প্রলয়োল্লাস কবিতার প্রশ্ন উত্তর / মাধ্যমিক বাংলা WBBSE

এখানে প্রলয়োল্লাস কবিতার প্রশ্ন উত্তর শেয়ার করা হলো। / মাধ্যমিক বাংলা WBBSE / প্রলয়োল্লাস কবিতা কাজী নজরুল ইসলাম

মাধ্যমিক বাংলা
প্রলয়োল্লাস কবিতার MCQ প্রশ্ন উত্তর

১. ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতাটি যে-কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত, তা হল—
ক) অগ্নিবীণা
খ) সর্বহারা
গ) ফণীমনসাগ
ঘ) ঝড়

উত্তর: ক) অগ্নিবীণা

২. ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতাটির প্রকাশকাল হল—
ক) ১৯২২ খ্রিস্টাব্দ
খ) ১৯২০ খ্রিস্টাব্দ
গ) ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দ
ঘ) ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দ

উত্তর: ক) ১৯২২ খ্রিস্টাব্দ

৩. প্রদত্ত কোনটি নজরুলের লেখা কাব্যগ্রন্থ নয়?
ক) মানসী
খ) ফণীমনসাগ
গ) চক্রবাক
ঘ) বিষের বাঁশী

উত্তর: ক) মানসী

৪. ‘প্রলয়োল্লাস’ শব্দের অর্থ হল—
ক) ধ্বংসের আনন্দ
খ) রথঘর্ঘর
গ) ভয়ংকরের চণ্ডরূপ
ঘ) দিগন্তরের কাঁদন

উত্তর: ক) ধ্বংসের আনন্দ

৫. কবি ‘নূতনের কেতন’ বলেছেন—
ক) দ্বাদশ রবির বহ্নিজ্বালা-কে
খ) অট্টরোলের হট্টগোল-কে
গ) বিশ্বমায়ের আসন-কে
ঘ) কালবোশেখির ঝড়-কে

উত্তর: ঘ) কালবোশেখির ঝড়-কে

৬. ‘অনাগত প্রলয় যেখানে ধমক হেনে আগল ভাঙল’, তা হল—
ক) বিশ্বমায়ের আসন
খ) সপ্ত মহাসিন্ধু
গ) সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে
ঘ) নীল খিলানে

উত্তর: গ) সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে

৭. ‘মৃত্যু-গহন অন্ধকূপে’ বলতে কবি বুঝিয়েছেন—
ক) কুসংস্কারগ্রস্ত সমাজ
খ) রাত্রির অন্ধকার
গ) ভীতিজনক স্থান
ঘ) পরাধীন ভারত

উত্তর: ক) কুসংস্কারগ্রস্ত সমাজ

৮. ‘মহাকালের চণ্ড-রূপে’ আসছেন—
ক) সৃষ্টির দেবতা
খ) মহানিশা
গ) মহাকালী
ঘ) কালবৈশাখীর ঝড়

উত্তর: ক) সৃষ্টির দেবতা

৯. ভয়ংকর আসছে—
ক) কেশের দোলায় ঝাপটা মেরে
খ) বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে
গ) অরুণ হেসে করুণ বেশে
ঘ) আসছে হেসে মধুর হেসে

উত্তর: খ) বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে

১০. ‘ঝামর’ শব্দের অর্থ হল—
ক) আলুথালু
খ) ঝটকা
গ) কৃষ্ণবর্ণ
ঘ) গভীর

উত্তর: গ) কৃষ্ণবর্ণ

১১. ‘বিশ্বপিতার বক্ষ-কোলে’ কী ঝোলে?
ক) মুণ্ডু
খ) ফলগু
গ) কৃপাণ
ঘ) ফুল

উত্তর: গ) কৃপাণ

১২. ‘রক্ত-তাহার কৃপাণ ঝোলে’—‘কৃপাণ’ শব্দের অর্থ—
ক) ঝামা
খ) চাবুক
গ) যুদ্ধ
ঘ) খড়্গ

উত্তর: ঘ) খড়্গ

১৩. অট্টরোলের হট্টগোলে স্তব্ধ—
ক) চরাচর
খ) মহাকাল
গ) গগনতল
ঘ) গিরিশিখর

উত্তর: ক) চরাচর

১৪. ‘দ্বাদশ রবির বহ্নিজ্বালা ভয়াল তাহার নয়নকটায়’, ‘দ্বাদশ রবি’ বলতে বোঝানো হয়েছে—
ক) রবিবার
খ) সকালের রবি
গ) মধ্যাহ্নের রবি
ঘ) বারোটি রবি

উত্তর: ঘ) বারোটি রবি

১৫. ‘দিগন্তরের কাঁদন লুটায় পিঙ্গল তার এস্ত জটায়।’ — ‘পিঙ্গল’ শব্দটির অর্থ—
ক) পীত (হলুদ) রঙের আভাযুক্ত ঈষৎ রক্তবর্ণ
খ) ঈষৎ রক্তবর্ণ
গ) সাদা
ঘ) নীল আভাযুক্ত

উত্তর: ক) পীত (হলুদ) রঙের আভাযুক্ত ঈষৎ রক্তবর্ণ

১৬. ‘সপ্ত মহাসিন্ধু দোলে কপোলতলে।’ — ‘কপোল’ শব্দের অর্থ হল—
ক) কপাল
খ) গাল
গ) পায়রা
ঘ) কপূর

