আমাদের বন্ধু বিষয়ে রচনা লিখে দেওয়া হলো। এই রচনাটি ক্লাস 4, ক্লাস 5, ক্লাস 7, ক্লাস 8, মাধ্যমিক এর সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সহায়ক হবে।
গাছ আমাদের বন্ধু রচনা ক্লাস 4
১. গাছ আমাদের প্রকৃতির একটি অমূল্য সম্পদ।
২. গাছ আমাদের অনেক উপকার করে।
৩. গাছ আমাদেরকে ফল ফুল ও ছায়া প্রদান করে।
৪. গাছের জন্যই আমরা অক্সিজেন পেয়ে থাকি যা আমাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করে।
৫. গাছ পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে।
৬. আমাদের ব্যবহারিক আসবাবপত্র গাছ থেকে তৈরি হয়।
৭. গাছপালা মাটির উর্বরতা বাড়ায়, মাটির ক্ষয় রোধ করে।
৮. গাছ থেকে অনেক ওষুধ তৈরি হয় যা আমাদের প্রাণ রক্ষা করে।
৯. গাছ প্রকৃতির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
১০. আমাদের সবাইকে গাছের প্রতি যত্ন নেওয়া উচিত।
গাছ আমাদের বন্ধু রচনা ক্লাস 5
মানুষের বন্ধু শুধু মানুষ নয়। প্রকৃতি মানুষের এক বড় বন্ধু। মানুষ বা যে কোনো প্রাণী বেঁচে আছে প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে। গাছপালা হল সেই প্রকৃতির একটি বড়ো উপাদান। গাছ গাছালির জন্যই প্রকৃতি সবুজ। মানুষের কাছে গাছের মূল্য অনেক। শুধু ছায়া, ফুল, ফল বা কাঠ দিয়েই গাছ মানুষের উপকার করে না। গাছের সবচেয়ে বড় দান অক্সিজেন। এই গ্যাস ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। এটা কৃত্রিমভাবে তৈরি করে প্রকৃতিতে যোগান দেওয়া সম্ভব নয়। একমাত্র গাছই অনবরত অক্সিজেন বাতাসে যোগান দিয়ে চলেছে।
শুধু তাই নয় প্রকৃতি থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস শুষে নিয়ে পরিবেশকে সুস্থ রাখে গাছ। কিন্তু আমরা পৃথিবীর লোভী মানুষেরা সম্পদের লোভে গাছ কেটে চলেছি নির্বিচারে বন কেটে বসতি করে তুলছি। বৃক্ষ হত্যায় মানুষের জুড়ি নেই। তাই আজ প্রকৃতির সর্বাঙ্গে দূষণ ছড়িয়ে পড়েছে। পরিবেশ তাই এত দূষিত যে তাতে মানুষের বাস করা অসম্ভব হয়ে উঠেছে।
গাছ বাঁচলে তবেই মানুষ সহ অন্য প্রাণীরা বাঁচবে নতুবা মানব সভ্যতা নিঃশেষ হয়ে যাবে। তাই আমাদের সকলকে সচেতনভাবে গাছকে রক্ষা করতেই হবে। তবেই নিজেদের ভবিষ্যৎ নিরাপদ থাকবে। পৃথিবীতে গাছ যত কমছে তত পৃথিবী উষ্ণ হয়ে উঠছে। ঋতুর পরিবর্তন ঘটছে। আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে। ঝড়-বৃষ্টি নিম্নচাপ ক্রমশ বেড়েই চলেছে। পৃথিবী থেকে গাছ ধ্বংস হয়ে গেলে পশুপাখি মানুষ সবাই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যাবে।
গাছ আমাদের বন্ধু রচনা ক্লাস 6, ক্লাস 7, ক্লাস 8
ভূমিকা:
সৃষ্টির সেই প্রথম থেকেই গাছ ও মানুষের মধ্যে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্ক আছে। মানুষের জীবনধারণের প্রায় প্রত্যেক ক্ষেত্রেই গাছ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সাহায্য করে আসছে। পৃথিবীর অনেক অংশ গাছ বিহীন হওয়ায় সেখানে কোন প্রাণ সৃষ্টি হয়নি। অতীতে বর্তমানে ও ভবিষ্যতে সর্বদাই গাছ আমাদের বন্ধু হয়েছিল আছে এবং থাকবে।
উপকারিতা:
মনুষ্য জীবন সৃষ্টির আদিম লগ্নে জঙ্গলের উদ্ভিদকূল ছিল মানুষের আশ্রয়স্থল। তারপর মানুষ সভ্য হয়েছে, কিন্তু গাছেরা আজও মানুষকে প্রায় সমস্ত খাদ্য জুগিয়ে চলেছে। প্রাচীনকাল থেকে এবং এখনও এই সভ্য যুগেও নানান গাছ-গাছড়া আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে। তাছাড়াও গাছপালা মানুষের নানা উপকার করে। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন দেয়। গাছের পাতা ও ডাল জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কাঠ থেকে আসবাবপত্র তৈরি হয়।
পরিবেশ রক্ষা:
পরিবেশ রক্ষায় গাছেদের চরম অবদান আছে। এরা পরিবেশ থেকে বিষাক্ত গ্যাস কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এবং পরিবেশকে বিশুদ্ধ রাখে। উদ্ভিদ কোল পরিবেশকে ঠান্ডা রাখে এবং বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করে। মূলের দ্বারা মাটিকে আঁকড়ে ধরে থাকে এবং ভূমিক্ষয় রোধ করে।
উদ্ভিদকুল ধ্বংস:
সভ্যতার উন্নতি যতই ঘটছে ততই কাঠের প্রয়োজন হয়ে পড়ছে। নানা ধরনের যানবাহন বাড়িঘর প্রস্তুত করতে কাঠের প্রয়োজন। আর সেই প্রয়োজনের জন্যই মানুষ এই ভালো বন্ধুদের ধ্বংস করে নিজেদের প্রয়োজন মেটাচ্ছে। সব সময় চলেছে বনভূমির ধ্বংস এবং তার স্থানে গড়ে উঠছে শহর, নগর এবং কলকারখানা।
কাটার কুফল:
গাছ কেটে ফেলার অর্থ আগামী দিনে নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনা। অতিরিক্ত গাছ কাটার ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে পৃথিবীর সর্বত্র। বর্তমান দাবদাহ তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ। বনভূমির অভাবে পরিবেশ দূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বনভূমি ধ্বংসের ফলে বিভিন্ন প্রাণীর আশ্রয়স্থল নষ্ট হচ্ছে। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিশ্ব উষ্ণায়ন ধীরে ধীরে পৃথিবীকে গ্রাস করছে।
উপসংহার:
গাছেরাই হল মানুষের একমাত্র বন্ধু। সব সময় তাই মনে রাখতে হবে, প্রয়োজনে গাছ কাটতে হলে তার চেয়েও বেশি গাছ লাগাতে হবে। বর্তমানে বনসৃজন উৎসব পালন করে সরকার সাধারণ মানুষকে বৃক্ষরোপনে উৎসাহ জোগাচ্ছে। এই শুভ কাজে সকলেরই এগিয়ে আসা উচিত। আজ প্রত্যেকের একই কন্ঠে বলা উচিত “Plant Trees, Save Life” ।
গাছ আমাদের বন্ধু রচনা মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য
ভূমিকা:
ধরিত্রীর বক্ষে প্রথম প্রাণের অস্তিত্ব ঘোষণা করেছিল বৃক্ষ। ভূমি গর্ভের অন্ধকার বিদীর্ণ করে বৃক্ষই প্রথম প্রণাম জানিয়েছিল প্রভাত সূর্যকে। ধরিত্রীর বন্ধ্যা দশা ঘুচিয়ে ধীরে ধীরে তার বক্ষকে সবুজায়িত করেছে বৃক্ষ। রবীন্দ্রনাথ বৃক্ষকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন ” মৃত্তিকার বীর সন্তান” ।