উত্তর: খ) গাল

১৭. ‘কপোলতলে দোলে—’
ক) তেরো নদী
খ) ঝামর
গ) সপ্ত মহাসিন্ধু
ঘ) মেঘ

উত্তর: গ) সপ্ত মহাসিন্ধু

১৮. ‘মাভৈঃ মাভৈঃ’ ধ্বনির তাৎপর্য হল—
ক) ভয় না-পেয়ে এগিয়ে চলো
খ) ভয়ের কথা ভেবো না
গ) যুদ্ধে জয়ী হও
ঘ) মা-কে সর্বদা ভক্তি করো

উত্তর: ক) ভয় না-পেয়ে এগিয়ে চলো

১৯. ‘মুমূর্ষু’ শব্দের একটি প্রতিশব্দ হল—
ক) অসুস্থ
খ) উপবাসী
গ) অর্ধমৃত
ঘ) ভয়ংকর

উত্তর: গ) অর্ধমৃত

২০. ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় উষা যে বেশে আসে—
ক) বিমর্ষ
খ) করুণ
গ) হাস্য
ঘ) ক্রন্দন

উত্তর: খ) করুণ

দশম শ্রেণী বাংলা
প্রলয়োল্লাস কবিতার MCQ প্রশ্ন উত্তর

২১. ‘করুণ বেশে আসবে—’
ক) সত্য
খ) সুন্দর
গ) সূর্য
ঘ) চাঁদ

উত্তর: গ) সূর্য

২২. ‘দিগম্বরের জটায় হাসে—’
ক) গঙ্গানদীর জল
খ) পার্বতীর মুখ
গ) শিশু-চাঁদের কর
ঘ) কোনোটিই নয়

উত্তর: গ) শিশু-চাঁদের কর

২৩. ‘শিশু-চাঁদের কর’ কোথায় দেখা যায়?
ক) দিগম্বরের হৃদয়ে
খ) দিগম্বরের কপালে
গ) দিগম্বরের জটায়
ঘ) দিগম্বরের বাহুতলে

উত্তর: গ) দিগম্বরের জটায়

২৪. ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় ‘শিশু-চাঁদ’ বলতে বোঝানো হয়েছে—
ক) ছোটো চাঁদ
খ) সদ্য-উদিত চাঁদ
গ) চাঁদের সন্তান
ঘ) চাঁদের মতো সুন্দর শিশু

উত্তর: খ) সদ্য-উদিত চাঁদ

২৫. ‘ক্ষুরের দাপট তারায় লেগে উল্কা ছুটায়।’
ক) পাষাণ স্তূপে
খ) নীল খিলানে
গ) গগন তলে
ঘ) ঝড় তুফানে

উত্তর: খ) নীল খিলানে

২৬. ‘অন্ধ কারার কঠিন কূপে / দেবতা বাঁধা যজ্ঞ যূপে’—এখানে কবি ‘দেবতা’ বলতে বুঝিয়েছেন—
ক) মহাদেবকে
খ) ভারতীয় বিপ্লবীকে
গ) দেশমাতাকে
ঘ) দেশনায়ককে

উত্তর: খ) ভারতীয় বিপ্লবীকে

২৭. ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর।’ — যাঁর জয়ধ্বনি করতে হবে, তিনি হলেন—
ক) দেশনেতা
খ) মহাকাল
গ) দেশমাতা
ঘ) প্রলয়ংকর শিব

উত্তর: ঘ) প্রলয়ংকর শিব

২৮. ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’ বাক্যটি মোট কতবার ব্যবহৃত হয়েছে?
ক) পনেরোবার
খ) উনিশবার
গ) সতেরোবার
ঘ) একুশবার

উত্তর: খ) উনিশবার

২৯. ‘জীবনহারা অ-সুন্দরে করতে ছেদন।’ — কে আসছে?
ক) নবীন
খ) চিরসুন্দর
গ) মহাকাল-সারথি
ঘ) মুমূর্ষু

উত্তর: ক) নবীন

৩০. যে ‘ভেঙে আবার গড়তে জানে’ তার নাম হল—
ক) বিশ্বমাতা
খ) ধূমকেতু
গ) চিরসুন্দর
ঘ) চাঁদ

উত্তর: গ) চিরসুন্দর

৩১. সুন্দর যার বেশে আসছে, সে হল—
ক) কালবোশেখির ঝড়
খ) জ্বালামুখী ধূমকেতু
গ) দ্বাদশ রবি
ঘ) কাল-ভয়ংকর

উত্তর: ঘ) কাল-ভয়ংকর

৩২. ‘আলো তার ভরবে এবার ঘর।’ — যার আলোয় ঘর ভরবে—
ক) সূর্যের
খ) উল্কার
গ) ধূমকেতুর
ঘ) চন্দ্রের

উত্তর: ঘ) চন্দ্রের

৩৩. কাল-ভয়ংকরের বেশে কে আসে?
ক) সুন্দর
খ) অসুন্দর
গ) মধুর
ঘ) বীভৎস

উত্তর: ক) সুন্দর

মাধ্যমিক বাংলা
প্রলয়োল্লাস কবিতার অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

১. ‘নতুনের কেতন’ বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন?

উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম ‘প্রলয়োল্লাস’ নামক কবিতায় ‘নতুনের কেতন’ বলতে নবসৃষ্টির আগমনকে বুঝিয়েছেন।

২. কালবৈশাখীর ঝড় কি রূপে আসে?

উত্তর: ‘বিদ্রোহী কবি’ কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতা অনুসারে কালবৈশাখীর ঝড় মহাকালের চণ্ডরূপে এবং ধোঁয়াময় ধূপের রূপেও আসে।

৩. “ওরে ও হাসছে ভয়ঙ্কর” – ভয়ঙ্কর হাসছে কেন?

উত্তর: ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত এই অংশে ‘ভয়ঙ্কর’ শব্দটি নটরাজ শিবের ধ্বংসসাধনে মত্ত রূদ্র রূপকে নির্দেশ করে। পুনরায়, জরাজীর্ণ যা-কিছু, তাকে ধ্বংস করে নতুন সৃষ্টির লক্ষ্যে ভয়ঙ্কর হাসছে।

৪. “অট্টরোলের হট্টগোলে স্তব্ধ চরাচর” – এই কথার অর্থ কী?

উত্তর: শোষণ-বঞ্চনাময়, জরাজীর্ণ সমাজকে ধ্বংস করতে মহাকালের অট্টরোলে ভয়ংকর সৃষ্টি হয়েছে। সেই অট্টরোলের হট্টগোল যে আতঙ্কময় পরিবেশ সৃষ্টি করেছে, তাতে চরাচর ভীত ও স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে।

৫. “আসবে ঊষা অরুণ হেসে” – ঊষা কখন কিভাবে আসবে?

উত্তর: কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় ঊষা আসবে মহানিশার শেষে, সুশোভিত হয়ে সূর্যোদয়ের হাসি নিয়ে।

৬. “দিগম্বরের জটায় হাসে শিশু চাঁদের কর” – সপ্রসঙ্গ তাৎপর্য উল্লেখ করো।

উত্তর: ‘দিগম্বরের জটা’ বলতে মহাদেবের চুলের মুঠো কথাটি বলা হয়েছে। নবযুগের আগমনী বার্তা পেয়ে, সেই জটায় আশ্রিত শিশু চাঁদ তার স্নিগ্ধ হাসিতে অর্থাৎ, স্নিগ্ধ আলো দিয়ে সমস্ত দুনিয়াকে আলোকিত করে।

৭. “ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর?” – কবির মতে ধ্বংস দেখে ভয় পাওয়া উচিত নয় কেন?

উত্তর: কবি মনে করেন যে ধ্বংসের মধ্যেই নতুন সৃষ্টির রহস্য লুকিয়ে থাকে, তাই তিনি ধ্বংসকে ভয় পেতে নিষেধ করেছেন।

৮. “প্রলয় বয়েও আসছে হেসে” – প্রলয়ের মাঝেও তার কেন হাসি মুখ?

উত্তর: কবি জানেন, ধ্বংসের মধ্যে নতুন সৃষ্টির বীজ লুকিয়ে থাকে, তাই মহাকালকে দেখেও তিনি হাসছেন।

৯. “তোরা সব জয়ধ্বনি কর” – কবি কাদেরকে জয়ধ্বনি করতে বলছেন?

উত্তর: কবি পরাধীন ভারতবর্ষের স্বাধীনতাকামী মানুষদের মহাপ্রলয়ের জয়ধ্বনি করতে বলেছেন।

১০. “প্রলয়োল্লাস” কবিতাটি কোন ধরনের কবিতা?

উত্তর: এটি বিদ্রোহ ভাবপ্রকাশের কবিতা।

মাধ্যমিক বাংলা
প্রলয়োল্লাস কবিতার ৩ নম্বরের প্রশ্ন উত্তর

১. ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর!’ — ‘তোরা’ কারা? তাদের জয়ধ্বনি করতে বলা হচ্ছে কেন?

উত্তর: কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘তোরা’ শব্দটি দ্বারা পরাধীন ভারতবর্ষের স্বাধীনতাকামী সাধারণ জনগণকে বুঝিয়েছেন।
ভারতবর্ষের পরাধীনতা কবির কাছে অত্যন্ত বেদনাদায়ক ছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন, কালবৈশাখীর মতো ধ্বংসের মাধ্যমে সৃষ্টি আসবে। এই ধ্বংস ও সৃষ্টির রূপে তিনি কল্পনা করেছেন প্রলয়ংকর শিব বা মহাকালকে, যিনি আসবেন পরাধীনতার অবসান ঘটাতে। তাই কবি ভারতীয় জনতাকে সেই পরিবর্তনের দেবতার আগমন উপলক্ষে জয়ধ্বনি করার আহ্বান জানিয়েছেন।

২. ‘বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর!’ — ‘ভয়ংকর’ বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন? তার আসার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
অথবা
‘বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর!’ — এখানে কাকে ‘ভয়ংকর’ বলা হয়েছে? ‘ভয়ংকর’ কীভাবে আসছে, কবিতা অবলম্বনে লেখো।

উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় ‘ভয়ংকর’ বলতে বুঝিয়েছেন নবযুগের বার্তাবহ প্রলয়রূপী বিপ্লব বা বিদ্রোহকে। এটি ধ্বংসের মাধ্যমে সৃষ্টির প্রতীক। কবি এখানে রুদ্ররূপী শিবকে সেই ‘ভয়ংকর’ বিপ্লবের প্রতীক হিসেবে কল্পনা করেছেন।
ব্রিটিশ শাসনের অত্যাচারে ভারতবাসী ছিল স্থবির, চিন্তাহীন ও দুর্বল। সমাজে ছিল কুসংস্কার ও আত্মবিস্মৃতি। কবি বিশ্বাস করেন, সময়ের নিয়মে এই অচল সমাজ ও শাসনের অবসান ঘটবে এক ভয়ংকর ধ্বংসের মাধ্যমে। সেই ধ্বংসস্বরূপ ‘ভয়ংকর’ আসছে বজ্রশিখার মশাল হাতে নিয়ে—অর্থাৎ বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে। তার আগমন যেন কালবৈশাখীর মতো আছড়ে পড়া প্রলয়ের ঢেউ, যা পুরাতনকে ধ্বংস করে নতুন সমাজ গঠনের পথ খুলে দেবে।

৩. ‘জয় প্রলয়ঙ্কর!’ — প্রলয়ঙ্কর কে? কবিতায় তাঁকে আর কী কী নামে অভিহিত করা হয়েছে?

উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় রুদ্ররূপী মহাদেবকে প্রলয়ঙ্কর বলেছেন।
এই কবিতায় মহাদেবকে আরও যেসব নামে ডাকা হয়েছে, সেগুলো হল—নৃত্যপাগল, মহাকাল, বিশ্বপিতা ও দিগম্বর।

৪. ‘এবার মহানিশার শেষে / আসবে ঊষা অরুণ হেসে’ — ‘মহানিশা’ কী? এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে কবি কীসের ইঙ্গিত দিয়েছেন?

উত্তর: ‘মহানিশা’ অর্থ দীর্ঘ অন্ধকার রাত্রি। কবি নজরুল এই শব্দের মাধ্যমে পরাধীন ভারতবর্ষের নিপীড়িত, শোষিত, অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থাকে বোঝাতে চেয়েছেন।
কবি আশাবাদী যে, এই অন্ধকার রাত্রির মতো দুর্দশার দিন শেষ হবে। তিনি বিশ্বাস করেন, প্রলয়ের মধ্য দিয়ে এক নতুন দিনের সূচনা হবে—যে প্রলয় হচ্ছে দেশের স্বাধীনতার জন্য আসন্ন নবজাগরণ। ধ্বংসের মধ্য দিয়েই আসবে নির্মাণের সম্ভাবনা, অন্ধকারের শেষে উদিত হবে আলোর ঊষা। এই বিশ্বাস থেকেই কবি নতুন সূর্যের আগমনের আশ্বাস দিয়েছেন।

৫. ‘জরায়-মরা মুমূর্ষুদের প্রাণ-লুকানো ওই বিনাশে!’ — পঙ্ক্তিটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।

উত্তর: কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় এই পঙ্ক্তির মাধ্যমে তিনি বলেছেন, সমাজে অনেক জরাগ্রস্ত, মুমূর্ষু চিন্তা ও সংস্কার এখনো টিকে আছে, যেগুলো প্রগতির পথে বাধা সৃষ্টি করে। এই মৃতপ্রায় ধ্যানধারণাগুলো মানুষের প্রাণশক্তিকে দমিয়ে রাখে। কিন্তু কবি মনে করেন, বিপ্লব বা প্রলয় এসে এই সব পুরনো ও প্রাণহীন ভাবনাগুলোর বিনাশ ঘটাবে। কারণ, ধ্বংসের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে নতুন জীবনের সম্ভাবনা। তাই এই প্রলয় সৃষ্টিশীল এবং আশার প্রতীক।

৬. ‘দিগম্বরের জটায় হাসে শিশু-চাঁদের কর’— ‘দিগম্বরের জটা’ ও ‘শিশু-চাঁদের কর’ — এই দুই চিত্রকল্পের মেলবন্ধনের স্বরূপ বুঝিয়ে দাও।

উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় রুদ্ররূপী মহাদেবকে ‘দিগম্বর’ নামে অভিহিত করেছেন, যিনি সংহার ও ধ্বংসের দেবতা। তাঁর জটাজুটিতে ‘শিশু-চাঁদের কর’ অর্থাৎ কাস্তে চাঁদের কোমল কিরণ ঝলমল করে। এই দুই চিত্রকল্পে ভয়ংকর প্রলয় ও কোমল শান্তির যুগলবন্দি রয়েছে।
এখানে ‘দিগম্বরের জটা’ প্রতীক ধ্বংস ও শক্তির, আর ‘শিশু-চাঁদের কর’ প্রতীক নতুন জীবনের, শান্তির ও আশার। কবি বোঝাতে চেয়েছেন, ধ্বংসের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে সৃষ্টির সম্ভাবনা। ভয়ংকর প্রলয়ের শেষেই সূচিত হবে নবজাগরণের শুভক্ষণ—এটাই কবির কল্পনা ও আশাবাদ।

৭. ‘দিগম্বরের জটায় হাসে শিশু-চাঁদের কর’ — দিগম্বর কে? উদ্ধৃতিটির অর্থ কী?