আশ্রয়:
ধরিত্রীতে মানুষের আবির্ভাব লগ্নে বৃক্ষই ছিল মানুষের প্রধান আশ্রয়। আদিম মানুষকে বৃক্ষই দিয়েছে খাদ্য, পরিধেয় আর আশ্রয়। সভ্যতার অগ্রগতিতেও গাছ আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে যায়নি বরং তার প্রয়োজনীয়তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃক্ষকে আশ্রয় করেই মানুষের জীবনচক্র আজও আবর্তিত হচ্ছে।
তপোবন — প্রাচীন সভ্যতার উন্মেষ:
তপোবনের মধ্যে প্রাচীন ভারতবর্ষে একদিন সভ্যতার উন্মেষ হয়েছিল। এখানেই ভারতীয় ঋষিরা বৃক্ষের বাণী শুনতে পেয়েছিলেন। তপোবন ছিল তাদের সাধন ক্ষেত্র। আরণ্যক পরিবেশে তারা মহৎ জীবন সত্য উপলব্ধি করেছিলেন। এখানেই রচিত হয়েছিল বেদ উপনিষদ। এখানেই আর্য ঋষিরা সামগান করেছিলেন। রামচন্দ্রের ১৪ বছর বনবাস, মহাভারতের বনপর্ব সবই অরণ্যের সঙ্গে নিবিড়।
গাছ — নিত্য ব্যবহার্য:
বৃক্ষ মানুষের পরম উপকারী বন্ধু। বৃক্ষ থেকে পশুর খাদ্য, মানুষের খাদ্য, নানা রোগ নিরাময়ের ওষুধ পাওয়া যায়। রং, তেল, চিনি এসবই বৃক্ষের দান। সভ্য মানুষের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস হলো কাগজ। গাছ থেকেই এই কাগজ তৈরি হয়। স্থলযান, নৌযান, গৃহ নির্মাণ, গৃহসজ্জার আসবাব নির্মাণে গাছের অবদান সর্বাধিক। তবে বর্তমানে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন না করে বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে এগুলি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। মানুষের গাছকে বাঁচিয়ে সেই বিকল্প পথগুলিকেই অবলম্বন করতে হবে।
বনবৃদ্ধি:
সবুজ রং মানুষের দৃষ্টিকে নন্দিত করে। শ্যামল প্রকৃতির সংস্পর্শে এলে মানুষের মন সতেজ হয়। সুন্দরবন অঞ্চলে যথেচ্ছ বৃক্ষ ছেদন হওয়ায় বৃষ্টির পরিমাণ কমে গেছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টির জন্য বন বৃদ্ধির প্রয়োজন। আর বন বৃদ্ধি হলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষিত হয়।
বনমহোৎসব:
বনবৃদ্ধির মানসে রবীন্দ্রনাথ শ্রাবণ মাসে শান্তিনিকেতনে বনমহোৎসবের আয়োজন করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন- ” মরুবিজয়ের কেতন উড়াও শূন্যে / হে প্রবল প্রাণ। ” সরকারও এই উৎসবকে গ্রহণ করেছে।
উপসংহার:
বন মহোৎসব, বৃক্ষরোপণই শেষ কথা নয়। শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে পরম যত্নে লালন পালন করে মা তাকে বড়ো করে তোলেন। তেমনি শিশু বৃক্ষ কে সযত্ন পালনে বড়ো করে তোলা প্রয়োজন এবং অপ্রয়োজনীয়ভাবে বৃক্ষ ছেদন যাতে না হয় সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। তাই আজকের দিনে মন্ত্র হওয়া উচিত ” গাছ লাগাও, প্রাণ বাঁচাও। “