উত্তর: ‘দিগম্বর’ বলতে কবি বুঝিয়েছেন দেবাদিদেব মহাদেবকে, যিনি কাপড়বিহীন (দিগ্বস্ত্র) রুদ্ররূপ ধারী প্রলয়ের প্রতীক।
মহাদেবের জটাজুটির মধ্যে একটি কাস্তে চাঁদের কোমল কিরণ মৃদু হাসি ছড়ায়। এখানে চিত্রকল্পটি দ্বারা কবি একদিকে মহাদেবের ভয়ংকর রুদ্ররূপ এবং অন্যদিকে তাঁর জটায় থাকা শিশু-চাঁদের কোমলতার মধ্য দিয়ে ধ্বংস ও সৃষ্টির যুগল দিক তুলে ধরেছেন। কবি বোঝাতে চেয়েছেন—প্রলয়ের মধ্যেই নিহিত রয়েছে নবসৃষ্টির সম্ভাবনা, যা শান্তি ও নতুন জীবনের প্রতীক।

৮. ‘ওই সে মহাকাল সারথি’—’মহাকাল সারথি’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে? তার আগমনের কারণ কী?

উত্তর: ‘মহাকাল সারথি’ বলতে কবি নজরুল একদিকে রুদ্ররূপী মহাদেবকে বোঝাতে চেয়েছেন এবং অন্যদিকে দেশের তরুণ বিপ্লবীদের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে এই চিত্রকল্পটি।
ভারত তখন পরাধীনতার অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। সেই অবস্থার অবসান ঘটিয়ে স্বাধীনতার আলো এনে দিতে প্রলয়রূপে আসছে ‘মহাকাল সারথি’। তিনি অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে বিপ্লব ঘটিয়ে সমাজে নতুন জীবন, নতুন সূর্যোদয় আনবেন। এই আগমন ধ্বংসের মাধ্যমে সৃষ্টির ইঙ্গিত বহন করে।

৯. ‘আসছে নবীন – জীবনহারা অ-সুন্দরে করতে ছেদন!’ – উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য লেখো।

উত্তর: উদ্ধৃতিটি কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতা থেকে নেওয়া। এখানে কবি ‘নবীন’ শব্দের মাধ্যমে বিপ্লবী শক্তিকে বোঝাতে চেয়েছেন, যা জীবনের নবজাগরণ ঘটাতে সক্ষম।
ভারত তখন পরাধীনতার শৃঙ্খলে জর্জরিত। সেই জড়ত্ব, দাসত্ব, শোষণ আর কুশ্রীতার মূলোচ্ছেদ করতে কবি শুনতে পেয়েছেন নবযুগের পদধ্বনি। এই নবীন শক্তি পুরনো, বিকৃত, নিষ্প্রাণ, অসুন্দর সমাজব্যবস্থার ভিত কাঁপিয়ে দিয়ে তা ছেদন করে এক নতুন সমাজের সূচনা ঘটাবে—এটাই কবির দৃঢ় বিশ্বাস।

১০. ‘কাল-ভয়ংকরের বেশে এবার ওই আসে…!’— এমন উক্তি কার সম্পর্কে করা হয়েছে? এমন উক্তির কারণ কী?

উত্তর: এই উক্তিটি কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় চিরসুন্দর ও চিরনবীনের সম্পর্কে করা হয়েছে, যিনি ধ্বংসের মধ্য দিয়ে নতুন জীবনের বার্তা নিয়ে আসেন।
নজরুল বিশ্বাস করেন, সমাজে যেসব জীর্ণতা, দাসত্ব, অচলতা, অন্ধ সংস্কার বিদ্যমান, সেগুলোর ধ্বংস প্রয়োজন। এই ধ্বংসের মধ্য দিয়েই জন্ম হবে নতুন জীবনের, নতুন জগতের। তাই তিনি সেই ধ্বংসকেই বন্দনা করেছেন, কারণ এই ভয়ংকর রূপের মধ্যেই লুকিয়ে আছে চিরসুন্দরের আগমন। তাই তিনি ‘কাল-ভয়ংকর’ রূপকেই সত্য, সুন্দর ও নবজাগরণের প্রতীক বলে বরণ করেছেন।

১১. ‘ভেঙে আবার গড়তে জানে সে চিরসুন্দর!’— ‘সে’ কে? ভেঙে আবার গড়ার বিষয়টি বুঝিয়ে দাও।

উত্তর: ‘সে’ বলতে কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় বোঝাতে চেয়েছেন ধ্বংস ও সৃষ্টির দেবতা মহাদেব বা প্রলয়রূপী চিরসুন্দর শক্তিকে।
নজরুলের মতে, সমাজে যত জীর্ণতা, অন্যায়, দাসত্ব, ও নিষ্ক্রিয়তা রয়েছে, সেগুলোকে ধ্বংস করে তবেই গড়া যাবে এক নতুন পৃথিবী। সেই প্রলয়ংকর শক্তিই সবকিছু ভেঙে দিয়ে গড়বে এক শুভ, সুন্দর, নবজাগ্রত সমাজব্যবস্থা। এই চিরসুন্দর ধ্বংসের মধ্যেই সৃষ্টি ঘটাতে জানে— ধ্বংসই তার গঠনমূলক রূপ।

১২. ‘মাভৈঃ মাভৈঃ! জগৎ জুড়ে প্রলয় এবার ঘনিয়ে আসে’ কবি ‘মাভৈঃ’ বলে কী জানাতে চেয়েছেন? প্রলয় এসে কোন্ কাজ করবে বলে কবির মনে হয়েছে?

উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় ‘মাভৈঃ মাভৈঃ’ শব্দযুগল ব্যবহার করেছেন, যার অর্থ ‘ভয় কোরো না’, অর্থাৎ নির্ভয়ে এগিয়ে চলো। এখানে কবি পরাধীনতার অন্ধকার থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য ভারতবাসীকে আহ্বান জানাচ্ছেন, যাতে তারা পুরাতন সবকিছু ধ্বংস করে নতুনের বিজয় পতাকা ওড়ানোর জন্য সাহসী হয়ে ওঠে।

প্রলয়ের আগমনকে কবি মহাকালের এক মহা শক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা পৃথিবীজুড়ে অশুভ শক্তি ও অবিচারের সব রূপকে ধ্বংস করবে। এই প্রলয় হবে এক নতুন সৃষ্টির সূচনা। কবির মতে, মহাপ্রলয়ের পরেই ভারতবর্ষ দীর্ঘ পরাধীনতার শিকল থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতার সূর্যালোকে উদ্ভাসিত হবে। তাই কবি বিশ্বাস করেন যে প্রলয় আসবে, এবং তা পরাধীন ভারতবাসীর জন্য একটি নতুন দিনের, নতুন সুযোগের সৃষ্টি করবে।

ক্লাস ১০ বাংলা পশ্চিমবঙ্গ মধ্য শিক্ষা পর্ষদ
প্রলয়োল্লাস কবিতার ৫ নম্বরের প্রশ্ন উত্তর

১. ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় কবি কার জয়ধ্বনি করতে বলেছেন? প্রলয়ের আগমন কবি কেন প্রার্থনা করেছেন তা কবিতা অবলম্বনে আলোচনা করো।

উত্তর: ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম প্রলয়-নেশায় নৃত্যপাগল রুদ্ররূপী মহাদেবের জয়ধ্বনি করতে বলেছেন। এই ‘মহাদেব’ মূলত একটি প্রতীক— যিনি দেশে পরিবর্তনের বার্তা নিয়ে আসেন। এই রূপের মধ্যেই কবি ভারতের তরুণ বিপ্লবীদের জয়ধ্বনি করেছেন।

কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় প্রলয়ের আগমন কামনা করেছেন, কারণ তাঁর মতে সমাজে তখন অন্ধকার, জড়তা, কুসংস্কার ও পরাধীনতার শৃঙ্খল সবদিক থেকে মানুষকে জেঁকে ধরেছে। মানুষ দুঃখ-কষ্ট, নির্যাতন ও অবিচারের শিকার। কবি মনে করেন, এই জরাজীর্ণ সমাজব্যবস্থা ও শোষণমূলক সংস্কারের অবসান ঘটাতে হলে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন জরুরি। এই প্রলয়রূপী ধ্বংসই সেই পরিবর্তনের বাহক— যা পুরোনোকে ভেঙে নতুন কিছুকে গড়ে তোলে।

এই প্রলয় ভয়ংকর হলেও তা আসলে আশার প্রতীক। কারণ ধ্বংসের মধ্যেই রয়েছে সৃষ্টির বীজ। কবি শিবের রুদ্ররূপের মতোই এক বিপ্লবী শক্তির জয়ধ্বনি শুনেছেন— যিনি অসুন্দরের ছেদন ঘটিয়ে স্বাধীন, সুন্দর, প্রাণবন্ত সমাজ গঠনের বার্তা বহন করেন। তাই কবি এই প্রলয়কে ভয় নয়, বরং আনন্দ ও উৎসাহের সঙ্গে বরণ করেছেন।

২. ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় কবি প্রলয়কে কোন্ কোন্ বিশেষণে ভূষিত করেছেন? কবিতার বিষয়বস্তু অনুসারে এই বিশেষণগুলির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।

উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় প্রলয়কে নানা বিশেষণে ভূষিত করেছেন, যেমন:
‘কালবোশেখির ঝড়’, ‘প্রলয়-নেশার নৃত্য পাগল’, ‘ভয়ংকর’, ‘মহাকাল-সারথি’, ‘নবীন’, ‘কাল-ভয়ংকর’।

এই সমস্ত বিশেষণের মাধ্যমে কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে প্রলয় এক তাণ্ডবময় ধ্বংসকারী শক্তি হলেও তা আশীর্বাদস্বরূপ। ‘কালবোশেখির ঝড়’ বলার মাধ্যমে কবি বুঝিয়েছেন হঠাৎ আগত এক প্রবল বিপ্লবী ঝড়, যা পুরাতন-জীর্ণ সমাজব্যবস্থাকে ভেঙে দেয়। ‘প্রলয়-নেশার নৃত্য পাগল’ বিশেষণে উঠে আসে ধ্বংসের উন্মাদনার মধ্যেও একটি লক্ষ্য—অশুভকে ধ্বংস করে শুভকে প্রতিষ্ঠা। ‘ভয়ংকর’ এবং ‘কাল-ভয়ংকর’ দিয়ে কবি দেখিয়েছেন যে এই ধ্বংস ভয়ানক হলেও প্রয়োজনীয়, কারণ তা পরিবর্তনের বাহক। ‘মহাকাল-সারথি’ অর্থাৎ সময়ই এই প্রলয়ের চালক, যিনি পুরোনোকে ধ্বংস করে নতুনের পথ প্রস্তুত করেন। শেষত, ‘নবীন’ বলার মাধ্যমে কবি জানান, প্রলয়ের মাধ্যমে আগমন ঘটবে এক নবজীবনের, এক নবযুগের।

এইভাবে কবি প্রলয়কে ভয় নয়, বরং মুক্তির বার্তাবাহক ও নতুন জীবনের সূচক হিসেবে তুলে ধরেছেন।

৩. ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় ‘ভয়ংকর’ আর ‘সুন্দর’-এর সহাবস্থান কীভাবে উপস্থাপন করেছেন কবি?
অথবা,
‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় একদিকে ধ্বংসের চিত্র আঁকা হয়েছে আবার অন্যদিকে নতুন আশার বাণী ধ্বনিত হয়েছে—বিষয়টি কবিতা অবলম্বনে আলোচনা করো।
উত্তর ১

কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় একদিকে যেমন ভয়ংকর ধ্বংস বা প্রলয়ের চিত্র অঙ্কিত হয়েছে, অন্যদিকে তেমনি এক গভীর আশার বাণীও ধ্বনিত হয়েছে। কবি এখানে কালবৈশাখী ঝড়ের মতোই এক বিধ্বংসী শক্তির আগমনের কথা বলেছেন, যা একদিকে পুরাতন, জরাজীর্ণ, অন্যায়-অবিচার, শোষণ ও কুসংস্কারকে ধ্বংস করবে; আবার অন্যদিকে গড়ে তুলবে একটি নতুন সমাজ, এক নতুন সকাল।

প্রথম দিকে কবি বলেন— “ওরে ওই হাসছে ভয়ংকর” এবং “জয় প্রলয়ংকর”। এর মাধ্যমে তিনি ধ্বংসের রূপকে ভয়ংকর করে তোলেন। যেমন:
“দ্বাদশ রবির বহ্নিজ্বালা ভয়াল তাহার নয়নকটায়” — এখানে আগুনের জ্বলন্ত নয়ন ধ্বংসের প্রতীক।
আবার, “বিন্দু তাহার নয়নজলে সপ্তমহাসিন্ধু দোলে” — একেই কবি একই নয়নে আগুন ও জলের সহাবস্থানে সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখিয়েছেন।

এইভাবে কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে, ধ্বংসের মধ্য দিয়েই সৃষ্টি সম্ভব। তাই তিনি বলেন:
“এবার মহানিশার শেষে / আসবে ঊষা অরুণ হেসে” — অর্থাৎ গভীর অন্ধকারের শেষে আসবে নতুন প্রভাত।
এছাড়া, “ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর?—প্রলয় নূতন সৃজন-বেদন” — কবির এই কণ্ঠে ধ্বংস নয়, বরং এক নবজাগরণের স্বপ্ন নিহিত।

“ওই নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখির ঝড়”— এই পঙক্তির মাধ্যমে কবি বুঝিয়েছেন, প্রলয়রূপী ঝড়ই নতুন কালের পতাকা উড়াবে। কালবৈশাখীর মত ভয়ংকর ঝড় প্রকৃতপক্ষে পুরাতনকে ভেঙে নতুনকে প্রতিষ্ঠা করার এক সৃজনশীল শক্তি।

সব মিলিয়ে, ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় কাজী নজরুল ইসলাম ধ্বংস ও সৃষ্টির এক অপূর্ব ছন্দময় মেলবন্ধন গড়ে তুলেছেন, যা পাঠককে উদ্বেল করে তোলে। এই কবিতা কেবল বিপ্লবের ডাক নয়, বরং ভবিষ্যতের প্রতিও এক আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি।

উত্তর ২

কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় যেমন একদিকে ধ্বংস বা প্রলয়ের ভয়ংকর রূপ আঁকা হয়েছে, অন্যদিকে তেমনি কবি আশাবাদী কণ্ঠে নতুন দিনের আগমনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। প্রথম অংশে কবি কালবৈশাখীর মতো প্রলয়ের আগমনচিত্র তুলে ধরেছেন—”ওরে ওই হাসছে ভয়ংকর”, “দ্বাদশ রবির বহ্নিজ্বালা ভয়াল তাহার নয়নকটায়” ইত্যাদি পঙ্‌ক্তির মাধ্যমে।

কিন্তু একই সঙ্গে কবি সেই প্রলয়ের চোখে “বিন্দু তাহার নয়নজলে সপ্তমহাসিন্ধু দোলে”—এইভাবে আগুন ও জলের সহাবস্থান দেখিয়ে বুঝিয়েছেন, ভয়ংকরের মাঝেও রয়েছে স্নিগ্ধতার সম্ভাবনা। তাই কবি বলেন—”ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর? প্রলয় নূতন সৃজন-বেদন।” তাঁর বিশ্বাস, প্রলয়ের পরেই আসবে নতুন সূর্য, নতুন আশার আলো—”এবার মহানিশার শেষে / আসবে ঊষা অরুণ হেসে”।

এইভাবে ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় কবি ভয়ংকর ধ্বংস ও সুন্দর সৃষ্টির অপূর্ব সহাবস্থানের ছবি এঁকেছেন।

৪. ‘অন্ধ কারার বন্ধ কূপে’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
সেইসঙ্গে ‘দেবতা বাঁধা যজ্ঞ-যূপে / পাষাণ স্তূপে’ বলার কারণ বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: ‘অন্ধ কারার বন্ধ কূপে’ বলতে কবি কাজী নজরুল ইসলাম বোঝাতে চেয়েছেন ব্রিটিশ শাসনের অধীনে বন্দি ও নিপীড়িত ভারতমাতার অবস্থা এবং স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীদের করুণ বন্দিজীবন। এই শব্দবন্ধে কবি তুলে ধরেছেন কারাগারের অন্ধকার কূপে বিপ্লবীদের বন্দি করে রাখা, যেখানে তারা দমননীতির শিকার হয়ে নিঃসঙ্গ ও মৃত্যুর মুখোমুখি হচ্ছেন। এটি একদিকে দেশের পরাধীনতার প্রতীক, অন্যদিকে বিপ্লবীদের আত্মত্যাগের করুণ চিত্র।

‘দেবতা বাঁধা যজ্ঞ-যূপে / পাষাণ স্তূপে’ কথার মাধ্যমে কবি বুঝিয়েছেন যে, উপনিবেশিক শাসনের যুগে যারা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন, সেই বিপ্লবীরাই প্রকৃত দেবতা। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, তাদেরই বলির পাঠা বানিয়ে পাষাণ কারাগারে বন্দি করে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে। এই উপমার মাধ্যমে কবি দেখিয়েছেন, স্বাধীনতার যজ্ঞে দেবতারূপ বিপ্লবীদের উৎসর্গ করা হয়েছে, যা ছিল শাসকের নির্মমতা ও জাতির ব্যথার প্রতিচ্ছবি।

৫. ‘আসছে নবীন—জীবনহারা অ-সুন্দরে করতে ছেদন’ — ‘জীবনহারা অ-সুন্দর’-কে ছেদন করতে নবীনের আসার তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।
‘ভেঙে আবার গড়তে জানে সে চিরসুন্দর।’ — ভেঙে আবার গড়া বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: ‘জীবনহারা অ-সুন্দর’-কে ছেদন করতে নবীনের আসার তাৎপর্য হলো—নজরুলের কবিতায় নবীন মানে শুধু বয়সে তরুণ নয়, বরং তা এক বিপ্লবী শক্তির প্রতীক। যে জীবনে প্রাণ নেই, সৌন্দর্য নেই, তা-ই ‘জীবনহারা অ-সুন্দর’। পরাধীনতার শৃঙ্খলে জর্জরিত, শক্তিহীন, আত্মমর্যাদাহীন জীবনের অবসান ঘটিয়ে নবীন আসছে—যে দেবে নতুন দিশা, প্রাণ, শক্তি ও স্বাধীনতা। কবির বিশ্বাস, এই নবীনই পুরোনো জড়তা ও কদর্যতার ইতি ঘটাবে।

‘ভেঙে আবার গড়তে জানে সে চিরসুন্দর’—এখানে ‘ভাঙা’ মানে পুরাতন, অনৈতিক ও কুৎসিত ব্যবস্থার ধ্বংস আর ‘গড়া’ মানে নতুন, ন্যায়ভিত্তিক ও সুন্দর সমাজের নির্মাণ। প্রকৃতির নিয়মেই পুরাতন ভেঙে নতুন তৈরি হয়, যেমন ঝড় ধ্বংস আনে, তারপরই আসে নির্মল আকাশ। নজরুল সেই ধ্বংসেই আশার স্ফুলিঙ্গ দেখেছেন।

৬. “ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর?—প্রলয় নূতন সৃজন-বেদন।” কোন্ ধ্বংসের কথা বলা হয়েছে?
প্রলয়কে ‘নূতন সৃজন-বেদন’ বলার তাৎপর্য কী?

উত্তর: এই পঙক্তিতে কবি যে ধ্বংসের কথা বলেছেন, তা হলো সমাজের সমস্ত অন্যায়, অবিচার, শোষণ, অত্যাচার, পরাধীনতার গ্লানি এবং মানবতাবিরোধী শক্তির ধ্বংস। নজরুলের দৃষ্টিতে এই ধ্বংস শুধুই সংহার নয়, বরং একটি বিপ্লবী পরিবর্তনের প্রয়োজনীয় অংশ। তাই তিনি মহাকালের রুদ্ররূপ শিবের সংহারলীলাকে আহ্বান জানিয়েছেন, যা ধ্বংসের মাধ্যমে সমাজকে পরিশুদ্ধ করবে।

‘প্রলয় নূতন সৃজন-বেদন’ বাক্যাংশটির তাৎপর্য হলো—প্রলয় মানে ধ্বংস হলেও, তার অন্তরে নিহিত থাকে নতুন সৃষ্টির বীজ। কবি মনে করেন, এই ধ্বংস কেবল অবসান নয়, বরং এক নতুন সূচনার যন্ত্রণা। যেমন একটি নতুন প্রাণের জন্মের সময় মায়ের বেদনা থাকে, তেমনই পুরাতনের ধ্বংসের মধ্য দিয়ে নতুন সমাজের জন্ম হয়। এই প্রলয়-পর্বেই নিহিত থাকে ভবিষ্যতের আশার আলোকরেখা। তাই কবি ভয়ের বদলে আশা ও উদ্দীপনা ছড়াতে এই ধ্বংসকে নতুন সৃষ্টির বেদনারূপে ব্যাখ্যা করেছেন।

আরও দেখো: অভিষেক কবিতার প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক বাংলা
প্রলয়োল্লাস কবিতার MCQ প্রশ্ন উত্তর // দশম শ্রেণী বাংলা প্রলয়োল্লাস কবিতার ৩ মার্কের প্রশ্ন উত্তর // ক্লাস ১০ বাংলা প্রলয়োল্লাস কবিতার ৫ মার্কের প্রশ্ন উত্তর

CLOSE

You cannot copy content of this page